السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ১০টি মসজিদ

| comments


মসজিদ-আল-হারম
ধারন ক্ষমতা : ৮,২০,০০০ জন
আয়তন : ৩৫৬৮০০ স্কয়ার মিটার
অবস্হিত : মক্কা, সৌদি আরব
স্হাপিত : ৬৩৮ সাল

মসজিদ-আল-নববী
ধারন ক্ষমতা : ৬,৫০,০০০ জন
আয়তন : ৪০০৫০০ স্কয়ার মিটার
অবস্হিত : মদিনা, সৌদি আরব
স্হাপিত :৬২২ সাল

ইমাম রিধঅ মসজিদ
ধারন ক্ষমতা : ১,০০০০০ জন
আয়তন : ৫৯৮৬৫৭ স্কয়ার মিটার
অবস্হিত : মাসহাদ, ইরান
স্হাপিত : ৮১৮ সাল

ইস্তিকলাল মসজিদ
ধারন ক্ষমতা : ১,২০,০০০ জন
আয়তন : ৯৫০০০ স্কয়ার মিটার
অবস্হিত : জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া
স্হাপিত : ১৯৭৮ সাল

হাসান মসজিদ
ধারন ক্ষমতা : ১,০৫,০০০ জন
আয়তন : ৯০০০০ স্কয়ার মিটার
অবস্হিত : কাসাবলঙ্কা, মরক্কো
স্হাপিত : ১৯৯৩ সাল

ফইসাল মসজিদ
ধারন ক্ষমতা : ৭৪,০০০ জন
আয়তন : ৪৩২৯৫.৮ স্কয়ার মিটার
অবস্হিত : ইসলামাবাদ, পাকিস্তান
স্হাপিত : ১৯৮৬ সাল

বাদশাহী মসজিদ
ধারন ক্ষমতা : ১,১০,০০০ জন
আয়তন : ২৯৮৬৭.২ স্কয়ার মিটার
অবস্হিত : লাহোর, পাকিস্তান
স্হাপিত : ১৬৭৩ সাল

শেখ জায়েদ মসজিদ
ধারন ক্ষমতা : ৪০,০০০ জন
আয়তন : ২২০০০ স্কয়ার মিটার
অবস্হিত : আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমীরাত
স্হাপিত : ২০০৭ সাল

জামে মসজিদ
ধারন ক্ষমতা : ৮৫,০০০ জন
অবস্হিত : দিল্লি, ইন্ডিয়া
স্হাপিত : ১৬৫৬ সাল

বায়তুল মোকাররম মসজিদ
ধারন ক্ষমতা : ৩০,০০০ জন
অবস্হিত : ঢাকা, বাংলাদেশ
স্হাপিত : ১৯৬০ সাল
সূত্র : Einfopedia

রাশিয়ার শিশুর শরীরে কোরআনের আয়াত!

| comments (1)

শিশুর শরীরে কোরআনের আয়াত
রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত দাগেস্তান প্রদেশে এক বিস্ময়কর শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে। শিশুটির হাত ও পায়ের চামড়ায় কোরআনের আয়াত ভেসে ওঠে কিছুদিন পর আবার মিলিয়ে যায়। নয় মাসের এ শিশুটির নাম আলী ইয়াকুবভ।
ইয়াকুবভের ডান পায়ে সর্বশেষ যে আয়াতটি দেখা গেছে, তার বাংলা অনুবাদ �আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আরবি ভাষায় উৎকলিত এ আয়াতটি সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। হাজার হাজার মানুষ বিস্ময়কর এ দৃশ্য দেখতে ইয়াকুবভের বাড়িতে ভিড় করছেন। দাগেস্তানের রাজধানী মাখাচকা থেকে ১০০ মাইল উত্তরে কিজলিয়ার অঞ্চলের এক নিভৃত গ্রামে শিশুটির বাড়ি। মিরাকল শিশুটির বাবা শামিল (২৭) একজন পুলিশ। শিশুটির মা মদিনা (২৬) জানান, জন্মের দুই সপ্তাহ পর থেকে ইয়াকুবভের শরীরে পবিত্র কোরআনের আয়াত ভেসে উঠতে শুরু করে।

সিলেটে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের হাতে লেখা কোরআন শরিফ

| comments

পিবিসি নিউজ: বাংলাদেশের সব মুসলমানের বাড়িতেই রয়েছে কোরআন শরিফ। দেশের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদেও রয়েছে তেমনই একটি কোরআন শরিফ। তবে পার্থক্য হলো, কোরআন শরিফটি মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নিজ হাতে লেখা।

মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের হাতে লেখা কোরআন শরিফ
সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে সংরক্ষিত আছে মোগল আমলের নিদর্শন এ দুর্লভ কোরআন শরিফটি। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী মোগল সম্রাটের হাতে লেখা কোরআন শরিফটি দেখতে মুসলিম সাহিত্য সংসদে আসেন।

কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সূত্রে জানা যায়, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হেমু গ্রামের বিশিষ্ট দানবীর ও ব্যবসায়ী মৌলভি খান সাহেব আবদুল করিম এ কোরআন শরিফটি মুসলিম সাহিত্য সংসদে দান করেন। এ কোরআন শরিফটি সংগ্রহে রয়েছে চমকপ্রদ এক কাহিনী। মৌলভি খান সাহেব আবদুল করিম মুম্বাই শহরে আগর-আতরের ব্যবসা করতেন। সেসময় মৌলভি সাহেবের সঙ্গে পরিচয় হয় নেপালি এক ব্যবসায়ীর। সে নেপালির সংগ্রহে ছিল মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের হাতে লেখা একটি কোরআন শরিফ। নেপালি দুর্লভ এ পবিত্র গ্রন্থটি কাশ্মির থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। মৌলভি খান সাহেব আবদুল করিম মোগল সৈন্যদের যুদ্ধ পোশাক ও ঢালের বিনিময়ে নেপালি ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে ওই কোরআন শরিফটি ১৯৪৬ সালে সংগ্রহ করেন। পরে তিনি কোরআন শরিফটি নিজ বাড়ি সিলেটের জৈন্তাপুরের হেমু গ্রামে নিয়ে আসেন। নিয়মিত মৌলভি খান সাহেব আবদুল করিম কোরআন শরিফটি তেলাওয়াত করতেন বলে জানা যায়। পরে তিনি ১৯৪৯ সালে সংরক্ষণের প্রয়োজনে ে দুর্লভ কোরআন শরিফটি সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের তৎকালীন সম্পাদক নুরুল হকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে দান করেন। সেই থেকে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের হাতে লেখা কোরআন শরিফটি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে সংরক্ষিত আছে। সাহিত্য সংসদের পড়ার কক্ষে কাচঘেরা একটি সুদৃশ্য বাক্সে বর্তমানে দুর্লভ পবিত্র ধর্মগ্রন্থটি রয়েছে। সম্রাটের হাতে লেখা এ পবিত্র গ্রন্থে রয়েছে চমৎকার নকশা আঁকা। সে সঙ্গে সম্রাট সংক্ষিপ্তভাবে প্রতিটি আয়াতের তফসির করেছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী বই সংগ্রহের জন্য আসেন এ মুসলিম সাহিত্য সংসদে। দেশি-বিদেশি বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী আসেন মোগল সম্রাটের হাতে লেখা কোরআন শরিফটি দেখতে। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মুসলিম সাহিত্য সংসদে সংরক্ষিত মোগল সম্রাটের হাতে লেখা কোরআন শরিফটি সবারই নজর কাড়ছে। মোগল আমলের নিদর্শন কোরআন শরিফ সংরক্ষণে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি রাগীব হোসেন চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, সম্রাটের হাতে লেখা কোরআন শরিফের বাংলাদেশে একমাত্র কপি এটি। মোগল আমলের দুর্লভ নিদর্শন বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।�

বাইবেলের কিছু ঘটনা গুগল আর্থে

| comments


আদম ও হাওয়া জান্নাতে (গাছের নিচে)


মুসা (আঃ) যখন নীল নদ বিভক্ত করে তার সৈন্য নিয়ে তা পার হচ্ছিলেন।

চার দিক হতে পানি ছুটে আসছে। নূহ (আঃ) এর বজরা মহা প্রলয়ের সময়।

ইসা (আঃ) কে ক্রুসবিদ্ধ করার মুহুর্ত।

বোখারী শরীফ থেকে হাদিস

| comments

ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী (রহঃ) বোখারী শরীফের রচয়িতা। তবে তিনি ইমাম বোখারী (রহঃ) নামেই বেশী পরিচিত। এটা কম বেশী সবাই জানেন যে, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) গন কোরআন সংরক্ষনের জন্য যে সকল ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিলেন, হাদিস ও সুন্নাহ সংরক্ষনের জন্যেও ঠিক সে রকম ব্যবস্থাই করেছেন অর্থ্যাৎ মুখস্থ করা, লিপিবদ্ধ করা, বাস্তবে কার্যকরী করা এবং অপরকে শিক্ষা দেয়া। তাবেয়ীগন হাদীস লিপিবদ্ধ করার চেয়ে মুখস্থ করার প্রতিই গুরুত্ব দিতেন বেশী। কালক্রমে তাবেয়ীগন যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে শুরু করলেন তখন ভাবনা এলো এভাবে তাবেয়ীগন বিদায় নিলে অসংখ্য হাদীস বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই ৯৯ হিজরীতে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ (রহঃ) বড় বড় হাফেজে হাদীসগনের মাধ্যমে হাদীস সংকলন শুরু করেন। এ যুগকে হাদীস সংরক্ষনের প্রথম যুগ বলা হয়। এক পর্যায়ে বাতিল মতবাদ সমূহ ইসলামে প্রবেশ করতে শুরু করল, তখন এইসব বাতিল মতবাদ অনুসারীরা সহীহ হাদীসের সাথে মনগড়া হাদীস সমূহ মিশ্রন করতে চেষ্ঠা করতে লাগল। তাই তৃতীয় শতাব্দীর কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী (রহঃ) সহীহ হাদীস সমূহ নির্বাচিত করে বোখারী শরীফ সংকলন করেন। এ যুগকে হাদীস সংকলনের চতুর্থ যুগ বলা হয়।
যেহেতু ইমাম বোখারী (রহঃ) প্রসিদ্ধ চার ইমামের ন্যায় একজন মুজতাহেদ ছিলেন, তাই তিনি বোখারী শরীফকে তাঁর মাযহাব অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করেছিলেন। যদিও তার মাযহাব বিস্তার লাভ করেনি। কিন্তু এটা সত্য যে, কোরআন শরীফের পর এ পৃথিবীতে যত গ্রন্থ আছে, বোখারী শরীফ তার মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ। বোখারী শরীফে ৭২৭৫টি হাদীস আছে। তবে এর মধ্যে কিছু হাদীসের প্রচুর রিপিটেশন আছে, সেগুলো বাদ দিলে সর্বমোট হাদীসের সংখ্যা ৪০০০।
যেহেতু নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কথা, কাজ ও অনুমোদনকে হাদীস বলে সেহেতু এই লেখায় প্রত্যেক হাদীসের শুরুতে তাঁর নাম ব্যবহার করা হয় নাই।
১। আমলের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল
নিয়তের উপরই সকল কাজ নির্ভর করে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে, যা সে নিয়ত করেছে। সুতরাং যে হিজরত করে দুনিয়া লাভ করা অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার নিয়তে, তার হিজরত হয় তারই নিয়তে, যার নিয়তে সে হিজরত করেছে।

২। ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত
(হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত)
ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত-
১। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই এবং মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রসূল এই ঘোষণা দেয়া ২। নামাজ (সালাত) কায়েম করা ৩। যাকাত দেয়া ৪। হজ্জ করা এবং ৫। রোযা রাখা।

৩। পূর্ণাঙ্গ ও নিষ্কলঙ্ক মুসলনের পরিচয়
(কামেল) মুসলমান যে, যার জবান ও হাত হতে মুসলমানগন নিরাপদ রয়েছে এবং মুহাজির সে, যে আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা ত্যাগ করেছে।

৪। খানা খাওয়ানো ইসলামের অন্তর্ভুক্তি
(হযরত আব্দুল্লাহ অবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত)
কোন্ ইসলাম উত্তম, রসূল (সাঃ) উত্তর দিলেন, তোমরা খানা খাওয়াও এবং জানা অজানা তথা চেনা অচেনা সকলকে সালাম কর।

৫। রসূল (সাঃ) এর ভালবাসা ঈমানের অংশ
তোমাদের কেঊ (কামেল) মু’মিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান এবং অন্যান্য সকল মানুষ হতে প্রিয়তম হই।

৬। স্বামীর অকৃতজ্ঞতা
(হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)
আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। তখন আমি তাতে বেশীর ভাগ মহিলাদের পেয়েছি। কারণ, তারা কুফরী (অকৃতজ্ঞতা) বেশী করে থাকে।
হুযুর (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে?
তিনি (হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেন- না, তারা স্বামীর সাথে কুফরী করে এবং অনুগ্রহ স্বীকার করে না। তাদের অভ্যাস, যদি তুমি আজীবন কোন মহিলার উপর অনুগ্রহ করতে থাক আর এরপর তোমার পক্ষ থেকে কোন অবাঞ্চিত ব্যবহার হয়ে যায়, তখন অজীবনের উপকার ভুলে বলবে, আমি তো তোমার পক্ষ থেকে কখনও কোন সদ্ব্যবহার দেখিনি।

৭। রমযানের রাতের নফল এবাদত ঈমানের শাখা
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াব অর্জনের উদ্দেশে রমযানের কিয়াম করে, তার পুর্ববর্তী সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

৮। দ্বীন অতি সহজ
নিঃসন্দেহে দ্বীন অত্যন্ত সহজ। যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে কাঠিন্য (বাড়াবাড়ি) করবে, তবে সে দ্বীনের কাছে পরাজিত হবে। এ জন্য স্বীয় আমলে অবিচলতা গ্রহণ কর, আর যতটুকু সম্ভব মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। খুশী হয়ে যাও যায় এবং সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের কিছু সময় এবাদতের দ্বারা সাহায্য লাভ কর।

৯। ঈমান বাড়ে কমে
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে যবের দানা পরিমান নেকী (ঈমান) আছে, তবে সে জাহান্নাম থেকে বের হবে। আর জাহান্নাম থেকে ঐ ব্যক্তিও বের হবে যে কালামা পড়েছে এবং তার অন্তরে গমের দানা পরিমান ঈমান আছে। আর জাহান্নাম থেকে ঐ ব্যক্তিও বের হবে যে কালেমা পড়েছে এবং অন্তরে অণু পরিমান ঈমান আছে।

১০। পরিবারবর্গের জন্য খরচ করে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়
(হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যখন মানুষ স্বীয় পরিবারবর্গের জন্য খরচ করে তখন ঐ খরচ তার জন্য সদকা।

(হযরত সা’দ অবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
তুমি যা কিছু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খরচ করবে, তোমাকে তার উপর নিশ্চয় প্রতিদান দেয়া হবে, এমনকি তুমি স্বীয় স্ত্রীর মুখে যে খাদ্য তুলে দাও তারও সওয়াব মিলবে।
১১। যে আমল সর্বদা বেশী করা হয় আল্লাহর কাছে তা বেশী পছন্দনীয়
(হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নবী করিম (সঃ) একদিন তাঁর কাছে আসেন, ঐ সময় এক মহিলা তাঁর কাছে বসা ছিল। নবী করিম (সঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ মহিলাটি কে? তিনি (হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, অমুক মহিলা এবং আয়েশা (রাঃ) মহিলাটির (তাহাজ্জুদ) নামাজের আলোচনা করে বললেন যে, সে (মহিলাটি) সারারাত ঘুমায় না। এটা শুনে নবী (সঃ) এরশাদ করলেন-
চুপ কর (শুনে নাও), তোমাদের উপর এতটুকু আমল ওয়াজিব যতটুকু আমল করার তোমাদের শক্তি-সামর্থ থাকে। আল্লাহর কসম! সওয়াব দিতে আল্লাহ তা’আলা ক্লান্ত হন না, কিন্তু তোমরা আমল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাবে, আর আল্লাহ তা’আলার কাছে দ্বীনের ঐ আমল বেশী পছন্দনীয় যা সর্বদা পালন করা যায়।

১২। মোমেনের সর্বদা ভয় রাখা উচিত যেন অজ্ঞাতে কোন আমল বরবাদ না হয়
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী আর তার সাথে মারামারি করা কুফরী। অর্থাৎ যে মুসলমানের সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহ করলো সে কাফেরের কাজ করলো।

১৩। দুই মুসলমানের বিবাদের কারণে শব-ই-কদরের নির্দিষ্ট তারিখ রূদ্ধ হয়ে যাওয়া
(হযরত ওবাদা ইবনুস সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
আমি তোমাদের শব-ই-কদর সম্পর্কে বলার জন্য বের হয়েছিলাম, কিন্তু অমুক অমুক পরস্পর ঝগড়া করাতে ঐ খবর উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। হয়ত তোমাদের জন্য মঙ্গল হলে। এতএব তোমরা রমজানের ২৫, ২৭ এবং ২৯ তারিখে তা তালাশ কর।

১৪। নবী করিম (সঃ) এলেম ও উপদেশের কথা যেভাবে বলতেন যেন লোকেরা বিরক্ত না হয়
(হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
সহজ পন্থা অবলম্বন কর। কঠিন পন্থা আবলম্বন করো না। লোকেদের খুশী কর। খোশখবর জানিয়ে আহবান জানাও, ভয় প্রদর্শন করো না।

আবু ওয়ায়েল বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) প্রতি বৃহস্পতিবার দিন লোকেদের ওয়াজ শুনাতেন। এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, হে আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ আমি চাই আপনি আমাদের প্রতিদিন ওয়াজ শুনান। তিনি (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, এরূপ করলে তোমরা বিরক্ত হয়ে পড়বে, আমি তোমাদের বিরক্তি উৎপাদন করা পছন্দ করি না। কারন এভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের বিরক্তির ভয়ে মাঝা মাঝে ওয়াজ করে থাকতেন।

১৫। এলেম উঠে যাওয়া কেয়ামতের নিদর্শন
(হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
কেয়ামতের আলামত হল- এলেম উঠে যাবে, অজ্ঞতা প্রবল হবে, মদ্যপান আরম্ভ হবে, যেনা ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে এমন কি তা আর লুক্কায়িত থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি এমন একটা হাদীস বয়ান করবো যা আমার পরে আর কেউ করবে না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের কতিপয় আলামত হল-এলেম দুর্লভ হবে, অজ্ঞতা প্রবল হবে, প্রকাশ্যে ব্যভিচার হবে, নারীর সংখ্যা অধিক হবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এমন কি এক একটি পুরুষের তত্ত্বাবধানে পঞ্চাশটি নারী আশ্রিতা হবে।

১৬। এলেম শিক্ষা ও উপদেশকালে রাগান্বিত হওয়া
(হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন)-
এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সঃ)! আমুক ব্যক্তির জন্য আমি জামাআতে নামাজ পড়তে পারি না, করণ সে নামাজ খুব লম্বা করে পড়ে। এ কথা শুনে হুযুর (সঃ) এরূপ রাগান্বিত হয়েছিলেন যে, আমরা তাঁকে তদ্রুপ রাগান্বিত হতে আর কখনও দেখি নাই। তিনি রাগতঃ স্বরে বললেন, হে লোকসকল! তোমাদের অনেকে এরূপ কাজ করে থাকে, যা দ্বারা মানুষের মধ্যে দ্বীনের কাজে বিরক্তি সৃষ্টি হয়। এরূপ কাজ হতে তোমাদের সতর্ক থাকা জরুরী। লক্ষ্য রাখা কর্তব্য- নামাজ যেন খুব বেশী লম্বা না হয়ে পড়ে। কারণ জামাআতের মধ্যে রুগ্ন, দুর্বল ও কর্মব্যস্ত ব্যক্তিগণও থাকে।

১৭। বুঝানোর জন্য এক কথা বার বার বলা উচিত
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নবী করিম (সাঃ) যখন কিছু বলতেন, তখন বার বার বলতেন। আর কোন লোকের কাছে আসলে (জায়গা বিশেষ) তিন বার সালাম করতেন।

১৮। বেশী সৌভাগ্যশালী লোক
কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি বেশী সুপারিশ পাবে যে খাটি অন্তরে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে। অর্থাৎ যে আকীদাগতভাবে দৃঢ় এবং ইয়াকিন তথা বিশ্বাসে দুর্বল না হয়, সে-ই বেশী সৌভাগ্যশালী হবে।

১৯। এলেম যেভাবে উঠিয়ে নেয়া হবে
আল্লাহ তা’আলা এলেম তাঁর বান্দাদের কাছ থেকে জোড়পূর্বক ছিনিয়ে নিবেন না, কিন্তু আলেমদের উঠিয়ে নিয়ে এলেম উঠাবেন। যখন দুনিয়ার বুকে আলেম থাকবে না তখন জনগন মূর্খ ও অজ্ঞ ব্যক্তিকে সর্দার নিযুক্ত করবে এবং সে সমস্ত অজ্ঞ সর্দারের কাছেই সবকিছু জিজ্ঞেস করা হবে এবং তারা কিছু না জানা সত্ত্বেও ফতোয়া দেবে, যাতে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে অপরকেও গোমরাহ করবে।

২০। মহিলাদেরকে উপদেশ ও দ্বীন শিক্ষা দেয়া
(হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
একদা মহিলাগন নবী করিম (সাঃ) এর কাছে আরজ করল, পুরুষের জন্য আমরা আপনার নিকটবর্তী হতে পারি না। এতএব আপনি শুধু আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারিত করে দিন। সেমতে হুজুর (সাঃ) বিশেষভাবে তাদের কাছে একদিনের অঙ্গীকার করলেন। তিনি সেদিন তাদের (মহিলাদের) কাছে গিয়ে ওয়াজ নসীহত করেন এবং শরীয়তের নির্দেশাবলী শুনান। তাদেরকে তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যে তিনটি শিশু সন্তানকে কিয়ামতের দিনের জন্য পাঠিয়ে দিবে, তার জন্য ঐ শিশু সন্তানগুলো দোজখের অগ্নি হতে ঢালস্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে। একজন মহিলা জিজ্ঞাস করল, দুটি সন্তান হলে? রাসূলুল্লাহ বললেন, হাঁ, দুটি সন্তান হলেও ঐরূপ হবে।
২১। ডান হাতে নাপাকী দূর করা নিষেধ
(হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন)-
যখন তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ পানি পান করবে, পাত্রে নিঃশাস ফেলবে না। আর যখন পায়খানায় যাবে, স্বীয় লজ্জাস্থান ডান হাতে স্পর্শ করবে না এবং ডান হাতে নাপাকী দূর করবে না।

২২। নামাজরত মুসল্লীর সন্মুখ দিয়ে যাওয়া
(হযরত আবু জোহায়ম (রাঃ) বর্ণনা করেন)-
নামাজরত ব্যক্তির সন্মুখ দিয়ে যাতায়তকারী যদি উপলব্দি করতে পারতো যে, এরূপ করা কত বড় গুনাহ, তবে চল্লিশ (দিন, মাস বা বছর) দাঁড়িয়ে থাকতে হলেও সে নামাজীর সন্মুখ দিতে কখনও যেত না।

২৩। সময় মত নামাজ পড়ার ফজীলত
(হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
একবার আমি নবী করীম (সাঃ) এর খেদমতে আরজ করলাম- কোন্ আমল আল্লাহর কাছে বেশী পছন্দনীয়? হযরত (সাঃ) ফরমান, সময় মত নামাজ আদায় করা।
আমি জিজ্ঞাস করলাম , তারপর? তিনি বললেন, পিতাপাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা।
আমি জিজ্ঞাস করলাম তারপর? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা, এ পর্যন্ত ক্ষান্ত করা হল। আমি আরও জিজ্ঞাস করলে হযরত (সাঃ) আরও উত্তর দিতেন।

২৪। গরমকালে যোহরের নামাজ বিলম্বে পড়বে
(হযতর আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
তাপমাত্রা বৃদ্ধিকালে নামাজ ঠান্ডা সময়ে পড়বে। কারণ অত্যধিক তাপ জাহান্নামের অগ্নিশিখার উত্তাপ। দোযখের অগ্নি একবার আল্লাহর দরবারে অভিযোগ করল, হে পরওয়ারদিগার, আমরা একে অন্যের দ্বারা ভস্ম হচ্ছি। তখন আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে দু’রকম দুটি নিঃশ্বাস বাইরের দিকে ফেলার অনুমিত দেন, একটি গ্রীষ্মকালে ও অন্যটি শীতকালে। গ্রীষ্মকালের অত্যধিক উত্তাপ জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাস এবং শীতকালের অধিক ঠান্ডার প্রকোপ জাহান্নামের ঠান্ডা নিঃশ্বাস হতে সৃষ্ট।

২৫। আসরের নামাজ কাযা হওয়ার ক্ষতি
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তির আসর নামাজ কাযা হয়ে গেছে, তার এত বড় ক্ষতি হয়েছে যেন তার পরিবারবর্গ ও ধন -সম্পত্তি সব ধ্বংস হয়ে গেছে।

২৬। যে সময় নফল নামাজ নিষিদ্ধ
(হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন)-
ফজর নামাজের পর সূর্য উপরে না উঠা পর্যন্ত এবং আসর নামাজের পর সূর্য অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত নফল নামাজ পড়া নিষিদ্ধ।

২৭। স্মরণ হলেই ভুলে যাওয়া নামাজ পড়ে নিবে
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি নামাজ ভুলে যায়, স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করবে, তা না করলে ঐ গোনাহ মাফ করবার কোন উপায় নাই।

২৮। জামাআতের সাথে নামাজ পড়ার গুরুত্ব
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
একাকী নামাজ পড়া অপেক্ষ জামাআতে আআমাজ পড়ার ফযীলত সাতাশ গুণ বেশী।

২৯। যত বেশী দূর হতে মসজিদে আসবে তত বেশী সওয়াব হবে
(হযরত আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি মসজিদ হতে দূরে বাস করে তার সওয়াব বেশী হয়। যে আরও দূরে থাকে তার সওয়াব আরও বেশী। যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে তার চেয়ে ঐ ব্যক্তির সওয়াব বেশী যে ইমামের সাথে নামাজ পড়ার জন্য অপেক্ষা করে।

৩০। পাঁচ প্রকার শহীদ
১। প্লেগে মৃত্যু ২। পেটের পীড়ায় মৃত্যু ৩। পানিতে ডুবে মৃত্যু ৪। চাপা পড়ে মৃত্যু ৫। আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যু।
৩১। বাচ্চার ক্রন্দন শুনে নামাজ সংক্ষেপ করা
(হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
কোন কোন সময় এরূপ হয় যে, আমি নামাজ আরম্ভ করি এবং দীর্ঘ করে পড়তে ইচ্ছা করি, কিন্তু আশেপাশের শিশুদের ক্রন্দন শুনে ঐ নামাজ অল্প সময়ে শেষ করে দেই। কারণ, হয়ত ঐ শিশুদের মাতা জামাআতে যোগদান করেছে, তারা বিচলিত হতে পারে।

(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
তিনি (সাঃ) অল্প সময়ের মধ্যে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নামাজ পড়াতেন, যা অন্য কারো ভিতর দেখা যেত না। তিনি জামাআতে নামাজ পড়ার সময় যদি আশেপাশে শিশুদের কান্না শুনতে পেতেন, তবে অল্প সময়ের মধ্যে নামাজ শেষ করে দিতেন, যাতে জামাআতে যোগদানকারী শিশুর মাতা বিচলিত হয়ে না পড়েন।

৩২। ইমামের পূর্বে মাথা উঠানো গুনাহের কাজ
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি রুকু ও সেজদা হতে ইমামের পুর্বে মাথা উঠায়, সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তা’আলা তার মাথা বা তার আকৃতি গাধার ন্যায় করে দিতে পারেন?

৩৩। কাতার সোজা না হওয়ার ক্ষতি
(হযরত নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) বর্ণনা করেন)-
খবরদার, হুশিয়ার তোমরা নামাজের মধ্যে সোজাভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে, অন্যথায় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে দিবেন।

(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
কাতার সোজা কর, কাতার সোজা করা নামাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নামাজের মধ্যে কাতার সোজা করে দাঁড়াও কারণ, তার উপর নামাজের সৌন্দর্য নির্ভর করে।

৩৪। তাহাজ্জুদ একা পড়া উচিত
(হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
বাড়ি সংলগ্ন একটি ছাদহীন ঘেরাও স্থানে নিবী করিম (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। ঐ ঘেরাও স্থানের দেয়াল ছিল নীচু, তাই একদা কয়েকজন লোক তাঁকে নামাজ পড়তে দেখে তাঁর সাথে এক্তেদা করে নামাজ পড়ল। সকালে তার বলাবলি করাতে দ্বিতীয় রাতে আরো কিছু লোক জড় হয়ে তাঁর সাথে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ল। দুই -তিন রাত তারা এরূপভাবে নবী করিম (সাঃ) ’র সাথে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ল। পরের রাতে রাসুলে করিম (সাঃ) ঘর হতে বের হলেন না। সকাল বেলা সকলে তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞাস করলে তিনি এরশাদ করেন, আমার আশংকা হচ্ছিল, এভাবে সমবেতভাবে তোমরা তাহাজ্জুদ পড়তে থাকলে আল্লাহ তা’আলা তাহাজ্জুদ তোমাদের উপর ফরয করে দিতে পারেন।

৩৫। নামাজে উপর ও এদিক ওদিক তাকাবে না।
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যারা নামাজের মধ্যে উপরের দিকে তাকায়, তার অনর্থক এরূপ করে। তারা যদি এ অভ্যাস হতে বিরত না থাকে তবে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে অন্ধ করে দিতে পারেন।

(হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নামাজের মধ্যে এদিক ওদিক তাকালে শয়তান মানুষের নামাজে ছোঁ মেরে কিছু অংশ নিয়ে যায়।
৩৬। আমীন বলার ফজিলত
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
ইমাম সুরা ফাতিহা শেষ করে যখন আমীন বলবে, তুমিও তখন আমীন বলো। ফেরেশতাগণও আমীন বলে থাকেন। যাদের আমীন ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে হবে, তাদের পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

৩৭। ভালভাবে রুকু সেজদা না করার উপর হুশিয়ারি
হযরত হোযায়ফা (রাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে ঠিক মত রুকু সেজদা করছে না। তিনি তাকে ডেকে বললেন, তোমার নামাজ ঠিক হয় নাই। আরো বললেন, তুমি যদি এ অভ্যাসের উপর থাক, তবে আল্লাহ কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -কে প্রদত্ত আদর্শ হতে বিচ্যুত অবস্থায় তোমার জীবন অতিবাহিত হবে।

৩৮। সাত অঙ্গের উপর সেজদা করা উচিত
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
আল্লাহ পাক সাত অঙ্গের উপর সেজদা করতে আদেশ করেছেন। দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পায়ের সন্মুখভাগ এবং কপালের সাথে নাককেও বিশেষ ভাবে ইশারা করে দেখিয়েছেন। আরো আদেশ করেছেন, কাপড় ও মাথার চুল টেনে রাখবে না।

৩৯। ঈদের নামাজে এক পথে যাবে অপর পথে আসবে
(হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নবী করীম (সাঃ) ঈদের দিন এক পথে ঈদ্গাহে যেতেন এবং অন্য পথে প্রত্যাবর্তন করতেন।

৪০। যে নামাজে কসর নাই
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -কে দেখেছি, সফরে ব্যস্ততার কারণ ঘটলে তিনি মাগরিবের নামাজ বিলম্বিত করে তিন রাকাত আদায় করতেন এবং সামান্য দেরী করে এশার নামাজ দুই রাকাত আদায় করে সালাম ফেরাতেন। এশার পর মধ্য রাতে উঠা ভিন্ন কোন নামাজ পড়তেন না।

৪১। মহিলাদের মাহরাম ছাড়া সফর নিষেধ
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, কোন মহিলা তিন দিনের পথ সফর করতে পারবে না যদি না তার সঙ্গে কোন মাহরাম (মাহরাম বলতে এখানে ঐ সকল পুরুষ বুঝায় যাদের সাথে দেখা দেয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ ) থাকে।

(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন, যে মহিলা আল্লাহ’র উপর এবং পরকালের উপর ঈমান রাখে, তার সাথে মাহরাম সাথে না থাকা অবস্থায় একদিন এক রাতের পথ সফর করা হালাল নয়।

৪২। বসে নামাজ পড়লে সওয়াব অর্ধেক
হযরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রাঃ) অর্শ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, আমি নবী করীম (সাঃ) -কে বসে নামাজ পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তিনি বললেন, দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম, বসে পড়লে অর্ধেক সওয়াব, আর শুয়ে পড়লে বসে পড়ার অর্ধেক সওয়াব হবে।

৪৩। নফল এবাদতে শরীরের উপর কঠোরতা সমীচিন নয়
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
একদা নবী করীম (সাঃ) নিজ ঘরে প্রবেশ করে একটি রশি টানানো দেখলেন। তিনি জিজ্ঞাস করলেন, এ রশি টানানো কেন? সকলে উত্তর করল, যয়নব (রাঃ) নামাজ পড়তে পড়তে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েন তখন এর সাহায্য গ্রহন করেন। নবী করীম রশি খুলে ফেলতে বললেন এবং এরশাদ করলেন, এরূপ করার কোন প্রয়োজন নাই। প্রত্যেকের উচিত যতক্ষন মনের প্রফুল্লতা থাকে ততক্ষন (নফল) নামাজ পড়া, যখন ক্লান্তি বোধ হয় তখন বিশ্রাম নেয়া।

৪৪। তিনটি আমল
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
রাসূলুল্লাহ আমাকে তিনটি কাজের আদেশ করেছেন যা মৃত্যু পর্যন্ত আমি তা পরিত্যাগ করবো না। (১) প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখা (২) চাশতের নামাজ পড়া এবং (৩) বেতেরের পর ঘুমানো।

৪৫। নামাজের মধ্যে ইমামকে সতর্ক করা
(হযরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত)-
নামাজের মধ্যে ইমামকে কোন কারণে সতর্ক করার প্রয়োজন পরলে মহিলাগন হাতের উপর হাত মেরে শব্দ করবে এবং পুরুষরা সোবহানাল্লাহ বলবে।

৪৬। কয়েকটি কাজের আদেশ ও নিষেধ
(হযরত আযেব (রাঃ) বর্ণনা হতে)-
আদেশকৃত কাজ - (১) জানাজার সাথে যাওয়া (২) রোগী দেখতে যাওয়া এবং তার খোজ-খবর নেয়া (৩) কারো আহবানে সাড়া দেয়া (৪) মজলুম নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা (৫) শপথকারীর শপথ রক্ষ করা (৬) সালামের উত্তর দেয়া (৭) হাঁচিদাতার আলহামদুলিল্লাহ শ্রবণে ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার উপর রহমত নাজিল করুন বলে দো’য়া করা) বলা।
নিষেধকৃত কাজ- (১) রৌপ্য নির্মিত আংটি (২) সাধারণ রেশমী বস্ত্র (৩) মিহি রেশমী বস্ত্র (৪) মোটা রেশমী বস্ত্র (৫) তসর (৬) লাল রেশমী কাপড়ের গদি বা আসন ব্যবহার না করা।

৪৭। শিশু সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারনের ফজিলত
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে মুসলমানের তিনটি শিশু সন্তান মারা যাবে সে জাহান্নামে যাবে না, অবশ্য সকলের ন্যায় তাকেও জাহান্নামের উপর প্রতিষ্ঠিত পুলসিতার পার হয়ে যাতে হবে। কারণ, এটি একটি অনিবার্য ও অবধারিত বিষয় যা ব্যতিরেকে কোন উপায়ান্ত নাই। স্বয়ং আল্লাহ পাক মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন-
“তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তথায় পৌঁছাবে না। এটা তোমাদের পালনকর্তার অনিবার্য ফয়সালা”।

৪৮। শোক প্রকাশের বিধান
(হযরত মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) -এর এক ছেলের মৃত্যু হল, ঘটনার তিন দিন পর তিনি হলুদ রঙের এক প্রকার সুগন্ধি এনে ব্যবহার করলেন এবং বললেন, আমাদের জন্য একমাত্র স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক শোক প্রকাশ নিষিদ্ধ।

৪৯। বিলাপ করে কাঁদা গুনাহ
(হযরত মুগীরা (রাঃ) বর্ণনা করেন)-
যার মৃত্যুতে বিলাপ করা ক্রন্দন করা হবে, তাকে ঐ ক্রন্দনের দরুন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

৫০। শোক প্রকাশে বেদয়াত
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি শোক প্রকাশে মুখের উপর কপালের উপর থাপ্পড় মারবে বা খেদোক্তি করবে, বিলাপে অন্ধকার যুগের রীতিতে নিজের মৃত্যু, ধংস ইত্যাদি বিষয় আহবান করবে, সে ইসলামের তরীকা বহির্ভূত।
৫১। নয়নে অশ্রু অন্তরে ধৈর্য
(হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন)-
একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে আবু সাইফ কাইনের বাড়িতে উপস্থিত হলাম। ঐ ব্যক্তির গৃহেই হুজুর (সাঃ) এর শিশু পুত্র ইব্রাহিম (রাঃ) প্রতিপালিত হচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পুত্র ইব্রাহিম (রাঃ)-কে কোলে নিয়ে চুম্বন করলেন, বিশেষরূপে আদর করলেন। আবার যেদিন তিনি উক্ত গৃহে উপিস্থিত হলেন সেদিন তাঁর শিশুপুত্রটি শেষ নিঃশ্বাস করলেন। তাঁকে দেখে রাসূল (সাঃ)-এর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু বের হতে লাগল। আব্দুর রহমান ইবনে আ’ওফ নামে এক সাহাবী বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপনিও! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পুনরায় অশ্রু বর্ষনপূর্বক বললেন, নয়নে অশ্রু প্রাণে বেদনা, কিন্তু মুখে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কোন শব্দও উচ্চারিত হবে না। হে ইব্রাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত ও মর্মাহত।

৫২। কবরকে নামাজের স্থান বানানো নিষেধ
(হজরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নবী করিম (সাঃ) মৃত্যুশয্যায় বলেছেন, ইহুদি নাসারাদের প্রতি আল্লাহ-তা’লার লানত, তারা তাদের নবীগণের কবরকে সেজদার স্থান বানিয়েছিল। নবী করিম (সাঃ)-এর কবরকে সেজদার স্থান বানাবার আশংকা না থাকলে তা উন্মুক্ত রাখা হত। আশংকা হয়, তা সেজদার স্থান করা হবে।

৫৩। আত্মহত্যার আজাব
(হযরত জুন্দুব (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
এক ব্যক্তির শরীরে ঘা ছিল, যাতনা সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করল। তার এই কাজে আল্লাহ-তা’লা অসন্তুষ্ট হয়ে বলেন, বান্দা স্বীয় প্রাণ বের করায় যেন আমা হতে অগ্রগামী হয়েছে, অতএব, আমি তার জন্য বেহেস্ত হারাম করে দিলাম।

(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে দোজখের মধ্যেও গলায় ফাঁসি দেয়ার আজাব ভোগ করবে এবং যে ব্যক্তি বর্শা দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে দোজখের মধ্যেও বর্শাঘাতের আজাব ভোগ করবে।

৫৪। মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করা উচিত
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
একদা সাহাবীগণ এক জানাজার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁরা মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করলেন। নবী করিম (সাঃ) বললেন, নির্ধারিত হয়ে গেছে। অতঃপর আর এক জানাজার নিকট দিয়ে চলায় সময় সাহাবীগণ মৃত ব্যক্তির নিন্দা করলেন, এবারও নবী করিম (সাঃ) বললেন, নির্ধারিত হয়ে গেছে। এই শুনে ওমর (রাঃ) জিজ্ঞাস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ কি নির্ধারিত হয়ে গেছে? নবী করিম (সাঃ) বললেন, তোমরা প্রথম মৃতের প্রশংসা করেছ, সে অনুযায়ী তার জন্য বেহেস্ত নির্ধারিত হয়ে গেছে, দ্বিতীয় মৃতকে তোমরা খারাপ বলেছ, সে অনুযায়ী তার দোজখ নির্ধারিত হয়ে গেছে। তোমরা দুনিয়ার বুকে আল্লাহ-তা’লার সাক্ষীস্বরূপ।
যে কোন মুসলমান মৃত ব্যক্তির পক্ষে চার জন লোক তার সৎ বা নেক হওয়ার সাক্ষ্য দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। আমরা জিজ্ঞাস করলাম, যদি তিনজন সাক্ষী হয়। তিন জন হলেও তদ্রূপ হবে। আমরা আবার জিজ্ঞাস করলাম, যদি দু’জন হয় সাক্ষী হয়? নবী করিম (সাঃ) বললেন, দু’জন হলেও তদ্রূপ হবে। অতঃপর আমরা একজন সাক্ষীর বিষয়ে জিজ্ঞাস করি নাই।

৫৫। কবরে প্রশ্নোত্তরের পর
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যখন বান্দাকে কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা ফিরে আসতে থাকে, তখন তাদের জুতার আওয়াজ শোনার মত দূরত্বে যেতেই দুজন ফেরেশতা তার নিকট এসে তাকে বসিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে দেখিয়ে জিজ্ঞাস করবে- এই ব্যক্তি সম্বন্ধে তুমি কি বলতে? মুমিন ব্যক্তি বলবে- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলা হবে- দোজখে তোমার অবস্থান দেখে নাও, যার বদলে আল্লাহ তোমাকে জান্নাতে একটি স্থান দিয়েছেন। সে তখন দুটি স্থানই দেখতে পাবে। তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। মোনাফেক ও কাফেরকে বলা হবে- এ ব্যক্তি (রসূল (সাঃ) সম্পর্কে তুমি কি বলতে? সে বলবে, আমি জানি না। লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে- তুমি জানতে চাও নাই অথবা পড়েও দেখ নাই। এরপর লোহার হাতুড়ি দ্বারা তাকে এমনভাবে আঘাত করা হবে যাতে সে চিৎকার করতে থাকবে। জ্বিন ও মানুষ ছাড়া এই চিৎকার সবাই শুনতে পাবে।

৫৬। কবরে সকাল-সন্ধ্যায় জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হবে
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
তোমাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে সকাল সন্ধ্যায় তাকে বেহেশতে অথবা দোজখে তাকে তার জায়গা দেখানো হবে। জান্নাতী হওয়ার উপযুক্ত হলে জান্নাতে এবং জাহান্নামী হওয়ার উপযুক্ত হলে জাহান্নামে তার জায়গা দেখানো হবে। তাকে বলা হবে- কেয়ামতের দিন পূনর্জীবিত করে উঠাবার পর আল্লাহ তোমাকে এ জায়গা দান করবেন।

৫৭। ধন সম্পদের যাকাত না দিলে শাস্তি
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তিকে আল্লাহ-তা’লা ধন-দৌলত দান করেছেন, কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করে না, কেয়ামতের দিন তার ঐ ধন-দৌলতকে বিরাট আকারের অতি বিষাক্ত অজগরে রূপান্তরিত করা হবে, যার মুখের উভয় পাশে বিষদাঁত থাকবে। অজগরটিকে কেয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির গলায় গলবন্ধরূপে পরিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর আজগরটি উভয় চিবুক পূর্ণ মুখে ঐ ব্যক্তিকে কামড় দিয়ে বিষোদ্গার করতে থাকবে এবং বলবে - আমি তোমারই ধন-সম্পদ, আমি তোমারই রক্ষিত পুজি।

৫৮। নিজে না খেয়ে আপন কন্যাদেরকে খাওয়ানোর ফজিলত
(হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
একদা এক ভিখারিনী দরিদ্র মহিলা আমার কাছে আসল, সঙ্গে তার দুটি কন্যাও ছিল। আমি তাকে একটি মাত্র খোরমার অধিক কিছু দিতে পারলাম না। খোরমাটি পেয়ে সে একটুও খেল না, কন্যাদ্বয়কে দিয়ে দিল। অতঃপর সে চলে গেল। এমতাবস্থায় নবী করিম (সাঃ) আমার ঘরে তশরীফ আনলেন। আমি তাঁকে ঘটনাটি শুনালাম। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি মেয়েদের ভরন পোষণ জোটানোর জন্য কষ্ট সহ্য করে যাবে, ঐ ব্যক্তির জন্য সেই মেয়েগন দোজখ হতে পরিত্রানের অবলম্বন হবে।

৫৯। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্ঠা করা উচিত
(হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
একদা কয়েকজন আনসার (মদীনাবাসী সাহাবী) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে কিছু সাহায্য প্রার্থনা করলেন। তিনি তাঁদেরকে দান করলেন। তাঁরা পুনরায় সাহায্য চাইলেন, তিনি এবারও দান করলেন। এমন কি তাঁর কাছে যা কছু ছিল বারংবার দান করে তা সম্পূর্ণ নিঃশেষ করে ফেললেন। এবার তিনি তাঁদেরকে লক্ষ্য করে বললেন- আমার নিকট টাকা-পয়সা কিছু থাকলে তা তোমাদেরকে না দিয়ে আমি নিজের কাছে কখনও জমা রাখি না। স্মরণ রেখো, যে ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকায় সচেষ্ট হবে, আল্লাহ-তা’লা তাকে তা হতে নিবৃত্ত থাকার সুযোগ ও তওফীক দান করবেন। যে ব্যক্তি কারো মুখাপেক্ষি হবে না, আল্লাহ-তা’লা তাকে পরমুখাপেক্ষিতা হতে বাঁচিয়ে রাখবেন। যে ব্যক্তি কষ্টক্লেশে আপদে-বিপদে দুঃখ যাতনায় ধৈর্য ধারণে সচেষ্ট হবে, আল্লাহ-তা’লা তাকে ধৈর্যাবলম্বনে সাহায্য করবেন। ধৈর্যের ন্যায় প্রশস্ত ও উত্তম নেয়ামত দুনিয়াতে আর কিছুই নেই।

৬০। অভাব প্রকাশ না করা উচিত
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণিত)-
ঐ ব্যক্তি মিসকিন নয় যে দু-একটি খোরমার জন্য লোকেদের কাছে ঘুড়ে বেড়ায়। প্রকৃত মিসকিন ঐ ব্যক্তি, যার অভাব আছে কিন্তু তা প্রকাশ পায় না, যাতে তাকে দান খয়রাত করা যেতে পারে। নিজেও লোকদের কাছে চাইতে দাঁড়ায় না।

নামাজের দোয়া সমুহ (বাংলা তর্জমা সহ)

| comments (11)

জায়নামাজের দোয়াঃ
জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ শুরুর পূর্বেই এই দোয়া পড়তে হয়,
বাংলা উচ্চারন-ইন্নি ওয়াজ্জাহ তু ওয়াজ্ হিয়া লিল্লাজি, ফাত্বরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল্ আরদ্বঅ হানি-ফাওঁ ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকী-ন।


অর্থ-নিশ্চই আমি তারই দিকে মুখ করলাম, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং বাস্তবিকই আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই ।


এরপর নামাজের নিয়াত ও তাক্ বীরে তাহঃরীমা
নামাজের ইচ্ছা করাই হচ্ছে নামাজের নিয়াত করা। মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়, তবে মুস্তাহাব।
সমস্ত নামাজেই ,নাওয়াইঃতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া'লা


(২ রাকাত হলে) রাক্ 'য়াতাই ছালাতিল
(৩ রাকাত হলে) ছালাছা রাক্ 'য়াতাই ছালাতিল
(৪ রাকাত হলে) আর্ বায় রাক্ 'য়াতাই ছালাতিল


(ওয়াক্তের নাম) ফাজ্ রি/ জ্জুহরি/আ'ছরি/মাগরিবি/ইশাই/জুমুয়া'তি


(কি নামাজ তার নাম) ফারদ্বুল্ল-হি/ওয়াজিবুল্ল-হি/সুন্নাতু রসূলিল্লাহি/নাফলি।


(সমস্ত নামাজেই) তায়া'লা মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা জিহাতিল্ কা'বাতিশ শারীফাতি আল্ল-হু আক্ বার।




বাংলায় নিয়াত করতে চাইলে বলতে হবে,
আমি আল্ল-হ্'র উদ্দেশ্যে ক্কেবল মুখী হয়ে,
ফজরের/জোহরের/আসরের/মাফরিবের/ঈশার/জুময়ার/বি'তরের/তারঅবি/তাহাজ্জুদের (অথবা যে নামাজ হয় তার নাম)
২ র'কাত/৩র'কাত/৪ র'কাত (যে কয় রাকাত নামাজ তার নাম)
ফরজ/ওয়াজিব/সুন্নাত/নফল নামাজ পড়ার নিয়াত করলাম, আল্ল-হু আকবার ।




তাকবীরে তাহরীমা- আল্লাহু আক্ বার, অর্থ-আল্লাহ মহান ।


সানাঃ (হাত বাধার পর এই দোয়া পড়তে হয়)
উচ্চারণ : সুবহা-না কাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহাম্ দিকা ওয়াতাবারঅ কাস্ মুকা ওয়াতা’ আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুক।
অর্থ-হে আল্লাহ ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার মহিমা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বরকতময়, আপনার মাহাত্ম্য সর্বোচ্চ এবং আপনি ভিন্ন কেহই ইবাদতের যোগ্য নয় ।


তাআ’উজঃ
উচ্চারণ- আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম ।
অর্থ-বিতশয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।


তাসমিয়াঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ।
অর্থ-পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি ।


এরপর সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হয়, সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের পর পবিত্র কোর আনের যে কোন জায়গা থেকে তিলাওয়াত করতে হয় ।


রুকুর তাসবীহঃ
উচ্চারণ-সুবহা-না রব্ বি ইঃয়াল্ আ'জ্বীম। অর্থ-মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহাত্মতা ঘোষণা করছি ।


তাসমীঃ (রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পড়তে হয়) সামি আল্লা হুলিমান হামিদাহ,
অর্থ-প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শোনেন ।


তাহমীদঃ(রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়) রাব্বানা লাকাল হামদ । অর্থ-হে আমার প্রভু, সমস্ত প্রশংসা আপনারই ।


সিজদার তাসবীহঃ
উচ্চারণ-সুবহা-না রাব্বিয়াল আ'লা। অর্থ-আমার প্রতিপালক যিনি সর্বশ্রেষ্ট, তারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি ।


দু'সিজদার মাঝখানে পড়ার দোয়াঃ
উচ্চারণ-আল্লাহু ম্মাগ ফিরলী ওয়ার হামনি ওয়ার যুক্কনী ।
অর্থ- হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে রিজিক দিন ।
তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতুঃ
উচ্চারণঃ আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি, ওয়াছ ছালা-ওয়াতু, ওয়াত-তাইয়্যিবা তু, আচ্ছালা মু আ'লাইকা, আইয়্যুহান নাবিয়্যু, ওয়ারাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আচ্ছালামু আলাইনা, ওয়া আ'লা ইবাদিল্লা হিছ-ছা লিহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু ।


অর্থঃ আমাদের সব সালাম শ্রদ্ধা, আমাদের সব নামাজ এবং সকল প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবী, আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক । আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল ।
দরুদ শরীফঃ
উচ্চারণ-আল্লহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ'লা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আ'লা ইব্রহীমা ওয়া আ'লা আ-লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজী-দ্ ।আল্লাহুম্মা বারিক্ আ'লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ'লা আ'লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আ'লা ইব্রহীমা ওয়া আ'লা আ'লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ ।


অর্থ-হে আল্লাহ, দয়া ও রহমত করুন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন রহমত করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি উত্তম গুনের আধার এবং মহান। হে আল্লাহ, বরকত নাযিল করুন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর।নিশ্চই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও সম্মানের অধিকারী ।


দোয়ায়ে মাসূরাঃ
উচ্চারন-আল্লা-হুম্মা ইন্নী জ্বলামতু নাফসী জুলমান কাছীরও ওয়ালা ইয়াগফিরু যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগ্ ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।


অর্থ-হে মহান আল্লাহ, আমি আমার নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি (অর্থাৎ অনেক গুনাহ/পাপ করেছি) কিন্তু আপনি ব্যতীত অন্য কেহ গুনাহ মাফ করতে পারে না। অতএব হে আল্লাহ অনুগ্রহ পূর্বক আমার গুনাহ মাফ করে দিন এবং আমার প্রতি সদয় হোন; নিশ্চই আপনি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।
দোয়ায়ে কুনুতঃ (বিতরের নামাজের পর ৩য় রাকায়াতে সূরা ফাতিহা ও অন্য কিরআত পড়ার পর এই দোয়া পড়তে হয় )।


উচ্চারণ-"আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতা'ঈনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়া নু'মিনু বিকা ওয়া না তা ওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখ লা, ওয়া নাত রুকু মাইয়্যাফ জুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না'বুদু ওয়ালাকা নুছাল্লি ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাস'আ, ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখ'শা আযাবাকা ইন্না আযা-বাকা বিল কুফফা-রি মুল হিক ।"


অর্থ-হে আল্লাহ, আমারা আপনার নিকট সাহায্য চাই। আপনার নিকট গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা কেবল মাত্র আপনার উপরেই ভরসা করি। সর্বপ্রকার কল্যান ও মংগলের সাথে আপনার প্রশংসা করি। আমরা আপনার শোকর আদায় করি, আপনার দানকে অস্বীকার করি না।আপনার নিকট ওয়াদা করছি যা, আপনার অবাধ্য লোকদের সাথে আমরা কোন সম্পর্ক রাখব না-তাদেরকে পরিত্যাগ করব । হে আল্লাহ, আমরা আপনারই দাসত্ব স্বীকার করি। কেবলমাত্র আপনার জন্যই নামাজ পড়ি, কেবল আপনাকেই সিজদা করি এবং আমাদের সকল প্রকার চেষ্টা-সাধনা ও কষ্ট স্বীকার কেবল আপনার সন্ততুষ্টির জন্যই । আমরা কেবল আপনার ই রহমত লাভের আশা করি, আপনার আযাবকে আমাওরা ভয় করি। নিশ্চই আপনার আযাবে কেবল কাফেরগনই নিক্ষিপ্ত হবে।

চলাফেরায় উঠা বসায় সুন্নতি আমল

| comments

১. কোনো কিছু আরম্ভ করার পূর্বে = বিসমিল্লাহ
২. কোনো কিছু করার উদ্দেশ্য = ইনশাল্লাহ
৩. কোনো বিস্ময়কর বিষয় দেখলে = সুবহানাল্লাহ
৪. কষ্টে ও যন্ত্রণায় = ইয়া আল্লাহ
৫. প্রশংসার বহিঃপ্রকাশ = মাশাআল্লাহ
৬. ধন্যবাদ জ্ঞাপনে = যাজাকাল্লাহ
৭. ঘুম থেকে জাগ্রত হবার পর = লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ
৮. শপথ নেয়ার সময় = ওয়াল্লাহি বিল্লাহ
৯. হাঁচি দেয়ার পর = আলহামদু লিল্লাহ
১০. অন্য কেউ হাঁচি দিলে = ইয়ার হামুকাল্লাহ
১১. জিজ্ঞাসার জবাবে = আলহামদু লিল্লাহ
১২. পাপের অনুশোচনায় = আসতাগফিরুল্লাহ
১৩. পরপোকার করার সময় = ফিসাবিলিল্লাহ
১৪. কাউকে ভালোবাসলে = লিহুব্বিল্লাহ
১৫. বিদায়ের সময় = ফিআমানিল্লাহ
১৬. সমস্যা দেখা দিলে = তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ
১৭. অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে = নাওযুবিল্লাহ
১৮. আনন্দদায়ক কিছু দেখলে = ফাতাবারাকাল্লাহ
১৯. প্রার্থনায় অংশগ্রহণ শেষে = আমীন
২০. মৃত্যু সংবাদ শুনলে = ইন্নালিল্লাহি-ওয়া-ইন্না ইলাইহি রাজিউন

১০টি হাদীস

| comments

১. “তোমাদের মধ্যে আমার নিকট সেই ব্যক্তি বেশী প্রিয় যে বেশী চরিত্রবান।” ( বোখারী)
২. “কোন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যাই শোনে তাই যাচাই না করেই অন্যের কাছে বর্ণনা করে দেয়।” (মুসলিম)
৩. “হৃদয়রে প্রাচুর্যই প্রকৃত প্রাচুর্য।” (বোাখারী)
৪. “আল্লাহ তায়ালার নিকট সেই আমলই সব চাইতে প্রিয় যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়।” (বোখারী)
৫. “যখন তুমি লজ্জা করবে না, তখন যা ইচ্ছা তাই কর।” (অর্থাৎ যখন লজ্জা নাই, তখন সকল প্রকার মন্দই সমান) (বোখারী)
৬. “ঐ ব্যক্তি বীর নয় যে কুস্তিতে লোকজনকে পরাভূত করে বরং বীর ঐ ব্যক্তি যে ক্রোধের সময় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে।” (বোখারী)
৭. “যে ব্যক্তি নম্র আচরণ হতে বন্ঞিত সে সকল প্রকার কল্যাণ হতে বন্ঞিত।” (মুসলিম)
৮. “ঐ ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ মুসলমান যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট হতে মুসলমানগন নিরাপদ থাকে।” (মুসলিম)
৯. “আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।” (বোখারী)
১০. “যার অনিষ্ট হতে তার প্রতিবেশীগণ নিরাপদ নয়, সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (বোখারী)
১১. ~যার অনিষ্ট হতে তার প্রতিবেশীগণ নিরাপদ নয়, সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।"

(বোখারী)
১২. ~পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করিও না, একে অন্যের ছিদ্রান্বেষণ করিও না, পরস্পরে ঈর্ষা পোষণ করিও না, একে অন্যকে হিংসা করিও না এবং হে আল্রাহর বান্দাগণ তোমরা সকলে ভাই ভাই হইয়া বাস কর।" (বোখারী)
১৩. ~কবরসমূহকে সিজদার জায়গা বানাইও না।" (মুসলিম)
১৪. ~ তোমরা শাসনকর্তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে এবং তাঁর অনুগত থাকবে_- অত্যন্ত ছোট মাথাবিশিষ্ট কৃষ্ঞবর্ণ হাবশী লোককেও যদি তোমাদের উপর শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়।" (বোখারী)
১৫. খানসা বিনতে খেযাম (রা.) মদীনাবাসিনী নারী সাহাবী হতে বর্ণিত আছে, তিনি বিবাহিতা ছিলেন, পরবর্তী বিবাহকালে তাঁর পিতা তাঁকে বিবাহ দিয়া দেন, অথচ তিনি সেই বিবাহে মোটেই সম্মত ছিলেন না। তিনি হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিকট উপস্থিত হয়ে ঘটনা জ্ঞাত করিলেন। হযরত (সা.) সেই বিবাহ বাতিল করে দিলেন।

(বোখারী)
১৬. একবার বিবাহ হয়েছে এরুপ নারীকে (দ্বিতীয় বার) বিবাহ দানে তাহার স্পষ্ট অনুমতি গ্রহণ করতে হবে এবং কুমারীকে বিবাহ দানেও তাহার সম্মতি নিতে হবে।
(বোখারী)
১৭. ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, রোগীকে দেখতে যাও এবং ক্রীতদাসকে মুক্ত কর।
(বোখারী)
১৮. ব্যাঙের ছাতা (মাশরুম) ‘মন্ন’ তুল্য; তার রস চোখের জন্য ভাল ঔষধ।
(বোখারী)
১৯. কোন কিছুকে অশুভ অমঙ্গল বা কুলক্ষণ গণ্য করিও না-ঐরুপ ধারণা অলীক ভিত্তিহীন।
(বোখারী)
২০. যে কোন মুসলমান কোন বৃক্ষ রোপণ করল, অত:পর উহা হতে কোন পশু বা মানুষ কিছু অংশ খেল, তাতে ঐ ব্যক্তি দান-খয়রাত করার সওয়াব লাভ করবে।
(বোখারী)
২১. যে ব্যক্তি অত্যাচার করে অর্ধহাত যমীন দখল করতে, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন অনুরুপ সাতটি যমীন তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হবে।
(বোখারী)
২২. বিচারক তিন প্রকার। এক শ্রেণীর বিচারক জান্নাতী, আর দুই শ্রেণীর বিচারক জাহন্নামী। (১) যে বিচারক সত্য উপলব্ধি করে এবং তদনুযায়ী বিচার করে সে জান্নাতী। (২) যে বিচারক সত্য উপলব্ধি করতে পারে কিন্তু তদনুযায়ী বিচার করে না, সে জাহান্নামী। (৩) আর এক শ্রেণীর বিচারক সত্য উপলব্ধি করতে পারে না। অজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচার করে সেও জাহান্নামী।
(আবু দাউদ)
২৩. নিশ্চয়ই সূদ এমন বস্তু যার পরিণাম হচ্ছে সংকুচিত হওয়া যদিও তা বৃদ্ধি মনে হয়।
(ইবনে মাজাহ)
২৪. আল্লাহ তায়ালা তিন শ্রেণীর লোকের সাথে ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। (১) বয়সপ্রাপ্ত যেনাকার (২) মিথ্যুক শাসক (৩) অহংকারী দরিদ্র।
(মুসলিম)

সুরা তাকাছুর

| comments

পরম করুনাময় ও অত্যন্ত দাতা আল্লাহর নামে


১।আল হা কুমুত তাকাছুর
প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে।


২।হাত তা ঝুর তুমুল মাকাবীর
এমনকি তোমরা কবর পর্যন্ত পৌছে যাও।
৩।কাল্লা ছাওফা তা’ লামুন
এটা কখনও উচিত নয়, তোমরা শিগগিরই জেনে যাবে।


৪।ছুম্মা কাল্লা ছাওফা তা’ লামুন
অতঃপর এটা কখনও উচিত নয়। তোমরা শিগগিরই জেনে যাবে।


৫।কাল্লা লাও তা’ লামুনা ইল মাল ইয়াকীন
কখনই নয় ; যদি তোমরা নিশ্চিত জানতে।


৬।লা তারা উন্নাল জাহীম
তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে,


৭।ছুম্মা লা তারা উন্না হা আইনাল ইয়াকীন
অতঃপর তোমরা তা অবশ্যই দেখবে দিব্য-প্রত্যয়ে,


৮।ছুম্মা লা তুছ আলুন্না ইয়াও মা ইঝিন আনিল নায়িম।
এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিগ্গাসিত হবে।

৪০ টি হাদিস

| comments

ফাজায়েলঃ
হুজুর সাঃ এরসাদ ফরমাইয়াছেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য দ্বীনি বিষয়ের উপর ৪০ টি হাদিস সংরক্ষন করিবে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন আলেম হিসাবে উঠাইবেন এবং আমি তাহার জন্য সুপারিশকারী ও সাক্ষী হব।
১।হযরত ওসমান রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কোরান শরীফ শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।
২।হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা ফরমান, যে ব্যাক্তি কোরান শরীফে মশগুল থাকার কারনে যিকির করার ও দোয়া করার অবসর পায় না আমি তাকে সকল দোয়া করনেওয়ালাদের চাইতে বেশী দিয়া থাকি। আর আল্লাহ তায়ালার কালামের মর্যাদা সমস্ত কালামের উপর এইরুপ যেমন স্বয়ং আল্লাহতায়ালার মর্যাদা সমস্ত মাখলুকের উপর।
৩।হযরত উকবা ইবনে আমের রাঃ
হতে বর্নিত, আমরা মসজিদে নববীর ছুফফায় বসা ছিলাম। এমন সময় হুজুর পাক সাঃ তশরীক আনিলেন এবং বলিলেন, তোমাদের মধ্যে কে ইহা পছন্দ করে যে সকাল বেলা বুতহান বা আকিক নামক বাজারে গিয়া কোন রুপ গোনাহ বা আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করিয়া ২টি অতি উত্তম উটনী লইয়া আসিবে? সাহাবা কেরাম রাঃ আরজ করিলেন ইহা তো আমাদের সকলেই পছন্দ করিবে। হুজুর সাঃ বলিলেন মসজিদে গিয়া ২টি আয়াত পড়া বা ২টি আয়াত শিক্ষা দেয়া ২টি উটনী হতে, ৩টি আয়াত ৩টি উটনী হতে এমনিভাবে ৪টি আয়াত ৪টি উটনী হতে উত্তম এবং ঐগুলির সমপরিমান উট হতে উত্তম।
৪।হযরত আয়েশা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, কোরানের পারদর্শী ব্যাক্তি ঐ সকল ফেরেশতাদের দলভুক্ত হবে যারা লেখার কাজে নিয়োজিত এবং নেককার। আর যে ব্যক্তি কষ্ট করিয়া ঠেকিয়া ঠেকিয়া কোরান শরীফ পড়ে সে দ্বিগুন সওয়াব পাবে।
৫।হযরত ইবনে ওমর রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, ২ ব্যক্তি ছাড়া কারো উপর হাছাদ (অর্থাৎ হিংসা) জায়েজ নাই। এক ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহতায়ালা কোরান শরীফ তেলোয়াতের তওফীক দিয়াছেন এবং সে দিন রাত উহাতে মশগুল থাকে। দ্বিতীয় ঐ ব্যক্তি যাহাকে আল্লাহতায়ালা প্রচুর ধনসম্পদ দান করেছেন এবং সে দিন রাত্র উহা হতে (আল্লাহর রাস্তায় খরচ করিতে থাকে)
৬।হযরত আবু মুসা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে মুসলমান কোরান তেলোয়াত করে তার দৃষ্টান্ত হলো তুরনজ বা কমলালেবুর ন্যয়। যার খোশবুও উত্তম এবং স্বাদ ও চমতকার। আর যে মুসলমান কোরান শরীফ পাঠ করে না তার দৃষ্টান্ত হলো খেজুরের ন্যয়। যার কোন খোশবু নাই কিন্তূ স্বাদ খুবই মিষ্ট। আর যে মুনাফিক কোরান শরীফ পাঠ করে না তার দৃষ্টান্ত হলো হাঞ্জাল ফলের ন্যয়। যার স্বাদ তিক্ত এবং কোন খোশবু নাই। আর যে মুনাফিক কোরান শরীফ পাঠ করে তার দৃষ্টান্ত হলো সুগন্ধি ফুলের ন্যয়। যার খোশবু চমতকার কিন্তূ স্বাদ তিক্ত।
৭।হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা এই কিতাব অর্থা কোরানে পাকের দ্বারা বহু লোককে উচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং বহু লোককে নিচু ও অপদস্থ করেন।
৮।হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, ৩ টি জিনিস কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নিচে থাকিবে। প্রথমত কালামে পাক। উহা সেদিন বান্দার ব্যাপারে ঝগড়া করিবে। এই কোরানের জাহের এবং বাতেন ২ টি দিক রয়েছে। দ্বিতীয়ত আমান ত। তৃতীয়ত আত্নীয়তা। ইহা সেদিন উচ্চ আওয়াজে বলিতে থাকিবে, যে ব্যক্তি আমাকে রক্ষা করেছে আল্লাহ তায়ালা তাকে আপন রহমতের সাথে মিলাইয়া দিন। আর যে ব্যক্তি আমাকে ছিন্ন করেছে আল্লাহ তায়ালা তাকে আপন রহমত হথে পৃথক করিয়া দিন।
৯।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন ছাহেবে কোরানকে বলা হবে, কোরান শরীফ পড়িতে থাক এবং বেহেশ্তের মর্যাদার স্তরসমূহে আরোহন করিতে থাক এবং থামিয়া থামিয়া পড় যেভাবে তুমি দুনিয়াতে থামিয়া থামিয়া পড়িতে। তোমার মর্যাদা উহাই হইবে যখন তুমি শেষ আয়াতে পৌছিবে।
১০।হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোরানের একটি অক্ষর পড়িবে, উহার বিনিময়ে সে একটি নেকী লাভ করিবে এবং এক নেকীর সওয়াব ১০ নেকীর সমান হবে। আমি এই কথা বলি না যে পুরা আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর বরঙ আলিফ এক অক্ষর, লাম এক অক্ষর, মীম এক অক্ষর।
১১।হযরত মুয়ায জুহানী রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোরান পড়িবে এবং উহার উপর আমল করিবে তাহার পিতামাতাকে কেয়ামতের দিন এমন একটি মুকুট পড়ানো হবে, যাহার আলো সূর্যের আলো হতেও বেশী হবে যদি সেই সূর্য তোমাদের ঘরে হয়। সুতরাং যে নিজে কোরানের উপর আমল করে তার সম্পর্কে তোমাদের কি ধারনা।
১২।হযরত উকবা ইবনে আমের রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যদি কোরান শরীফকে কোন চামড়ার মধ্যে রেখে আগুনের মধ্যে ফেলিয়া দেয়া হয়, তবে উহা পুড়িবে না।
১৩।হযরত আলী রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোরান পড়িল, অতঃপ র উহার হেফজ ইয়াদ করিল এবং উহার হালাল কে হালাল এবং হারাম কে হারাম জানিল, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন এবং তাহার পরিবারের এমন ১০ জন লোকের জন্য তাহার সুপারিশ কবুল করবেন যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গিয়েছে।
১৪।হযরত আবু হুরায়রা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, তোমরা কোরান শিক্ষা কর। অতঃপর উহা তেলোয়াত কর। কেননা যে ব্যক্তি কোরান শিক্ষা করে ও তেলোয়াত করে এবং তাহাজ্জুত নামাজ পড়িতে থাকে, তাহার দৃষ্টান্ত ঐ থলির মতো যাহা মেশকের দ্বারা ভরপুর। উহার খোশবু সর্বত্র ছড়াইয়া পড়ে। আর যে ব্যক্তি কোরান শিক্ষা করিল এবং রাত্রে ঘুমাইয়া কাটাইয়া দিল তাহার দ্রৃষ্টান্ত মেশকের ঐ থলির মতো যাহার মুখ বন্ধ করিয়া দেয়া হইয়াছে।
১৫।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তির অন্তরে কোরানের কোন অংশই রক্ষিত নাই, উহা বিরান ঘরের মতো।
১৬।হযরত আয়েশা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, নামাজের ভিতর কোরান তেলোয়াত করা নামাজের বাহিরে কোরান তেলোয়াত করা হইতে উত্তম। আর নামাজের বাহিরে তেলোয়াত করা তাসবীহ ও তাকবীর হইতে উত্তম। আর তাসবীহ পড়া ছদকা হইতে উত্তম। আর ছদকা রোজা হইতে উত্তম। আর রোজা দোযখ হইতে বাচিবার ঢালস্বরুপ।
১৭।হযরত আবু হুরায়রা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কি কেহ ইহা পচ্ছন্দ করে যে, সে বাড়ি ফিরিয়া ৩ টি মোটা তাজা গর্ভবর্তী উটনী পাইয়া যাবে? আমরা আরজ করিলাম, অবশ্যই আমরা ইহা পচ্ছন্দ করি। হুজুর সাঃ বলিলেন, কেহ যদি নামাজে ৩ টি আয়াত তেলোয়াত করে তবে উহা ৩ টি মোটা তাজা গর্ভবর্তী উটনী হইতে উত্তম।
১৮।হযরত আউস ছাকাফী রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, কোরান শরীফ মুখস্থ পড়িলে ১০০০ গুন ছওয়াব হয়। আর দেখিয়া পড়িলে ২০০০ গুন পর্যন্ত ছওয়াব বৃদ্ধি পায়।
১৯।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, মানুষের অন্তরেও মরিচা পড়িয়া যায় যেমন লোহাতে পানি পাওয়ার কারনে মরিচা পড়িয়া যায়। জিজ্ঞাসা করা হইল ইয়া রাসুলুল্লাহ সাঃ ইহা পরিষ্কার করার উপায় কি? তিনি বলিলেন, মৃত্যুকে বেশী করিয়া স্মরন করা এবং কোরান পাকের তেলোয়াত করা।
২০।হযরত আয়েশা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, প্রত্যেক জিনিসের কোন না কোন গর্ব ও মর্যাদার বিষয় থাকে, যাহা দ্বারা সে গর্ব করিয়া থাকে। আমার উম্মতের গর্ব ও মর্যাদার বিষয় হলো কোরান শরীফ।
২১।হযরত আবূ যর গিফারী রাঃ
বলেন, আমি হুজুর পাক সাঃ এর নিকট দরখাস্ত করিলাম যে আমাকে কিছু নসীহত করুন। হুজুর সাঃ ফরমাইলেন, তাকওয়া অবলম্বন কর কেননা উহা সমস্ত নেক আমলের মুল। আমি আরজ করিলাম আরো কিছু নসীহত করুন। হুজুর সাঃ ফরমাইলেন, কোরান তেলোয়াতের এহতেমাম কর কেননা উহা দুনিয়াতে তোমার জন্য নূর এবং আখেরাতে সঞ্চিত ধনভান্ডার।
২২।হযরত আবু হুরায়রা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যখন কোন জামাত আল্লাহর ঘরে একত্রিত হয়ে কোরান পাকের তেলোয়াত ও দাওর করে, তখন তাদের উপর ছাকীনা নাজিল হয়, আল্লাহর রহমত তাদের ঢাকিয়া লয়, রহমতের ফেরেশ্তাগন তাদের ঢাকিয়া লয় এবং আল্লাহ পাক ফেরেশ্তাদের মজলিসে তাদের আলোচনা করেন।
২৩।হযরত আবূ যর রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালার প্রতি রুজু ও তাঁর দরবারে নৈকট্য ঐ জিনিস হতে অধিক আর কোন জিনিস দ্বারা হাসিল করিতে পারিবে না, যাহা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হতে বের হয়েছে অর্থাৎ কালামে পাক।
২৪।হযরত আনাস রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, লোকদের মধ্যে হতে কিছু লোক আল্লাহ তায়ালার ঘরোয়া খাছ লোক। সাহাবীগন আরজ করিলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ সাঃ তাহারা কোন লোক। হুজুর সাঃ ফরমাইলেন, তাহারা হলো কোরান শরীফ ওয়ালা। তাহারাই আল্লাহ তায়ালার আপন ও খাছ লোক।
২৫।হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা কারো প্রতি এত মনোযোগ দেন না যত মনোযোগের সহিত ঐ নবীর আওয়াজকে শুনেন যিনি সুমিষ্ট স্বরে আল্লাহর কালাম পাঠ করেন।
২৬।হযরত ফাযালা ইবনে উবাইদ রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা কোরান তেলোয়াতকারীর আওয়াজ ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক মনোযোগের সহিত শ্রবন করেন যে আপন গায়িকা বাঁদীর গান কান লাগাইয়া শ্রবন করিতেছে।
২৭।হযরত উবাইদা মুলাইকী রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, হে কোরানওয়ালাগন ! তোমরা কোরান শরীফের সহিত টেক লাগাইও না। রাত্র দিন কোরানের হক আদায় করিয়া তেলোয়াত কর। কোরান পাকের প্রচার প্রসার কর ও উহাকে মধুর সুরে তেলোয়াত কর। উহার অর্থের মধ্যে চিন্তাফিকির কর যাহাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। দুনিয়াতে উহার বদলা চাইও না, আখেরাতে উহার জন্য বড় বদলা ও প্রতিদান রহিয়াছে।
২৮।হযরত ওয়াসেলা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, আমাকে তাওরাতের পরিবর্তে ৭ টি তিওয়াল দেয়া হয়েছে। যবূর এর পরিবর্তে মিঈন এবং ইঙ্গিল এর পরিবর্তে মাছানী দেয়া হয়েছে। আর মুফাসসাল আমাকে অতিরিক্ত দেয়া হয়েছে।
২৯।হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ
বলেন, একদিন আমি গরীব মুহাজেরদের জামাতের সাথে বসে ছিলাম। তাহাদের নিকট এই পরিমান কাপড়ও ছিল না যাহা দ্বারা পুরা শরীর ঢাকিতে পারেন। একজন আরেকজনের আড়াল গ্রহন করিতেছিলেন। এক ব্যক্তি কোরান শরীফ পড়িতেছিলেন। এমন সময় হুজুর পাক সাঃ তশরীফ আনিলেন এবং একেবারে আমাদের নিকট দাঁড়াইয়া গেলেন। হুজুর পাক সাঃ এর আগমনে তেলোয়াতকারী চুপ হয়ে গেলেন। তখন হুজুর পাক সাঃ সালাম করিলেন, অতঃপর জিজ্ঞাসা করিলেন তোমরা কি করিতেছিলে? আমরা আরজ করিলাম আল্লাহর কালাম শুনিতেছিলাম। হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহতায়ালার জন্য যিনি আমার উম্মতের মধ্যে এমন লোক পয়দা করেছেন, যাহাদের নিকট আমাকে বসিবার হুকুম করা হয়েছে। অতঃপর হুজুর পাক সাঃ আমাদের মাঝখানে এমনভাবে বসিলেন যেন আমরা সকলেই সমান দুরত্বে থাকি, কাহারো নিকটেও নয় আবার কাহারো নিকট হতে দুরেও নয়। অতঃপর আমাদের গোলাকার হইয়া বসিতে বলিলেন। সকলেই হুজুর পাক সাঃ এর দিকে মুখ ফিরিয়া বসিয়া গেলেন। হুজুর পাক সাঃ এরশাদ ক রিলেন, হে গরীব মুহাজেরীন ! তোমাদের জন্য সুসংবাদ। কেয়ামতের দিন তোমরা পরিপূর্ন নূর প্রাপ্ত হবে এবং তোমরা ধনীদের হতে অর্ধদিন আগে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আর এই অর্ধদিন ৫০০ বছরের সমান হবে।
৩০।হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোরান পাকের ১ টি আয়াত শুনে তাহার জন্য দ্বিগুন ছওয়াব লেখা হয়। আর যে ব্যক্তি তেলোয়াত করে তাহার জন্য কিয়ামতের দিন নূর হবে।
৩১।হযরত উকবা ইবনে আমের রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, শব্দ করে কোরান তেলোয়াতকারী প্রকাশ্যে ছদকা করনেওয়ালার সমতূল্য। আর আস্তে তেলোয়াতকারী গোপনে ছদকা করার সমতূল্য।
৩২।হযরত জাবের রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, কোরান পাক এমন সুপারিশকারী যার সুপারীশ কবুল করা হয়েছে এবং এমন বিতর্ককারী যার বিতর্ক মানিয়া লওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি উহাকে সম্মুখে রাখে তাকে সে জান্নাতের দিকে টানিয়া লইয়া যায়। আর যে উহাকে পিছনে ফেলে সে তাহাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।
৩৩।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, রোযা ও কোরান উভয়েই বান্দার জন্য সুপারিশ ক রে। রো্যা আরজ করে হে আল্লাহ আমি তাকে দিনের বেলা খাওয়া ও পানাহার হতে বিরত রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরান শরীফ বলে হে আল্লাহ আমি তাকে রাত্রে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, আমার সুপারিশ কবুল করুন। সুতরাং উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হয়।
৩৪।হযরত সায়ীদ ইবনে সুলাইম রঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে কোরানের চেয়ে বড় আর কোন সুপারিশকারী হবে না। না কোন নবী, না কোন ফেরেশ্তা আর না অন্য কেহ।
৩৫।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোরান শরীফ পড়িল সে এলমে নবু্য্যতকে আপন দুই পাঁজরের মাঝখানে ধারন করিল, যদিও তার নিকট ওহী পাঠানো হয় না। কোরানের বাহকের জন্য ইহা উচিত নয় যে কোন ব্যক্তি তার সাথে গ্বোসা করলে সেও তার সাথে গ্বোসা করবে অথবা মূর্খদের সাথে মুর্খতা করবে। কেননা তার ভিতর আল্লাহর কালাম রয়েছে।
৩৬।হযরত ইবনে ওমর রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, ৩ ব্যক্তি এমন হবে যারা কেয়ামতের ভয়ঙ্কর বিপদেও ভীত হবে না। তাহাদের হিসাব নিকাশও দিতে হবে না। সমস্ত মাখলুক যখন তাহাদের নিজেদের হিসাব নিকাশে ব্যস্ত থাকবে তখন তারা মেশকের টিলার উপর আনন্দ করবে।
প্রথমত ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর সন্তূষ্টির জন্য কোরান শরীফ পড়েছে এবং এমনভাবে ইমামতি করেছে যে মুক্তাদিগন তার উপর সন্তূষ্ট ছিল।
দ্বিতীয়ত ঐ ব্যক্তি যে শধুমাত্র আল্লাহর সন্তূষ্টির জন্য মানুষকে নামাজের দিকে ডাকে।
তৃতীয়ত ওই ব্যক্তি যে নিজের মনিব এবং অধীনস্থ লোক উভয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করে।
৩৭।হযরত আবূ যর রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, হে আবূ যর, তুমি যদি সকালবেলা গিয়া কালামুল্লাহ শরীফের ১ টি আয়াত শিক্ষা কর তবে উহা ১০০ রাকাত নফল নামাজ অপেক্ষা উত্তম। আর যদি এলেমের ১ ট অধ্যায় শিক্ষা কর, চাই উহার উপর আমল করা হউক বা না হউক তবে উহা ১০০০ রাকাত নফল নামাজ অপেক্ষা উত্তম।
৩৮।হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন রাত্রে ১০ টি আয়াত তেলোয়াত করিবে সে ঐ রাত্রে গাফেলদের মধ্যে গন্য হবে না।
৩৯।হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ
হতে বর্নিত হুজুর পাক সাঃ এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এই ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করিবে, সে গাফেলদের মধ্যে গন্য হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন রাত্রে ১০০ টি আয়াত তেলোয়াত করিবে সে ঐ রাত্রে কানেতীন (দীর্ঘক্ষন দাঁড়াইয়া নামাজ আদায়কারী) দের অন্তর্ভূক্ত হবে।
৪০।হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ
হতে বর্নিত জীবরাঈল আঃ হুজুর পাক সাঃ কে সংবাদ দিলেন যে, বহু ফেতনা প্রকাশ পাবে। হুজুর সাঃ জিজ্ঞাসা করিলেন যে এইগুলি হতে বাঁচিয়া থাকার উপায় কি? তিনি বলিলেন কোরান শরীফ।

সুরা আন নাছ(মানুষ)এর বাংলা অর্থ

| comments

আল্লাহর নাম নিয়ে যিনি রহমান, রহীম
১) তুমি বলে যাও- আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রভুর কাছে,
২)মানুষের মালিকের,
৩)মানুষের উপাস্যের,
৪)গোপনে আনাগোনাকারীর কুমন্ত্রনার অনিষ্ট থেকে,-
৫) যে মানুষের বুকের ভিতরে কুমন্ত্রনা দেয়,
৬)জীনের অথবা মানুষের মধ্যে থেকে।

সুরা আল ফাল্বাক(নিশিভোর)এর বাংলা অর্থ

| comments

আল্লাহর নাম নিয়ে যিনি রহমান, রহীম
১)তুমি বলো আমি আশ্রয় চাচ্ছি নিশিভোরের প্রভুর কাছে।
২)তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে।
৩)আর অন্ধকারের অনিষ্ট থেকে যখন তা আচ্ছন্ন করে ফেলে।
৪)আর গাঁথনীতে ফুতকারিনীদের অনিষ্ট থেকে।
৫)আর হিংসাকারীর অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

সুরা আল ইখলাস(একত্ব) এর বাংলা অর্থ

| comments

আল্লাহর নাম নিয়ে যিনি রহমান, রহীম
১)তুমি বল, তিনি আল্লাহ একক- অদ্বিতীয়।
২)আল্লাহ পরম নির্ভরস্থল।
৩)তিনি জন্ম দেন না এবং নেন ও নি।
৪)এবং কেউই তাঁর সমতুল্য হতে পারে না।

সুরা আন নছর (সাহায্য)এর বাংলা অর্থ

| comments

আল্লাহর নাম নিয়ে যিনি রহমান, রহীম
১)যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসেছে,
২)আর লোকেদের দলে দলে আল্লাহর ধর্মে প্রবেশ করতে দেখতে পাচ্ছ,
৩)তখন তোমার প্রভুর প্রশংসায় জপতপ কর ও তাঁর পরিত্রান খোঁজো। নিঃসন্দেহে তিনি বারবার প্রত্যাবর্তনকারী।

সুরা আল কাউছার (পাচুর্য)এর বাংলা অর্থ

| comments

আল্লাহর নাম নিয়ে যিনি রহমান, রহীম
১)নিঃসন্দেহে আমরা তোমাকে প্রাচুর্য দিয়েছি।
২)সুতরাং তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর এবং কোরবানি কর।
৩)তোমার বিদ্বেষ্কারীই তো স্বয়ং বঞ্ছিত।

সুরা আল কুরাঈশ(কুরাঈশ গোত্র) এর বাংলা অর্থ

| comments

আল্লাহর নাম নিয়ে যিনি রহমান, রহীম
১) কুরাঈশদের নিরাপত্তার জন্য,-
২)শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন বিদেশ যাত্রায় তাদের নিরাপত্তার জন্য।
৩)অতএব তারা এই গৃহের প্রভুর উপাসনা করুক।
৪)যিনি ক্ষুদায় তাদের আহার দিয়েছেন আর ভয়-ভীতি থেকে তাদের নিরাপদ রেখেছেন।

সুরা আল ফীল(হাতি) এর বাংলা অর্থ

| comments

আল্লাহর নাম নিয়ে যিনি রহমান, রহীম
১)তুমি কি দেখোনি তোমার প্রভু কেমন করেছিলেন হস্তী বাহিনীর প্রতি।
২)তাদের চক্রান্ত কি তিনি ব্যর্থতায় পর্যভূষিত করেন নি?
৩) আর তাদের উপরে তিনি পাঠালেন ঝাকে ঝাকে পাখির দল।
৪)যারা তাদের আছড়ে ছিল শক্ত কঠিন পাথরের গায়ে।
৫) ফলে তিনি তাদের বানিয়ে দিলেন খেয়ে ফেলা খড়ের মতো।

সুরা আছর(বিকেল বেলা) এর বাংলা অর্থ

| comments

আল্লাহর নাম নিয়ে যিনি রহমান, রহীম
১) ভাবো বিকাল বেলার কথা।
২)নিঃসন্দেহে মানুষ আলবত লোকসানের মধ্যে পড়েছে,-
৩) তারা ব্যতিত যারা ঈমান এনেছে ও সতকাজ করেছে, আর পরস্পরকে সত্য অবলম্বনের জন্য মন্ত্রনা দিচ্ছে এবং পরস্পরকে ছবরের পরামর্শ দিচ্ছে।

সুরা আল ক্বদরের(মহিমান্বিত) বাংলা অর্থ

| comments

আল্লাহর নাম নিয়ে যিনি রহমান, রহীম
১)নিঃসন্দেহে আমরা এটা অবতীর্ন করেছি মহিমান্বিত রজনীতে।
২)আর কি তোমাকে বুঝতে দিবে মহিমান্বিত রজনীটি কি ?
৩) মহিমান্বিত রজনীটি হচ্ছে হাজার মাস হতেও শ্রেষ্ঠ।
৪) ফেরেশ্তেগন ও রুহ তাতে অরতীর্ন হয় তাদের প্রভুর অনুমুতিক্রমে প্রতিটি ব্যাপার সমন্ধে।
৫) শান্তি- ফজরের উদয় পর্যন্ত তা চলতে থাকবে।

প্রিয় নবীর (সল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) প্রিয় সুন্নাত

| comments

১. কোন পাত্রে হাত প্রবেশ করার পূর্বে সর্ব প্রথম দু’হাতের কব্জি পর্যন- ধুয়ে নেয়া। তিরমিযী শরীফ
২. ইসি-ন্‌জার জন্য পানি ও ডিলা খুলুক সঙ্গে করে পায়খানায় নিয়ে যাওয়া। এবং তিটি ডিলা নিয়ে যাওয়া মুস-াহাব। তিরমিযী
৩. নবী করীম সঃ যখনই পায়খানায় যেতেন তিনি জুতা পরে ও মথা ডেকে যেতেন। ইবনে সা’য়াদ
৪. দোয়া পড়ে প্রবেশ করা। দোয়া নিম্মরূপঃ
৫. বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা। ইবনে মাজা
৬. যত সম্ভব নিচু হয়ে কাপড় খোলা। তিরমিযী
৭. পায়খানায় যাওয়ার পুর্বে আল্লাহ, নবীর নাম ও কোরআনের আয়াত লিখিত রিং বা আংটি খুলে নেয়া। পরে পরতে পারবে।কবজে আবদ্ধ তাবীজ থাকতে পারবে ।
৮. প্রস্রাব পায়খানারত অবস্থায় কিবলা মুখি হয়ে না বসা।
৯. অতি প্রয়োজনীয় ব্যতীত কথাবার্তা না বলা।তেমনি ভাবে আল্লাহর নাম মখে উচ্চারণ না করা।
১০. লজ্জাস্থানকে ডান হাতে স্পর্শ না করা বরং বাম হাত দ্বারা পস্কিার করা।
১১. কোন প্রস্রাবের ছিটা যেন শরীরে না পড়ে সে ব্যাপারে অতি সতর্ক থাকা। কারণ হাদীস শরীফে আছে, অধিকাংশ কবরের আযাব হয় প্রস্রাবের কারণে। তিরমিযী
১২. যদি প্রস্রাব পায়খানার ব্যবস্থা না থাকে, তবে হাজত পুরা করার জন্য যত সম্ভব দুরে চলে যাওয়া যেন কোন মানুষ দেখতে না পায়।
১৩. বসে নরম জায়গায় প্রস্রাব করা। এবং উচু জায়গায় বসে নিচের দিকে করা। যেন শরীরে ছিটা না পড়ে।
১৪. প্রথমে ডিলা করা অতপর পানি দিয়ে পরিস্কার করা । তিরমিযী
১৫. পায়খানা হতে বের হওয়ার সময় ডান পা দিয়ে বের হওয়া। তিরমিযী
১৬. এবং নিম্ম লিখিত দোয়া পড়ে বের হওয়া।
(গোফরা নাক আল্‌ হামদুলিল্লা হিল লাযী আযহাবা আ’ন্নিল আযা ওয়া আফানি)

আল্লাহ শব্দ কিভাবে এলো

| comments

Collect from: ইসলামী কথা

মানব সৃষ্টির সূচনা থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক মানুষই আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে। ফেরাউন, নমরুদ এবং এতেদর মতো আরো যারা ছিল, তারা কেউ আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাসী ছিলনা। তারা কখনো এ কথা বলেনি যে, এই গোটা বিশ্ব আমি সৃষ্টি করেছি। বরং তারা বলেছে, কোরআনের ভাষায় - ------------ আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ রব। আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নেই।
অর্থৎ তারা দাবী করেছে,‘ এই বিশাল ভূখন্ডের শাসক হিসাবে দেশের জনগণের ওপরে আইন ও বিধান চলবে আমার। এখানে অন্য কারো আইন কানুন চলবে না। জনগণ অন্য কারো আইন অনুসরণ করতে পারে না। আইন চলবে একমাত্র আমার এবং আমাকেই ইলাহ হিসাবে পূজা অর্চনা করতে হবে। মাথানত করতে হবে একমাত্র আমার কাছে। ’ এভাবে দেশের জনগোষ্ঠী আল্লাহকেও বিশ্বাস করেছে, সেই সাথে তারা আল্লাহর অংশীদার বানিয়েছে। পবিত্র কোরআনে দেখা যায় আরবের যারা মূর্তিপূজক ছিল তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করতো। মুখে তারা আল্লাহর নাম বেশ শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করতো। কিন্তু তাদের বিশ্বাস ছিল, আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হলো এসব মূর্তি।
পক্ষান্তরে ইসলাম মানুষকে শিখালো, আল্লাহ এমন এক অদ্বিতীয় সত্তার নাম,ডিনি গোটা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান যা কিছু আছে, সমস্ত কিছুই তাঁরই সৃষ্টি। সমস্ত সৃষ্টির সব ধরনের প্রয়োজন যিনি পূরণ করেন তিনিই হলেন মহান আল্লাহ। আল্লাহ শব্দের বিকল্প কোন শব্দ নেই। তিনিই মানব জাতির সব ধরনের বিধান দাতা। প্রাচীন সিমেটিক ভাষাগোষ্ঠীর প্রত্যেকটি শাখাতেই সামান্য রূপান্তর ভেদে আল্লাহ কথাটি এক,অদ্বিতীয়, অনাদী, অনন্ত উপাস্য সত্তার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভাষাবিদগণ অনুমান করেন যে,মানব সভ্যতার সূচনাকাল থেকেই তাওহীদবাদী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশ্ব প্রতিপালকের একক সত্তা বোঝানোর জন্য আল্লাহ শব্দটির প্রচলন রয়েছে। যেমন প্রাচীন কালদানীয় ও সুরইয়ানী ভাষায় আল্লাহ শব্দটি আলাহিয়া,‘প্রাচীন হিব্রু“ভাষায় উলুহ এবং আরবী ভাষায় ইলাহ রূপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিবর্তিত আরবী ভাষায় ইলাহ শব্দের সাথে আরবী আল অব্যয় যুক্ত হয়ে আল ইলাহ বা আল্লাহ শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বেও আরবদের মধ্যে আল্লাহ শব্দটিই মহান পরওয়ারদেগারের একক শব্দরূপে হতো। আল্লাহ শব্দটির কোন লিঙ্গান্তর হয়না। এর কোন দ্বিবচন বা বহুবচনও হয় না। এ প্রাচীন শব্দটিই পরম উপাস্যেও সত্তা বোঝানোর জন্য পবিত্র কোরআনে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। ইসলামী শরীয়াতে আল্লাহ নামের কোন বিকল্প নেই। মহান আল্লাকে তাঁর যে কোন গুণবাচক নামেও ডাকা যায়। তবে আল্লাহ ও আল্লাহর গুণবাচক নামের বিকল্প যেমন, গড,ঈশ্বও,পরমেশ্বর,ভগবান ইত্যাদি কোননামে ডাকা স্পষ্ট হারাম। কারণ এসব শব্দের মধ্য দিয়ে তওহীদ বিশ্বাসের অনুরূপভাব প্রকাশ পায় না। কারণ ঐসমস্ত শব্দের লিঙ্গান্তর করা যায় এবং স্ব স্ব ভাষায় ব্যকরণ শুদ্ধভাবে করা যায়। ইংরেজী গড শব্দের ইংরেজী বানান (GOD).এখানে ইংরেজী বর্ণমালার তিনটি অক্ষর রয়েছে। এই শব্দটি যদি উল্টিয়ে উচ্চারণ করা হয় তাহলে তা একটি চতুষ্পদ জন্তুর নাম প্রকাশ করবে। আল্লাহ কে এবং তাঁর পরিচয় স্বয়ং তিনিই এভাবে দিয়েছেন- ------------ “হে নবী ! আপনি বলে দিন, আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় ,তিনি অভাব শুন্য। তাকে কেউ জন্ম দেয়নি তিনিও কাউকে জন্ম দেননি। (সূরা ইখলাস)
আর ভগবানের সংজ্ঞা শ্রী মদ্ভাগবত গীতা দিয়েছেএভাবে ,অর্জুনের এক প্রশ্নের উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন
যদা যদা হি ধর্ম্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভুত্থনমধর্ম্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।।
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম। ধর্ম্মসঙস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।
(গীতা, চতুর্থোহধ্যায়ঃ জ্ঞানযোগ ৭-৮)
অনুবাদঃ হে অর্জ্জুন ! যে যে সময়ে ধর্ম্মের পতন আর পাপের প্রাদুর্ভাব হয়,সেই সেই সময়ে আমি জন্ম লইয়া থাকি। এইভাবে পাপীদের বিনাশ করিতে (শাস্তি দিতে)আর সৎ লোকদের বাঁচাইতে এবং ধর্ম্মকে আবার প্রতিষ্ঠিত করিতে যুগে যুগে আমি জন্মগ্রহণ করি।
হিন্দু সম্প্রদায় শ্রী কৃষ্ণকে স্বয়ং ভগবান নামে অভিহিত করেন। সুতরাং ভগবান প্রয়োজনে বা বাধ্য হয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। এই ভগবান পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপে পিতার ঔরসে মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছেন। ভগবান একবার চার অংশে রাজা দসরথের ঔরসে জন্মগ্রহণ করে রাম,লক্ষণ, ভরত ও শত্রুঘ্ন- এই চার নাম ধারণ করেছিল। ভগবান তার ভক্ত প্রহল্লাদের সামনে পশুরাজ সিংহের আকৃতি ধারণ করে নিজেকে প্রকাশ করেছিল। তাহলে দেখা গেল ভগবান এই পৃথিবীতে মাতৃগর্ভে পিতার ঔরসে প্রয়োজনে জন্মগ্রহণ করে। যে কোন পশুর রূপও ধারণ করতে পারে। সুতরাং ,স্রষ্টাকে নামের পরিচয়ে আবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে মানুষ এমন সব শব্দ আবিষ্কার করেছে যে, এসব শব্দের যে কি অর্থ এবং শব্দকে খন্ডিত করলে যে কি অর্থ প্রকাশ করে, সেদিকে লক্ষ্য না রেখেই মানুষ তার সীমিত জ্ঞান প্রয়োগ করে কল্পিত স্রষ্টার একটি নাম রেখেছে। কেবলমাত্র ব্যতিক্রম হলো ইসলাম। ইসলাম আল্লাহ নামের যে পরিচয় দিয়েছে,তার কোন বিকল্প নেই ।
আরবের ছাফা পর্বতের অনেক শিলালিপিতে আরবী আল্লাহ শব্দটি সেই যুগ থেকেই লিখা ছিল এবং এখনো আছে। উত্তর আরবের জনগোষ্ঠী এবং নাবাতী জনগোষ্ঠী নামের একটি অংশ আল্লাহ নাম ব্যবহার করতো। নাবাতীদের কাছে আল্লাহ নামটা পৃথক কোন উপাস্য হিসাবে বিবেচিত না হলেও তাদের শিলালিপিতে দেবতাদের নামের সাথে আল্লাহ নাম সংযুক্ত দেখা যায়। পকাষান্তরে সেল, মাবগলিউথসহ অনেক ইসলাম বৈরী পাশ্চাত্য গবেষক ‘আল্লাহ’ শব্দটি জাহিলিয়াত যুগের ‘আল লাত’ নামক দেবমূর্তিও নামের রূপান্তর বলে যে কষ্ট কল্পনা করেছে,আরবী শব্দ গঠন পদ্ধতির বিচারে এটা নিতান্তই হাস্যষ্পদ অপচেষ্টা মাত্র। আল্লাহ শব্দের অনুবাদ কেউ যদি স্রষ্টা লিখে তাহলে তা হবে এক মারাত্মক ভুল। কারণ স্রষ্টা হিসাবে তো মহান আল্লাহর খালিক নামক একটি গুণবাচক নাম রয়েছে । শুধু একটি নয়, আল্লাহর অনেকগুলো সর্বোত্তম গুণবাচক নাম রয়েছে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন -() আল্লাহ সুন্দর সুন্দর নামের অধিকারী, তাঁকে সুন্দর সুন্দর নামেই ডাকো। সেই লোকদের কথার কোন মূল্য দিও না যারা তাঁর নামকরণে বিপথগামী হয়। তারা যা কিছুই করতে থাকে ,তার বিনিময় তারা অবশ্যই লাভ করবে। (সূরা আল আ’রাফ১৮০)
আল্লাহর গুণবাচক নাম রহমান, এ নামেও তাঁকে ডাকা যায়। মহান আল্লাহ বলেন-() হে নবী! এদেরকে বলে দাও ,আল্লাহ অথবা রহমান যে নামেই ডাকো না কেন তাঁর জন্য সব ভালো নামই নির্দিষ্ট। (সূরা বনী ইসলাঈল ১১০)
মহান আল্লাহ অসংখ্য গুণাবলীর অধিকারী এবং গুণ ও বৈশিষ্ট্যেও কারণে তাঁর গুণবাচক নাম প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গুণবাচক নাম সম্পর্কে স্বয়ং তিনিই সূরা ত্বা-হায় বলেছেন-() তিনি আল্লাহ, ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তাঁর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম নামসমূহ ।(সূরা ত্ব-হা)
আল্লাহর এসব গুণবাচক নামও অতীব সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। এসব নামেরও তসবীহ করতে হবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-() ( হে নবী!) তোমার মহান শ্রেষ্ঠ রব এর নামের তাসবীহ করো। (সূরা আ’লা -১)
আল্লাহ শব্দের অর্থ কোনক্রমেই স্রষ্টা হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে নাএবং এ নামের কোন অনুবাদও হতে পারে না। আল্লাহ নামের কোন বিকল্প হতে নেই। স্রষ্টা হিসাবে আল্লাহ তা’য়ালার একটি নাম রয়েছে। কোরআন বলছে-() তিনিই আল্লাহ ,যিনি সৃষ্টি পরিকল্পনা রচনাকারী ও তার বাস্তবায়নকারী এবং তা অনুসারে আকার আকৃতি প্রদানকারী তাঁরই জন্য অতীব উত্তম নামসমূহ। (সূরা হাশর ২৪)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল্লাহ নাম দিয়েই তিনি তাঁর পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন-() আল্লাহ সেই চিরঞ্জীব শাশ্বত সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্বচরাচরকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছেন ,তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি সদাজাগ্রত এবং তন্দ্রা তাকে স্পর্শ করতে সক্ষম নয়। আকাশমন্ডলে ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুর সার্বভৌমত্ব তাঁর। (সূরা বাকারা ২৫৫)
আল্লাহ হলেন তিনি, যিনি একমাত্র দাসত্ব লাভের অধিকারী এবং অসীম দয়ালু তাঁর কাছে গোপন ও প্রকাশ্য বলে কোন কিছু নেই। কোরআন ঘোষণা করছে -() তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুরই জ্ঞাতা, তিনিই রহমান ও রাহীম (সূরা হাশর ২২)
আল্লাহ মহাপবিত্র এবং তিনি সমস্ত কিছুর মালিক সমস্ত কিছুরই বাদশাহ রাজাধিরাজ। কোরআন তাঁর পরিচয় এভাবে পেশ করছে-() তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি মালিক বাদশাহ। অতীব মহান ও পবিত্র। সম্পূর্ণ শান্তি ,নিরাপত্তা দানকারী, সংরক্ষণকারী, সর্বজয়ী নিজের নির্দেশাবলী শক্তি প্রয়োগে কার্যকরী এবং স্বয়ং বড়ত্ব গ্রহণকারী । (সূরা হাশর ২৩)
সমস্ত কিছুর একচ্ছত্র অধিপতি হলেন আল্লাহ। তাঁর নাম বিকৃত করার সামান্যতম অবকাশ নেই। আল্লাহ নামের প্রতিটি অক্ষর দিয়েই তাঁর পরিচয় কোরআন উপস্থাপন করেছে। আল্লাহ নাম লিখতে প্রথমে আরবি অক্ষর আলিফ এর প্রয়োজন হয়। এই আলিফ অক্ষর বাদ দিলেও আল্লাহর নাম বিকৃত করা যাবে না। কোরআন বলছে-() আকাশ রাজ্য ও পৃথিবীতে যা কিছুই রয়েছে,তা সবই আল্লাহর ।তোমাদের মনের কথা প্রকাশ করো অথবা নাই করো আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের কাছ থেকে সে সম্পর্কে হিসাব গ্রহণ করবেন। (সূরা বাকারা ২৮৪)
পবিত্র কোরআন আল্লাহ শব্দের আলিফ ব্যতিতই এ ধরনের বহু আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালার পরিচয় প্রকাশ করেছে,তাঁর অসীম ক্ষমতার কথা তুলে ধরেছে। উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ শব্দ থেকে আলিফ উহ্য রাখার কারণেআল্লাহ শব্দের সামান্যতম বিকৃতি ঘটেনি। আল্লাহ শব্দ থেকে আলিফ উহ্য রাখলে শব্দ হলো লিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর জন্য বা আল্লাহর । এই লিল্লাহ শব্দ থেকেও যদি একটি পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছে এভাবে- () আকাশ ও যমীনের ভান্ডারসমূহের চাবি তাঁরই হাতে নিবদ্ধ, যাকে ইচ্ছা অঢেল রিযিক দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা মেপে দেন। তিনি সব কিছু জানেন। (সূরা আশ শূরা১২)
এভাবে আল্লাহ শব্দ থেকে আলিফ অক্ষরটি বাদ দেয়া হলো, তারপর দুটো লাম অক্ষরের প্রথমটি বাদ দেয়া হলো। এবারে দ্বিতীয় লাম অক্ষর টি বাদ দেয়ার পরে থাকে শুধুমাত্র হা অক্ষর টি ।এই হা অক্ষরের সাথে পেশ যুক্ত করে হু আকারে উচ্চারিত হয়ে মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছে। পবিত্র কোরআন এই হু শব্দ দিয়ে আল্লাহর পরিচয় এভাবে পেশ করছে-() তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন এবং তিনিই পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আর তিনি ক্ষমাশীল, প্রেমময়,আরশ- অধিপতি, মহান শ্রেষ্ঠতর। নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী সব কাজ সম্পন্নকারী (সূরা বৃরুজ)
সুতরাং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আল্লাহ নামের কোনভাবেই বিকৃতি ঘটানো সম্ভব নয়। আল্লাহ শব্দটি আরবী অক্ষরে লিখতে যে কয়টি অক্ষরের প্রয়োজন,এর যে কোনো একটি অক্ষর ও ছেড়ে দিলেও তা অবিকৃত থাকেএবং সঠিক অর্থ প্রকাশ করে। এ নামের সাথে কোন কিছুর তুলনা করা যায়না এবং এ নামের কোন ভাষান্তও করাও যায় না।

বাণী চিরন্তনী

| comments

১। দানশীল ব্যক্তি আল্লাহ্‌ পাক এর বন্ধু, যদিও সে ফাসিক(কিছু ভুল ভ্রান্তি যুক্ত মোসলমান) হয় আর বখীল ব্যক্তি আল্লাহ পাক এর শত্রু যদিও সে আবিদ(যে মোসলমান অনেক এবাদৎ করে) হোক না কেন।
-আল হাদিছ
২। মানুষ চার প্রকার।দয়াবান,দাতা,বখীল ও কৃপন।দয়াবান নিজে না খেয়ে অপরকে খাওয়ায়,দাতা নিজেও খায় অপরকেও খাওয়ায়,বখিল নিজে খায় কিন্তু অপরকে খেতে দেয় না, আর কৃপন নিজেও খায় না এবং
অপরকেও খেতে দেয় না।
৩। দুইটি দোষ মুমিন চরিত্রে কখনো স্হান পাইতে পারে না- কার্পন্যতা
ও রুক্ষতা। – তিরমিজি শরীফ
৪। মুমিনের সাহায্যকারী তিনজন।আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত যবান,শোকর-
গোযার অন্তর এবং পূন্যশীলা স্ত্রী। – তিরমিজি শরীফ
৫। কৃপন কোনদিন ধন সম্পদের মালিক হতে পারে না বরং ধনসম্পদই কৃপনের মালিক হইয়া বসে। – ইয়াহইয়া বারমকি
৬। কৃপনের দরজা শুধু একজন মেহমানের জন্যই খোলা থাকে, তিনি
মালাকুল-মউত। – মা আন
৭। প্রকৃত বড় মানুষ সেই ব্যক্তি , যে ধন সম্পদকে মোটেও বড় মনে করে না । – বোসতী
৮। কৃপন তিন শ্রেনীর লোকের জন্য সম্পদ সন্চয় করিয়া থাকে।এক, তাহার মৃত্যুর পর স্ত্রী যদি অন্য স্বামী গ্রহন করিয়া  তবে তাহার জন্য।
দুই, কন্নার জামাতার জন্য। তিন, পুত্রবধুদের জন্য।-আবু দারদা
৯। কৃপন ঐ গর্ধবের ন্যায় যার পীঠে থাকে মনিমানিক্কের বোঝা এবং পেটে থাকে শুধু শুকনা খড়। – ফজল বীন রবি
১০। কৃপন তার ধন সম্পদের হেফাযত করে সত্য তবে মান সম্ভ্রম হেফাযত
করা তার পক্ষে সম্ভব হয়না। – আবুল বোখতারী
১১। তিন বস্তু তিন প্রকার লোককে ধ্বংস করে। কৃপন তার সম্পদে,কান্ডঞ্জানহীন যুবক তার দেহের অহংকারে,এবং জ্ঞানীকে তার সবজান্তা ধরনের অহমিকায়।
১২। মানুষের মধ্যে যতগুলি মারাত্নক দোষের সমাবেশ ঘটে, এর মধ্যে কার্পন্য দোষটি উল্লেখযোগ্য। – ইমাম গাজ্জালি(রঃ)
পরিশেষে মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে কৃপনতা, অপব্যয়ীতা ,অহংকার এবং অন্নান্য সব খারাপ গুন থেকে হেফাযত করুন এবং সমস্ত ভালো গুন অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন..।

কিছু নবীদের আয়ুস্কাল

| comments

সর্ব প্রথম নবী হয়রত আদম (আ)৯৩০ বছর
শেষ নবী হয়রত মুহাম্মদ (স) ৬৩ বছর
হয়রত নূহ(আ)১৪০০ বছর
হয়রত হুদ (আ)৪৬৪ বছর
হয়রত ইবরাহীম (আ)১৩৫ বছর
হয়রত ইয়াকুব(আ)১৪৭ বছর
হয়রত ইউসুফ (আ)১০০ বছর
হয়রত আহয়ূব(আ)১৪০ বছর
হয়রত মূসা(আ)১২০ বছর
হয়রত শীশ (আ)৯১২ বছর
হয়রত ইউসা (আ)১১০ বছর
হয়রত ঈসা(আ)৩৩ বছর
হয়রত দাউদ(আ)৭০ বছর

বাণী চিরন্তনী

| comments

১। আল্লাহর ভয় মানুষকে অন্য সকল ভয় হইতে মুক্তি দেয়। -ইবনে সীনা
২।অনেক লোকই দিনে অন্তত পাচবার মুখ ধোয়,কিন্তু পাচ বছরেও একবার অন্তর ধোয়ার কথা চিন্তা করেনা। – ইবরাহিম আধহাম
৩। ক্রোধ মনুষ্যত্ব্বের আলোকশিখা নির্বাবিত করিয়া দেয় -ইমাম গাজ্জালি
৪। কোরআন এমন একটি জানালা,যা দ্বারা আমরা পরবর্তী দুনিয়ার দৃশ্য
দেখিটে পাই। -ইবনে হাম্বল
৫। যতদিন লেখাপড়ার অভ্যাস থাকে ততদিনই মানুষ আলেম থাকে।আর যখনই ধারনা জন্মিয়া যায় যে , আমি আলেম হইয়া গিয়াছি তখনই মুর্খতা তকে ঘিরিয়া ধরে। -ফারাবি
৬।পরশ্রীকাতর ও লোভী ব্যক্তি কখনো শান্তি পায় না। -রাবেয়া বসরী
৭।মানুষ চার প্রকার।দয়াবান,দাতা,বখীল ও কৃপন। দয়াবান লোক নিজে না খাইয়া অন্যকে খাওয়ায়,দাতা নিজেও খায় আর অপরকেও খাওয়ায়, বখীল নিজে খায় কিন্তু অপরকে খাওয়ায় না, আর কৃপন নিজেও খায়না আর অপরকেও খাইতে দেয়না।
৮। ঈমান এবং হিংসা এক সঙ্গে একই অন্তরে থাকতে পারে না। -আল হাদীস
৯।প্রবৃত্তিকে তোমার অধীন করো,অন্যথায় প্রবৃত্তিই তোমাকে অধীন করিয়া
লইবে। -বুসতি
১০। ক্রোধ মনুষ্যত্তের আলোকশিখা নির্বাপিত করিয়া দেয়।
-ইমাম গাজ্জালি(র:)
১১।এই পৃথিবীতে দু্র্বল সেই ব্যক্তি যে তার প্রবৃত্তির উপর জয়ী হইতে
পারে না। -রোদবারি
১২।শক্তির দারা যে আনুগত্য লাভ হয় তা ক্ষনস্হায়ী,আর ভালবাসার মাধ্যমে যে আনুগত্য অর্জিত হয় তাই চিরস্হায়ী থাকে। -ইবনে জরীর
১৩। একটি ছোট রাষ্ট্র পরিচালনার চাইতে একজন নারী নিয়া ঘর বাধার
দায়িত্ব গ্রহন করা অনেক বেশী কঠিন কাজ।
১৪। ছোটদের সঙ্গে সন্তানের ন্যায়,বড়দের সঙ্গে পিতার ন্যায় এবং সমবয়স্কদের সঙ্গে ভাই এর ন্যায় আচরন করার নামই ন্যায়বিচার।
-ইমাম জাফর সাদেক (র:)
১৫। যে ব্যাক্তি হালাল পথে রুজি করে, সেই প্রকৃত ইমানদার।
আব্দুল কাদের জি: (র:)
১৬। সুরের মু্র্ছনায় যে অন্তর প্রভাবিত হয়ে পড়ে সেটি রোগগ্রস্হ।তার
চিকিৎসা অপরিহার্য। – ইবনে আহমদ দারদি
১৭।সততা এবং ন্যায়পরায়নতা আল্লাহর রাহে কুরবানি করার চাইতেও
অনেক বেশী পুন্যের কাজ। -হযরত সোলায়মান (আ:)
১৮। আল্লাহ নামের তসবীহ একটি সুরক্ষীত দুর্গবিশেষ।সত্যাশ্রয়ীরা তাতে
স্বাছ্ছন্দে শান্তিতে বসবাস করে।

ইসলামের দৃষ্টিতে তাবিজ-কবচের বিধান

| comments

সানাউল্লাহ নজির আহমদআমাদের দেশে কতক পীর-ফকির, আলেম-জাহেল, কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত অনেকেই তাবিজ-কবচ, তাগা, কড়ি, সামুক, ঝিনুক ও গাছ-গাছালির শিকর-বাকর ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করেন এবং ইহা বৈধ ও জায়েজ মনে করেন। এ সম্পর্কে বাজারে কিছু বই পুস্তক পাওয়া যায়, সে সব বইয়ে নির্ধারিত বিষয়ে গ্রহণ যোগ্য কোন দলিল নেই, আছে কিছু মনগড়া কিচ্ছা-কাহিনী, অসংখ্য তদবিরের বর্ণনা ও তার বানোয়াট ফাজায়েল। এ সব বই পড়ে কেউ কেউ বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, রোগ, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভের আশায় বিভিন্ন তদবির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয় ও তা গ্রহণ করে। তারা এ ধরণের চিকিৎসার মূল্যায়ন ও তার বৈধতা-অবৈধতা সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। আমি অত্র নিবন্ধের মাধ্যমে এ বিষয়টির তত্ত্ব ও স্বরূপ উদ্ঘাটন এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তার হুকুম বর্ণনার প্রয়াস পেয়েছি।

সম্পাদনা: চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
নেয়া হয়েছে ইসলাম হাউস থেকে

এক. সাহাবি ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত :
أن النبي صلى الله عليه وسلم رأى رجلا في يده حلقة من صفر فقال ما هذه قال من الواهنة قال انزعها فإنها لا تزيدك إلا وهنا فإنك لو مت وهي عليك ما أفلحت أبدا (أحمد ابن ماجة و حاكم)
একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে তামার চুড়ি দেখে বললেন, এটা কি? সে বলল: এটা অহেনার অংশ। {অহেনার অর্থ এক প্রকার হাড়, যা থেকে কেটে ছোট ছোট তাবিজ আকারে দেয়া হয়।} তিনি বললেন: এটা খুলে ফেল, কারণ এটা তোমার দূর্বলতা বাড়ানো ভিন্ন কিছুই করবে না। যদি এটা বাঁধা অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তবে কখনও তুমি সফল হবে না।' (মুসনাদে আহমদ, হাকেম ও ইবনে মাজাহ) হাদিসটি সহিহ্।
দুই. উকবা বিন আমের রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি:
من تعلق تميمة فلا أتم الله له ومن تعلق ودعة فلا ودع الله له. (أحمد وحاكم)
'যে ব্যক্তি তাবিজ লটকালো, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে কড়ি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না।' আহমদ, হাকেম।
তিন. উকবা বিন আমের আল-জোহানি রাদিআল্লাহু আনহু বলেন :
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أقبل إليه رهط فبايع تسعة وأمسك عن واحد فقالوا يا رسول الله بايعت تسعة وتركت هذا قال: إن عليه تميمة فادخل يده فقطعها فبايعه وقال من علق تميمة فقد أشرك. (أحمد وحاكم)
'একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। তিনি দলটির নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তার সাথে তাবিজ রয়েছে। অতঃপর তিনি স্বহস্তে তা ছিড়ে ফেললেন এবং তাকে বায়আত করলেন, আর বললেন, যে ব্যক্তি তাবিজ ব্যবহার করল সে শিরক করল।' সহিহ মুসনাদে আহমদ, হাকেম।
চার. একদা হুজায়ফা রাদিআল্লাহু আনহু এক ব্যক্তির হাতে জ্বরের একটি তাগা দেখতে পেয়ে তা কেটে ফেলেন। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন :
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ ﴿106﴾يوسف: ١٠٦
তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে শিরক করা অবস্থায়।' {ইউসুফ : ১০৬} তাফসিরে ইবনে কাসির। এ থেকে প্রমাণিত হয়, সাহাবি হুজায়ফার মতে তাগা ব্যবহার করা শিরক।
পাঁচ. বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত, আবু বশির আনসারি রাদিআল্লাহু আনহু কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী ছিলেন। সে সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে এ নিদের্শ দিয়ে পাঠালেন, 'কোনও উটের গলায় ধনুকের ছিলা অথবা বেল্ট রাখবে না, সব কেটে ফেলবে।'
ছয়. আবু ওয়াহহাব রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
وارتبطوا الخيل وامسحوا بنواصيها وأكفالها وقلدوها ولا تقلدوها الأوتار. (النسائ )
ঘোড়া বেঁধে রাখ, তার মাথায় ও ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দাও এবং লাগাম পরিয়ে দাও। তবে ধনুকের ছিলা ঝুলিয়ো না। সুনানে নাসায়ী।
সাত. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহর স্ত্রী জয়নব রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদিন আব্দুল্লাহ বাড়িতে এসে আমার গলায় তাগা দেখতে পান। তিনি বললেন, এটা কী? আমি বললাম, এটা পড়া তাগা। এতে আমার জন্য ঝাঁড়-ফুঁক দেয়া হয়েছে। তা নিয়ে তিনি কেটে ফেললেন এবং বললেন, আব্দুল্লাহর পরিবার শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি :
إن الرقى والتمائم والتولة شرك (أحمد ابن ماجة وحاكم)
ঝাড়-ফুঁক, সাধারণ তাবিজ ও ভালোবাসা সৃষ্টির তাবিজ ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক। আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ।
আট. তাবেয়ি আব্দুল্লাহ বিন উকাইম সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
من تعلق شيئا وكل إليه (أحمد ابن ماجة وحاكم)
যে ব্যক্তি কোন কিছু ধারণ করবে, তাকে ঐ জিনিসের কাছেই সোপর্দ করা হবে।' আহমদ, তিরমিজি। এ সব দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তাবিজ ব্যবহার করা হারাম ও শিরক।
তাবিজ ইত্যাদি ব্যবহার করা ছোট শিরক না বড় শিরক?
কেউ যদি তাবিজ-কবচ, মাদুলি-কড়ি, সামুক-ঝিনুক, গিড়া, হাঁড়, তাগা-তামা-লোহা বা অনুরূপ কোন ধাতব বস্তু গলায় বা শরীরের কোথায়ও ধারণ করে এবং এ ধারণা পোষণ করে যে, ঐ গুলো বালা-মুসিবত দূর করার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ক্ষমতা রাখে, তবে তা বড় শিরক। আর যদি এ ধরনের ধারণা না হয়, তবে তা ছোট শিরক।
শায়খ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ বলেছেন, বালা-মুসিবত দূর করার উদ্দেশ্যে গিড়া, তাগা পরিধান করা ছোট শিরক। অর্থাৎ যদি তা মাধ্যম বা উসিলা মনে করে ব্যবহার করা হয়।
শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ বলেছেন, শয়তানের নাম, হাড়, পূঁতি, পেরেক অথবা তিলিস্মা অর্থাৎ অর্থবিহীন বিদঘুটে শব্দ বা অক্ষর প্রভৃতি বস্তু দিয়ে তাবিজ বানানো ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত। ফাতহুল মাজিদ গ্রন্থের টীকায় তিনি আরো বলেছেন : তাবিজ ব্যবহার করা জাহেলি যুগের আমল।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তাবিজ-কবচ অনেক ধর্মের প্রতিকি চিহ্ন ছিল। যেমন হিন্দু পুরোহিতদের মাদুলী ধারণ করা, বিশেষ করে কালী শিবের পূজায়। উয়ারী সম্প্রদায়ের আকীদার অন্যতম প্রতিক ছিল বিভিন্ন ধরণের তাবিজ।
শায়খ হাফেজ হেকমি বলেন: ‌'কুরআন ও হাদিস ব্যতীত, ইহুদিদের তিলিসমাতি, মূর্তি পূজারী, নক্ষত্র পূজারী, ফেরেশতা পূজারী এবং জিনের খিদমত গ্রহণকারী বাতিল পন্থীদের তাবিজ ব্যবহার; অনুরূপভাবে পূঁতি, ধনুকের ছিলা, তাগা এবং লোহার ধাতব চুড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক। কারণ, এগুলো সমস্যা সমাধানের বৈধ উপায় কিংবা বিজ্ঞান সম্মত ঔষধ নয়।
এ হল সেসব তাবিজ কবচের হুকুম যাতে কুরাআনের আয়াত, হাদিসের দোয়া দরুদ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় না তার।
কুরআন-হাদিসের তাবিজ :
হ্যাঁ, যে সব তাবিজ-কবচে কুরআন হাদিস ব্যবহার করা হয় সে ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। এক শ্রেণীর আলেম কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দুআ সমূহের তাবিজ ব্যবহার করা বৈধ মনে করেন। যেমন, সাঈদ বিন মুসাইয়িব, আতা আবু জাফর আল-বাকের, ইমাম মালেক। এক বর্ণনা মতে ইমাম আহমদ, ইবনে আব্দুল বার, বাইহাকি, কুরতুবি, ইবনে তাইমিয়া, ইবনে কাইয়িম এবং ইবনে হাজারও রয়েছেন। তাদের দলিল, আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآَنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا ﴿82﴾ الإسراء: ٨٢
আর আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করেছি যা রোগের সু-চিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য রহমত।' {ইসরা:৮২}
كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ (ص 29)
এক কল্যাণময় কিতাব, ইহা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি। {সাদ:২৯}
সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমরের ব্যক্তিগত আমল সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি নিজ ছোট বাচ্চা, যারা দোয়া মুখস্থ করতে অক্ষম, তাদেরকে অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য গায়ে দোয়ার তাবিজ ঝুলিয়ে দিতেন। দোয়াটি এই:
بسم الله أعوذ بكلمات الله التامات من غضبه وعقابه وشر عباده ومن همزات الشياطين وأن يحضرون (أحمد والترمذي وأبوداود)
'আল্লাহর নামে তাঁর পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তাঁর গজব ও শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্টতা থেকে এবং শয়তানদের কুমন্ত্রণা ও তাদের উপস্থিতি থেকে।' (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ) হাদিসটি হাসান।
পক্ষান্তরে অধিকাংশ সাহাবি ও তাদের অনুসারীদের মতে কুরআন ও হাদিসের তাবিজ ব্যবহার করাও নাজায়েজ। তাদের মধ্যে রয়েছেন: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, ইবনে আব্বাস, হুযাইফা, উকবা বিন আমের, ইবনে উকাইম, ইব্রাহিম নখয়ি, একটি বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আহমদ, ইবনুল আরাবি, শায়খ আব্দুর রহমান বিন হাসান, শায়খ সুলাইমান বিন আব্দুল ওয়াহহাব, শায়খ আব্দুর রহমান বিন সাদি, হাফেজ আল-হেকমি এবং মুহাম্মদ হামিদ আলফাকি। আর সমসাময়ীক মনীষীদের মধ্যে আছেন শায়খ আলবানি ও শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ।
তারা বলেন, উল্লেখিত আয়াত দ্বারা তাবিজের বৈধতা প্রমাণিত হয় না। উপরন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের দ্বারা চিকিৎসা করার স্বরূপ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। এ ছাড়া কুরআনের আয়াত তাবিজ আকারে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন প্রমাণ নেই, এমনকি সাহাবাদের থেকেও।
তা ছাড়া ইমাম আবু দাউদ বলেছেন, সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমেরের বর্ণিত হাদিসের সূত্র (সনদ) হাদিস বিশারদদের নিকট বিশুদ্ধ নয়। আর শুদ্ধ হলেও এটা তার একার আমল, যা অসংখ্য সাহাবির বিপরীত হওয়ার ফলে এবং এর স্বপক্ষে কোন দলিল না থাকার কারণে আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
আরেকটি কারণ, যেসব দলিলের মাধ্যমে তাবিজ নিষিদ্ধ প্রমাণিত হয়েছে, সেসব দলিলে পৃথক করে কুরআন-হাদিসের তাবিজ বৈধ বলা হয়নি। যদি বৈধ হত, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তা বলে দিতেন। যেমন তিনি শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুকের ব্যাপারটি অনুমতি দিয়েছেন। মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
قال اعرضوا علي رقاكم لا بأس بالرقى مالم يكن فيها شرك (رواه مسلم)
'তোমাদের ঝাড়-ফুঁক আমার কাছে পেশ কর, ওটা শিরকের আওতাধীন না হলে তাতে কোন বাধা নেই।' মুসলিম। পক্ষান্তরে তিনি তাবিজ সম্পর্কে এরূপ কিছু বলেননি। দ্বিতীয়ত. সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের ছাত্র ইব্রাহিম নখয়ি বলেন, তারা অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের সঙ্গী-সাথী ও শিষ্যগণ কুরআন বা কুরআনের বাইরের সব ধরণের তাবিজ অপছন্দ করতেন। যেমন আলকামা, আসওয়াদ, আবু ওয়ায়েল, হারেস বিন সোয়ায়েদ, ওবায়দা সালমানি, মাসরুক, রাবি বিন খায়সাম এবং সোয়ায়েদ বিন গাফলাহ প্রমুখ তাবেয়িগণ। {ফতহুল মজিদ} তৃতীয়ত. অবৈধ পন্থার পথ রুদ্ধ করার জন্য শরিয়ত অনেক বৈধ কাজও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সে হিসেবে নিষিদ্ধ তাবিজ থেকে উম্মতকে হিফাজত করার লক্ষ্যে বৈধ তাবিজও নিষিদ্ধ করা উচিত। কারণ এ পথ খোলা রাখলে বাতিল তাবিজপন্থীরা সাধারণ মানুষের মন আল্লাহর ওপর ভরসা থেকে বিমুখ করে, তাদের লিখিত তাবিজের প্রতি আকৃষ্ট করে ফেলার সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয়, ঐ সব শয়তানদের প্ররোচনার কারণে কতক সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আর তারা মানুষের আসক্তি দেখে তাদের সহায়-সম্পদ লুটে নেয়ার ফন্দি আটে। যেমন, তাদেরকে বলে, তোমাদের পরিবারে, ধন সম্পত্তিতে বা তোমার ওপর এরূপ বিপদ আসবে। অথবা বলে, তোমার পিছনে জিন লেগে আছে ইত্যাদি। এভাবে এমন কতগুলো শয়তানি কথা-বার্তা তুলে ধরে যা শুনে সে মনে করে, এ লোক ঠিকই বলছে। সে যথেষ্ট দয়াবান বলেই আমার উপকার করতে চায়। এভাবেই সরলমনা মূর্খ লোকেরা তাদের কথায় বিশ্বাস করে ও অতঃপর ভয়ে অস্থির হয়ে যায়, আর তার কাছে সমাধান তলব করে। তাই তাবিজ কুরআন-হাদিসের হলেও ব্যবহার করা, রুগির বালিশের নীচে রাখা বা দেয়ালে ঝোলানো নাজায়েজ বলাই অধিকতর শ্রেয়।
একটি সংশয় : অনেকে বলে থাকেন, তাবিজ, কবচ ইত্যাদি আমরা দোয়া-দরুদ ও প্রাকৃতিক ঔষধের ন্যায় ব্যবহার করি। যদি তার অনুমোদন থাকে তবে তাবিজ কবচ নিষিদ্ধ কেন? এর উত্তর হচ্ছে : অসুখ-বিসুখ ও বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার পদ্ধতি দুইটি :
এক. যা সরাসরি কুরআনের আয়াত বা রাসূলের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। একে শরিয়তি উপায় বা চিকিৎসা বলা যেতে পারে। যেমন ঝাঁড় ফুক ইত্যাদি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে দেখিয়েছেন এবং যার বর্ণনা হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে রয়েছে। এ গুলো আল্লাহর ইচ্ছায় বান্দার মঙ্গল সাধন বা অমঙ্গল দূর করে।
দুই. প্রাকৃতিক চিকিৎসা অর্থাৎ বস্তু ও তার প্রভাবের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক, যা খুবই স্পষ্ট এমনকি মানুষ সেটা বাস্তবে অনুভব ও উপলব্ধি করতে পারে। যেমন: বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা ঔষধ। ইসলামি শরিয়ত এগুলো ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছে। কারণ, এগুলো ব্যবহার করার অর্থই হচ্ছে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা, যিনি এ সব জিনিসে নির্দিষ্ট গুণাবলি দান করেছেন এবং তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন সময় এসব বস্তুর গুন ও ক্রিয়া বাতিল করে দিতে পারেন। যেমন তিনি বাতিল করেছিলেন ইব্রাহিমের আলাইহিস সালামের জন্য প্রজ্বলিত আগ্নির দাহন ক্রিয়া। কিন্তু তাবিজ ইত্যাদির মধ্যে আদৌ কোন ফলদায়ক প্রভাব নেই এবং তা কোন অমঙ্গল দূর করতে পারে না। এতে জড় বস্তুর কোন প্রভাবও নেই। তাছাড়া, মহান আল্লাহ এগুলোকে কোন শরয়ি মাধ্যম হিসেবে নির্ধারণ করেননি। মানুষও স্বাভাবিকভাবে এগুলোর কোন প্রভাব প্রতিক্রিয়া দেখে না, অনুভবও করতে পারে না। এ জন্য অনেকে বলেছেন, এগুলোর ওপর ভরসা করা, মুশরিকদের ন্যায় মৃত ব্যক্তি ও মূর্তির ওপর ভরসা করার সমতুল্য; যারা শুনে না, দেখে না, কোন উপকারও করতে পারে না, আর না পারে কোন ক্ষতি করতে। কিন্তু তারা মনে করে, এগুলো আল্লাহর কাছ থেকে তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, অথবা অমঙ্গল প্রতিহত করবে।
উদাত্ত আহব্বান : এখনো যে সব আলেম-ওলামা তাবিজ-কবচ নিয়ে ব্যস্ত তাদের দরবারে আমার সবিনয় অনুরোধ, এর থেকে বিরত থাকুন। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগ, সাধারণ মানুষ খুব সহজেই টিবি চ্যানেল, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছে যে, তাবিজ-কবচ বৈধ নয় বা ইসলামে এর কোন স্বীকৃতিও নেই। এমতাবস্থায় যারা তাবিজ-কবচ করেন বা বৈধ বলেন তাদের ব্যাপারে তারা বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হন। আল-হামদু লিল্লাহ, বর্তমান সময়ে আরবি শিক্ষিত ও সাধারণ শিক্ষিত অনেক ব্যক্তি, বিশেষ করে তরুন প্রজন্ম তাবিজ-কবজের অসারতা বুঝতে পেরে এর বিরোদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। নিজে রিবত থাকছেন এবং অপরকে বিরত থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। যেহেতু এটা আকীদার বিষয়, তাই এখানে শিথিলতার কোন সুযোগ নেই। অতএব, এ থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। আল্লাহ সহায়।


সমাপ্ত

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template