السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

রোজা

রামাদানে রোজা রাখা - ইসলামের ৫টি স্তম্ভের একটি।
রোজা বা সিয়ামের অর্থ:

ভাষাগতভাবে “সিয়াম” অর্থ হচ্ছে কিছু থেকে বিরত থাকা যেমন – ধরুণ কথা বলা থেকে বিরত থাকা। শরীয়াহ্য় যখন “সিয়াম” বলা হয়, তখন সরাসরি খাদ্য, পানীয় ও যৌন সংসর্গ থেকে, রামাদান মাসের দিনগুলোর দিবাভাগে বিরত থাকাকে বোঝায়। এই কাজটি ইসলামের স্তম্ভগুলোর একটি – যেমনটা আমরা হাদীস জিবরীলে ["উম্মুল সুন্নাহ্" বলে পরিচিত মুসলিম শরীফের বিখ্যাত হাদীস - যেখানে জিবরীল (আ.) প্রশ্নের জবাবে রাসূল(সা.) ইসলামের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে "রামাদানে রোজা রাখাকে" ইসলামের একটি অবশ্যকরণীয় হিসেবে উল্লেখ করেন] দেখতে পাই।

সিয়ামের গুরুত্ব:

“সিয়াম” হচ্ছে আত্ম-সম্বরণ, পরহেজগারী ও “আল্লাহ্-সচেতনতা” অর্জনের একটা মাধ্যম। রাসূল (সা.)-এঁর আগের নবীদের বেলায়ও কোন না কোন আঙ্গিকে উপবাসের নিয়ম প্রযোজ্য ছিল। রামাদান মাসের রোজাকে ফরজ করে যে আয়াত নাযিল হয় – তাতে আল্লাহ্ রোজার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্দেশ করেছেন :

“হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের জন্য “সিয়াম” নির্ধারণ করা হয়েছে, যেমনটা তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল – যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা বাক্বারা, ২ : ১৮৩)

রাসূল (সা.) বলেছেন যে, রোজা হচ্ছে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবার ব্যাপারে একটা সুরক্ষা বুহ্য বা ঢাল :

“তোমরা যুদ্ধে যেমন ঢাল ব্যবহার কর, “সিয়াম” হচ্ছে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবার জন্য সেরকম একটা ঢাল।” (আহমাদ, নাসাঈ ও অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে – আলবানীর মতে সহীহ)।

উপরন্তু কিয়ামতের দিনে তা এক শাফায়াতকারী রূপে বা মধ্যস্থতাকারী রূপে কাজ করবে। রাসূল (সা.) বলেন,

“রোজা এবং কুর’আন পুনরুত্থান দিবসে মধ্যস্থতাকারী (বা সুপারিশকারী) হিসেবে আবির্ভূত হবে। রোজা বলবে, ‘হে প্রভু! আমি তাকে দিবাভাগে তার খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত রেখেছিলাম। তাই (আজ) আমাকে তার পক্ষে সুপারিশ করতে দিন।’ পবিত্র কুর’আন বলবে, ‘আমি তাকে রাতে ঘুমানো থেকে বিরত রেখেছিলাম, সুতরাং আমাকে তার জন্য সুপারিশ করতে দিন।’ তখন তাদের সুপারশ করার অনুমতি দেয়া হবে।” (আহমাদ দ্বারা লিপিবদ্ধ – আলবানীর মতে সহীহ্)

“সিয়াম” হচ্ছে এমন একটা কাজ যা আল্লাহর প্রতি যে কারো বিশ্বস্ততাকে প্রতিফলিত করে। কেউ সত্যি “সিয়াম” পালন করলো কিনা বা রোজা রাখলো কিনা – তা একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন। সে গোপনে রোজা ভেঙে কিছু খেলো কিনা তা অন্য কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সেজন্য, যারা রোজা রাখেন, তাদের জন্য আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। নিম্নলিখিত হাদীসে কুদসীতে তা বলা হয়েছে,

আল্লাহ্ বলেছেন, “সে তার খাবার, পানীয় ও বাসনা আমার জন্য ত্যাগ করেছে। ‘সিয়াম’ হচ্ছে আমার উদ্দেশ্যে এবং আমি তার প্রতিদান/পুরস্কার দেব এবং প্রতিটি সৎকাজের জন্য ১০ গুণ প্রতিদান দেয়া হবে।” (বুখারী)

আল্লাহর রহমতে ও করুণায়, একজন ব্যক্তি যদি আল্লাহর বিশ্বাস সমেত এবং প্রতিফল পাবার আশায় রামাদান মাসের রোজা রাখে, তাহলে আল্লাহ্ তার পূর্ববর্তী সব সগীরা গুনাহ মাফ করে দেবেন। রাসূল (সা.) বলেন :

“যে ঈমান সহকারে ও প্রতিফল পাবার আশা নিয়ে রামাদান মাস রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

আমরা রামাদান নিয়ে আমাদের আলোচনার শেষভাগে উপনীত হয়েছি - রামাদানে রোজা রাখা নিয়ে আমাদের লেখার এটাই শেষ পর্ব। রামাদান আমাদের মাঝে কোন পরিবর্তন আনতে পারছে/পারলো কিনা, আমরা আমাদের গুনাহ্ মাফ করানোর যথেষ্ট চেষ্টা করতে পারলাম কিনা, আরেকটা সুযোগ (বা আরেকটি রামাদান) আমাদের জীবনে আদৌ আসবে কিনা, আজ থেকে নিয়ে রামাদান মাসের যে কয়টা দিন বাকী রয়েছে, সে কয়টা দিনকে কিভাবে সব চেয়ে বেশী কাজে লাগাতে পারি ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে পারি আমরা। এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কিছু তথ্য দিয়ে শেষ করবো ইনশা’আল্লাহ্!


সিয়াম বা রোজার উপকারীতা সম্বন্ধে ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন,

“রোজা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে কামনা-বাসনার জোয়াল থেকে মানুষের আত্মাকে মুক্ত করা এবং তার পশু সত্ত্বাকে নিয়ন্ত্রিত রাখা, এবং এর মধ্য দিয়ে সে আত্মশুদ্ধি ও স্থায়ী পরিতৃপ্তির ল্ক্ষ্য অর্জন করে। ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মাধ্যমে লোভ ও লালসার প্রবণতাকে হ্রাস করা হচ্ছে এর উদ্দেশ্য - যাতে সে উপলব্ধি করে যে, পৃথিবীতে কত মানুষ সামান্য একটু খাদ্য ছাড়াই তারই মত ক্ষুধার অনুভূতি নিয়ে দৈনন্দিন জীবন যাপন করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে শয়তানের জন্য, তাকে ধোকা দেয়ার কাজটিকে কঠিন করে তোলা এবং স্বীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে এমন সব কাজ থেকে বিরত রাখা যেগুলোর মাঝে তার জন্য দুই জাহানের ক্ষতি নিহিত রয়েছে। রোজা তাই হচ্ছে আল্লাহ্ ভীরুদের জন্য লাগাম স্বরূপ, সংগ্রামরত যোদ্ধাদের জন্য ঢাল স্বরূপ এবং গুণীজনদের জন্য শৃঙ্খলা।”

যারা সঠিকভাবে সিয়াম সম্পূর্ণ করে না বা অশুদ্ধ পন্থায় রোজা ভাঙ্গে, তাদের শাস্তি সম্বন্ধে সতর্ক করে রাসূল (সা.)-এঁর একটি হাদীস রয়েছে :

“আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন দুইজন লোক আমার কাছে এলেন এবং আমার বাহু ধরলেন। তারা আমাকে একটা খাড়া পাহাড়ের কাছে নিয়ে এসে বললেন ‘(পাহাড়ে) ওঠো’। আমি বললাম, ‘আমি তা করতে সক্ষম নই।’ তারা বললেন, ‘আমরা আপনার জন্য তা সহজ করে দেবো।’ আমি তখন পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত ওঠা অবধি চলতে থাকলাম, সেখানে পৌঁছে করুন আর্তনাদ শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এসব কিসের আর্তনাদ?’ তারা বললেন, ‘এসব হচ্ছে জাহান্নামের আগুনের বাসিন্দাদের আর্তচিৎকার।’ তারা আমাকে আরো সামনে নিয়ে গেলেন, যেখানে আমি আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা লোকজনের একটা সমষ্টি দেখতে পেলাম যাদের চোয়ালের হাড়গুলো ভাঙ্গা এবং সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমি বললাম, ‘এরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘এরা হচ্ছে এমন লোকজন, যারা সঠিক সময়ের আগেই, তাদের রোজা ভঙ্গ করেছিল।” (ইবন হিব্বান ও ইবন খুজাইমা কর্তৃক সংগৃহীত - আলবানীর মতে সহীহ)।

যে রোজা রাখে না, তার বেলা বিধান:

কোন ব্যক্তি যদি সিয়ামের ফরজিয়াত বা সিয়াম যে ফরজ তা অস্বীকার করে, তবে সে “কাফির” হয়ে যায়। ফরজ হিসাবে রোজার নির্ধারণ ও মর্যাদা কুর’আনে ও বহু হাদীসে প্রমাণিত।

আল-যাহাবী লিখেছেন :

“প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসীদের মতে, অসুস্থ হওয়া ছাড়া - যে কেউ যদি রামাদান মাসের রোজা ছেড়ে দেয়, তবে সে একজন ব্যভিচারী বা মদ্যপায়ীর চেয়েও অধম। আসলে তখন তার ইসলামকে নিয়ে সন্দেহ জাগে এবং সে “যিন্দিক” কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় - তাদের একজন যারা ইসলামকে ধ্বংস করে।”

ফি আমানিল্লাহ্!
সূত্রঃ সামহোয়ার বল্গ 

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template