السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

বোখারী শরীফ থেকে হাদিস

| comments

ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী (রহঃ) বোখারী শরীফের রচয়িতা। তবে তিনি ইমাম বোখারী (রহঃ) নামেই বেশী পরিচিত। এটা কম বেশী সবাই জানেন যে, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) গন কোরআন সংরক্ষনের জন্য যে সকল ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিলেন, হাদিস ও সুন্নাহ সংরক্ষনের জন্যেও ঠিক সে রকম ব্যবস্থাই করেছেন অর্থ্যাৎ মুখস্থ করা, লিপিবদ্ধ করা, বাস্তবে কার্যকরী করা এবং অপরকে শিক্ষা দেয়া। তাবেয়ীগন হাদীস লিপিবদ্ধ করার চেয়ে মুখস্থ করার প্রতিই গুরুত্ব দিতেন বেশী। কালক্রমে তাবেয়ীগন যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে শুরু করলেন তখন ভাবনা এলো এভাবে তাবেয়ীগন বিদায় নিলে অসংখ্য হাদীস বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই ৯৯ হিজরীতে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ (রহঃ) বড় বড় হাফেজে হাদীসগনের মাধ্যমে হাদীস সংকলন শুরু করেন। এ যুগকে হাদীস সংরক্ষনের প্রথম যুগ বলা হয়। এক পর্যায়ে বাতিল মতবাদ সমূহ ইসলামে প্রবেশ করতে শুরু করল, তখন এইসব বাতিল মতবাদ অনুসারীরা সহীহ হাদীসের সাথে মনগড়া হাদীস সমূহ মিশ্রন করতে চেষ্ঠা করতে লাগল। তাই তৃতীয় শতাব্দীর কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী (রহঃ) সহীহ হাদীস সমূহ নির্বাচিত করে বোখারী শরীফ সংকলন করেন। এ যুগকে হাদীস সংকলনের চতুর্থ যুগ বলা হয়।
যেহেতু ইমাম বোখারী (রহঃ) প্রসিদ্ধ চার ইমামের ন্যায় একজন মুজতাহেদ ছিলেন, তাই তিনি বোখারী শরীফকে তাঁর মাযহাব অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করেছিলেন। যদিও তার মাযহাব বিস্তার লাভ করেনি। কিন্তু এটা সত্য যে, কোরআন শরীফের পর এ পৃথিবীতে যত গ্রন্থ আছে, বোখারী শরীফ তার মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ। বোখারী শরীফে ৭২৭৫টি হাদীস আছে। তবে এর মধ্যে কিছু হাদীসের প্রচুর রিপিটেশন আছে, সেগুলো বাদ দিলে সর্বমোট হাদীসের সংখ্যা ৪০০০।
যেহেতু নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কথা, কাজ ও অনুমোদনকে হাদীস বলে সেহেতু এই লেখায় প্রত্যেক হাদীসের শুরুতে তাঁর নাম ব্যবহার করা হয় নাই।
১। আমলের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল
নিয়তের উপরই সকল কাজ নির্ভর করে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে, যা সে নিয়ত করেছে। সুতরাং যে হিজরত করে দুনিয়া লাভ করা অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার নিয়তে, তার হিজরত হয় তারই নিয়তে, যার নিয়তে সে হিজরত করেছে।

২। ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত
(হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত)
ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত-
১। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই এবং মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রসূল এই ঘোষণা দেয়া ২। নামাজ (সালাত) কায়েম করা ৩। যাকাত দেয়া ৪। হজ্জ করা এবং ৫। রোযা রাখা।

৩। পূর্ণাঙ্গ ও নিষ্কলঙ্ক মুসলনের পরিচয়
(কামেল) মুসলমান যে, যার জবান ও হাত হতে মুসলমানগন নিরাপদ রয়েছে এবং মুহাজির সে, যে আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা ত্যাগ করেছে।

৪। খানা খাওয়ানো ইসলামের অন্তর্ভুক্তি
(হযরত আব্দুল্লাহ অবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত)
কোন্ ইসলাম উত্তম, রসূল (সাঃ) উত্তর দিলেন, তোমরা খানা খাওয়াও এবং জানা অজানা তথা চেনা অচেনা সকলকে সালাম কর।

৫। রসূল (সাঃ) এর ভালবাসা ঈমানের অংশ
তোমাদের কেঊ (কামেল) মু’মিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান এবং অন্যান্য সকল মানুষ হতে প্রিয়তম হই।

৬। স্বামীর অকৃতজ্ঞতা
(হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)
আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। তখন আমি তাতে বেশীর ভাগ মহিলাদের পেয়েছি। কারণ, তারা কুফরী (অকৃতজ্ঞতা) বেশী করে থাকে।
হুযুর (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে?
তিনি (হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেন- না, তারা স্বামীর সাথে কুফরী করে এবং অনুগ্রহ স্বীকার করে না। তাদের অভ্যাস, যদি তুমি আজীবন কোন মহিলার উপর অনুগ্রহ করতে থাক আর এরপর তোমার পক্ষ থেকে কোন অবাঞ্চিত ব্যবহার হয়ে যায়, তখন অজীবনের উপকার ভুলে বলবে, আমি তো তোমার পক্ষ থেকে কখনও কোন সদ্ব্যবহার দেখিনি।

৭। রমযানের রাতের নফল এবাদত ঈমানের শাখা
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াব অর্জনের উদ্দেশে রমযানের কিয়াম করে, তার পুর্ববর্তী সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

৮। দ্বীন অতি সহজ
নিঃসন্দেহে দ্বীন অত্যন্ত সহজ। যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে কাঠিন্য (বাড়াবাড়ি) করবে, তবে সে দ্বীনের কাছে পরাজিত হবে। এ জন্য স্বীয় আমলে অবিচলতা গ্রহণ কর, আর যতটুকু সম্ভব মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। খুশী হয়ে যাও যায় এবং সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের কিছু সময় এবাদতের দ্বারা সাহায্য লাভ কর।

৯। ঈমান বাড়ে কমে
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে যবের দানা পরিমান নেকী (ঈমান) আছে, তবে সে জাহান্নাম থেকে বের হবে। আর জাহান্নাম থেকে ঐ ব্যক্তিও বের হবে যে কালামা পড়েছে এবং তার অন্তরে গমের দানা পরিমান ঈমান আছে। আর জাহান্নাম থেকে ঐ ব্যক্তিও বের হবে যে কালেমা পড়েছে এবং অন্তরে অণু পরিমান ঈমান আছে।

১০। পরিবারবর্গের জন্য খরচ করে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়
(হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যখন মানুষ স্বীয় পরিবারবর্গের জন্য খরচ করে তখন ঐ খরচ তার জন্য সদকা।

(হযরত সা’দ অবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
তুমি যা কিছু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খরচ করবে, তোমাকে তার উপর নিশ্চয় প্রতিদান দেয়া হবে, এমনকি তুমি স্বীয় স্ত্রীর মুখে যে খাদ্য তুলে দাও তারও সওয়াব মিলবে।
১১। যে আমল সর্বদা বেশী করা হয় আল্লাহর কাছে তা বেশী পছন্দনীয়
(হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নবী করিম (সঃ) একদিন তাঁর কাছে আসেন, ঐ সময় এক মহিলা তাঁর কাছে বসা ছিল। নবী করিম (সঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ মহিলাটি কে? তিনি (হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, অমুক মহিলা এবং আয়েশা (রাঃ) মহিলাটির (তাহাজ্জুদ) নামাজের আলোচনা করে বললেন যে, সে (মহিলাটি) সারারাত ঘুমায় না। এটা শুনে নবী (সঃ) এরশাদ করলেন-
চুপ কর (শুনে নাও), তোমাদের উপর এতটুকু আমল ওয়াজিব যতটুকু আমল করার তোমাদের শক্তি-সামর্থ থাকে। আল্লাহর কসম! সওয়াব দিতে আল্লাহ তা’আলা ক্লান্ত হন না, কিন্তু তোমরা আমল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাবে, আর আল্লাহ তা’আলার কাছে দ্বীনের ঐ আমল বেশী পছন্দনীয় যা সর্বদা পালন করা যায়।

১২। মোমেনের সর্বদা ভয় রাখা উচিত যেন অজ্ঞাতে কোন আমল বরবাদ না হয়
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী আর তার সাথে মারামারি করা কুফরী। অর্থাৎ যে মুসলমানের সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহ করলো সে কাফেরের কাজ করলো।

১৩। দুই মুসলমানের বিবাদের কারণে শব-ই-কদরের নির্দিষ্ট তারিখ রূদ্ধ হয়ে যাওয়া
(হযরত ওবাদা ইবনুস সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
আমি তোমাদের শব-ই-কদর সম্পর্কে বলার জন্য বের হয়েছিলাম, কিন্তু অমুক অমুক পরস্পর ঝগড়া করাতে ঐ খবর উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। হয়ত তোমাদের জন্য মঙ্গল হলে। এতএব তোমরা রমজানের ২৫, ২৭ এবং ২৯ তারিখে তা তালাশ কর।

১৪। নবী করিম (সঃ) এলেম ও উপদেশের কথা যেভাবে বলতেন যেন লোকেরা বিরক্ত না হয়
(হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
সহজ পন্থা অবলম্বন কর। কঠিন পন্থা আবলম্বন করো না। লোকেদের খুশী কর। খোশখবর জানিয়ে আহবান জানাও, ভয় প্রদর্শন করো না।

আবু ওয়ায়েল বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) প্রতি বৃহস্পতিবার দিন লোকেদের ওয়াজ শুনাতেন। এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, হে আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ আমি চাই আপনি আমাদের প্রতিদিন ওয়াজ শুনান। তিনি (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, এরূপ করলে তোমরা বিরক্ত হয়ে পড়বে, আমি তোমাদের বিরক্তি উৎপাদন করা পছন্দ করি না। কারন এভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের বিরক্তির ভয়ে মাঝা মাঝে ওয়াজ করে থাকতেন।

১৫। এলেম উঠে যাওয়া কেয়ামতের নিদর্শন
(হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
কেয়ামতের আলামত হল- এলেম উঠে যাবে, অজ্ঞতা প্রবল হবে, মদ্যপান আরম্ভ হবে, যেনা ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে এমন কি তা আর লুক্কায়িত থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি এমন একটা হাদীস বয়ান করবো যা আমার পরে আর কেউ করবে না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের কতিপয় আলামত হল-এলেম দুর্লভ হবে, অজ্ঞতা প্রবল হবে, প্রকাশ্যে ব্যভিচার হবে, নারীর সংখ্যা অধিক হবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এমন কি এক একটি পুরুষের তত্ত্বাবধানে পঞ্চাশটি নারী আশ্রিতা হবে।

১৬। এলেম শিক্ষা ও উপদেশকালে রাগান্বিত হওয়া
(হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন)-
এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সঃ)! আমুক ব্যক্তির জন্য আমি জামাআতে নামাজ পড়তে পারি না, করণ সে নামাজ খুব লম্বা করে পড়ে। এ কথা শুনে হুযুর (সঃ) এরূপ রাগান্বিত হয়েছিলেন যে, আমরা তাঁকে তদ্রুপ রাগান্বিত হতে আর কখনও দেখি নাই। তিনি রাগতঃ স্বরে বললেন, হে লোকসকল! তোমাদের অনেকে এরূপ কাজ করে থাকে, যা দ্বারা মানুষের মধ্যে দ্বীনের কাজে বিরক্তি সৃষ্টি হয়। এরূপ কাজ হতে তোমাদের সতর্ক থাকা জরুরী। লক্ষ্য রাখা কর্তব্য- নামাজ যেন খুব বেশী লম্বা না হয়ে পড়ে। কারণ জামাআতের মধ্যে রুগ্ন, দুর্বল ও কর্মব্যস্ত ব্যক্তিগণও থাকে।

১৭। বুঝানোর জন্য এক কথা বার বার বলা উচিত
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নবী করিম (সাঃ) যখন কিছু বলতেন, তখন বার বার বলতেন। আর কোন লোকের কাছে আসলে (জায়গা বিশেষ) তিন বার সালাম করতেন।

১৮। বেশী সৌভাগ্যশালী লোক
কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি বেশী সুপারিশ পাবে যে খাটি অন্তরে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে। অর্থাৎ যে আকীদাগতভাবে দৃঢ় এবং ইয়াকিন তথা বিশ্বাসে দুর্বল না হয়, সে-ই বেশী সৌভাগ্যশালী হবে।

১৯। এলেম যেভাবে উঠিয়ে নেয়া হবে
আল্লাহ তা’আলা এলেম তাঁর বান্দাদের কাছ থেকে জোড়পূর্বক ছিনিয়ে নিবেন না, কিন্তু আলেমদের উঠিয়ে নিয়ে এলেম উঠাবেন। যখন দুনিয়ার বুকে আলেম থাকবে না তখন জনগন মূর্খ ও অজ্ঞ ব্যক্তিকে সর্দার নিযুক্ত করবে এবং সে সমস্ত অজ্ঞ সর্দারের কাছেই সবকিছু জিজ্ঞেস করা হবে এবং তারা কিছু না জানা সত্ত্বেও ফতোয়া দেবে, যাতে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে অপরকেও গোমরাহ করবে।

২০। মহিলাদেরকে উপদেশ ও দ্বীন শিক্ষা দেয়া
(হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
একদা মহিলাগন নবী করিম (সাঃ) এর কাছে আরজ করল, পুরুষের জন্য আমরা আপনার নিকটবর্তী হতে পারি না। এতএব আপনি শুধু আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারিত করে দিন। সেমতে হুজুর (সাঃ) বিশেষভাবে তাদের কাছে একদিনের অঙ্গীকার করলেন। তিনি সেদিন তাদের (মহিলাদের) কাছে গিয়ে ওয়াজ নসীহত করেন এবং শরীয়তের নির্দেশাবলী শুনান। তাদেরকে তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যে তিনটি শিশু সন্তানকে কিয়ামতের দিনের জন্য পাঠিয়ে দিবে, তার জন্য ঐ শিশু সন্তানগুলো দোজখের অগ্নি হতে ঢালস্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে। একজন মহিলা জিজ্ঞাস করল, দুটি সন্তান হলে? রাসূলুল্লাহ বললেন, হাঁ, দুটি সন্তান হলেও ঐরূপ হবে।
২১। ডান হাতে নাপাকী দূর করা নিষেধ
(হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন)-
যখন তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ পানি পান করবে, পাত্রে নিঃশাস ফেলবে না। আর যখন পায়খানায় যাবে, স্বীয় লজ্জাস্থান ডান হাতে স্পর্শ করবে না এবং ডান হাতে নাপাকী দূর করবে না।

২২। নামাজরত মুসল্লীর সন্মুখ দিয়ে যাওয়া
(হযরত আবু জোহায়ম (রাঃ) বর্ণনা করেন)-
নামাজরত ব্যক্তির সন্মুখ দিয়ে যাতায়তকারী যদি উপলব্দি করতে পারতো যে, এরূপ করা কত বড় গুনাহ, তবে চল্লিশ (দিন, মাস বা বছর) দাঁড়িয়ে থাকতে হলেও সে নামাজীর সন্মুখ দিতে কখনও যেত না।

২৩। সময় মত নামাজ পড়ার ফজীলত
(হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
একবার আমি নবী করীম (সাঃ) এর খেদমতে আরজ করলাম- কোন্ আমল আল্লাহর কাছে বেশী পছন্দনীয়? হযরত (সাঃ) ফরমান, সময় মত নামাজ আদায় করা।
আমি জিজ্ঞাস করলাম , তারপর? তিনি বললেন, পিতাপাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা।
আমি জিজ্ঞাস করলাম তারপর? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা, এ পর্যন্ত ক্ষান্ত করা হল। আমি আরও জিজ্ঞাস করলে হযরত (সাঃ) আরও উত্তর দিতেন।

২৪। গরমকালে যোহরের নামাজ বিলম্বে পড়বে
(হযতর আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
তাপমাত্রা বৃদ্ধিকালে নামাজ ঠান্ডা সময়ে পড়বে। কারণ অত্যধিক তাপ জাহান্নামের অগ্নিশিখার উত্তাপ। দোযখের অগ্নি একবার আল্লাহর দরবারে অভিযোগ করল, হে পরওয়ারদিগার, আমরা একে অন্যের দ্বারা ভস্ম হচ্ছি। তখন আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে দু’রকম দুটি নিঃশ্বাস বাইরের দিকে ফেলার অনুমিত দেন, একটি গ্রীষ্মকালে ও অন্যটি শীতকালে। গ্রীষ্মকালের অত্যধিক উত্তাপ জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাস এবং শীতকালের অধিক ঠান্ডার প্রকোপ জাহান্নামের ঠান্ডা নিঃশ্বাস হতে সৃষ্ট।

২৫। আসরের নামাজ কাযা হওয়ার ক্ষতি
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তির আসর নামাজ কাযা হয়ে গেছে, তার এত বড় ক্ষতি হয়েছে যেন তার পরিবারবর্গ ও ধন -সম্পত্তি সব ধ্বংস হয়ে গেছে।

২৬। যে সময় নফল নামাজ নিষিদ্ধ
(হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন)-
ফজর নামাজের পর সূর্য উপরে না উঠা পর্যন্ত এবং আসর নামাজের পর সূর্য অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত নফল নামাজ পড়া নিষিদ্ধ।

২৭। স্মরণ হলেই ভুলে যাওয়া নামাজ পড়ে নিবে
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি নামাজ ভুলে যায়, স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করবে, তা না করলে ঐ গোনাহ মাফ করবার কোন উপায় নাই।

২৮। জামাআতের সাথে নামাজ পড়ার গুরুত্ব
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
একাকী নামাজ পড়া অপেক্ষ জামাআতে আআমাজ পড়ার ফযীলত সাতাশ গুণ বেশী।

২৯। যত বেশী দূর হতে মসজিদে আসবে তত বেশী সওয়াব হবে
(হযরত আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি মসজিদ হতে দূরে বাস করে তার সওয়াব বেশী হয়। যে আরও দূরে থাকে তার সওয়াব আরও বেশী। যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে তার চেয়ে ঐ ব্যক্তির সওয়াব বেশী যে ইমামের সাথে নামাজ পড়ার জন্য অপেক্ষা করে।

৩০। পাঁচ প্রকার শহীদ
১। প্লেগে মৃত্যু ২। পেটের পীড়ায় মৃত্যু ৩। পানিতে ডুবে মৃত্যু ৪। চাপা পড়ে মৃত্যু ৫। আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যু।
৩১। বাচ্চার ক্রন্দন শুনে নামাজ সংক্ষেপ করা
(হযরত আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
কোন কোন সময় এরূপ হয় যে, আমি নামাজ আরম্ভ করি এবং দীর্ঘ করে পড়তে ইচ্ছা করি, কিন্তু আশেপাশের শিশুদের ক্রন্দন শুনে ঐ নামাজ অল্প সময়ে শেষ করে দেই। কারণ, হয়ত ঐ শিশুদের মাতা জামাআতে যোগদান করেছে, তারা বিচলিত হতে পারে।

(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
তিনি (সাঃ) অল্প সময়ের মধ্যে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নামাজ পড়াতেন, যা অন্য কারো ভিতর দেখা যেত না। তিনি জামাআতে নামাজ পড়ার সময় যদি আশেপাশে শিশুদের কান্না শুনতে পেতেন, তবে অল্প সময়ের মধ্যে নামাজ শেষ করে দিতেন, যাতে জামাআতে যোগদানকারী শিশুর মাতা বিচলিত হয়ে না পড়েন।

৩২। ইমামের পূর্বে মাথা উঠানো গুনাহের কাজ
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি রুকু ও সেজদা হতে ইমামের পুর্বে মাথা উঠায়, সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তা’আলা তার মাথা বা তার আকৃতি গাধার ন্যায় করে দিতে পারেন?

৩৩। কাতার সোজা না হওয়ার ক্ষতি
(হযরত নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) বর্ণনা করেন)-
খবরদার, হুশিয়ার তোমরা নামাজের মধ্যে সোজাভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে, অন্যথায় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে দিবেন।

(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
কাতার সোজা কর, কাতার সোজা করা নামাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নামাজের মধ্যে কাতার সোজা করে দাঁড়াও কারণ, তার উপর নামাজের সৌন্দর্য নির্ভর করে।

৩৪। তাহাজ্জুদ একা পড়া উচিত
(হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
বাড়ি সংলগ্ন একটি ছাদহীন ঘেরাও স্থানে নিবী করিম (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। ঐ ঘেরাও স্থানের দেয়াল ছিল নীচু, তাই একদা কয়েকজন লোক তাঁকে নামাজ পড়তে দেখে তাঁর সাথে এক্তেদা করে নামাজ পড়ল। সকালে তার বলাবলি করাতে দ্বিতীয় রাতে আরো কিছু লোক জড় হয়ে তাঁর সাথে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ল। দুই -তিন রাত তারা এরূপভাবে নবী করিম (সাঃ) ’র সাথে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ল। পরের রাতে রাসুলে করিম (সাঃ) ঘর হতে বের হলেন না। সকাল বেলা সকলে তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞাস করলে তিনি এরশাদ করেন, আমার আশংকা হচ্ছিল, এভাবে সমবেতভাবে তোমরা তাহাজ্জুদ পড়তে থাকলে আল্লাহ তা’আলা তাহাজ্জুদ তোমাদের উপর ফরয করে দিতে পারেন।

৩৫। নামাজে উপর ও এদিক ওদিক তাকাবে না।
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যারা নামাজের মধ্যে উপরের দিকে তাকায়, তার অনর্থক এরূপ করে। তারা যদি এ অভ্যাস হতে বিরত না থাকে তবে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে অন্ধ করে দিতে পারেন।

(হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নামাজের মধ্যে এদিক ওদিক তাকালে শয়তান মানুষের নামাজে ছোঁ মেরে কিছু অংশ নিয়ে যায়।
৩৬। আমীন বলার ফজিলত
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
ইমাম সুরা ফাতিহা শেষ করে যখন আমীন বলবে, তুমিও তখন আমীন বলো। ফেরেশতাগণও আমীন বলে থাকেন। যাদের আমীন ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে হবে, তাদের পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

৩৭। ভালভাবে রুকু সেজদা না করার উপর হুশিয়ারি
হযরত হোযায়ফা (রাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে ঠিক মত রুকু সেজদা করছে না। তিনি তাকে ডেকে বললেন, তোমার নামাজ ঠিক হয় নাই। আরো বললেন, তুমি যদি এ অভ্যাসের উপর থাক, তবে আল্লাহ কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -কে প্রদত্ত আদর্শ হতে বিচ্যুত অবস্থায় তোমার জীবন অতিবাহিত হবে।

৩৮। সাত অঙ্গের উপর সেজদা করা উচিত
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
আল্লাহ পাক সাত অঙ্গের উপর সেজদা করতে আদেশ করেছেন। দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পায়ের সন্মুখভাগ এবং কপালের সাথে নাককেও বিশেষ ভাবে ইশারা করে দেখিয়েছেন। আরো আদেশ করেছেন, কাপড় ও মাথার চুল টেনে রাখবে না।

৩৯। ঈদের নামাজে এক পথে যাবে অপর পথে আসবে
(হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নবী করীম (সাঃ) ঈদের দিন এক পথে ঈদ্গাহে যেতেন এবং অন্য পথে প্রত্যাবর্তন করতেন।

৪০। যে নামাজে কসর নাই
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -কে দেখেছি, সফরে ব্যস্ততার কারণ ঘটলে তিনি মাগরিবের নামাজ বিলম্বিত করে তিন রাকাত আদায় করতেন এবং সামান্য দেরী করে এশার নামাজ দুই রাকাত আদায় করে সালাম ফেরাতেন। এশার পর মধ্য রাতে উঠা ভিন্ন কোন নামাজ পড়তেন না।

৪১। মহিলাদের মাহরাম ছাড়া সফর নিষেধ
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, কোন মহিলা তিন দিনের পথ সফর করতে পারবে না যদি না তার সঙ্গে কোন মাহরাম (মাহরাম বলতে এখানে ঐ সকল পুরুষ বুঝায় যাদের সাথে দেখা দেয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ ) থাকে।

(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন, যে মহিলা আল্লাহ’র উপর এবং পরকালের উপর ঈমান রাখে, তার সাথে মাহরাম সাথে না থাকা অবস্থায় একদিন এক রাতের পথ সফর করা হালাল নয়।

৪২। বসে নামাজ পড়লে সওয়াব অর্ধেক
হযরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রাঃ) অর্শ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, আমি নবী করীম (সাঃ) -কে বসে নামাজ পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তিনি বললেন, দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম, বসে পড়লে অর্ধেক সওয়াব, আর শুয়ে পড়লে বসে পড়ার অর্ধেক সওয়াব হবে।

৪৩। নফল এবাদতে শরীরের উপর কঠোরতা সমীচিন নয়
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
একদা নবী করীম (সাঃ) নিজ ঘরে প্রবেশ করে একটি রশি টানানো দেখলেন। তিনি জিজ্ঞাস করলেন, এ রশি টানানো কেন? সকলে উত্তর করল, যয়নব (রাঃ) নামাজ পড়তে পড়তে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েন তখন এর সাহায্য গ্রহন করেন। নবী করীম রশি খুলে ফেলতে বললেন এবং এরশাদ করলেন, এরূপ করার কোন প্রয়োজন নাই। প্রত্যেকের উচিত যতক্ষন মনের প্রফুল্লতা থাকে ততক্ষন (নফল) নামাজ পড়া, যখন ক্লান্তি বোধ হয় তখন বিশ্রাম নেয়া।

৪৪। তিনটি আমল
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
রাসূলুল্লাহ আমাকে তিনটি কাজের আদেশ করেছেন যা মৃত্যু পর্যন্ত আমি তা পরিত্যাগ করবো না। (১) প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখা (২) চাশতের নামাজ পড়া এবং (৩) বেতেরের পর ঘুমানো।

৪৫। নামাজের মধ্যে ইমামকে সতর্ক করা
(হযরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত)-
নামাজের মধ্যে ইমামকে কোন কারণে সতর্ক করার প্রয়োজন পরলে মহিলাগন হাতের উপর হাত মেরে শব্দ করবে এবং পুরুষরা সোবহানাল্লাহ বলবে।

৪৬। কয়েকটি কাজের আদেশ ও নিষেধ
(হযরত আযেব (রাঃ) বর্ণনা হতে)-
আদেশকৃত কাজ - (১) জানাজার সাথে যাওয়া (২) রোগী দেখতে যাওয়া এবং তার খোজ-খবর নেয়া (৩) কারো আহবানে সাড়া দেয়া (৪) মজলুম নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা (৫) শপথকারীর শপথ রক্ষ করা (৬) সালামের উত্তর দেয়া (৭) হাঁচিদাতার আলহামদুলিল্লাহ শ্রবণে ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার উপর রহমত নাজিল করুন বলে দো’য়া করা) বলা।
নিষেধকৃত কাজ- (১) রৌপ্য নির্মিত আংটি (২) সাধারণ রেশমী বস্ত্র (৩) মিহি রেশমী বস্ত্র (৪) মোটা রেশমী বস্ত্র (৫) তসর (৬) লাল রেশমী কাপড়ের গদি বা আসন ব্যবহার না করা।

৪৭। শিশু সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারনের ফজিলত
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে মুসলমানের তিনটি শিশু সন্তান মারা যাবে সে জাহান্নামে যাবে না, অবশ্য সকলের ন্যায় তাকেও জাহান্নামের উপর প্রতিষ্ঠিত পুলসিতার পার হয়ে যাতে হবে। কারণ, এটি একটি অনিবার্য ও অবধারিত বিষয় যা ব্যতিরেকে কোন উপায়ান্ত নাই। স্বয়ং আল্লাহ পাক মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন-
“তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তথায় পৌঁছাবে না। এটা তোমাদের পালনকর্তার অনিবার্য ফয়সালা”।

৪৮। শোক প্রকাশের বিধান
(হযরত মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) -এর এক ছেলের মৃত্যু হল, ঘটনার তিন দিন পর তিনি হলুদ রঙের এক প্রকার সুগন্ধি এনে ব্যবহার করলেন এবং বললেন, আমাদের জন্য একমাত্র স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক শোক প্রকাশ নিষিদ্ধ।

৪৯। বিলাপ করে কাঁদা গুনাহ
(হযরত মুগীরা (রাঃ) বর্ণনা করেন)-
যার মৃত্যুতে বিলাপ করা ক্রন্দন করা হবে, তাকে ঐ ক্রন্দনের দরুন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

৫০। শোক প্রকাশে বেদয়াত
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি শোক প্রকাশে মুখের উপর কপালের উপর থাপ্পড় মারবে বা খেদোক্তি করবে, বিলাপে অন্ধকার যুগের রীতিতে নিজের মৃত্যু, ধংস ইত্যাদি বিষয় আহবান করবে, সে ইসলামের তরীকা বহির্ভূত।
৫১। নয়নে অশ্রু অন্তরে ধৈর্য
(হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন)-
একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে আবু সাইফ কাইনের বাড়িতে উপস্থিত হলাম। ঐ ব্যক্তির গৃহেই হুজুর (সাঃ) এর শিশু পুত্র ইব্রাহিম (রাঃ) প্রতিপালিত হচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পুত্র ইব্রাহিম (রাঃ)-কে কোলে নিয়ে চুম্বন করলেন, বিশেষরূপে আদর করলেন। আবার যেদিন তিনি উক্ত গৃহে উপিস্থিত হলেন সেদিন তাঁর শিশুপুত্রটি শেষ নিঃশ্বাস করলেন। তাঁকে দেখে রাসূল (সাঃ)-এর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু বের হতে লাগল। আব্দুর রহমান ইবনে আ’ওফ নামে এক সাহাবী বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপনিও! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পুনরায় অশ্রু বর্ষনপূর্বক বললেন, নয়নে অশ্রু প্রাণে বেদনা, কিন্তু মুখে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কোন শব্দও উচ্চারিত হবে না। হে ইব্রাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত ও মর্মাহত।

৫২। কবরকে নামাজের স্থান বানানো নিষেধ
(হজরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
নবী করিম (সাঃ) মৃত্যুশয্যায় বলেছেন, ইহুদি নাসারাদের প্রতি আল্লাহ-তা’লার লানত, তারা তাদের নবীগণের কবরকে সেজদার স্থান বানিয়েছিল। নবী করিম (সাঃ)-এর কবরকে সেজদার স্থান বানাবার আশংকা না থাকলে তা উন্মুক্ত রাখা হত। আশংকা হয়, তা সেজদার স্থান করা হবে।

৫৩। আত্মহত্যার আজাব
(হযরত জুন্দুব (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
এক ব্যক্তির শরীরে ঘা ছিল, যাতনা সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করল। তার এই কাজে আল্লাহ-তা’লা অসন্তুষ্ট হয়ে বলেন, বান্দা স্বীয় প্রাণ বের করায় যেন আমা হতে অগ্রগামী হয়েছে, অতএব, আমি তার জন্য বেহেস্ত হারাম করে দিলাম।

(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তি গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে দোজখের মধ্যেও গলায় ফাঁসি দেয়ার আজাব ভোগ করবে এবং যে ব্যক্তি বর্শা দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে দোজখের মধ্যেও বর্শাঘাতের আজাব ভোগ করবে।

৫৪। মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করা উচিত
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
একদা সাহাবীগণ এক জানাজার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁরা মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করলেন। নবী করিম (সাঃ) বললেন, নির্ধারিত হয়ে গেছে। অতঃপর আর এক জানাজার নিকট দিয়ে চলায় সময় সাহাবীগণ মৃত ব্যক্তির নিন্দা করলেন, এবারও নবী করিম (সাঃ) বললেন, নির্ধারিত হয়ে গেছে। এই শুনে ওমর (রাঃ) জিজ্ঞাস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ কি নির্ধারিত হয়ে গেছে? নবী করিম (সাঃ) বললেন, তোমরা প্রথম মৃতের প্রশংসা করেছ, সে অনুযায়ী তার জন্য বেহেস্ত নির্ধারিত হয়ে গেছে, দ্বিতীয় মৃতকে তোমরা খারাপ বলেছ, সে অনুযায়ী তার দোজখ নির্ধারিত হয়ে গেছে। তোমরা দুনিয়ার বুকে আল্লাহ-তা’লার সাক্ষীস্বরূপ।
যে কোন মুসলমান মৃত ব্যক্তির পক্ষে চার জন লোক তার সৎ বা নেক হওয়ার সাক্ষ্য দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। আমরা জিজ্ঞাস করলাম, যদি তিনজন সাক্ষী হয়। তিন জন হলেও তদ্রূপ হবে। আমরা আবার জিজ্ঞাস করলাম, যদি দু’জন হয় সাক্ষী হয়? নবী করিম (সাঃ) বললেন, দু’জন হলেও তদ্রূপ হবে। অতঃপর আমরা একজন সাক্ষীর বিষয়ে জিজ্ঞাস করি নাই।

৫৫। কবরে প্রশ্নোত্তরের পর
(হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যখন বান্দাকে কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা ফিরে আসতে থাকে, তখন তাদের জুতার আওয়াজ শোনার মত দূরত্বে যেতেই দুজন ফেরেশতা তার নিকট এসে তাকে বসিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে দেখিয়ে জিজ্ঞাস করবে- এই ব্যক্তি সম্বন্ধে তুমি কি বলতে? মুমিন ব্যক্তি বলবে- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলা হবে- দোজখে তোমার অবস্থান দেখে নাও, যার বদলে আল্লাহ তোমাকে জান্নাতে একটি স্থান দিয়েছেন। সে তখন দুটি স্থানই দেখতে পাবে। তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। মোনাফেক ও কাফেরকে বলা হবে- এ ব্যক্তি (রসূল (সাঃ) সম্পর্কে তুমি কি বলতে? সে বলবে, আমি জানি না। লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে- তুমি জানতে চাও নাই অথবা পড়েও দেখ নাই। এরপর লোহার হাতুড়ি দ্বারা তাকে এমনভাবে আঘাত করা হবে যাতে সে চিৎকার করতে থাকবে। জ্বিন ও মানুষ ছাড়া এই চিৎকার সবাই শুনতে পাবে।

৫৬। কবরে সকাল-সন্ধ্যায় জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হবে
(হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
তোমাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে সকাল সন্ধ্যায় তাকে বেহেশতে অথবা দোজখে তাকে তার জায়গা দেখানো হবে। জান্নাতী হওয়ার উপযুক্ত হলে জান্নাতে এবং জাহান্নামী হওয়ার উপযুক্ত হলে জাহান্নামে তার জায়গা দেখানো হবে। তাকে বলা হবে- কেয়ামতের দিন পূনর্জীবিত করে উঠাবার পর আল্লাহ তোমাকে এ জায়গা দান করবেন।

৫৭। ধন সম্পদের যাকাত না দিলে শাস্তি
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
যে ব্যক্তিকে আল্লাহ-তা’লা ধন-দৌলত দান করেছেন, কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করে না, কেয়ামতের দিন তার ঐ ধন-দৌলতকে বিরাট আকারের অতি বিষাক্ত অজগরে রূপান্তরিত করা হবে, যার মুখের উভয় পাশে বিষদাঁত থাকবে। অজগরটিকে কেয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির গলায় গলবন্ধরূপে পরিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর আজগরটি উভয় চিবুক পূর্ণ মুখে ঐ ব্যক্তিকে কামড় দিয়ে বিষোদ্গার করতে থাকবে এবং বলবে - আমি তোমারই ধন-সম্পদ, আমি তোমারই রক্ষিত পুজি।

৫৮। নিজে না খেয়ে আপন কন্যাদেরকে খাওয়ানোর ফজিলত
(হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত)-
একদা এক ভিখারিনী দরিদ্র মহিলা আমার কাছে আসল, সঙ্গে তার দুটি কন্যাও ছিল। আমি তাকে একটি মাত্র খোরমার অধিক কিছু দিতে পারলাম না। খোরমাটি পেয়ে সে একটুও খেল না, কন্যাদ্বয়কে দিয়ে দিল। অতঃপর সে চলে গেল। এমতাবস্থায় নবী করিম (সাঃ) আমার ঘরে তশরীফ আনলেন। আমি তাঁকে ঘটনাটি শুনালাম। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি মেয়েদের ভরন পোষণ জোটানোর জন্য কষ্ট সহ্য করে যাবে, ঐ ব্যক্তির জন্য সেই মেয়েগন দোজখ হতে পরিত্রানের অবলম্বন হবে।

৫৯। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্ঠা করা উচিত
(হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত)-
একদা কয়েকজন আনসার (মদীনাবাসী সাহাবী) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে কিছু সাহায্য প্রার্থনা করলেন। তিনি তাঁদেরকে দান করলেন। তাঁরা পুনরায় সাহায্য চাইলেন, তিনি এবারও দান করলেন। এমন কি তাঁর কাছে যা কছু ছিল বারংবার দান করে তা সম্পূর্ণ নিঃশেষ করে ফেললেন। এবার তিনি তাঁদেরকে লক্ষ্য করে বললেন- আমার নিকট টাকা-পয়সা কিছু থাকলে তা তোমাদেরকে না দিয়ে আমি নিজের কাছে কখনও জমা রাখি না। স্মরণ রেখো, যে ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকায় সচেষ্ট হবে, আল্লাহ-তা’লা তাকে তা হতে নিবৃত্ত থাকার সুযোগ ও তওফীক দান করবেন। যে ব্যক্তি কারো মুখাপেক্ষি হবে না, আল্লাহ-তা’লা তাকে পরমুখাপেক্ষিতা হতে বাঁচিয়ে রাখবেন। যে ব্যক্তি কষ্টক্লেশে আপদে-বিপদে দুঃখ যাতনায় ধৈর্য ধারণে সচেষ্ট হবে, আল্লাহ-তা’লা তাকে ধৈর্যাবলম্বনে সাহায্য করবেন। ধৈর্যের ন্যায় প্রশস্ত ও উত্তম নেয়ামত দুনিয়াতে আর কিছুই নেই।

৬০। অভাব প্রকাশ না করা উচিত
(হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণিত)-
ঐ ব্যক্তি মিসকিন নয় যে দু-একটি খোরমার জন্য লোকেদের কাছে ঘুড়ে বেড়ায়। প্রকৃত মিসকিন ঐ ব্যক্তি, যার অভাব আছে কিন্তু তা প্রকাশ পায় না, যাতে তাকে দান খয়রাত করা যেতে পারে। নিজেও লোকদের কাছে চাইতে দাঁড়ায় না।
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template