السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

আগুনের ব্যবহার ইসলামী দৃষ্টিকোণ

| comments

মাটি পানি, বাতাসের মতো পরিচিত একটি বস্তু হলো আগুন। আগুনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দুটি লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন- ১. পৃথিবীর মানুষের উপকার সাধনের লক্ষ্যে ২. পরপারে মানুষকে শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে। 
পৃথিবীর আগুন আর পরকালের আগুনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্যও রয়েছে। যেমন, পৃথিবীর আগুন অপেক্ষা পরকালের আগুন ৭০ গুণ বেশি শক্তিশালী এবং সে আগুনের রঙ ভয়ানক কালো। আল কুরআনের ১৪৫ জায়গায় আল্লাহ তায়ালা আগুনের কথা উল্লেখ করেন। এর অধিকাংশ বক্তব্যই পরপারের আগুনকে ঘিরে। সেই আগুনের উত্তপ্ততা স্পষ্টভাবে আঁচ করা পৃথিবীর মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রচন্ড উত্তপ্ত ও ভয়ানক কালো রঙের আগুন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার অবাধ্য বান্দার জন্য প্রজ্বলিত রেখেছেন প্রধানত দুটি কারণে— আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এ আগুনে নিক্ষেপ করবেন। 
প্রথমত, আল্লাহর একত্মবাদ অস্বীকার করা বা তার সঙ্গে অন্যকে অংশীদার স্থাপন করা। নবী-রাসূল, ফেরেশতা, পরকাল, আসমানি কিতাব, ভাগ্য, এসব বিষয় অস্বীকার করা। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়েও তার বিধিনিষেধ অমান্য করা। পক্ষান্তরে পৃথিবীতে আগুনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নেয়ামত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, মানুষ তাদের প্রয়োজনে এ আগুন ব্যবহার করবে; কিন্তু মানুষের নীতি ও নৈতিকতার অবক্ষয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে। শক্রতামূলকভাবে দোকানে বা ফ্যাক্টরীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাতে অসহায় মানুষ পুড়ে মরে। মাঝে মাঝে এমন সংবাদও পাওয়া যায় যে, দোকানের মালিক ইন্স্যুরেন্স এর টাকার লোভে কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। শত শত নিরীহ মানুষকে এভাবে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার পদ্ধতিটি জাহেলিয়া যুগ তথা সভ্যতা-পূর্ব যুগের মানুষের কাছেও অপরিচিত। যারা নিরীহ মানুষকে পৃথিবীর লাল আগুনে পোড়াচ্ছে, তাদের আল্লাহ তায়ালা পরকালে অবশ্যই সেই কালো আগুনে নিক্ষেপ করবেন। বর্তমানে এমন একটি সময় আমরা অতিক্রম করছি, যে সময়ে বিভিন্ন মুসলিম বিশ্বে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ পুড়ে হচ্ছে ছাই। বিশেষ করে আমাদের দেশে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই আগুন, রাস্তায়, গাড়িতে, মার্কেট বা দোকানে, সব জায়গাতেই আগুন। আমরা এখন প্রতিদিন আগুনের সঙ্গে বাস করি। আমাদের অনেকেই হারিয়ে যাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্রের বুলেটের আঘাতে। আবার অনেকে পুড়ে হচ্ছে ছাই। অনেকে অগ্নিকুন্ডের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে কাতরাচ্ছে। যারা মানুষের গাড়ি, বাড়ি ও দোকানপাটে আগুন লাগাচ্ছে এবং নিয়ে যাচ্ছে জীবন, তারা কি একটিবারও স্মরণ করে না যে, আল্লাহ তায়ালা কুরআনের ১৪৫ জায়গায় জাহান্নামের কালো আগুনের কথা উল্লেখ করেছেন? তাদের এসব অসামাজিক ও অমানবিক কাজের জন্য অবশ্যই সেই আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। আগুন। যার আছে বহুগুণ তবে সেকি শুধু জ্বালাতেই জানে? নাকি এই আগুন ছাড়া আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজন আর উন্নয়নও সম্পন্ন হয় না। আমাদের যাপিত জীবনের অতি প্রয়োজনীয় কোন কাজ এমন কোন দিন যায় কি, যেদিন আগুনের ব্যবহার না হয়? অগ্নিক্ষুধা এতটাই একপাক্ষিক ঘটনা যে, জান-মালসহ কিছুই আর অবশিষ্ট রাখে না। প্রতি বছর আমাদের দেশে আকস্মিক অগ্নিকান্ডে কী পরিমাণ জান-মালের ক্ষতি হয় তার কোনো পরিসংখ্যান মূলক তথ্য হাতের কাছে না থাকলেও নাগরিক জীবনে এর ভয়াবহতা ও ভিকটিম হিসেবে আমাদের অসহায়তার অন্ত নেই। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে মার্কেট-বহুতল ভবন, যানবাহন ইত্যাদি প্রায় সব ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপক সিষ্টেমের অভাব বা অপ্রতুলতা এবং আমাদের ভয়ানক অজ্ঞতা-অসচেতনতার কারণে যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে যে কেউ এই আগ্রাসী অগ্নিকান্ডের দুঃখজনক ট্র্যাজেডির অসহায় শিকার হয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। গ্রামে-গঞ্জে বা ছোটখাটো শহরগুলোতে হুট করে বাইরে খোলা জায়গায় বেরিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচানোর ছোট্ট সুযোগটুকু পাওয়া গেলেও খাঁচাবদ্ধ নাগরিক জীবনে সেটাও সুদূরপরাহত বলেই মনে হয়। তাই প্রতি মুহূর্তের সমূহ আশঙ্কা আর সম্ভাব্য বিপদ মাথায় নিয়েই আমাদের নাগরিক জীবন। আগুনের লেলিহান শিখার মহাগ্রাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ভুক্তভোগীদের সহায়-সম্বল, ঘরে জমা রাখা বহু কষ্টের সঞ্চিত অর্থকড়ি। গার্মেন্টে চাকরি করে, শ্রম বিক্রি করে, নিত্যপণ্যের হকারি করে যারা কায়ক্লেশে বেঁচে থাকার স্বপ্ন গড়ছে সামান্য সময়ের মধ্যে তাদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। আগুন চেনে না ধনী-গরিব। আগুনের কাজ হচ্ছে সবকিছু পুড়িয়ে ছারখার করা; তা-ই করে সে। আগুন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানব সভ্যতার নবযাত্রা শুরু। 
কিন্তু এর অসাবধান, অবহেলার ব্যবহার মানুষের জীবন, সম্পদ কেবল ধ্বংসই করেছে। মানুষের হাতে আগুনের অপব্যবহার কিভাবে মানুষেরই সর্বনাশ করেছে আমরা নিত্য তা দেখে আসছি গার্মেন্ট থেকে শুরু করে বস্তিতে। চলন্ত বাস থেকে শুরু করে দূরপাল্লার ট্রেনে। যুগে যুগে ধ্বংসকারীদেরও প্রধান পছন্দ ছিল আগুন। এর প্রমাণ আমরা পাই সেই মধ্যযুগ থেকে শুরু করে সামপ্রতিক সময়ের অনেক যুদ্ধবিগ্রহ পর্যন্ত। রণাঙ্গনে আগুনের গোলা নিক্ষেপের ইতিহাসও বেশ পুরনো। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আগুনের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে।

-মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template