السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

খেরুয়া মসজিদ, শেরপুর, বগুড়া

| comments

অনেক ঝড়-বৃষ্টি, রৌদ্র-দহন সয়ে টিকে আছে ৪৩০ বছর ধরে। মহাকাল তার গতিপ্রবাহের চিহ্ন রেখে গেছে দেয়ালে-খিলানে-গম্বুজে। ক্ষয়ে গেছে ইটে খোদাই করা নকশা, ঝরে গেছে চুন-সুরকির প্রলেপ। হয়তো হুমড়ি খেয়ে পড়েই যেত এত দিনে। কিন্তু তা হয়নি সম্ভবত চার কোণের প্রকাণ্ড আকারের মিনার আর চওড়া দেয়ালের শক্তির জন্যই। চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা পাতলা লাল ইটের দেয়ালগুলো ১.৮১ মিটার চওড়া। তার ওপর ভর করেই ছাদের ওপর টিকে আছে খেরুয়া মসজিদের তিনটি গম্বুজ। দেশের পুরাকীর্তিগুলোর যে গড়পড়তা বিধ্বস্ত চেহারা, সে তুলনায় খেরুয়া মসজিদের অবস্থা যথেষ্ট ভালো বলেই মনে হলো। সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা আয়তাকার মাঠ। কিনার দিয়ে তাল, নারকেল, আম, কদমগাছের সারি। মৌসুমি ফুলের গাছও আছে এক পাশে। ইটের প্রাচীরের ওপর লোহার রেলিং দিয়ে পুরো চত্বর ঘেরা। মোট ৫৯ শতাংশ জায়গা। নামাজের সময় মুসল্লিরা ছাড়া সাধারণত কেউ ভেতরে প্রবেশ করে না। ফলে প্রাঙ্গণটি নিরিবিলি এবং খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। গাছগাছালিঘেরা সবুজ পরিবেশে তিন গম্বুজওয়ালা প্রাচীন স্থাপত্যটিকে মনোরম দেখায়। চার শতাধিক বছরের পুরানো বগুড়া শেরপুরের খেরুয়া মসজিদ খেরুয়া মসজিদ প্রত্ননিদর্শন হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোগল-পূর্ব সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মোগল স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে এই মসজিদটি নির্মিত। বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা সদরের খোন্দকার টোলা মহল্লায় এর অবস্থান। মসজিদের সামনের দেয়ালে উৎকীর্ণ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল এটি নির্মাণ করেছিলেন। ‘কাকশাল’ উপাধি ছিল তুর্কিদের। ঘোড়াঘাট অঞ্চল ছিল তুর্কি জায়গিরদারদের অধীন। মির্জা মুরাদ খান কাকশালের বিশদ পরিচয় পাওয়া যায় না। সে সময় শেরপুর ঘোড়াঘাটের অধীনে একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মির্জা মুরাদ খান কাকশাল শেরপুরের জায়গিরদার বা ফৌজদার ছিলেন বলে ঐতিহাসিকদের অনুমান। খেরুয়া মসজিদের নামকরণও স্পষ্ট নয়। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া তাঁর বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ বইতে উল্লেখ করেছেন ‘এ মসজিদের “খেরুয়া” নামের কোনো ইতিবৃত্ত পাওয়া যায়নি। আরবি বা ফার্সি ভাষায় খেরুয়া বলে কোনো শব্দ পাওয়া যায় না।’ তবে ফার্সিতে ‘খায়ের গাহ্’ বলে একটি শব্দ আছে। এর অর্থ ‘কোনো স্থানের ভেতরে’। রাজা মানসিংহ যখন বাংলার সুবাদার, তখন তিনি শেরপুরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এই দুর্গের কোনো অস্তিত্ব এখন নেই। তবে মসজিদটি যদি শেরপুর দুর্গের ভেতরে নির্মিত হয়ে থাকে, তবে ‘খায়ের গাহ্’ থেকে খেরুয়া নাম হতে পারে বলে যাকারিয়া অনুমান করেছেন। খেরুয়া মসজিদ বাইরের দিক থেকে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ১৭.২৭ মিটার, প্রস্থ ৭.৪২ মিটার। পূর্ব দেয়ালে তিনটি খিলান দরজা। মাঝেরটি আকারে বড়। উত্তর-দক্ষিণে একটি করে খিলান দরজা। কোনোটিতেই চৌকাঠ নেই। ফলে দরজার পাল্লা ছিল না। পূর্বের বড় দরজাটির নিচে কালো পাথরের পাটাতন। পূর্বের দরজা বরাবর পশ্চিমের দেয়ালের ভেতরের অংশে তিনটি মেহরাব। মেহরাবগুলোর ওপরের অংশ চমৎকার কারুকাজখচিত। মসজিদটির নিচের অংশে ভূমি পরিকল্পনা মোগল স্থাপত্যরীতির। ওপরের অংশ মোগল-পূর্ব সুলতানিরীতিতে। চার কোণে দেয়াল থেকে খানিকটা সামনে চারটি বিশাল মিনার। ছাদের ওপর তিনটি ৩.৭১ মিটার ব্যাসের অর্ধ গোলাকৃতির গম্বুজ। কার্নিশ ধনুকের মতো বাঁকা। তার তলায় সারিবদ্ধ খিলান আকৃতির প্যানেলের অলংকরণ। অত্যন্ত সুন্দর এর দেয়ালের গাঁথুনি। নান্দনিক বৈচিত্র্য আনা হয়েছে ইটের বিন্যাস ও খাড়া প্যানেল তৈরি করে। সামনের অংশের ইটে আছে ফুল-লতা-পাতা খোদাই করা নকশা। মিনার, গম্বুজ, নকশা ও ইটের বৈচিত্র্যময় গাঁথুনিতে পুরো স্থাপত্যটি অত্যন্ত নান্দনিক হয়ে উঠেছে।
এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে বাড়ি গিয়ে এক ফাঁকে খেরুয়া মসজিদে ঘুরে আসা গেল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, গত বছর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটির সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে দেওয়ায় পরিবেশটি ভালো আছে। এখনো নিয়মিত নামাজ আদায় হয়। তা ছাড়া দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য, ইতিহাস বিষয়ে আগ্রহী অনেকেই আসেন মসজিদটি দেখতে। ছবি তোলার চেষ্টা করা গেল। তবে প্রাচীন এই স্থাপত্যের অনন্য সৌন্দর্য তুলে ধরার মতো দক্ষতা তো নেই, উপরন্তু তেমন ক্যামেরাও ছিল না সঙ্গে। অগত্যা দায় ঠেকানোর যন্ত্রটিতে যে ছবি উঠল, তাতে খেরুয়া মসজিদের কাঠামোরই একাংশ ধরা পড়ল শুধু, স্বরূপে পাওয়া গেল না তাকে। (সৌজন্যে- প্রথম আলো)
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template