জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চায় মুসলমানদের গৌরবোজ্জ্বল অবদান রয়েছে। মুসলিম মনীষীদের মধ্যে জাবির বিন হাইয়্যান, আল রাজি ও ইবনে সিনা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। জাবির বিন হাইয়্যান ৭২২ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের কুফায় জন্মগ্রহণ করেন। জাবির বিন হাইয়্যান বিজ্ঞান বিষয়ে দুই হাজারেরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন। যথা_পাতন, ঊর্ধ্বপাতন, পরিস্রবণ, দ্রবণ, ভস্মীকরণ, বাষ্পীকরণ ইত্যাদি। বিন হাইয়্যান বস্ত্র ও চর্ম রঞ্জন, ওয়াটার প্রুফ কাপড়, লোহার মরিচারোধক বার্নিশ ও স্থায়ী লেখার কালি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সাইট্রিক এসিড, আর্সেনিক, সিলভার, নাইট্রেড ইত্যাদি রাসায়নিক দ্রব্য সম্পর্কে জাবির বিন হাইয়্যান স্বচ্ছ ধারণা ছিল। রসায়নশাস্ত্রের ওপর তিনি ৫০০ গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কিতাবুস সাবঈন, কুতুবুল খামাসা মিয়্যাতি, কিতাবুল মিয়াতে ওয়াল ইসনা আশারা ইত্যাদি। চতুর্দশ শতাব্দীর পর তাঁর রচনাবলি এশিয়া ও ইউরোপে রসায়নশাস্ত্রের আলোচনায় জায়গা করে নেয়। পশ্চিমা বিশ্বে তিনি জেবের নামে অধিক পরিচিত। তাঁকে আধুনিক রসায়নশাস্ত্রের জনক বলা হয়। নিরপেক্ষ ও গতি বিজ্ঞানের পুরোধাও বলা হয় তাঁকে। তাঁর রচনার মধ্যে যে বিষয়টি সর্বপ্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হলো, ধর্মের ইতিহাস এবং রসায়ন সম্বন্ধীয় রচনাবলি। জাবিরের লিখিত 'আল জহর' বা বিষ নামক চিকিৎসা গ্রন্থটি মৌলিকতার নিরিখে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দর্শন, বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্র ছাড়াও কোরআন, হাদিস, তাফসির ও ফিকাহশাস্ত্রেও তাঁর অসাধারণ দক্ষতা ছিল। রাজনীতিতেও ছিল তাঁর যথেষ্ট আগ্রহ। ইমাম জাফর আস সাদিক ছিলেন তাঁর অন্যতম শিক্ষা গুরু। জাবির কুফায় একটি রসায়নাগার স্থাপন করেন।
আল রাজি ও ইবনে সিনা : আরেকজন বিখ্যাত মুসলিম মনীষী হলেন আল রাজি। তিনি 'যবক্ষার এসিড' পুনরাবিষ্কার করেন এবং বিখ্যাত চিকিৎসক ইবনে সিনা রসায়নশাস্ত্রকে প্রণালিবদ্ধ করতে সাহায্য করেন। আল রাজি গবেষণা করে নানা ধরনের অ্যালকোহলিক স্পিরিট আবিষ্কার করেন এবং এ সম্পর্কে 'কিতাবুল আসরার' বা রহস্যগ্রন্থ নামে একটি বই রচনা করেন। রসায়নশাস্ত্রের এই প্রসিদ্ধ গ্রন্থটি ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সমগ্র ইউরোপে পড়ানো হতো। আল রাজি রাসায়নিক পদার্থকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছিলেন। যথা_উদ্ভিদ, প্রাণী ও খনিজ। তিনিই সর্বপ্রথম পানি থেকে কৃত্রিম উপায়ে বরফ তৈরি করার কৌশল আবিষ্কার করে সমগ্র বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
মূলত মুসলিম মনীষীরাই সর্বপ্রথম জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সব শাখায় অসামান্য অবদান রেখেছেন, যা অতুলনীয়।
***************************************************************************************লোকমান হোসেন
প্রভাষক
ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ
খিলগাঁও, ঢাকা
Post a Comment