ঢাকা শহর বিশ্বের দরবারে 'মসজিদের শহর' হিসেবে পরিচিত; কিন্তু এ ঐতিহ্য একদিনে গড়ে ওঠেনি। আমরা যদি একটু পেছনে ফিরে তাকাই তাহলেই দেখা যাবে ১৮৩২ সালে ঢাকার তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট জর্জ হেনরী ওয়াল্টার এক রিপোর্টে উল্লেখ করেন যে, তৎকালীন ঢাকায় মসজিদের সংখ্যা ছিল ১৫৩টি। যার সংখ্যা ধীরে ধীরে আরো বাড়তে থাকে এবং ক্রমেই ঢাকা পরিণত হতে থাকে অসংখ্য মসজিদের শহররূপে। বর্তমানে যার সংখ্যা আনুমানিক প্রায় ১০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। আর ঢাকার এসব মসজিদের বেশিরভাগই পুরান ঢাকায় অবস্থিত। ঢাকার সবচেয়ে পুরনো মসজিদ যা পুরান ঢাকার ৬নং নারিন্দা রোডে অবস্থিত। এটি পুরান ঢাকা তথা ঢাকার সবচেয়ে পুরনো স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি; যা আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগের। ১৪৫৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ ইসলাম খাঁর আগমনের প্রায় দেড়শ বছর আগে বাংলার সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদের আমলে এ মসজিদটি নির্মিত হয়। তখন পারস্য উপসাগরের আশপাশের অধিবাসীরা প্রায়ই জলপথে এখানে বাণিজ্য করতে আসতেন। তখন পুরান ঢাকার এ অঞ্চলটির (নারিন্দা-ধোলাই খাল) ওপর দিয়ে বয়ে যেতো বুড়িগঙ্গার একটি শাখা যা বুড়িগঙ্গা হয়ে শীতলক্ষ্যায় গিয়ে মিশত। আরাকান আলী নামক এক সওদাগর তৎকালীন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এ এলাকায় আসেন এবং বসবাস শুরু করেন। সওদাগরদের এ সময় নামাজ পড়তে অসুবিধা হতো বিধায় আরাকান আলী এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
এখানে বসবাসকালীন আরাকান আলীর মেয়ে বিনত বিবির আকস্মিক মৃত্যু ঘটে। তাকে মসজিদের পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। এর ঠিক ছয় মাস পরই আরাকান আলী মৃত্যুবরণ করেন এবং তার শেষ ইচ্ছা অনুসারে তাকে বিনত বিবির কবরের পাশে সমাধিস্থ করা হয়। পরবর্তীতে বিনত বিবির নামে এ মসজিদটির নামকরণ করা হয়। মসজিদটির দেয়ালে একটি কালো পাথরে এখনো ফার্সি ভাষায় পুরো ইতিহাসটির বর্ণনা করা আছে। হিজরি ৮৬১-তে নারিন্দা রোডস্থ এ মসজিদটির প্রথম সংস্করণ করা হয়। পরবর্তীতে ৮৬৬ হিজরিতে বিনত বিবি ও আরাকান আলীর সমাধিস্থলে বিনত বিবির মাজারটি স্থাপন করা হয়। বাংলা ১৩৩৭ সালে মসজিদটির দ্বিতীয় সংস্করণ করা হয় এবং দ্বিতীয় গুম্বুজটি স্থাপন করা হয়। প্রায় ২০০ বছর ধরে এলাকাবাসী একটি কমিটি গঠন করে এ মসজিদটির দেখাশোনা করে আসছেন। এছাড়াও এলাকাবাসী মসজিদটি বড় করে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন যার জন্য এক/দেড় বছর আগে মিউনিসিপ্যালিটি প্রায় আড়াই কাঠা জায়গা প্রদান করে। বর্তমানে মসজিদটির মোট জায়গার পরিমাণ ৬-৭ কাঠা প্রায়। এছাড়াও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এখানে একটি মেসও পরিচালিত হচ্ছে যার উপার্জিত অর্থ মসজিদ তহবিলে জমা করা হয়। বিনত বিবির মসজিদ এরকম একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন যেখানে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে বিভিন্ন পর্যটক এসে ভিড় জমায়; কিন্তু সেখানে আমরা ক'জনই বা জানি এর কথা।
Post a Comment