السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব নিদর্শনসমূহ

| comments

কুফর, অজ্ঞতা আর কুপ্রথার সয়লাব বিস্তর লাভের সাথে সাথে আল্লাহতায়ালা তাঁর আরও নিদর্শন পৃথিবীবাসীকে প্রত্যক্ষ করাবেন। সেইসব নিদর্শনের মাঝে অন্যতম একটি হল পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তের একটি এবং পশ্চিম প্রান্তের একটি স্থান ধসে পড়া।’ এই ভূমি ধসের ফলে তাকদীর অস্বীকারকারীরা ধ্বংস হয়ে যাবে। (১) এছাড়া এ সময়েই পৃথিবীবাসী এক বিশাল ধোঁয়ার কুন্ডলী প্রত্যক্ষ করতে পারবে। (২) এই ধোঁয়ার কুন্ডলী ক্রমশ: সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করে ফেলবে। ধোঁয়ার তীব্রতায় মানবকুল অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে। সকলের মাঝে এক চরম অস্থিরতা বিরাজ করতে থাকবে। ফলে মুসলমানরা স্থূল বুদ্ধিসম্পন্ন, অনুভূতিশূন্য, ব্যুত্পত্তিহীন হয়ে পড়বে। ঠাণ্ডা বা সর্দিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা একেবারে দুর্বল ও ক্ষীণ হয়ে যাবে। কিন্তু কাফের এবং মুনাফেকরা এই ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে কেউ একদিন, কেউ দুইদিন, আবার কেউ তিনদিন অচেতন থেকে পুনরায় চৈতন্য ফিরে পাবে। চল্লিশ দিন পর্যন্ত এই ধোঁয়া সমগ্র পৃথিবীকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে রাখবে। এরপর ধীরে ধীরে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে (বুখারী, মুসলিম)।
পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয়: ধোঁয়ার আচ্ছাদন কেটে যাওয়ার পর জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখ দিবাগত রাতটি খুব দীর্ঘতর হবে। রাতের দীর্ঘতা দেখে মুনাফিকরা আতংকগ্রস্ত, শিশু বাচ্চারা নিদ্রা থেকে জাগ্রত, পশুপাখিরা আহারের জন্য ছটফট করবে, সর্বোপরি সারা দুনিয়ার মানবকুল ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে জোরে জোরে কান্নাকাটি শুরু করে দেবে। তারা মুখে ‘তওবা-তওবা’ শব্দ উচ্চারণ করতে থাকবে। হতাশা এবং নিরাশাগ্রস্ত মানুষ দিনের আলোর জন্য অস্থির হয়ে পড়বে। এমনি হতাশা ও নিরাশার মাঝে প্রায় তিন-চার রাতের মত দীর্ঘ হওয়ার পর চন্দ্রগ্রহণের ন্যায় সূর্য একেবারে ক্ষীণ ও সামান্য রৌশনীসহ পশ্চিমাকাশে উদিত হবে। (৩) এই অবস্থা দেখে সমস্ত মানুষ আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হবে এবং মুখেও তা স্বীকার করতে থাকবে। কিন্তু ঐ সময় আর তাদের এই বিশ্বাস স্বীকারের কোন মূল্যই থাকবে না। তওবার দরজা তখন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর থেকে সূর্য আবার পূর্বদিক থেকে তার পূর্ণ উজ্জল্যতা ও আলোকরশ্মি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উদিত হতে থাকবে (আবু দাউদ, তিরমিজি)।

‘দাব্বাতুল আর্দ’-এর আত্মপ্রকাশ:পশ্চিমাকাশে সূর্য উদয়ের পরের দিন মানুষ এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনায় লিপ্ত থাকবে। এরই মাঝে কাবা শরীফের পূর্বপার্শ্বে অবস্থিত ‘সাফা’ পর্বত এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে ফেটে খান খান হয়ে যাবে। আর এর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে এক অদ্ভুত প্রজাতির প্রাণী। দুনিয়ার সাতটি প্রাণীর বিভিন্ন অংগ-প্রত্যঙ্গের সাথে এই অদ্ভুত প্রাণীর সাদৃশ্য থাকবে। সেই অদ্ভুত প্রাণীর মুখাবয়ব হবে মানুষের মত। আর পা হবে উটের মত। গর্দান বা ঘাড় হবে ঘোড়ার গর্দানের ন্যায়। লেজ থাকবে গরুর লেজের মত। নিতম্ব হবে ঠিক হরিণের নিতম্বের মত। হাত বানরের হাতের সাদৃশ্যপূর্ণ হবে। আর শিং থাকবে সর্বমোট ১২টি। অত্যন্ত পরিমার্জিত হবে তার ভাষা। তার এক হাতে থাকবে হযরত মূসা (আ.)-এর লাঠি। অপর হাতে থাকবে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর আংটি। সে প্রচণ্ড দ্রুতগতিতে এবং তীব্রবেগে গোটা পৃথিবী পরিভ্রমণ করবে। কোন মানব সন্তানের পক্ষে তার অনুসরণ করা সম্ভব হবে না। আর কেউ পালিয়ে গিয়েও তার হাত থেকে নিস্তার পাবে না। প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে একটি বিশেষ চিহ্ন লাগিয়ে দেবে। ঈমানদার ব্যক্তিদের কপালে হযরত মূসা (আ.)-এর লাঠি দ্বারা একটি নূরানী চিহ্ন’ অঙ্কিত করে দেবে। এই চিহ্নের কারণে ঐ ব্যক্তির চেহারা আলোকজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আর অবিশ্বাসী ব্যক্তির গর্দান বা নাকে হযরত সুলাইমান (আ.)-এর আংটি দ্বারা ‘কালো মোহর’ লাগিয়ে দেবে। এই মোহরের কারণে তার চেহারা বিষণ্নতা ও অনুজ্জ্বলতায় অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হবে। এমন কি একই দস্তরখানে চার-পাঁচজন খেতে বসলে কে ঈমানদার আর কে ঈমানহীন, তা সহজেই পার্থক্য করা যাবে। এই প্রাণীটির নাম হলো ‘দাব্বাতুল আর্দ’। ঈমানদার ও ঈমানহীনদের এই চিহ্ন লাগানোর কাজ শেষ হলে হঠাত্ করেই সে উধাও হয়ে যাবে (মুসলিম)।

দখিনা বায়ু প্রবাহ:পশ্চিমাকাশে সূর্য উদয় এবং দাব্বাতুল আরেদর আত্মপ্রকাশ থেকে হযরত ইস্রাফীলের শিঙ্গা ফুঁকা পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান হবে একশত বিশ বত্সর। দাব্বাতুল আর্দ উধাও হয়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ দিক থেকে অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বায়ু প্রবাহিত হবে। যাকে দখিনা বায়ু হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে (তিরমিযী)।

হযরত ইস্রাফীলের শিঙ্গায় ফুঁক:কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সর্বপ্রথম নিদর্শন বা আলামত হলো মানুষ তিন-চার বত্সর পর্যন্ত অলসতার মাঝে কাটিয়ে দেবে। দুনিয়ার প্রাচুর্য ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। ব্যক্তিস্বার্থ মানুষের মাঝে চরম আকার ধারণ করবে। সম্পদের লোভে মানুষ অন্ধ হয়ে যাবে। এমন এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে মুহররম মাসের দশ তারিখে শুক্রবার মানুষ সকাল সকাল স্ব-স্ব কর্মস্থলে বের হয়ে পড়বে। (১) হঠাত্ ক্ষীণ স্বরে এক দীর্ঘ আওয়াজ মানুষের কানে ভেসে আসবে। এই আওয়াজই হল হযরত ইস্রাফীলের শিঙ্গার আওয়াজ। বিশ্বের সব স্থান থেকে এই আওয়াজ একই ধরনের শোনা যাবে। সকল মানুষ হতচকিত হয়ে বুঝার চেষ্টা করবে এ কিসের আওয়াজ? কোত্থেকে আসছে এ আওয়াজ? মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্রমে ক্রমেই এই আওয়াজ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সময় যতই গড়াতে থাকবে আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বজ্রের ন্যায় বিকট আকার ধারণ করবে। সকল মানুষের মাঝে চরম অস্থিরতা বিরাজ করতে থাকবে। আওয়াজ যখন তার বিকটতার ভয়াবহ ও চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে, তখন ভীত-সন্ত্রস্ত মানবজাতি একে একে মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়বে। ভূ-পৃষ্ঠে ভূমিকম্পন শুরু হবে। (২) ভূমিকম্প শুরু হলে ঘরের মানুষ পাগলের মত ছুটে এসে খোলা মাঠে আশ্রয় নেবে। জঙ্গলের পশুপাখি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে মানুষের দিকে ছুটে আসবে। (৩) ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থান ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। আর সাগরের পানি উথলিয়ে উঠে আশেপাশে গড়িয়ে পড়বে। আগুন নিমজ্জিত হয়ে যাবে। সুউচ্চ, সুদীর্ঘ, সুবিশাল, সুদৃঢ়, মজবুত পাহাড়গুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধূলিকণার মত বাতাসে উড়তে থাকবে। প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় এবং ধূলাবালি উড়ার কারণে সমগ্র দুনিয়া লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। এদিকে হযরত ইস্রাফীলের শিঙ্গার আওয়াজ প্রচণ্ড থেকে প্রচণ্ডতর হতে থাকবে। আওয়াজের তীব্রতায় ও প্রচণ্ডতার এক পর্যায়ে আকাশ ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। তারকারাজি টুকরো টুকরো হয়ে খসে পড়বে (সুরা যিলযাল, তাকভীর ও কারিয়া)।

শয়তানের করুণ মৃত্যু:মানবজাতি যখন ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন মালাকুল মাউত হযরত আজরাঈল (আ.) শয়তানের রূহ্ কব্জ করার জন্য অগ্রসর হবেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে অভিশপ্ত শয়তান চতুর্দিকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেবে। ফেরেশতাদল আগুনের মুগুর দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে তাকে ধরাশায়ী করে দেবে এবং তার রূহ্ কব্জ করে দেবে। মৃত্যু যন্ত্রণার যতটুকু কষ্ট সমগ্র আদম সন্তানের ওপর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে, একা শয়তানের ততটুকু মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। একাধারে ছয় মাস পর্যন্ত শিঙ্গা ফুত্কারের পর না আকাশের অস্তিত্ব থাকবে, না তারকারাজির, না পাহাড়ের অস্তিত্ব থাকবে, না সমুদ্র বা অন্যকিছুর। সবকিছু একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যাবে। ফেরেশতাকুল মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়বে। তবে সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেলেও আটটি জিনিস ধ্বংস হবে না। সেই আটটি জিনিস হলো ১. আরশ ২. কুরছী ৩. লাওহ কলম ৪. বেহেশ্ত ৫. দোযখ ৬. সূর বা শিঙ্গা ৭. আরওয়াহ্ বা আত্মাসমূহ। ৮. এবং কাবা ও মসজিদসমূহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই আখেরাতের জীবনে মুক্তির লক্ষ্যে আমল গড়ার তাওফীক দান করুন, আমীন!

লেখক: জাকির হোসাইন আজাদী | ইত্তেফাক
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template