السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

মাজার ও কবর জিয়ারত প্রসঙ্গে ইসলাম

| comments

কোনো ব্যক্তি বা বস্তু কিংবা কোনো স্থান বা কাল সম্পর্কে ভিত্তিহীন বিশ্বাস পোষণ করার অবকাশ ইসলামে নেই। তেমনি কল্পনাপ্রসূত ধারণার ওপর ভিত্তি করে ভক্তি নিবেদনে সীমা লঙ্ঘন করারও সুযোগ নেই। এমন ধারণা ও কর্মকাণ্ড ইসলামী শরিয়তে শক্তভাবে নিষিদ্ধ। মাজারকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে যেসব অনাচার হয়ে থাকে তার অধিকাংশই শরিয়ত গর্হিত কর্মকাণ্ড। যেমন, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, অতিরিক্ত ভক্তি প্রদর্শন ও মদ-গাঁজা অথচ এগুলো অনেক মাজারকেন্দ্রিক মেলা এবং ওরসের অন্যতম অনুষঙ্গ।
দ্বীনি শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকার কারণে অনেকে মাজার সম্পর্কে বিভিন্ন কুফরি ও শিরকি ধারণা পোষণ করে থাকে। যেমন_ মাজারে শায়িত ব্যক্তিকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মনে করাসহ বালা-মুসিবত থেকে রক্ষাকারী এবং মানুষের উপকার-অপকারের মালিক মনে করা ইত্যাদি। সাধারণ মানুষ এই শিরকি বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন শিরকি কাজে লিপ্ত হয়। যথা_ মাজারের নামে মান্নত, মাজারে সিজদা করা, দান-দক্ষিণাসহ পশু জবাই, মাজারওয়ালাকে উদ্দেশ করে কান্নাকাটি, বুক চাপড়ানো এবং ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, রোগমুক্তি-কারামুক্তি, সুস্থতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করা ইত্যাদি।
মুসলমানদের বিশ্বাস হলো, আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। সৃষ্টির অস্তিত্ব ও বিলুপ্তি তাঁরই হাতে। মানুষের জীবন-মৃত্যু, সুস্থতা-অসুস্থতা, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা, উন্নতি-অবনতিসহ যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণ একমাত্র আল্লাহর হাতে। তাঁর ইচ্ছায় সব হয়, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। তাঁর কোনো শরিক নেই এবং তিনি কোনো উপায়-উপকরণেরও মুখাপেক্ষী নন। এই বিশ্বাস ইসলাম ধর্মের মৌল ভিত্তি।
অতএব, কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও সম্পর্কে এই বিশ্বাস রাখে যে, তিনি কোনো উপায়-উপকরণ ছাড়া অলৌকিকভাবে চাহিদা পূরণ করতে পারেন, মুসিবত থেকে রক্ষা করতে পারেন, পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন; তাহলে তা হবে শিরক। আর শিরকের গোনাহ অত্যন্ত ভয়াবহ।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, 'আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর রিজিক দিয়েছেন। এরপর তোমাদের মৃত্যু দেবেন, এরপর তোমাদের জীবিত করবেন। তোমাদের শরিকদের এমন কেউ কি আছে, যে এসব কাজের কোনো একটিও করতে পারে? তারা (যাদের) শরিক করে আল্লাহ তা থেকে পবিত্র ও মহান। _সূরা রুম : ৪০
আল্লাহ আরও বলেন, 'বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ যদি আমার সম্পর্কে কোনো মুসিবতের ইচ্ছা করেন তাহলে আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ডাক তারা কি সে মুসিবত দূর করতে পারবে? কিংবা তিনি যদি আমার প্রতি মেহেরবানির ইচ্ছা করেন তাহলে তারা কি সে মেহেরবানি রোধ করতে পারবে? বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। ভরসাকারীগণ তাঁরই ওপর ভরসা করে। _সূরা যুমার : ৩৮
এই আয়াতের আলোকেই বলা যায়, কেউ কেউ মাজার বা মাজারে শায়িত ব্যক্তি সম্পর্কে যে অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করে তা শিরক।
আমাদের পূর্বপুরুষ বুজুর্গানে দ্বীন সর্বদা তাদের অনুসারীদের এই গর্হিত বিশ্বাস থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছেন। বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) বলেন, 'সর্বদা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর হুকুম মেনে চল। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করো না এবং অন্য কারও কাছে আশাও রেখো না। সব প্রয়োজন আল্লাহরই হাওলা (সোপর্দ) কর এবং তাঁর কাছেই প্রার্থনা কর। আর আল্লাহ ছাড়া কারও ওপর ভরসা কর না। তাওহীদকে অবলম্বন কর। তাওহীদকে অবলম্বন কর। তাওহীদকে অবলম্বন কর।' _ফাতাওয়া রহীমিয়া ৩/৫। যেহেতু আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা তাই ইবাদতও একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য। ইবাদত ও উপাসনা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও জন্য হতে পারে না। রুকু, সেজদা, দোয়া, জিকির, হজ, কোরবানি ইত্যাদি খালেস ইবাদত। অতএব, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও জন্য তা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, 'বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের উদ্দেশেই নিবেদিত। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমাকে এরই আদেশ করা হয়েছে এবং আমি প্রথম আনুগত্যকারী। _সূরা আনআম : ১৬২-১৬৩
অতএব, কেউ যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে বা কিছুকে নৈকট্য অর্জনের জন্য সেজদা করে, কোরবানি করে, তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার নাম জপতপ করে, মানবীয় ক্ষমতার ঊধর্ে্বর কোনো বিষয়ে তার কাছে প্রার্থনা করে, তাহলে তা হবে শিরক।
কবর জিয়ারতের সঙ্গে এসব অনাচারের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলামে কবর জিয়ারতের বিধান আছে, কিন্তু কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করার অবকাশ নেই। কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্য হলো, আখেরাতের স্মরণ জাগ্রত করা এবং কবরবাসীর জন্য দোয়া করা। হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা জিয়ারত করতে পার। কারণ তা আখেরাতের কথা মনে করিয়ে দেয়।' _আবু দাউদ
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও সাহাবীদের কবর জিয়ারত করেছেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। কবর জিয়ারতের ভিন্ন মাসআলা ও নিয়ম-পদ্ধতি আছে। সে মোতাবেক কবর জিয়ারত করলে তা হবে সওয়াবের কাজ। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা নিজেদের ঘরকে কবর বানিও না (কবরের মতো ইবাদত-বন্দেগি শূন্য না রাখা, ঘরে কিছু ইবাদত বন্দেগি বা নফল আমল করা) এবং আমার কবরকে উৎসবের স্থান বানিয়ো না। বরং আমার প্রতি দরুদ পড়। কেননা তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেঁৗছবে।'_ আবু দাউদ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template