রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কথা-কাজ, আচার-আচরণ, ইশারা-ইঙ্গিত তথা সব কর্মকাণ্ডকে শরিয়তের পরিভাষায় সুন্নত বলা হয়। শাব্দিক অর্থে সুন্নত যদিও সবার ক্ষেত্রে ব্যবহার হতে পারে, কিন্তু পরিভাষাগত সুন্নতের ব্যবহার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পৃৃক্ত। রাসূলের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড তথা সুন্নতই মূলত দ্বীন। ইসলামের বাহ্যিক পরিচয় ও মূল স্পিরিট সুন্নতে নববীতেই পরিব্যাপ্ত। ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে জানতে ও মানতে হলে সুন্নতে নববীর জ্ঞান এবং এর ওপর পরিপূর্ণ আমল অতীব জরুরি। রাসূল (সাঃ) দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, 'আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যতদিন পর্যন্ত এ দুটি জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে, ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না_ এর একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আল কোরআন আর অপরটি প্রিয়নবীর হাদিস তথা সুন্নত। মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সফলতার চাবিকাঠি সুন্নতে রাসূলের মধ্যে নিহিত। রাসূল (সাঃ) ছিলেন সমগ্র মানবতার আলোকদিশা। মানবতার কল্যাণ সাধনই ছিল তার জীবনের ঐকান্তিক সাধনা। মানুষের সামগ্রিক জীবন সম্পর্কে তিনি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বাস্তবে প্রয়োগ ঘটিয়ে, হাতে-কলমে শিখিয়ে প্রতিটি জটিল ও কষ্টসাধ্য বিষয় সহজ করে দিয়েছেন।
মুসলমান হিসেবে ইমানের অনিবার্য দাবি হচ্ছে, সুন্নত অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করা। সুন্নত মোতাবেক পরিচালিত জীবন উভয় জাহানে সাফল্যমণ্ডিত হয়। পরকালীন লাভের কথা বাদ দিলে সুন্নতের জাগতিক ফায়দাও কোনো অংশে কম নয়। মানুষ স্বভাবগতভাবেই লোভাতুর। যেদিকে লাভ দেখে সে দিকেই ঝুঁকে এবং তা অর্জনের অবিরাম প্রয়াস চালায়। মানুষের কাছে তার বাহ্যিক ও নগদ লাভটিই অগ্রগণ্য। বিশেষত বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এই যুগে মানুষ প্রতিটি কাজের পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তালাশ করে। বিজ্ঞানের নিরিখে তাদের কার্যক্রম যাচাই-বাছাই করে। সে হিসেবে সুন্নতের ওপর আমল করার জন্যও মানুষের সামনে এর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও ফায়দা উলেল্গখ থাকলে তাতে আমল করতে বিশেষ সহায়ক হয়। যদিও সুন্নতের ওপর আমল করা বৈজ্ঞানিক বিশেল্গষণের ওপর নির্ভর করে না।
রাসূল (সাঃ) থেকে এমন কোনো সুন্নত বর্ণিত নেই, যা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ক্ষতিকর কিংবা ফায়দাহীন। দেড় হাজার বছর আগে বর্ণিত সুন্নতকে বর্তমান বিজ্ঞান শুধু সমর্থনই করেনি বরং মানুষের সমৃদ্ধিময় জীবনযাপনের জন্য তা পালনের জোরালো তাগিদ পর্যন্ত করেছে। ইসলাম-সুন্নত ও বিজ্ঞানের মধ্যে পারস্পরিক কোনো সংঘাত নেই। মানুষের জ্ঞানের পরিধির স্বল্পতার কারণে কোথাও অসামঞ্জস্য মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে তা নয়। মহাপ্রজ্ঞাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধার মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কোনো নির্দেশনা ও কাজ মানুষের প্রকৃতির অনুপযোগী বা বিরূপ হবে_ এটা ধারণা করাও অন্যায়। রাসূল (সাঃ) ছিলেন উম্মতের রুহানি ডাক্তার। মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণের সবদিক ছিল তার নখদর্পণে। তার প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণে মানবতার কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনই ছিল মুখ্য। আর বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যও মানুষের জীবনকে সাবলীল, গতিময়, আরামপ্রদ ও কল্যাণকর করা। সুতরাং উদ্দেশ্যের নিরিখে সুন্নতে নববী ও আধুনিক বিজ্ঞান একটি আরেকটির সহায়ক ও সম্পূরক।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ইসলামের প্রতিটি আহকাম এবং সুন্নতের প্রতিটি পর্বেই রয়েছে অফুরন্ত কল্যাণ ও উপকার। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে শয্যা ত্যাগ থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি কাজে যে সুন্নত বর্ণিত হয়েছে, তার প্রত্যেকটির পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক উপকারিতার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও বিশেল্গষণ। যেমন মিসওয়াক ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এই একটি মাত্র সুন্নত পালনে সত্তরেরও অধিক ফায়দা রয়েছে। এর প্রথম ফায়দা হচ্ছে দাঁত পরিষ্কার হয় এবং শেষ ফায়দা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়। তেমনিভাবে অজু, নামাজ, রোজা, ইসলামী পোশাক, খাদ্যগ্রহণ প্রভৃতি সুন্নতে অসংখ্য ফায়দা নিহিত আছে। সুতরাং এ কথা প্রমাণিত সত্য যে, বর্তমান বিজ্ঞানময় এই পৃথিবীতে সুখ-সমৃদ্ধির সঙ্গে বাস করতে হলে বিজ্ঞান সমর্থিত সুন্নতে রাসূলের ওপর আমল করার কোনো বিকল্প নেই। সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা এবং সুন্নত অনুযায়ী জীবন পরিচালনাই হচ্ছে মানবজীবনে ঐকান্তিক সাফল্যের চাবিকাঠি।
-জহির উদ্দিন বাবর
zahirbabor@yahoo.com
Post a Comment