السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

নদী ও পানিশাসন : প্রেক্ষিত ইসলাম

| comments

কোরআনুল কারিমে জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত রয়েছে, যা শিক্ষা ও গবেষণা করে মুসলিম বিজ্ঞানীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন দিক উন্মোচন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাই আমরা বলতে পারি, কোরআনুল কারিম শুধু ধর্মগ্রন্থই নয়, এতে এক ব্যক্তির জীবনযাত্রা থেকে সামাজিক জীবনযাত্রা তথা মানবজাতির জন্য চিরকল্যাণের দিকনির্দেশনা রয়েছে। জ্ঞান সাধনা ও বিজ্ঞানচর্চার অসংখ্য নিদর্শন কোরআনুল কারিম। জ্ঞান অন্বেষণ ছাড়া আল্লাহর পরিচয় লাভ সম্ভব নয়। সঠিক গবেষণা ও গভীর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান বাস্তব অর্থে ইসলামের পরিচয় লাভেরই নামান্তর। কোরআন মানুষকে পারিপাশর্ি্বক ও নিজেদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনা এবং গবেষণার আহ্বান জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, 'নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানগুলোতে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করেছেন, তার দ্বারা মৃত ভূমিকে সজীব করে তুলেছেন এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীবজন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালায় যা তাঁরই নির্দেশের অধীনে মহাকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।' সূরা- বাকারা : ১৬৪
সমুদ্র ও পর্বতমালা সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'তিনিই কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সমুদ্রকে, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাছ খেতে পার, তা থেকে বের করতে পার পরিধেয় অলঙ্কার। তুমি তাতে জলযানগুলোকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহর কৃপা অন্বেষণ কর এবং যাতে তাঁর অনুগ্রহ স্বীকার কর। আর তিনি পৃথিবীর ওপর বোঝা রেখেছেন যে, কখনও যেন তা তোমাদের নিয়ে হেলেদুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পেঁৗছতে পার। আর তিনি নির্ণায়ক বহু চিহ্ন সৃষ্টি করেছেন এবং তারকা দ্বারাও মানুষ পথের নির্দেশ পায়।' সূরা-আন নাহল : ১৪-১৬
উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি কয়েকটি নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন। সে নিয়ামতের অন্যতম হলো পানি ও প্রবহমান নদী। শুধু এখানেই নয়, কোরআনের আরও কয়েক জায়গায় আল্লাহ নদী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নদীর পানিতেই রয়েছে জীবনের আদি উৎস। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, 'অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে আমি সব প্রাণবান জিনিসকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছি। তবুও কি তারা ইমান আনবে না?' সূরা আম্বিয়া : ৩০
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, 'আর আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাদের কোনোটি পেটে ভর দিয়ে চলে, কোনোটি চলে দু'পায়ের ওপর, আবার কোনোটি চার পায়ের ওপর চলে। আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছুর ওপর শক্তিমান। অবশ্যই আমি সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো অবতীর্ণ করেছি। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথ দেখান।' সূরা- আননূর : ৪৫-৪৬
কোরআনুল কারিমে আরও ইরশাদ হচ্ছে, 'আর তিনিই (আল্লাহ) পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তাকে বংশগতি ও বৈবাহিক সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর তোমার রব (প্রত্যেক বস্তুর ওপর) প্রভূত ক্ষমতাবান।' সূরা- ফুরকান : ৫৪
একদা নদীই ছিল বাংলাদেশের প্রাণ। নদীকে কেন্দ্র করেই তো বেড়ে উঠেছে চারশ' বছরের ঐতিহ্যবাহী বাংলার রাজধানী ঢাকা। আজও যত বড় শহর-বন্দর দেখতে পাই, তাদের সবগুলো নদীরই সন্তান। নদীকে কেন্দ্র করেই জমে উঠেছিল ব্যবসা-বাণিজ্য, হয়েছিল শায়েস্তা খাঁর সমৃদ্ধ দেশ। কালের আবর্তনে নদীগুলো দিন দিন শুকিয়ে গেছে, পানির অভাবে শুকিয়ে ধু-ধু মরুভূমি হয়ে আছে নদীর বুক। অথচ নদী বাঁচানোর নেই কোনো সমন্বিত উদ্যোগ।
নদী বাঁচাতে চাই পানির নিরবচ্ছিন্ন ও নিরুপদ্রব প্রবাহ। চাই বলিষ্ঠ কূটনৈতিক চেষ্টা। যতগুলো নদী হারিয়েছে উজানের বাঁধের বাধায়, সেগুলোকে খুলে দেওয়ার জন্য সাহসী উদ্যোগ নিতে হবে সরকারের। ভারত থেকে ন্যায্য পানির হিস্যা আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে টিপাইমুখসহ যাবতীয় আগ্রাসী অপতৎপরতা প্রতিরোধের। নয়তো যে নদীতে সৃষ্ট এ দেশ, সে নদীর জন্যই না মরে যায় সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের প্রাণ।
বাস্তবতা হলো, প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রকৃতির উপকরণ ইত্যাদি মহান আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। পৃথিবীতে কোনো কিছু অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। সবকিছু মানুষ এবং অন্যান্য সৃষ্টির কল্যাণার্থে সৃষ্টি করা হয়েছে। দুনিয়ায় সবকিছু পরিমিতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। নদী মানুষের জন্য আল্লাহর অপূর্ব নিয়ামত। এই নদী ও জলজসম্পদ ধ্বংস করার অধিকার মানবজাতিকে দেওয়া হয়নি। মানুষ নদীর কোনো একটি উপাদান বিনষ্ট বা অপচয় করতে পারবে না। অযৌক্তিক অথবা বেআইনিভাবে এর ব্যবহার করতে পারবে না। নদীর সাধারণ নাব্যতা ও গতিতে বিচ্যুতি ঘটানো অথবা পরিবর্তন আনা যাবে না। জাতীয় ও সামষ্টিক উন্নয়নের জন্য এগুলো অত্যাবশ্যকীয় কাজ।
ইসলামী জীবন দর্শনে নদী-পানি, প্রকৃতি-পরিবেশ, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আচরণ, পরিবেশ সম্পর্কে মৌলিক চিন্তা-চেতনা, পরিবেশ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবেশ সংরক্ষণে নৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা বা পর্যালোচনা প্রয়োজন। সমকালীন প্রেক্ষাপটে অযাচিত নদীশাসনের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমাদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্যাও বটে। এটি চলমান বিশ্বের অন্যতম একটি সমস্যা। ইসলামী জীবন-দর্শনের আলোকে পরিবেশ সংকট বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ করতে ইসলামের শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রচার এবং প্রসার, পরিবেশদূষণ প্রতিরোধকল্পে ইসলামের মৌলিক শিক্ষার আলোকে আইন ও বিধিবিধান প্রণয়নে আমাদের এগিয়ে আসা দরকার।
আরেকটি কথা, মানবজাতি এ কারণে অনেক সৌভাগ্যবান যে, দুনিয়ার সব প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করার কৌশল এবং ইচ্ছাশক্তি মানবজাতিকে প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ মানবজাতি ও অন্যান্য সৃষ্টির কল্যাণার্থে দুনিয়ার সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, 'তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।' সূরা- বাকারা : ২৯
পাহাড়-পর্বত, নদীনালা প্রভৃতি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আমরা একদিকে যেমন আনন্দ উপভোগ করতে পারি, তেমনি কিছুটা হলেও মহান আল্লাহর নিয়ামত বা অনুগ্রহকে উপলব্ধি করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি। আল্লাহতায়ালা আমাদের কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
- মুফতি এনায়েতুল্লাহ
muftianaet@gmail.com
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template