আল্লাহ সকল শক্তির উৎস। সেহেতু যদি শপথ নিতে হয়, যদি কোনো কিছুতে ভরসা করতে হয় তা আল্লাহর নামে করাই যুক্তিযুক্ত। অন্য কারোর নামে শপথ ইসলামী দৃষ্টিতে চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্য। এমনকি নবীর, কা'বার, ফেরেশতার, আকাশের, পানির, জীবনের, আমানতের, মাথার, রূহের, রাজার, জানের, মাজার ইত্যাদির নামে শপথ করাও কবীরা গুনাহ।
হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন : 'আল্লাহ পাক তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। একান্তই যদি শপথ করতে হয়, তবে (শুধু) আল্লাহর নামে শপথ করবে, না হয় নীরব থাকবে।'
_বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী
সহীহ বোখারী বর্ণিত আর এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন : 'যে কসম করবে, সে যেন আল্লাহর নাম ছাড়া আর কারও নামে কসম না করে, না হয় চুপ থাকবে।'
হজরত আবদুর রহমান বিন সামুরা (রা.) বর্ণনা করেন : রাসূল (সা.) বলেছেন : তোমরা প্রতিমা কিংবা তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম খেয়ো না। _সহীহ্ মুসলিম
হজরত বুরায়দা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি আমানতের শপথ করে সে আমার দলভুক্ত নয়। _আবু দাউদ
আবু বোরদা (রা.) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি এই বলে শপথ করে যে, আমার কথা যদি সত্য না হয়, তবে আমি মুসলমান নই। সে মিথ্যাবাদী হলে সে যা বলেছে তাই হবে (অর্থাৎ ঈমানহারা হয়ে যাবে)। আর সত্যবাদী হলেও আর কখনোই পরিপূর্ণ নিরাপদে ইসলামের পথে ফিরে আসবে না। _আবু দাউদ, ইবনে মাজা ও হাকেম
হজরত ইবনে ওমার (রা.) জনৈক ব্যক্তিকে 'কাবার শপথ' করতে শুনে বললেন : 'আল্লাহ ছাড়া আর কারও নামে শপথ করিও না। কেননা আমি শুনেছি, রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া আর কারও নামে শপথ করল, সে কুফরী কিংবা শিরক করল। _তিরমিযী, ইবনে হেব্বান ও হাকেম
কোনো কোনো আলেমের মতে : কুফরী ও শিরকের অর্থ হচ্ছে কবীরা গুনাহ। যেমন রাসূল (সা.) বলেছেন : রিয়া হচ্ছে শিরক।
আর এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে ভুলক্রমে 'লাত ও উযযার' (আল্লাহ ছাড়া আর কারও নামে) শপথ করে বসে, তবে (এর কাফফারাস্বরূপ) সঙ্গে সঙ্গে তাকে 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু' বলতে হবে'। _বোখারী ও মুসলিম
নও মুসলিম সাহাবায়ে কেরাম যখন শপথ করতেন, তখন অনেক সময় পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী তাদের মুখে প্রতিমাসমূহের নামে শপথ বাক্য উচ্চারিত হয়ে যেত। নবী পাক (সা.) সে সব সাহাবাকে নির্দেশ দিলেন, পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী কারও মুখে যদি এ ধরনের বাক্য উচ্চারিত হয়ে যায়, তবে সে যেন তৎক্ষণাৎ 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু' পাঠ করে নেয়, যাতে তার কাফফারা আদায় হয়ে যায়।
লেখক : হাফেজ শেখ মিরাজ, ইসলামী গবেষক।
Post a Comment