মানুষকে আল্লাহ তায়ালা আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর তার জন্য সুন্দর জীবনযাপনের যাবতীয় উপায়-উপকরণ ও দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ সেই মহান আদর্শ পথ পরিহার করে আজ ছুটছে অনিশ্চিত অন্ধকার পথে। যে পথ তাদের নিয়ে যাচ্ছে অবক্ষয়ের পথে, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
অথচ আল্লাহ মানুষের জন্য যা কল্যাণকর, পবিত্র, উত্তম ও উপাদেয় তা তিনি হালাল করে দিয়েছেন। আর যা অপবিত্র, অনুপাদেয় অকল্যাণকর তা হারাম বা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। আল্লাহপাক বলেছেন- পবিত্র বস্তু থেকে তোমাদের যা জীবিকা হিসেবে দিয়েছি তোমায় তা আহার কর। (সুরা তাহাঃ ৮১)। মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তা গ্রহণীয়, আর যা অকল্যাণকর তা বর্জনীয়। গ্রহণ ও বর্জন সম্বন্ধে আল্লাহ পাক ও রাসূল (স.) এর সুস্পষ্ট বিধি-নিষেধ থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক সর্বনাশা বর্জনীয় জিনিসের ফাঁদে পড়ে নিজেদের, পরিবারের ও সমাজের সর্বনাশ ডেকে আনে। মারাত্মক বদভ্যাসের দাসে পরিণত হয়।
ইসলামে সবরকম অপব্যয় ও অপচয় অবশ্য বর্জনীয়। অপব্যয়ীদের আল্লাহ পাক শয়তানের ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন- "নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই" (বনী ইসরাইলঃ ২৭) ধূমপান শুধু অপব্যয় নয়, মারাত্মক ক্ষতিকরও। সিগারেট, চুরুট, বিড়ি, হুক্কা ইত্যাদির পোড়া তামাকের উগ্রগন্ধ যে কত বিরক্তিকর তা অধূমপায়ী মাত্রই অনুধাবন করতে পারেন। দুর্গন্ধ নিয়ে আলস্নাহ পাকের ইবাদাত করা নিষিদ্ধ। মহানবী (স.) বলেন- "যে ব্যক্তি দুর্গন্ধযুক্ত দ্রব্য খায়, সে যেন (ঐ অবস্থায়) মসজিদের নিকটর্বতীও না হয়।" সুতরাং ধূমপান আল্লাহ পাকের ইবাদত কবুল হওয়ার অন্তরায়। ধূমপায়ীর মুখের দুর্গন্ধে অন্য মুসলস্নীদের কষ্ট হয়।
ধূমপায়ীরা ধূমপানজনিত অপব্যয় পুষিয়ে নেয়ার জন্য অনেক সময় অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করতে বাধ্য হয়। ধূমপান মানুষকে এভাবে পাপকর্মে লিপ্ত করে। ধূমপানের অভ্যাস মানুষকে আসক্ত করে। আর সব ধরনের আসক্তিই হারাম। মহানবী (স.) বলেন- "যাবতীয় নেশার বস্তু হারাম"। ধূমপানের আসক্তি নিজের পরিবারের ও সমাজের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে। একখন্ড পরিচ্ছন্ন কাগজে মোড়া সিগারেট আকর্ষণীয় হলেও আসলে তা উদ্র নিকোটিনের বিষে ভরা। নিকোটিন এত মারাত্মক যে, দু'টি সিগারেটে যে পরিমাণ নিকোটিন আছে তা ইনজেকশন দ্বারা কোন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তার মৃতু্য অনিবার্য। প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা বলেছেন, "পৃথিবীর এত ধূলি, ধোঁয়া ও গ্যাস যদি মানুষের ফুসফুসে না ঢুকত, তাহলে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সুস্থ অবস্থায় জীবিত থাকত।"
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে- "এক একটা জ্বলন্ত সিগারেট থেকে কম করে হলেও চার হাজার বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। ধূমপানে যক্ষ্মা, ব্রঙ্কাইটিস, দন্তক্ষয়, ক্ষুদামন্দা, গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, ফুসফুসের ক্যান্সার, হূদরোগ প্রভৃতি মারাত্মক রোগ হয়। সিগারেট শুধু নিজে জ্বলে না, অন্যদেরও জ্বালায়। ধূমপান ধূমপায়ীর জন্যই বিপজ্জনক নয়, তার আশপাশের অধূমপায়ীদের জন্যও বিপজ্জনক। ধূমপানে বিষপানের সমকক্ষ বললেই যথার্থ বলা হয় না বরং ধূমপান বিষপানের চেয়েও মারাত্মক। কারণ বিষপানে শুধু বিষাপানকারীরই ক্ষতি হয়। আর ধূমপানে তার পরিবেশে অধূমপায়ী এমনকি ভবিষ্যৎ বংশধরেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারতো দূরে থাক আজ অবধি পৃথিবীর একজন হাতুড়ে ডক্তারও বলেনি যে, ধূমপানে কোনো উপকার আছে। উপরনু্ত যে সিগারেট মানুষ টাকা দিয়ে কিনে খায় সেই সিগারেটের প্যাকেটেই লেখা থাকে" সংবিধিবদ্ধ সতকর্ীকরণঃ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর" এর পরও যারা ধূমপানের উপকারের পক্ষে বলেন, তারা হয় জ্ঞান পাপি, না হয় বোকার স্বর্গে বাস করছে।
এই ধূমপান বর্জনের জন্য ধূমপায়ীর দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি যথেষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ছাড়া ইসলামের শিক্ষা ও বিধি-বিধান পুরোপুরি মেনে চললে ধূমপান বর্জন করা সহজ হয়। ধূমপান নিবারণের জন্য সমাজ ও স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিবর্গের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন প্রভৃতি প্রচার মাধ্যমগুলো ধূমপান প্রতিরোধে কর্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এবং ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্বন্ধে জনগণকে সচেতন করা তোলা আবশ্যক। দেশের প্রাণ আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসাবিদ, আইনজীবী, কলামিষ্ট, কবি, সাহিত্যিকসহ সকল সচেতন মানুষই পারে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে। এই বাস্তব সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে ধূমপানের করাল গ্রাস থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়, সকলের।
-মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান
Post a Comment