السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায়

| comments

নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বুনিয়াদ। নামাজ ফার্সী শব্দ। আরবী প্রতিশব্দ হলো সালাত। যার অর্থ হল- প্রার্থনা, দোয়া, দুরুদ, অনুগ্রহ, রহমত। পরিভাষায় সালাত বলতে নির্দিষ্ট কতকগুলো কার্যের নাম যা নির্দিষ্ট সময়ে কতকগুলো নির্দিষ্ট শর্ত, সিফাত ও পদ্ধতির মাধ্যমে পালিত হয়। ইমাম ইবন জাবির (রা.) বলেছেন, সালাতের মাধ্যমে একজন মানুষ আল্লাহ তায়ালার নিকট স্বীয় কার্যের জন্য পুণ্য প্রার্থনা করে। আর ইসলাম আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মনোনীত ধর্ম। ফলে ইসলাম ধর্ম মানুষ ও স্রষ্টার মাঝে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে। ইসলাম ধর্মের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। এটি শুধু আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং গভীরভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে এটাকে অনুসরণ করতে হয়।

ইসলাম শব্দটি সিলমুন ধাতু থেকে এসেছে। অর্থ হলো- সমর্পণ, আত্মসমর্পণ, বশ্যতা। এ সমর্পণ সেই প্রভুর কাছে, যার উদ্দেশ্যে সকল অহংকার, আমিত্বকে ধূলিসাৎ করে বিনম্রচিত্তে একজন মুসলিম নি:শর্ত আত্মসমর্পণ করবে। একজন মুসলিম আল্লাহর অস্তিত্বে ও একত্বে বিশ্বাস করে এবং সকল কাজের মধ্যে তাকে উপলব্ধি করে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায তাঁর সেই উপলব্ধিকে উৎসাহিত করে। এজন্য নামাজই আল্লাহর কাছে আত্মনিবেদনের অন্যতম মাধ্যম। একজন সাহাবী রাসুল (স.) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন কোন ইবাদাত আল্লস্নাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়? তিনি প্রশ্নোত্তরে বলেছিলেন, যথাযথ সময়ে নামাজ আদায় করা। নামাজ মানুষকে সত্য সুন্দর ও কল্যাণের পথে আহবান করে। আর কুপ্রবৃত্তির মানুষকে অকল্যাণের দিকে ধাবিত করে। কুপ্রবৃত্তির ছোবল থেকে নামাজ মানুষকে সুন্দর মুক্তি দিতে পারে। ইসলামে সালাত হচ্ছে ইবাদাতের প্রথম পর্যায় । এ ইবাদাত সকল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হয়। সালাত ধনী-দরিদ্র, যুবক-বৃদ্ধ, পুরুষ-নারী ও সুস্থ-অসুস্থ সকলেরওপর অবশ্য পালনীয়। কোন অবস্থাতেই সালাত থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের মুক্তি নেই।

সালাত এতটাই গুরত্বপূর্ণ ইবাদাত যে, দণ্ডায়মান অবস্থায় আদায় করতে না পারলে বসে আদায় করবে। অসুস্থতা বা শারীরিক বিকলতার জন্য বসে আদায় করতে না পারলে শায়িত অবস্থায় ইশারায় আদায় করবে। তবে আমরা প্রতিনিয়ত সালাতের পরিবর্তে নামাজ শব্দটি ব্যবহার করি। এটি দিয়ে সালাতের মূল আবেদন যথার্থভাবে আদায় হয় না। কারণ সালাত শব্দটির ব্যঞ্জনা যত গভীর এবং ব্যাপক নামাজ শব্দটির ব্যঞ্জনা ততটা নয়। কিন্তু দীর্ঘকাল নামাজ শব্দটি ব্যবহারের ফলে সালাতের প্রতিশব্দ নামাজ আমাদের ভাষায় গ্রাহ্য হয়ে গেছে। অথচ আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে এভাবে বর্ণনা করেছেন- "ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়ায়িয়া ওয়া মামাতি লিল্লস্নাহি রাবি্বল আলামীন"। এর অর্থ হচ্ছে- অবশ্য আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং আমার মৃতু্য কেবলমাত্র আল্লস্নাহর জন্যই নিবেদিত। সামগ্রিকভাবে সালাত হচ্ছে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা। আল্লাহতায়ালা আরোও বলেন- এবং সালাত কায়েম কর, অবশ্যই সালাত লজ্জাশীলতা এবং গর্হিত কাজ হতে বিরত রাখে এবং আল্লাহর স্মরণই সর্বোত্তম বস্তু।

নামাজের সাথে অন্য সকল ইবাদাত অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে বিধায় নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে না পারলে অন্য ইবাদাত তেমন কাজে লাগতে নাও পারে। এজন্য নামাজের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন- নিশ্চয় নামাজ সকল অশস্ন্লীল ও খারাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে। (সুরাহ আনকাবুত- ৪৫)

নামাজ ছাড়া যাকাত পবিত্র হয় না। রোজার ফজিলত পাওয়া যায় না। হজ্জের গুরুত্ব অনুধাবণ করা যায় না। নামাজ ছাড়া অন্য সকল ভাল কাজের মূল্য অর্থহীন বিধায় নামাজ এমন একটা ইবাদত যা স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক তৈরীর ক্ষেত্রে কোন মধ্যবতর্ীর প্রয়োজন হয় না।

নামাজ এমন একটা পদ্ধতি যা একজন মানুষের শরীরগত প্রক্রিয়াজাতের সাথে সম্পর্কিত। কোন মানুষ যদি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করে তাহলে অশস্ন্লীলতা তাকে স্পর্শ করতে পারে না। মানুষকে সালাত আদায়ের মুহূর্তে বহির্বিশ্বের কার্যক্রমের চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখে এবং একটি অন্তলর্ীন বোধের মধ্যে সালাত আদায়কারীকে প্রতিষ্ঠিত করে। আমাদের দেহ নানা অবয়বযুক্ত হলেও মূলত এক বা অখন্ড। হস্তপদ ও মস্তকাদি নানা অঙ্গ ভেদে বহুরূপ বিশিষ্ট এ দেহে আমাদের এক ভেবে যেমন পালন করতে হয়, তেমনি নামাজ বা সালাতের সময় সকল অঙ্গের বিশিষ্টার্থক সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে আমরা একটি অভিন্ন একাগ্রতা নিমর্াণ করি। ফলে নামাজ আদায়কারীকে এমন মন নিয়ে নামাজে দাঁড়াতে হয় যে, তিনি আল্লস্নাহর সম্মুখে হাজির হয়েছেন। তিনি (আল্লাহ) তাকে দেখছেন যদিও নামাজ আদায়কারী তাকে প্রত্যক্ষ করছে না। কিন্তু তিনি (আল্লাহ) তার অন্তর ও বাহিরের সব খবর রাখেন।

নামাজের মধ্যে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক। সূরাহ ফাতিহা এমন একটি সূরা যার মাধ্যমে আল্লাহর সানি্নধ্য লাভ করা যায়। সূরা ফাতিহা আসলে একটি দোয়া। তবে যে সত্তার কাছে প্রার্থনা করতে চাচ্ছি তাঁর প্রশংসাবাণী দিয়ে দোয়া শুরু করা হচ্ছে। এভাবে যেন দোয়া চাওয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ দোয়া চাইতে হলে ভদ্র ও শালীন পদ্ধতিতে দোয়া চাইতে হবে। কারোও সামনে গিয়ে মুখ খুলেই প্রথমে নিজের প্রয়োজনটা পেশ করে দেয়া কোন সৌজন্য ও ভদ্রতার পরিচায়ক নয়। যার কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে প্রথমে তাঁর গুণাবলী বর্ণনা করা এবং তাঁর দান, অনুগ্রহ ও মযর্াদার স্বীকৃতি দেয়াই ভদ্রতার রীতি।

প্রত্যেক মুসলিম দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অবশ্যই পড়বেন। জেনেবুঝে উচ্চারণ করে নামাজ পড়লে তবে নামাজ আদায়কারীর মনে সব সময় আল্লাহর স্মরণ থাকার কথা। স্রষ্টার সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের কথা। কিন্তু বাস্তবে কি দেখছি আমরা? মুসলিম দেশগুলো সবচেয়ে বেশী অসুবিধার সম্মুখীন, বিপদগ্রস্ত। মানুষের মধ্যে সাধারণভাবে দুই ধরনের প্রবৃত্তিগত মানুষ পাওয়া যায়। স্বার্থাকাঙ্ক্ষী এবং পরার্থকারী। যারা স্বার্থাঙ্ক্ষী তারা কখনই সালাত আদায় করার মুহূর্তে একাগ্র হতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায়, অনেক মানুষ রুকু-সেজদা ঠিকমত শেষ না করে তাদের কর্মক্ষেত্রে ছুটে যাচ্ছে। এসব মানুষের কাছে নামাজ একটি প্রথা মাত্র। এজন্যই রাসূল (সা.) আদেশ দিয়েছেন যে, নামাজের মধ্যে থেকে নামাজের প্রকরণগুলি চুরি করবে না। নামাজে সামগ্রিক একাগ্রতা বিধানের জন্য একথা বলা হয়েছে। কারণ নামাজের মধ্যেই রয়েছে সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও মঙ্গল।

-ড. মুহা. বিলাল হুসাইন
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template