শিশুকে হারাম বস্তু আহার থেকে অবশ্যই বিরত রাখতে হবে। কারণ হারাম বস্তু আহার মানুষকে হারাম ও অবৈধ কাজের দিকে নিয়ে যায়। তাই শিশুর খাদ্য তালিকায় কোনো অবস্থাতেই হারাম বস্তুর অনুপ্রবেশ করানো বা ঘটানো যাবে না। হারাম বস্তুর বর্ণনা দিয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তিনি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের মাংস এবং যেসব প্রাণী আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবেহ করা হয় সেসব প্রাণীর গোশত হারাম করেছেন। তবে যে (প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে) বাধ্য হয় এবং সীমালক্সঘনকারীও নয় তার জন্য (সামান্য আহারে) কোনো পাপ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়ালু। [সুরা বাকারা-১৭৩]
সন্তান-সন্ততিদের ভরণ-পোষণ ও উত্তম আহারের ব্যবস্থা করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে রাসূল (সা.) বলেন, সর্বোত্তম দিনার (মুদ্রা) হলো তা, যা কোনো ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে এবং ওই দিনার যা কোনো ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় তার বাহনের পেছনে ব্যয় করে এবং ওই দিনার যা কোনো ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় তার সঙ্গী-সাথীদের জন্য ব্যয় করে। [সুনানে তিরমিজি]
যে ব্যক্তি সন্তানদের জন্য খরচ করতে কার্পণ্য করে তাকে সতর্ক করে রাসূল (স.) বলেন, আল্লাহতায়ালা যাকে সচ্ছলতা দিয়েছেন তারপরও যে পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করতে কৃপণতা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। [আদ্ দাইলামি]
রাসূল (স.)-এর নিজের পরিবারবর্গের ব্যয় সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহতায়ালা রাসূল (স.)-কে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে এক বছরের খরচ নিজের পরিবার-পরিজনের ব্যয়ের জন্য রেখে অবশিষ্ট সম্পদ বায়তুল মালে দান করে দিতেন। [মুসনাদে আহমাদ]
শিশুর মানসিকতা গঠনে যেমন শিক্ষা ও পরিবেশের গুরুত্ব রয়েছে অনুরূপ গুরুত্ব রয়েছে পুষ্টিকর খাবারের। যে খাবার শরীরে পুষ্টি জোগায় এবং সুস্থতা বজায় রাখে, সহজলভ্য ও সহজপাচ্য তা শিশুকে জোগান দেওয়া এবং ওই খাবার খেতে অভ্যস্ত করে তোলা অভিভাবকদের বিশেষ দায়িত্ব। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিজ্ঞান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় বর্তমানে অধিকাংশ শিশু রুচি ও স্বাদকে প্রাধান্য দিয়ে খাবারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে অথচ পুষ্টিকর খাবার সহজলভ্য হলেও তা পরিহার করে চলে। এক্ষেত্রে শিশুকাল থেকেই পুষ্টিকর খাবারের প্রতি অভিভাবকদের বিশেষ দৃষ্টি রাখা দরকার।
আমরা আজকের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কোরআনের নির্দেশনা ও হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর মহান বাণী থেকে যে শিক্ষা পাই, তা হচ্ছে সন্তানের আধিক্য বর্তমান বিশ্বের জন্য মহাবিপদের কারণ নয়। বরং সঠিক শিক্ষার অভাব, অখাদ্য ও হারাম পানীয় এবং নেশাজাতীয় দ্রব্যের প্রভাব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানবিক ও মানসিক স্বাস্থ্যহানি ঘটাচ্ছে। সুতরাং আসুন আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের সন্তানদের সুস্বাস্থ্যের জন্য পবিত্র খাবার, সময়ানুবর্তিতা ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার জোগানে তৎপর হই। ভ্রূণ হত্যা না করি বরং নেশাজাতীয় দ্রব্য ও মাদক থেকে আমাদের সন্তানদের হেফাজত করতে সম্মিলিত ও সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করি। সঠিকভাবে সন্তানদের লালন-পালন করি। এ ছাড়া নিজ সন্তানের সঙ্গে সঙ্গে এতিম, পথশিশু ও দুর্যোগপূর্ণ এলাকার শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিই।
খতিব : সাইয়্যিদ জুলফিকার জহুর, মসজিদুত তাকওয়া, ধানমন্ডি, ঢাকা।
Post a Comment