রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চতুর্থ কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.)। হজরত খাদিজার পঞ্চাশ বছর বয়সে তার গর্ভে হজরত ফাতেমা (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম সংবাদ শুনে রাসূলেপাক (স.) অত্যন্ত আনন্দিত হন। এই দিনে তার জন্ম সবার কাছে শুভ লক্ষণ হিসেবে গৃহীত হয়। কেননা, কুরাইশ কর্তৃক বাইতুল্লাহ শরীফ নির্মিত হওয়ার পর হজরে আসওয়াদকে যথাস্থলে রাখার ব্যাপারটি নিয়ে তাদের মধ্যে ভীষণ মতানৈক্য চরম পর্যায়ে পেঁৗছায় এবং পরস্পর সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। অতঃপর যে সিদ্ধান্তের কারণে এ জটিল সমস্যার সমাধান এবং সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল, তা ছিল তারা সিদ্ধান্ত নেয়, যে লোকটি প্রথম কাবাগৃহে প্রবেশ করবেন তিনিই তাদের বিরোধের মীমাংসা করে দেবেন। সৌভাগ্যক্রমে সিদ্ধান্তের পর যে লোকটি মসজিদে প্রথম প্রবেশ করলেন তিনি ছিলেন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তারা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে অতি আনন্দের সঙ্গে বলে উঠল, 'মুহাম্মদ খুবই ন্যায় বিচারক, আমরা তাঁর সিদ্ধান্ত অবশ্যই মেনে নেব।' রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম তাদের মধ্যে মতানৈক্যের কারণ কি তা জেনে নেন। অতঃপর একটি চাদর বিছিয়ে বলেন, 'তোমরা পাথরটিকে এই বিছানো চাদরের উপর রাখ! তারা তাই করল। এবার রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 'তোমাদের প্রত্যেক গোত্রপ্রধান চাদরের আঁচল ধরে উঠাও এবং হজরে আসওয়াদ যেখানে রাখা হবে সেখানে নিয়ে যাও।' সবাই মিলে তাই করল। অতঃপর রাসূলে পাক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে পাথরটিকে যথাস্থলে রাখলেন। তাতে কারও কোনো আপত্তি হয়নি। এভাবে আল্লাহর রহমতে ফিতনার আগুন নির্বাপিত হলো।
এই ফিতনা নিবারণ এবং হজরে আসওয়াদ স্থাপন করার কাজ সমাধা করে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়িতে ফিরে শুনতে পান যে, আদরের স্ত্রী হজরত খাদিজার গর্ভে হজরত ফাতেমা (রা.) জন্মগ্রহণ করেছেন। একটি জটিল সমস্যা সমাধানের পর একই দিনে ফাতেমার জন্মের সংবাদ সবাইকে আনন্দিত করে। তারা সবাই এটাকে শুভ লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়। একই দিনে দুটি ঘটনা_ ফাতেমার জন্ম এবং হজরে আসওয়াদ নিয়ে ঝগড়ার নিরসন। প্রকৃতপক্ষে উল্লেখযোগ্য ঘটনাই বটে। আর ফাতেমা শব্দের অর্থ দুগ্ধপোষ্য শিশুকে দুগ্ধপান করানো এবং দুগ্ধপান ছাড়ানো। অতঃপর তার নাম ফাতেমা রাখার পেছনে ইঙ্গিত এই ছিল যে, সে একাধিক সন্তানের জননী হবে এবং সন্তানকে দুগ্ধপান করাবে ও ছাড়াবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে।
নিঃসন্দেহে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীনের দাওয়াত ও তাবলীগে হজরত ফাতেমা (রা.)-এর অনন্য ভূমিকা এবং অবদান রয়েছে। ফাতেমা (রা.)-এর মাত্র পাঁচ বছর বয়সের সময় তার পিতা নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন। তাই তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের শীতল ছায়ার পরশে লালিত-পালিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি প্রথমেই ইমান আনতে সক্ষম হয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি কুরাইশদের বৈরিতা, প্রতিবন্ধকতা এবং নির্যাতন-নিপীড়ন স্বচক্ষে অবলোকন করেছেন। এসব কিছু দর্শন করে যেমন তিনি চিন্তিত এবং দুঃখিত হতেন তেমনি শ্রদ্ধেয় পিতার প্রতি মায়া-মমতায় অন্তর উদ্ভাসিত হয়ে উঠত। ফলে অত্যন্ত ধৈর্য ও সহ্যের সঙ্গে পিতার পক্ষে প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেন। হজরত খাদিজা (রা.)-এর মৃত্যুর পর পিতা রাসূলেপাক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে তিনি আরও অধিক যত্নবান হয়ে ওঠেন, যে কারণে মানুষ তাকে 'পিতার জননী' বলে আখ্যায়িত করত।
লেখক: মাওলানা মাহমূদুল হাসান; খতিব গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা
Post a Comment