السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

ইসলামের প্রথম প্রকাশ্য দাওয়াত

| comments

নবুয়ত লাভের তিন বছর পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে ইসলামের দাওয়াত শুরু করেন। তিন বছর পর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অভিজ্ঞতা ও সহনক্ষমতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে আল্লাহ তা'আলা তাকে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত ও তাবলিগ করার আদেশ প্রদান করেন।

আদেশ পাওয়ার পর একদিন নবী করিম (সা.) সাফা পর্বতের ওপর আরোহণ করে লোকদের ডাকতে শুরু করলেন। ডাক শুনে যখন সবাই পর্বতের পাদদেশে জমায়েত হলো তখন নবী করিম (সা.) বললেন, তোমরাই বলো, তোমরা আমাকে সত্যবাদী বলে মনে কর কিনা? সবাই সমস্বরে উত্তর দিল, আমরা আজ পর্যন্ত তোমার মুখ থেকে কোনো মিথ্যা কিংবা বাজে কথা বলতে শুনিনি। আমরা তো তোমাকে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত বলেই জানি। তখন নবী করিম (সা.) বললেন, আমি যদি বলি, একদল সশস্ত্র লোক মক্কায় তোমাদের ওপর হামলা করার জন্য অপেক্ষা করছে, তাহলে কি তোমরা তা বিশ্বাস করবে? লোকেরা বলল, হ্যাঁ, বিশ্বাস করব। নবী করিম (সা.) বললেন, এতক্ষণ আমি যা বললাম তা ছিল একটি দৃষ্টান্ত যা তোমাদের বোঝাবার জন্য বলেছি। এরপর তিনি বললেন, 'আমি বলি, তোমরা যদি ইসলাম গ্রহণ না কর, তবে তোমাদের ওপর কঠিন শাস্তি আপতিত হবে।' একথা শুনে তার পিতৃব্য আবু লাহাবসহ সবাই ক্রোধে অগি্নশর্মা হয়ে ফিরে গেল।

রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন এবং মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে বলতে আরম্ভ করলেন, তখন কোরাইশদের কতিপয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি আবু তালেবের কাছে অভিযোগ করল। আবু তালেব অত্যন্ত নম্রভাবে তাদেরকে বুঝিয়ে বিদায় করলেন। কিন্তু যেহেতু বিবাদের মূল কারণটি বর্তমান রয়েই গিয়েছিল অর্থাৎ, রাসূল (সা.) নিজের কর্ম হতে বিরত থাকেননি তাই তারা আবারও আবু তালেবের কাছে আগমন করল। এবার এ দলে কোরাইশদের সমুদয় নেতৃবর্গ-ওতবা ইবনে রবিয়া, শায়বাহ্, আবু সুফিয়ান, আস ইবনে হেশাম, আবু জাহ্ল, ওলীদ ইবনে মুগীরা এবং আস ইবনে ওয়ায়েল সবাই ছিল। তারা আবু তালেবের কাছে রাসূলে করিম (সা.)-এর বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ করল যে, তোমার ভ্রাতুস্পুত্র আমাদের দেব-দেবীর অপমান করে, আমাদের পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ও পূর্ব-পুরুষকে ভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট বলে এবং আমাদেরকে নির্বোধ বলে প্রচার করে। অতএব, এখন থেকে তুমি তাকে সাহায্য করা থেকে বিরত থাক অথবা তুমিও কার্যক্ষেত্রে নেমে আস, যাতে আমাদের মধ্যে একটা ফয়সালা হয়ে যেতে পারে। আবু তালেব দেখলেন, অবস্থা সঙ্গিন হয়ে গেছে। কোরাইশরা এখন আর বরদাশ্ত করবে না এবং আমি একা সব কোরাইশদের বিরুদ্ধাচরণ করে টিকতে পারব না, তখন তিনি হজরত রাসূলে পাক (সা.)কে সংক্ষেপে বললেন_ 'প্রিয় বৎস! আমার ওপর এমন কঠিন দায়িত্ব চাপিয়ে দিওনা যা আমি বহন করতে পারব না।' রাসূলে পাক (সা.)-এর প্রকাশ্য আশ্রয়দাতা বলতে আবু তালেব ছাড়া আর কেউ ছিল না। তিনি যখন দেখলেন, তার এ আশ্রয়টিও টল-টলায়মান, তখন অত্যন্ত দুঃখিত চিত্তে ও অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন, আল্লাহর কসম! 'যদি তারা আমার এক হাতে চাঁদ এবং অপর হাতে সূর্যও এনে দেয় তথাপি আমি আমার কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হব না। আল্লাহ হয় এ কর্তব্য সমাধা করবেন অথবা আমি স্বয়ং এর জন্য প্রাণ বিসর্জন করব।' রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এহেন প্রত্যয়দীপ্ত বক্তব্যে আবু তালেবের অন্তরে বিশেষ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো। তিনি রাসূল পাক (সা.)কে বললেন, 'যাও, তোমার কর্তব্য পালন কর। আমি জীবিত থাকতে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।' আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত ও তাবলিগ করার তওফিক দান করুন।

লেখক : মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী; খতিব, মালিবাগ বায়তুল আজিম শহীদী জামে মসজিদ, ঢাকা।
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template