السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন, যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন

| comments

গোটা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান বিক্ষোভে বিপর্যস্ত ক্ষমতাসীনরা। বিক্ষোভের অনলে পুড়ে এরই মধ্যে ক্ষমতা ছেড়েছেন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলি ও মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক। লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির মসনদও টলমল করছে; যে কোনো মুহূর্তে তাকেও ক্ষমতা ছাড়তে হতে পারে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আলজেরিয়া, জর্ডান, ইয়েমেন ও সুদানে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এর ধাক্কা ইরান ও সৌদি আরবেও লাগতে পারে। এক কথায় গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাসীনদের তখত এখন হুমকির মুখে। দীর্ঘদিন ধরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারাই আজ জনগণের প্রতিরোধের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। হায় নিয়তি! কাল বাদশা; আজ পলাতক আসামি।
মধ্যপ্রাচ্যে এই বিক্ষোভের পেছনে অনেকেই পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকাকে দায়ী করছে। এটা নেপথ্যের কারণ হলেও মূলত গণবিক্ষোভের পেছনে রয়েছে অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সীমাহীন দুর্নীতি ও বেকারত্ব সমস্যার সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া।

তবে এটা সত্য, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ; দমননীতি আর দীর্ঘদিন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার মানসিকতাই তাদের পতনের মূল কারণ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর জনগণের ভোটে ক্ষমতার পালাবদল হলেও এই একনায়কদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ছিল না জনগণের কোনো অধিকার। এরপরও যে কথাটা বলতে হয় তা হলো, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন, যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বান্দাকে ক্ষমতা দিয়ে পরীক্ষা করেন। কেউ এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সক্ষম হন, অনেকেই পারেন না। বস্তুত ক্ষমতা ও ইজ্জত-সম্মান সবকিছুই আল্লাহর হাতে। এর একচ্ছত্র মালিক আল্লাহ। মধ্যপ্রাচ্যে গঠিত সরকারপ্রধানদের পতন থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। যারা বুদ্ধিমান তারা এর থেকে শিক্ষা নেবেন, এটাই সময়ের দাবি।

ক্ষমতার নিরঙ্কুশ মালিক আল্লাহ। এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, 'বলুন, ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে সব ধরনের কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশালী। (সূরা : আল ইমরান : ২৬)
আয়াতে আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার প্রকৃতি বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ যাকে চান সাম্রাজ্য দান করেন, আবার যার কাছ থেকে চান সাম্রাজ্য কেড়ে নেন। যাকে চান সম্মান দান করেন, আবার যাকে চান অপমানিত করেন, সব কল্যাণ তাঁর কাছে।

পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে অত্যন্ত সাবলীলভাবে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজশক্তির উত্থান-পতন আর সাম্রাজ্যের পটপরিবর্তন হয়ে থাকে আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায়। আয়াতে জগতের বৈপল্গবিক ঘটনা সম্পর্কে অজ্ঞ এবং অতীতকালের শক্তিশালী জাতিগুলোর উত্থান-পতনের ইতিহাস সম্পর্কে উদাসীনদের হুশিয়ার করা হয়েছে। জগতের সব শক্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতা একমাত্র আল্লাহতায়ালার করায়ত্ত। সম্মান ও অপমান তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি দরিদ্র ও পথের ভিখারিকে রাজসিংহাসন ও মুকুটের অধিকারী করতে পারেন এবং প্রবল প্রতাপান্বিত সম্রাটের হাত থেকে রাষ্ট্র ও ঐশ্বর্য ছিনিয়ে নিতে পারেন।

এই আয়াতের শেষাংশেই বলা হয়েছে, আল্লাহর হাতেই যাবতীয় কল্যাণ। আয়াতের প্রথমাংশে রাজত্ব দান করা ও ছিনিয়ে নেওয়া এবং সম্মান ও অপমান উভয় দিক উলেল্গখ করা হয়েছে। এর কারণে এখানে খায়ের বা কল্যাণ শব্দ ব্যবহার করে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যে বিষয়কে কোনো ব্যক্তি বা জাতি অকল্যাণকর বা বিপজ্জনক মনে করে, তা সংশিল্গষ্ট ব্যক্তি অথবা জাতির জন্য আপাতদৃষ্টিতে অকল্যাণকর ও বিপজ্জনক মনে হলেও পরিণামের সামগ্রিক দিক দিয়ে তা অকল্যাণকর নাও হতে পারে।

মোটকথা, আমরা যেসব বিষয়কে মন্দ বলি, সেগুলো পুরোপুরি মন্দ নয়_ আংশিক মন্দ মাত্র। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনের দিকে সম্বন্ধ এবং সামগ্রিক উপযোগিতার দিক দিয়ে কোনো বস্তুই মন্দ নয়। আর এ বিশ্বাসই মুমিনের পথচলার অবলম্বন ও ইমানের দাবি।

রাষ্ট্র পরিচালনায় এখনও যারা শক্তিকেই অবলম্বন মনে করছেন, তারা স্পষ্টত ভুলের মধ্যে আছেন। কারণ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য রক্তপাত ও অত্যাচারকে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে। হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহপাক অত্যাচারীকে অবকাশ দেন (অর্থাৎ তাকে তৎক্ষণাৎ ধরেন না, ঢিল দেন, সুযোগ দেন যাতে সে আরও জুলুম করতে পারে)। এরপর তাকে এমনভাবে পাকড়াও করেন, সে আর ছুটে যেতে পারে না। এরপর নবী (সা.) আয়াত পাঠ করেন; অর্থাৎ এইরূপ তোমার প্রভুর পাকড়াও যে যখন তিনি অত্যাচারী গ্রামবাসীকে পাকড়াও করেন...। (বুখারি ও মুসলিম)
বিশ্বব্যাপী চলমান ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নিপতিত গোষ্ঠী বা সরকারপ্রধানরা ক্ষমতাকে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত মনে না করাই সব অনিষ্টের মূল। পৃথিবী এখন গতিময়; এগিয়েছে বেশ। এর পরও ক্ষমতাসীনরা নিজেদের মনোভাব শাসক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে ফেলতে পারেনি। তারা জনগণের বন্ধু হতে পারেনি। ক্ষমতার মোহ, সম্পদের লালসা আর কায়েমি স্বার্থে অন্ধ এসব শাসকের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা একটা জরুরি বার্তা।
মুফতি এনায়েতুল্লাহ(muftianaet@gmail.com)
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template