السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

সিরাতুন্নবীর (সা.) পয়গাম

| comments

বালাগাল উলা বিকামালিহী
কাশাফাদদোজা বিজামালিহী
হাসুনাত জামিউ খিসালিহী
সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী

প্রায় দেড় হাজার বছর আগের রবিউল আউয়ালের কোনো এক প্রভাত। আরব মরুর মক্কা উপত্যকায় উদিত হয়েছিল আলোকদীপ্ত এক নতুন সূর্য। যার আলোকরশ্মি বিদীর্ণ করেছিল গোমরাহি ও মূর্খতার পুরু পর্দা। সে প্রভাতের বিভায় অবিচার ও অনাচারের লু হাওয়া পরিণত হয়েছিল মলয় সমীরণে। বছরের পর বছর ধরে যে আরবভূমি তথা বিশ্বমানবতা পিপাসায় হাহাকার করছিল, তার ওপর বয়ে যায় রহমতের বারিবর্ষণ। যাতে সততা, নিষ্ঠা, ভ্রাতৃত্ব, হৃদ্যতা, ন্যায় ও সাম্য থেকে বঞ্চিত মানবতার রুক্ষভূমি পূর্ণ হয়ে ওঠে শ্যামল শোভায়। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির জন্মের সেই শুভমুহূর্তে আনন্দের বন্যা বইছিল সর্বত্র। সে খুশির বারতা পেঁৗছে গিয়েছিল দিকদিগন্তে। মহানবীর (সা.) জন্মের শুভমুহূর্তের আলোড়িত সব ঘটনাই জানান দিচ্ছিল বিশ্বমানবতার গগনে প্রদীপ্ত সূর্যের উদয়ের কথা। ঐতিহাসিকরা লিখেছেন, সে রাতে কিসরা প্রাসাদের চৌদ্দটি পাথর খসে পড়ে। পারস্যের অগি্নকুণ্ড নিভে যায়। সাবওয়াহ নদী শুকিয়ে যায়। এগুলো ছিল মূলত চোখে পড়ার মতো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। এছাড়া অনারবের মর্যাদা, রোমের প্রভাব, চীনের অগ্রগতির ধাপগুলো ভেঙে পড়ার কারণও ছিল তাই। এ জন্যই স্তিমিত হয়েছিল অনিষ্টের নরক, কুফরির অগি্নকুণ্ড, মূর্খতার দাবানল। অন্ধকারের কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যাওয়া বসুন্ধরা ফিরে পেয়েছিল নতুন প্রাণের স্পন্দন। মানবতা পেয়েছিল জন্মের সার্থকতা। তিনি ছিলেন রহমাতুলি্লল আলামিন। রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা, 'আমি আপনাকে সারা জাহানের জন্য একমাত্র রহমত করেই পাঠিয়েছি।' তাঁর কৃপার বারিধারায় সিক্ত হয়েছিল সৃষ্টিকুলের প্রতিটি বস্তু।
প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদের (সা.) করুণার কারণেই প্রাণিকুল তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রতি দুর্বল। তাঁর নাম শুনলে ভক্তিতে গদগদ করে। কালের বিরামহীন চক্রে দেড় হাজার বছর লীন হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত তাঁর অবদানের কথা জগদ্বাসীর কাছে ভাস্বর হয়ে আছে। এখনও দুনিয়ার প্রতিটি স্থানে প্রতি মুহূর্তে শ্রদ্ধাভরে উচ্চারিত হচ্ছে তাঁর বরকতময় নাম। নাতিদীর্ঘ কর্মময় জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ইতিহাসের পাতায় রক্ষিত আছে সযতনে। তাঁর সর্বপ্লাবী ব্যক্তিত্বের কাছে দুনিয়ার তাবৎ কৃতিত্ব ও যোগ্যতা ধূসরিত। ঘোর শত্রুর কাছেও তিনি কীর্তিমান, অদ্বিতীয় এক মহাপুরুষ। চরিত্রে তাঁর নেই বিন্দু পরিমাণ কালিমার আঁচড়। চারিত্রিক সার্টিফিকেটে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন তাঁকে সর্বযুগের রেকর্ডসংখ্যক মার্ক দিয়েছেন। কৃতিত্ব, অবদান এবং মানবিক যোগ্যতার আকর্ষণীয় দিকগুলোর সম্মিলনের কারণে প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে নবী করিমের (সা.) প্রতি সহজাত টান রয়েছে। সর্বোপরি মহব্বতে রাসূলের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন ইমানের অনিবার্য দাবি। সে দাবি পূরণার্থে মুসলমান হিসেবে রবিউল আউয়ালে সবাই আন্দোলিত হই। প্রিয়নবীর প্রতি আমাদের ব্যাকুল অন্তরের আকুল অনুভূতির প্রকাশ ঘটে। মহব্বতে রাসূলের নতুন হাওয়া বইতে থাকে চারদিকে।
তবে আমাদের মহব্বতের প্রকাশভঙ্গিটা যথার্থ কি-না তা বিবেচনার দাবি রাখে। অনুষ্ঠানের হিড়িক, চোখ ধাঁধানো চাকচিক্য এবং মহব্বতে রাসূলের সস্তা প্রয়োগের কারণে মাহে রবিউল আউয়াল আমাদের জীবনধারায় কোনোই পরিবর্তন আনতে পারে না। গতানুগতিক বহমান স্রোতে পণ্ড হয়ে যায় রবিউল আউয়ালের প্রকৃত চেতনা ও দাবি। রবিউল আউয়ালের পয়গাম ও দাবি কী_ সেগুলোও আমাদের কাছে আজ স্পষ্ট নয়। আনুষ্ঠানিকতার সব আয়োজনই আমরা সম্পন্ন করি, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও শিক্ষা, বাস্তবজীবনে নববী আদর্শের কোনো ছাপ রাখতে পারি না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, 'রবিউল আউয়াল এলে তোমারই গান গাই, রবিউল আউয়াল গেলে তোমায় ভুলে যাই।' মিলাদ, কিয়াম, জশনে-জুলুশ আর অনুষ্ঠানসর্বস্ব রবিউল আউয়াল আমরা যতই উদযাপন করি, প্রাপ্তির খাতায় শূন্যতা থেকেই যাবে। এ জন্য সিরাতুন্নবীর যথার্থ দাবি আদায়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া ইমানদীপ্ত চেতনার সর্বপ্রধান দায়িত্ব।
একবিংশ শতাব্দীর সমস্যাসংকুল এই বিশ্বে বছর ঘুরে রবিউল আউয়াল আমাদের দুয়ারে হাজির। প্রিয়নবীর জন্ম-মৃত্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাস হিসেবে এ মাসে নতুন প্রাণে উজ্জীবিত হওয়া সবার কর্তব্য। মুমিনের সামনে স্বচ্ছ আয়নার মতো নববী আদর্শের বাস্তবচিত্র স্থির হয়ে আছে। সিরাতুন্নবীর ডাকে সাড়া দিয়ে সে চিত্রের সঙ্গে নিজেদের জীবনের রূপটা পরখ করে দেখলেই প্রত্যেকের স্ব-স্ব পরিচয় উদ্ভাসিত হয়ে যাবে। অনুমান করতে কষ্ট হবে না, আমাদের জীবনচিত্র সে ছাঁচের কাছে কতটা বেমানান। আদর্শিক বিচারে নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সা.) পথ ও পদ্ধতি অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। আমি যে কেউই হই না কেন, আমার জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সিরাতুন্নবীর মধ্যে রয়েছে অনন্ত পাথেয়। অন্ধকারে আলোকদিশা পাওয়ার প্রোজ্জ্বল জ্যোতি একমাত্র সিরাতে রাসূলের (সা.) মধ্যেই বিরাজমান। জীবনের সব ঝঞ্ঝাট, সংকট ও সমস্যাকে জয় করতে হলে সিরাতুন্নবীর ডাকে সাড়া দিতে হবে। কারণ সিরাতুন্নবীই হলো কিয়ামতাবধি আগত-অনাগত সব মানুষের মুক্তি ও সফলতার চিরন্তন অঙ্গীকার।

-জহির উদ্দিন বাবর
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template