السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

মহামানব হজরত মোহাম্মদ (সা.)

| comments

আজ ১২ রবিউল আউয়াল। আখেরি নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এই তারিখে জন্মগ্রহণ করেন ও ইন্তেকাল করেন। মুসলিম বিশ্বের জনগণ ১২ রবিউল আউয়ালসহ এ মাসকে বেশ তাৎপর্যের সঙ্গে স্মরণ করে থাকে। একজন ন্যায়নিষ্ঠ, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী শাসক হিসেবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশ্ব মনীষায় গৌরবময় আসনের দাবিদার। বিচারের ক্ষেত্রে যে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়নিষ্ঠতার স্বাক্ষর তিনি রাখেন, তা মুসলিম ও অমুসলিম সর্বমহলেই নন্দিত। তাঁর নির্দেশালোকে প্রণীত মুসলিম আইন একবিংশ শতাব্দীতেও সর্বজনের শ্রদ্ধা ও ভক্তির উদ্রেক করে। ওয়ারেন হেস্টিংসের ঐতিহাসিক 'ইমপিচমেন্টে'র ক্ষেত্রেও নিরপেক্ষতার মাপকাঠি হিসেবে বিশ্বখ্যাত বাগ্মী এডমন্ড বার্ক যে আইন শাস্ত্রের কথা উলেল্গখ করেন তা হচ্ছে মুসলিম আইন। বার্ক-এর ভাষায়- মুসলিম আইন_মুকুটধারী সম্রাট হতে সামান্যতম প্রজা পর্যন্ত সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এটা এমন একটি আইন যা জগতের সর্বোত্তম জ্ঞানানুমোদিত, পাণ্ডিত্যপূর্ণ এবং সর্বোৎকৃষ্ট আইনশাস্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ধর্মীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ_ উভয় অঙ্গনেই তাঁর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। স্বভাবতই সে নির্মল, ক্লান্তিময় প্রভাব অনুপ্রাণিত করেছে দেশ ও বিদেশের মুসলিম ও অমুসলিম মনীষীদের। সে যুগের অসহায় ক্রীতদাসদের প্রতি তাঁর সহানুভূতিশীল আচরণ, ক্রীতদাসদের মুক্তি প্রদানে তাঁর সার্বক্ষণিক উৎসাহ ও মমত্বময় নির্দেশাদি অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করেছে আব্রাহম লিঙ্কনকে ক্রীতদাস প্রথা অবলুপ্তকরণে। শুধু নির্যাতিত, শৃঙ্খলিত মানুষের দুঃখ মোচনে নয়, পশুপক্ষী, জন্তু-জানোয়ারের কষ্ট লাঘবে হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) সহানুভূতিশীল, মমত্বময় আচার-আচরণও সর্বমহলকে বিস্ময়াভিভূত করেছে। পশুপক্ষী, জীবজন্তু, বৃক্ষরাজি যে মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ_ এ চিন্তা-চেতনার পথিকৃৎ হচ্ছেন ইসলামের নবী (সা.)। জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা পরিহার করার, বৃক্ষরাজিকে অহেতুক নিধন করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার নিমিত্ত পৃথিবীর ইতিহাসে সার্থক ও সফলভাবে তিনিই প্রথমে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। যদিও বুদ্ধদেব, যিশুখ্রিস্ট, মহাবীর শ্রীকৃষ্ণ প্রমুখ মহান ব্যক্তিত্ব 'জীবে দয়া' করার প্রেরণা জুগিয়েছেন, হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) বাস্তবানুগ, বিজ্ঞানসম্মত জীবপ্রেমেই জন্ম দিয়েছে বিংশ শতাব্দীর বহুল আলোচিত বাস্তববিদ্যা।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে নারীর মর্যাদার জন্য যে মহামনীষী প্রথম সোচ্চার হয়ে ওঠেন, নারীকে সংসার ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে যিনি প্রথম স্বীকৃতিদান করেন, মানবজীবনে নারীর অধিকার পূর্ণভাবে যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠিত করেন, সত্যিকার অর্থে নারী জাগরণ ও নারী মুক্তির যিনি প্রবক্তা, তিনি হচ্ছেন মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। পৃথিবীর ইতিহাসের তিনিই প্রথম মহাপুরুষ, যিনি নারী জাতিকে প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে ক্রাবাইটের ভাষায়_ অর্থাৎ 'মোহাম্মদ (সা.) সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে নারী-অধিকারের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন।'
এ কথা আদৌ অত্যুক্তি হবে না যে, জীবনে অন্য কিছু না করলেও, শুধু নারী জাগরণের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানই বিশ্ব মনীষায় হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) সুদৃঢ়ভাবে অধিষ্ঠিত করবে।

এ কথা উলেল্গখ করা নিশ্চয়ই অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, ইউরোপীয় মনীষার উত্তরণেও হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) আদর্শের প্রভাব সর্বজনস্বীকৃত। জন উইলিয়াম ড্রেপার নিঃসংকোচে স্বীকার করেছেন যে, 'রেনেসাঁর জন্ম হয়েছে ইসলামের দরুন।' তাই ঞযব ঐঁহফৎবফ গ্রন্থে মাইকেল এইচ হার্ট নিঃসংকোচে শীর্ষস্থানে, যাকে সৃষ্টিকুলের সেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্থান নির্ধারণ করেছেন, তিনি হলেন ইসলামের প্রবক্তা মানবতার কাণ্ডারি, বিশ্ব শান্তির প্রতিষ্ঠাতা আমাদের হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.), যিনি সর্বকালের, সর্বযুগের শ্রেষ্ঠতম মহামানব।

-মুফতি এনায়েতুল্লাহ
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template