'হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের কাছে উপদেশ বাণী এসেছে, তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগ নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুমিনদের জন্য। সুরা ইউনুছ আয়াত-৫৭।'
ঈদে মিলাদুন্নবী আরবি ও ফার্সি শব্দ। ঈদ শব্দটি আউদ শব্দ থেকে আগত। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে খুশি, আনন্দ। মিলাদ ফার্সি শব্দ_ মাওলুদ থেকে আগত, যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, জন্মস্থান, জন্ম সময়, জন্মদিন ইত্যাদি। নবী অর্থ আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আগত একজন মহাপুরুষ। সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর অর্থ হচ্ছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শুভ জন্মদিনের খুশি/আনন্দ উদযাপন করা। কাল ও সময়ের চাকা ঘুরে, ঋতুর পালা বদলিয়ে বিশ্ব মুসলিমের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে ১২ রবিউল আউয়াল ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.)। আজ থেকে প্রায় ১৪৭২ বছর আগে বিশ্বজগত যখন অন্ধকারের কালো আঁধারে আচ্ছন্ন ছিল, মানবতার সব দিক যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের কালো ইতিহাস পৃথিবীতে এক কলঙ্কময় অধ্যায় সূচনা করেছিল, ঠিক তখনই বিশ্ব মানবতার কল্যাণে ধরার বুকে মক্কার মরূদ্যানে নতুন সূর্যের এক সোনালি পতাকা উদিত হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দীর কলঙ্কময় ইতিহাসকে ধুয়ে মুছে সু-সভ্যতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব ভুবনে আগমন করেন আল্লাহর বন্ধু, উম্মতের কাণ্ডারি, রহমতের ভাণ্ডার, নবী মুহাম্মদ রাসূল (সা.)। তাঁর আগমনে সত্যের জয় অবধারিত হয়, মুক্তির পতাকা পতপত করে উদয় হয়, সর্বকালের সব কলঙ্কময় ইতিহাস মুছে আরব ভূখণ্ডে এক নবজাতি পৃথিবীর বুকে স্থানলাভ করে। যার মাধ্যমে জমিন থেকে সর্বপ্রকার পাপাচার দূর হয়ে মানব সমাজকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গৃহীত হয়। সেই মহান ব্যক্তিত্বের শুভ জন্মদিন আজ আমাদের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছে। মহান আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে বলেন, 'হে রাসূল! আপনি বিশ্ববাসীদের বলে দিন, তোমাদের কাছে উপদেশ এসেছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে, আর অন্তরের রোগ নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। হে রাসূল আপনি বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহে এবং তাঁর দয়ায় তোমাদের আনন্দিত হওয়া উচিত, এটি উত্তম, সে সমুদয় থেকে যা তোমরা সঞ্চয় করেছো। সুরা ইউনুস আয়াত-৫৭।
রাসূল (সা.)-এর জন্মের সুসংবাদে আসমান, জমিনসহ আরশে আজীম পর্যন্ত আনন্দের জোয়ার ও খুশির ঢল নেমেছিল। ফেরেস্তাকুল সে খুশি উদযাপন করেছিলেন, যা মানবজাতির শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। ফেরেস্তাদের মিছিলের স্লোগান ছিল_ আসছালাতু আসছালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.), আসছালাতু আসছালামু আলাইকা ইয়া হাবীবাল্লাহ (সা.) ইত্যাদি বাক্যসমূহ। অনন্ত অসীম মহান আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথম তার প্রিয় বন্ধু হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র নূর মোবারক সৃষ্টি করেন। এই নূর থেকে নিখিল বিশ্ব সৃষ্টি করেন। আর আত্মার জগতে উক্ত নূরকে রাসূল উপাধিতে ভূষিত করেন। বহু যুগ পরে রাসূল (সা.)-এর নূর হতে আল্লাহতায়ালা সব নবী-রাসূলগণের আত্মাসমূহ সৃষ্টি করেন।
সব নবী-রাসূলগণই মহানবী (সা.)-এর মিলাদের সংবাদ প্রচার করেছেন। রাসূল (সা.) নিজেই বলেন, শেষ নবীরূপে আমার নাম যখন আল্লাহর কাছে লিখিত ছিল, তখন আদম (আ.)-কে তৈরি করা হয়নি। মিলাদুন্নবী (সা.) সম্পর্কে নেয়ামাতুল কোবরা নামক কিতাবে বলা হয়েছে, হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের জন্য একটি মাত্র টাকা ব্যয় করবে, সে আমার সঙ্গে বেহেস্তে থাকবে। হজরত ওমর (রা.) বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-কে যে ইজ্জত করবে, সে যেন ইসলাম ধর্মকে পুনর্জীবন দান করল।
লেখক : মাওলানা আবুল হোসাইন পাটওয়ারী; খতিব, রাজাবাড়ী বড় জামে মসজিদ, পোস্তগোলা, ঢাকা।
Post a Comment