السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

সত্য সুন্দরের প্রতীক মহানবী (সা.)

| comments

হজরত ইব্রাহিম, মুসা ও ইসা (আ.)-এর একেশ্বরবাদী ধারণাকে যিনি সামনে এগিয়ে নিয়ে আসেন তিনি সর্বকালের সেরা মানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সত্য সুন্দর ও কল্যাণের প্রতিচিত্র ছিলেন তিনি। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। তবে তার জন্মের সুনির্দিষ্ট তারিখ কোনটি সে সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। ঐতিহাসিক ও হাদিস বর্ণনাকারীদের সিংহভাগের মতে, তিনি রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। এ মাসের কোন তারিখে মহানবীর (সা.) জন্ম তা নিয়ে ইসলামের দুটি প্রধান সম্প্রদায় সুনি্ন ও শিয়াদের মত ভিন্নতা লক্ষণীয়। সুনি্ন মতাবলম্বীদের সিংহভাগ ১২ রবিউল আউয়াল সোমবারকে মহানবীর জন্মদিন বলে ভাবেন। অন্যদিকে সিংহভাগ শিয়া ইতিহাসবিদ ও জীবনীকারের মতে, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ১৭ রবিউল আউয়াল শুক্রবার। শিয়া জীবনীকারদের মধ্যে একমাত্র আল কুলাইনী মনে করেন, ১২ রবিউল আউয়ালেই মহানবী (সা.)-এর জন্ম। মহানবী (সা.)-এর জন্মদিন সম্পর্কে মতভিন্নতার কারণ হলো তিনি যে সময় জন্ম নেন সে সময় আরবদের মধ্যে দিন ও পঞ্জিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। মহানবী (সা.)-এর জীবনীকার তের শতকের ইতিহাসবিদ আল-ইরবিলি এ ধারণাই দিয়েছেন। স্মর্তব্য, শুধু মহানবী (সা.) নয়, খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক হজরত ইশা (আ.) বা যিশুখ্রিস্টের জন্ম তারিখ নিয়েও রয়েছে একই ধরনের বিভ্রান্তি। ২৫ ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে পালন করা হলেও এর পক্ষে কোনো গ্রহণযোগ্য দলিল নেই। মহানবী (সা.)-এর জন্মদিন মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায় সাধারণভাবে দুটি ভিন্ন তারিখে পালন করে। ইরানের শিয়া মতাবলম্বী ইসলামী সরকার এ মতভেদকে পাশ কাটিয়ে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তকের জন্মদিন পালন করে সপ্তাহজুড়ে। ১২ থেকে ১৭ রবিউল আউয়াল পর্যন্ত সপ্তাহকে তারা ঐক্য সপ্তাহ হিসাবেও ঘোষণা করেছে। মহানবী (সা.) ঠিক কবে জন্মগ্রহণ করেছেন সে সম্পর্কে তথ্য-উপাত্তের অভাবে মতভিন্নতা থাকলেও তিনি যে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের প্রতীক হিসেবে বিশ্বে আবির্ভূত হয়েছিলেন সে সম্পর্কে কোনো সংশয় নেই। মানুষকে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করতে আল্লাহ তাকে বেছে নেন। তার ওপর নাজেল হয় ঐশীগ্রন্থ কোরআন। একেশ্বরবাদী ধর্মীয় চেতনার প্রবর্তক হজরত ইব্রাহিম, মুসা ও ইশা (আ.) এর যথার্থ উত্তরসূরী ছিলেন মহানবী (সা.)। ইহুদী, খ্রিস্টানসহ বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মমত একেশ্বরবাদী চেতনার ভিত্তিতে গড়ে উঠলেও ইসলামকে এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও নিখাদ মতবাদ হিসেবে ধরা যায়। বিশ্বনন্দিত রুশ ঔপন্যাসিক লেভ টলস্টয়ের মতে, 'কয়েক খোদার উপাসনা একই সময়ে সম্ভব নয়। এটি একত্ববাদী ধর্মীয় চেতনারও পরিপন্থি। এদিক থেকে ইসলাম খ্রিস্টীয় মতবাদ থেকেও শ্রেষ্ঠ।'
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাব ঘটেছিল মানবজাতিকে সত্যের পথে এগিয়ে নিতে। পরধর্ম সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কুরাইশদের শত্রুতা এড়াতে আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। তিনি সেখানে সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে এক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলেন। ইহুদিরা মহানবীর (সা.) সঙ্গে সহাবস্থানের চুক্তিতেও আবদ্ধ হয়। কিন্তু তারা তাদের বিশ্বাসঘাতকতার অভ্যাস ভুলতে পারেনি। সে সময়কার কথা। ইহুদিরা ফন্দি আঁটছিল কিভাবে ইসলামের উপর আঘাত হানা যায়। একদিন সন্ধ্যায় মহানবী (সা.) সাহাবাদের নিয়ে মসজিদে বসে আছেন। এমন সময় একদল ইহুদি এসে বললো, হে মুসলমানদের নবী, আমরা মদিনার অধিবাসী নই। বহু দূরের বাসিন্দা। নানা কারণে আজ আমরা সন্ধ্যার আগে মদিনা ছেড়ে চলে যেতে পারিনি। আমাদের এতগুলো লোকের রাত কাটানোর পরিচিত কোনো জায়গাও নেই। আপনি কি এই মসজিদে এক রাতের জন্য আমাদের আশ্রয় দেবেন? খুব সকালে আমরা ঘুম থেকে উঠেই নিজেদের এলাকার দিকে যাত্রা করবো। মহানবী (সা.) বললেন, তোমরা সারাদিন ঘোরাঘুরি করে এখন খুবই ক্লান্ত। আজকের রাতটা এ মসজিদেই আমাদের মেহমান হিসাবে অবস্থান কর। আমার এবং সাহাবাদের খেজুরের ভাগও পাবে তোমরা। এ মসজিদেই তোমাদের রাত কাটাবার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। রাতে এশার নামাজ শেষে মহানবী (সা.) এবং সাহাবারা মসজিদ থেকে চলে যাওয়ার আগে ইহুদিদের সেখানে থাকার সু-ব্যবস্থা করে গেলেন। কিন্তু ইহুদীদের মনে ছিল দুষ্টবুদ্ধি। তারা আশ্রয় লাভের জন্য নয়, এসেছিল মসজিদটির ক্ষতিসাধন করতে। শেষ রাতে মসজিদ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে তার ভেতরে তারা মলমূত্র ত্যাগ করল এবং নানা ক্ষতি করল। ভোরের আগে ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে এসে মহানবী (সা.) এবং সাহাবারা দেখেন ইহুদিরা নেই। মসজিদটি মলমূত্রে ভরা। তা দেখে সাহবারা ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। তারা ইহুদিদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে বলে উঠলেন, আমরা এখনই তাদের ধাওয়া করবো এবং তাদের শির ধুলায় লুটাবো।

সাহাবারা এ জন্য ছুটে যাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের নিবৃত্ত করলেন। নির্দেশ দিলেন, না তোমরা কোথাও যাবে না। এ মসজিদ তোমাদের কাছে পবিত্র, ইহুদিদের কাছে নয়। সেই কারণেই তারা মসজিদকে এভাবে নোংরা করতে পেরেছে। তাদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া ঠিক হবে না। আল্লাহর ঘরের সম্মান ও পবিত্রতা আল্লাহই রক্ষা করবেন। তোমাদের উত্তেজিত হওয়া ঠিক হবে না। আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যখন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার শিকার, তখন মহানবী (সা.)-এর এ সহিষ্ণুতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে। প্রতিহিংসা পরায়নতা নয় সহনশীলতা হলো মানব ধর্মের সত্যিকারের সৌন্দর্য। মহানবী (সা.) ছিলেন সে সৌন্দর্যেরই আঁধার।

লেখক : সুমন পালিত; সাংবাদিক ও কলামিস্ট
ই-মেইল : sumonpalit@gmail.com
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template