এই ধরায় আলস্নাহ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টি জগতের সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি আশরাফুল মকলুকাত মানুষ। মানব জাতি সৃষ্টির পর থেকে যুগে যুগে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বকে ভুলে গিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে পাপাচার ব্যভিচারে নিমজ্জিত হয়ে অন্ধকারের অতল সমুদ্রে তলিয়ে যায়। ঠিক সে মুহূর্তে আলস্নাহ পাকের প্রিয় মানব জাতিকে অন্ধকারের পথ হতে ফিরিয়ে আনার জন্য নবী ও রাসুলগণকে প্রেরণ করেছেন আলস্নাহ দূত হিসাবে। হাদিসে বর্ণিত আছে ১ লক্ষ ২৪ হাজার মতান্তরে ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী রাসুল এই ধরায় এসেছেন আলস্নাহর দূত হিসাবে। তার মধ্যে ১০৪ খানা কিতাব নাযিল হয়েছে। এর মধ্যে ৪ খানা প্রধান। আলস্নাহর প্রেরিত নবী রাসুলগণ জিব্রাইল (আ.) এর মাধ্যমে প্রেরিত কিতাবের মাধ্যমে পৃথিবীর পথভ্রষ্ট মানুষকে আলোর সন্ধান দেয়ার জন্য আজীবন দুঃখকষ্ট করে পথভ্রষ্ট মানুষের অত্যাচার সহ্য করেও আলস্নাহর নির্দেশে তাঁর দেয়া বাণী প্রচার করে গিয়েছেন। ঠিক তেমনি ঈসা(আ.) ইঞ্জিল কিতাবের মাধ্যমে আলস্নাহর দ্বীন প্রচার করার ৫০০ শত বৎসর পর অন্যায় অত্যাচার পাপাচার ও ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে আলস্নাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতি শ্রেষ্ঠত্ব ভুলে গিয়ে অমানুষে পরিণত হচ্ছিল। পশু এবং মানুষের মধ্যে দৈহিক গঠন ছাড়া আর তাদের প্রভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। বিশেষ করে আরব দেশের মানুষ বেশি বর্বরোচিত কাজে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তারা জীবন্ত কন্যাকে কবর দিত। পাহাড় পর্বত বা বনজঙ্গলে বড় বড় পশুরা যেমন ছোট ছোট পশুদের ঘাড় ভেঙ্গে রক্তমাংস ভক্ষণ করত, তেমনি শক্তিশালী মানুষরা দুর্বল মানুষদের ওপর অন্যায় অত্যাচার করতো। প্রায় গোত্রে গোত্রে বংশে বংশে এমনকি মানুষে মানুষে মারামারি কাটাকাটি করা হয়ে গিয়েছিল মানুষ জাতির স্বভাবজাত ধর্ম। পৃথিবীটা মনে হচ্ছিল একটা গভীর অরণ্য। মানুষ অন্ধকারের অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। মানুষের মনুষ্যত্ব ধ্বংস হয়ে পশুতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ঠিক তেমনি এক মুহূর্তে আলস্নাহ রাব্বুল আলামিনের সবচেয়ে প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স.) ১২ রবিউল আওয়াল আরব দেশের মক্কা নগরীতে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশ কুরাইশ বংশের হযরত আব্দুলস্নাহর স্ত্রী বিবি আমেনার উদর থেকে সুবহে সাদিকের সময় আলস্নাহর দূত ও মানব জাতির পথপ্রদর্শক আলোর দিশারী হিসেবে ধরার মাঝে অবতীর্ণ হলেন।
তিনি যখন যুবক তখন যুব সমাজকে সংগঠিত করে হিলফুল ফুযুল নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনের মাধ্যমে অন্যায় প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন। মহানবীর সত্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা ও বিভিন্ন গুণের কথা শুনে বিবি খাদিজা তার ওপর বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্যের ভার অর্পণ করেছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (স.) বিচক্ষণতা ও সত্যনিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করলেন, সে ব্যবসা দিন দিন উন্নতি হতে শুরু করল। এর মাঝে রাসুলের আদর্শে মুগ্ধ হয়ে তার সাথে খাদিজা (রা.) পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। হযরত মুহাম্মদ (স.) এর পর হতে প্রায়ই হেরা গুহায় ধ্যানে মগ্ন থাকতেন।
তার বয়স যখন ৪০ বৎসর পূর্ণ হল আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন মুহাম্মদ (স.) কে নবুয়াত দান করলেন এবং নাজিল হলো কোরআন। আলস্নাহর আদেশে আলস্নাহর দ্বীনের কথা প্রচার করতে শুরু করলেন। তখন মক্কার কাফেরগণ যে মুহাম্মদ (স.)কে আলামিন বলে ডাকতো, তার কথা বিশ্বাস না করে শুরু করল শত্রুতা এবং তাকে হত্যার চেষ্টা করতে লাগলো। বহু অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে বহু যুদ্ধ করে আলস্নাহর অশেষ মেহেরবানীতে মদিনার আনসারদের সহযোগিতায় মুহাম্মদ (স.) এর বিজয় হল। আরব দেশের সীমিত সংখ্যক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করল। আলস্নাহ পাক রসূল (স.) এর মাধ্যমে কোরআন দ্বারা সমগ্র মানুষের জীবন বিধান প্রণয়ন করে দিলেন। কারণ এর পরে আর কোন নবী আসবেন না। তিনি আখেরী নবী এবং শেষ নবী। মহানবীর প্রতিটি কথা ও কাজ ছিল বিজ্ঞানসম্মত ও কল্যাণকর। যা চুলচেরা বিশেস্নষণ করে বৈজ্ঞানিকগণ সত্যতা খুঁজে পেয়েছে। তাই মহানবীর জীবনাদর্শ হবে প্রতিটি মানুষের অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয়। কারণ ইসলামই একমাত্র সাম্য মৈত্রী এবং শান্তির ধর্ম। রাসূল (স.) জন্ম থেকেই ছিলেন ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী, অন্যায়ের প্রতিবাদী, আদর্শ সংগঠক, আমানতদার, বিচক্ষণ ন্যায় নিষ্ঠাবান, ত্যাগী, দয়ালু ও দাতা ধৈর্য্যশীল, সুশাসক ইত্যাদি বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত। আলস্নাহ বলেন, 'ওয়ামা আর সালনাকা ইলস্নাহ রাহমাতালিস্নল আলামিন।' হে নবী! আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।
-মনসুর আহমেদ আকন্দ
Post a Comment