অহঙ্কার করা একমাত্র আল্লাহর সাজে। কারণ তিনি এমন এক সত্তা যিনি কারোর ওপর নির্ভরশীল নন। তিনি এমন এক সত্তা যিনি যা ইচ্ছা করেন তাই হয়। তিনি এমন এক সত্তা যিনি এ পৃথিবীর সবকিছুর মালিক। মানুষ, জিনসহ সবকিছু আল্লাহর অনুগ্রহভোগী।
মানুষ সব ক্ষেত্রেই আল্লাহর দয়ার ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহর করুণা ছাড়া মানুষের পক্ষে টিকে থাকা কিংবা কিছু করা অসম্ভব, যে কারণে কোনো কিছু নিয়ে অহঙ্কার করা মানুষের পক্ষে বেমানান। বিশেষত কেউ অপর মানুষের কাছে নিজের দম্ভ বা অহঙ্কার প্রকাশ করলে তা আরও বেশি আপত্তিকর।
সুরা লোকমানের ১৮ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে : 'নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।' অসংখ্য হাদিসে অহঙ্কার ও দম্ভ প্রকাশ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন : আল্লাহ বলেছেন, 'শ্রেষ্ঠত্ব আমার পোশাক এবং অহঙ্কার আমার চাদর। যে এ দুটি আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায়, তাকে আমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।'_মুসলিম
অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে : 'জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হবে। জান্নাত বলবে, কী ব্যাপার? আমার ভেতর যে মানবমণ্ডলীর শুধু দুর্বল ও নিরীহ লোক ছাড়া কেউ প্রবেশ করে না। আর জাহান্নাম বলবে, আমাকে তো স্বেচ্ছাচারী ও অহঙ্কারীদের দিয়েই ভর্তি করা হচ্ছে। আল্লাহ তাদের বিরোধ মিটিয়ে দিয়ে বলবেন, 'ওহে জান্নাত! তুমি আমার রহমতের নিদর্শন। যাকে ইচ্ছা তাকে আমি তোমায় দিয়ে রহমত প্রদান করে থাকি। আর ওহে জাহান্নাম! তুমি আমার শাস্তির প্রতীক। তোমার মাধ্যমে যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি দিয়ে থাকি। তবে তোমাদের উভয়কেই পূর্ণরূপে ভর্তি করা হবে।'_মুসলিম
আল্লাহ বলেন, 'অহঙ্কারবশে কাউকে মুখ ভেঙচি দিও না, (মানুষকে অবজ্ঞা করো না), গর্বভরে পৃথিবীতে চলাফেরা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ কোনো অহঙ্কারী দাম্ভিককে পছন্দ করেন না।'_সুরা লোকমান-১৮
হজরত সালমা ইবনুল আকওয়া (রা.) বলেন : এক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে বাম হাতে খাদ্য খেল। রাসূল (সা.) বললেন, ডান হাতে খাও। সে বলল ডান হাতে আমি খেতে পারি না। তিনি বললেন, না, তুমি তা পার, এটা তোমার অহঙ্কার বৈ কিছু নয়। অতঃপর সে আর কখনো ওই হাত মুখের সামনে তুলতে সক্ষম হয়নি।_মুসলিম শরীফ
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : 'কে জাহান্নামি, আমি কি তা তোমাদের জানাব না? জাহান্নামি হলো সে, যে নির্মম হৃদয়ী, রূঢ়স্বভাবী, অবাধ্যচারী এবং অহঙ্কারী দাম্ভিক।'_বোখারি ও মুসলিম।
আল্লাহ আমাদের অহঙ্কার ও দম্ভ প্রকাশ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন।
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ শাহবুদ্দিন; খতিব, আল ইসলাহ মসজিদ, নারায়ণগঞ্জ।
Post a Comment