মহান আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এই মানব জাতির সর্বপ্রধান কাজ হচ্ছে আল্লাহতায়ালার এবাদত করা। এবাদত শেষে আল্লাহতায়ালার দরবারে যে আবেগময় প্রার্থনা করবে তা হবে তার মাতৃভাষায়। আর মাতৃভাষাকেই মায়ের ভাষা বলা হয়। প্রত্যেকটি মানুষকে আল্লাহতায়ালা তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা কৌশল শিক্ষা দিয়েছেন। মাতৃভাষা তার আবেগ প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। বিশ্বময় ভাষার অপরূপ বৈচিত্র্য আল্লাহতায়ালার অপার কুদরতের নিদর্শন।
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে সুরা রুমের ২২তম আয়াতে বলা হয়েছে 'তাঁর আরও একটি নিদর্শন হচ্ছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। 'অপর এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, দয়াময় আল্লাহতায়ালা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা বর্ণনার কলা-কৌশল, _সুরা আর রহমান, আয়াত-১
অন্য এক আয়াতে বলা হচ্ছে, 'আমি প্রত্যেক রাসূলকে তাঁর নিজ জাতির ভাষায় পাঠিয়েছি, যাতে তাদের আল্লাহতায়ালার বিধানসমূহ সুস্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে পারেন।'_সুরা ইব্রাহীম আয়াত-৪
মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য মায়ের ভাষার বিকল্প নেই। মায়ের ভাষা আল্লাহতায়ালার কুদরতের এক অপূর্ব মহিমার নিদর্শনস্বরূপ। মায়ের ভাষার মাধ্যমে মানুষ যত সহজে তার মনের ভাব প্রকাশ ও প্রচার করতে পারে তা অন্য কোনো ভাষায় সম্ভব নয়। যেমন আরবদেশের ভাষা ছিল আরবি, তাই মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বন্ধু আমাদের পেয়ারা নবী (সঃ.)কে আরবি ভাষা শিক্ষা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর তাঁর ওপরে যে কিতাব নাজিল করেছেন সে কিতাবটিও আরবি ভাষায় নাজিল করেছেন, যাতে তিনি জাতিকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেন। প্রত্যেক নবী-রাসূলগণ তাঁর মায়ের ভাষায় তাঁর জাতির কাছে আল্লাহর বাণী পেঁৗছে দিয়েছেন। মায়ের ভাষার মাধ্যমেই মানুষকে আল্লাহর বাণীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সঃ)কে বলেন, হে আমার বন্ধু আমি এ কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে নাজিল করেছি, যাতে তারা সহজে স্মরণ রাখতে পারে।
_সুরা দুখান, আয়াত-৫৮
এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করেছি। যাতে করে আপনি মক্কা ও তার আশপাশের লোকদের সতর্ক করেন হাশরের দিন সম্পর্কে।
_সুরা আশ-শুরা, আয়াত-৭
ভাষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহপাক সূরা ইউসুফের ২নং আয়াতে ঘোষণা করেন, আমি কোরআনকে আরবি ভাষায় নাজিল করেছি, যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পার।
অন্যত্র আল্লাহতায়ালা নবী পাক (সঃ)কে লক্ষ্য করে বলেন, হে আমার বন্ধু! আমি কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি অতি সহজে মুক্তাকীদের সুসংবাদ দেন আর কলহকারীদের সতর্ক করেন। _সুরা মারইয়াম, আয়াত-৯৭
পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ভাষার ব্যবহার আছে। আর ভাষা কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমেই মানুষ স্বজাতির কাছে ইসলাম ও কোরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি, ইসলামী আদর্শ যেমন সর্বজনীন, তেমনিভাবে ভাষা-বর্ণও সর্বজনীন। তাই আমরা দেখতে পাই যে, ইসলাম প্রচারকরা যখন যে অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের জন্য গিয়েছেন প্রথমেই সে অঞ্চলের ভাষা শিক্ষা করে ধর্ম প্রচারে কাজ শুরু করেন।
তাই আসুন আমরা মায়ের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে, মায়ের ভাষায় সেবা করার ওয়াদাবদ্ধ হই। আল্লাহ আমাদের চেষ্টাকে সফল করে দিন, আমীন।
লেখক : মাওঃ মোঃ আবুল হোসাইন পাটওয়ারী; খতিব রাজাবাড়ী বড় জামে মসজিদ, পোস্তগোলা, ঢাকা।
Post a Comment