ইসলাম আদর্শ মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের নৈতিক দিকগুলো উন্নত করার লক্ষ্যে শিক্ষা দিয়েছেন। বিশেষত তার অনুসারীরা যাতে আত্মসংযমী হয় তিনি তেমনটি চেয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কুস্তিতে পরাক্রমশালী ব্যক্তি প্রকৃত বীর নয়; বরং ক্রোধের সময় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সেই-ই প্রকৃত বীর (বুখারী, মুসলিম, মুওয়াত্তা মুসনাদে আহ্মাদ)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেন, ক্রোধান্বিত হয়ো না। লোকটি কয়েকবার কথাটি পুনরাবৃত্তি করলে তিনি প্রতিবারই বলেন : 'ক্রোধান্বিত হয়ো না' (বুখারী থেকে মিশকাতে)।
ইসলামী গবেষকদের মতে, মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে দুর্বলতায় ভোগে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। মনে হয় এ ব্যক্তি ক্রোধের বশবর্তী হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে এই দুর্বলতা থেকে বাঁচার জন্য বারবার তাগিদ দেন।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তিনটি জিনিস ইমানী বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত : (১) ইমানদার ব্যক্তি ক্রোধান্বিত হলে সে ক্রোধ তাকে বাতিলের পঙ্কে নিক্ষেপ করতে পারে না; (২) আনন্দিত হলে সে আনন্দ তাকে সত্য পথ থেকে বিচ্যুৎ করতে পারে না এবং (৩) ক্ষমতা লাভ করলে সে ক্ষমতা বলে এমন কোনো জিনিস ভোগদখল করে না যার ওপর তার কোনো অধিকার নেই (তাবারানির আল-মুজামুস সাগীর)।
আলোচ্য হাদিসে ইমানী চরিত্র কথার অর্থ এই যে, উলি্লখিত তিনটি জিনিস ইমানের মৌলিক দাবিসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর অনুপস্থিতিতে ইমানের আসল সৌন্দর্যই অবশিষ্ট থাকে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মসংযমের পাশাপাশি অনুসারীদের প্রতিশোধ পরায়ণতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজস্ব কোনো ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু আল্লাহর হুরমাতসমূহ (আল্লাহ নির্দেশ বা নির্ধারিত সীমা) পদদলিত হতে দেখলে তিনি আল্লাহর উদ্দেশে প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন (বুখারী ও মুসলিম থেকে রিয়াদুস সালেহীন)।
মুমিনরা উদার মনের অধিকারী হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই দেখতে চেয়েছেন। নিচের হাদিসটি তারই প্রমাণ।
আবুল আহওয়াস আল-জুশামী (র.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তার পিতা বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি মনে করেন, যদি আমি কোনো ব্যক্তির কাছে যাই এবং সে আমার মেহমানদারি হক আদায় না করে এবং পরে সে যদি আমার কাছে আসে তখন কি আমি তার মেহমানদারি করব না, প্রতিশোধ নেব? তিনি বলেন : তুমি তার মেহমানদারি করবে (তিরমিযী)।
অর্থাৎ কেউ অসঙ্গত আচরণ করেছে বলে তাকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে এমনটি কাম্য নয়। এ ধরণের মনোভাব সামাজিক সংহতির ক্ষতি সাধন করে বলে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পথ থেকে আমাদের দূরে থাকতে বলেছেন।
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন; খতিব, আল ইসলাহ মসজিদ, নারায়ণগঞ্জ।
Post a Comment