السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

নামাজের উদ্দেশ্য ও মর্মকথা

| comments

সালাত আরবী শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হলো- কারো দিকে মুখ করা, অগ্রসর হওয়া, দো'য়া করা, নিকটবতর্ী হওয়া, পবিত্রতা বর্ণনা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা। তবে সালাত নামায হিসেবেই আমাদের কাছে বেশী পরিচিত। নামায ফারসী শব্দ। কোরআনের পরিভাষায় নামাযের অর্থ হলো আলস্নাহর দিকে মনোযোগ দেওয়া, তাঁর দিকে অগ্রসর হওয়া, তাঁর কাছে যাওয়া, তাঁর একেবারে নিকটবতর্ী হওয়া। এই সালাতের হুকুম দেয়া হয়েছে ইকামত শব্দের মাধ্যমে। ইসলামের ৫টি মৌল ভিত্তির মধ্যে সালাত দ্বিতীয়। একটি আয়াতে বলা হয়েছে- "এবং প্রত্যেক নামাযে নিজের দৃষ্টি ঠিক আলস্নাহর দিকে রাখ এবং আন্তরিক আনুগত্যের সাথে তাকে ডাকো।" সূরা আলাকের ১৯নং আয়াতে বলা হয়েছে_ এবং সিজদা কর ও আলস্নাহর নিকটবতর্ী হও।" রাসুল (স.) এরশাদ করেছেন- "সালাত হচ্ছে মুমিনের জন্য মিরাজস্বরূপ।" সালাতকে জান্নাতের চাবি হিসেবে উলেস্নখ করেছেন মহানবী (স.)। এটা বান্দা ও আলস্নাহর মাঝে সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার অন্যতম সেতুবন্ধন।

সালাতের মর্ম ও উদ্দেশ্যে:প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডের একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। নামাজের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে আল্লাহ কোরআন মজিদের সূরা আনআমের ১৬২নং আয়াতে ঘোষণা করেন- "নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আলস্নাহর জন্য।" সূরা যারিয়াতের ৫৬নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- "আমি জি্বন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেনি।" সূরা আনআমের ৭৯নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- "আমি নিষ্ঠার সাথে সেই মহান সার্বভৌম মালিকের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি যিনি এই আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই।" কোরআন মজিদের অন্যত্র আল্লাহ বলেন- "আমাকে স্মরণ করার জন্য নামায কায়েম করো।"

সালাতে খুশু-খুজু (বিনয় ও ধীরস্থিরতা):সূরা মুমিনুন-এর ১-২নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- "নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মুমিনরা, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়াবনত হয়।" সূরা মুমিনুন-এ আল্লাহ মুমিনদের ৭টি গুণের কথা উলেস্নখ করেছেন। তার মধ্যে প্রথম গুণ হলো- নামাযে খুশু-খুজু অবলম্বন করা। হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিমকে (স.) নামাযে এদিক-ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন- "এটা আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিমকে (স.) জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন- "তুমি এভাবে নামায আদায় করবে যেন তুমি স্বয়ং আলস্নাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর যদি তোমার পক্ষে তা সম্ভব না হয়, তবে তুমি অবশ্যই মনে করে নিবে যে, আল্লাহ তোমাকে সর্বক্ষণ দেখছেন (মুসলিম শরীফ)"। সূরা বাকারার ৪৩ ও ৪৫নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- "নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং যারা আমার সামনে অবনত হচ্ছে তাদের সাথে তোমরাও অবনত হও। সবর ও নামায সহকারে সাহায্য চাও। নিঃসন্দেহে নামায বড়ই কঠিন কাজ, কিন্তু সেসব অনুগত বান্দাদের জন্য নয় যারা মনে করে, সবশেষে মিলতে হবে তাদের রবের সাথে এবং তারই দিকে ফিরে যেতে হবে।" অর্থাৎ যে ব্যক্তি আলস্নাহর অনুগত নয় এবং আখেরাতে বিশ্বাস করে না, তার জন্য নিয়মিত নামায পড়া একটি আপদের শামিল। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে আলস্নাহর আনুগত্যের নিজেকে সোপর্দ করেছে এবং যে ব্যক্তি মৃতু্যর পর তার মহান প্রভুর সামনে হাযির হবার কথা চিন্তা করে, তার জন্য নামায ত্যাগ করাই কঠিন।

কেয়ামতে সবার আগে নামাযের হিসাব নেয়া হবে:আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন- কেয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্য থেকে যে আমলটির হিসাব সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে সেটিই হলো নামায। যদি এ হিসাবটি নিভর্ুল পাওয়া যায় তাহলে সে সফলকাম হবে ও নিজের লক্ষে পেঁৗছে যাবে। আর যদি এ হিসাবটিতে ভুল দেখা যায় তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তার ফরযগুলোর মধ্যে কোন কমতি থাকে তাহলে মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলবেন, দেখ আমার বান্দার কিছু নফলও আছে নাকি, তার সাহায্যে তার ফরযগুলোর কমতি পূরণ করে নাও। তারপর সমস্ত আমলের হিসেব এভাবেই করা হবে। ঈমাম তিরমিযী হাদিসটি রেওয়ায়াত করেছেন এবং এটিকে হাসান হাদীস বলেছেন। সূরা আল কালাম এর ৪২-৪৩নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- "যেদিন কঠিন সময় এসে পড়বে এবং সেজদা করার জন্য লোকদেরকে ডাকা হবে কিন্তু তারা সেজদা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি হবে অবনত। হীনতা ও অপমানবোধ তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। এর আগে যখন তারা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল তখন সিজদার জন্য তাদের ডাকা হলে তারা অস্বীকৃতি জানাতো।"

নিশ্চয়ই নামায মন্দ ও অশস্নীল কাজ থেকে নামাযীকে ফিরিয়ে রাখে:সূরা আনকাবুতের ৪৫নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- "তোমার প্রতি অহির মাধ্যমে যে কিতাব পাঠনো হয়েছে তা তেলাওয়াত করো এবং নামায কায়েম করো, নিশ্চয়ই নামায মন্দ ও অশস্নীল কাজ থেকে বিরত রাখে।" ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুল (স.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি নামাযের আনুগত্য করেনি তার নামাযই হয়নি আর নামাযের আনুগত্য হচ্ছে মানুষ অশস্নীল ও খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকবে (ইবনে জারীর)"। আল্লাহ এখানে বলেছেন, নিশ্চয়ই নামায, নামাযী ব্যক্তির থেকে এবং নামাযীদের সমাজ থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে অশস্নীল ও নিষিদ্ধ কাজ দূর করে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আলস্নাহতায়ালা নিশ্চয়তা দিয়েই কথাটি বলেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ নামায কায়েমের মাধ্যমে সমাজ থেকে অশস্নীল ও নিষিদ্ধ কাজগুলো বন্ধ করতে চান। এ আয়াতের মাধ্যমে আমাদের কাছে একথাটি পরিষ্কার হলো যে, নামাযের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদের ব্যক্তি ও সমাজ থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে অশস্নীল ও নিষিদ্ধ কাজ নিশ্চিতভাবে দূর করা। কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে দেখতে পাই, যত দিন যাচ্ছে আমাদের সমাজে নামাযীর সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশী গুণ বাড়ছে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে অশস্নীল ও নিষিদ্ধ কাজের সংখ্যা। যে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আল্লাহ নামায ফরয করেছেন, মুসলমানদের ব্যক্তি ও সমাজে বর্তমানে নামায সে উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হচ্ছে।

সালাতের গুরুত্ব:হযরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর সমস্ত গভর্ণরদের কাছে এই মর্মে নির্দেশ জারি করেন যে- "তোমাদের যাবতীয় দায়-দায়িত্বের মধ্যে নামাযই আমার নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।" ইসলামী জীবন বিধানে নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল বা ইবাদত প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর ওপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার আদেশ মহান আল্লাহ তার প্রিয় নবীকে আরশে আযীমে ডেকে নিয়ে সরাসরি দিয়েছিলেন কিন্তু অন্য সকল কাজের আদেশ জীব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন। পবিত্র কুরআন মজিদে ৮২ বার নামাযের কথা বলা হয়েছে। সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হয় তখন নামায শিক্ষা দেয়া এবং দশ বছর বয়সে নামায পড়তে বাধ্য করার জন্য পিতা-মাতার প্রতি নির্দেশ রয়েছে। নামায ফরয হওয়ার পর থেকে মৃতু্য পর্যন্ত তা অবশ্য পালনীয়। মহিলাদের বিশেষ অবস্থা, অজ্ঞান ও পাগল হওয়া ছাড়া নামায থেকে বিরত থাকার কোন সুযোগ নেই। অসুস্থ অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায পড়তে ব্যর্থ হলে বসে, বসে পড়তে না পারলে শুয়ে শুয়ে এবং তাও না হলে ইশারায় নামায পড়ার বিধান রয়েছে। সফরে রোজার জন্য শিথিলতা থাকলেও নামায সংক্ষিপ্তাকারে পড়ার বিধান রয়েছে। এমনকি কোন অমুসলিম যদি আসরের সময় ইসলাম কবুল করে তবে ঐ দিন আসরের নামায থেকে তার ওপর নামায ফরয হয়ে যায়।

সবাই আল্লাহর তসবীহ্ করছে:

সূরা আন নূরের ৪১নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- "তুমি কি দেখ না যে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সবাই এবং উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছে। ওদের প্রত্যেকের জানা কিভাবে আলস্নাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করতে হয়।" গাছপালা পাহাড়-পর্বতসমূহ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, চতুষ্পদ জন্তুসমূহ অবনত হয়ে অর্থাৎ রুকুর হালতে, সরিসৃপ প্রাণীসমূহ বুকের উপর ভর দিয়ে অর্থাৎ সিজদার হালতে আর ব্যাঙ, কুকুর, বিড়াল, শিয়াল প্রভৃতি প্রাণীসমূহ তাশাহুদের সূরতে আল্লাহর তাসবীহ করছে। আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মানুষ দাঁড়িয়ে, অবনত হয়ে, সিজদার হালতে ও তাশাহুদের সূরতে একমাত্র নামাযের মাধ্যমেই আলস্নাহর তাসবীহ পাঠ করতে সমর্থ হয়।

নামাযের মাধ্যমে কালেমার ওয়াদা পালনের অভ্যাস হয়:নামায এমন এক আমল যেখানে নামাযীর মন-মগজ, মুখ, হাত-পা, চোখ-কান_ সবই ব্যবহার করতে হয়। নামাযের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবসময় সর্বাবস্থায় যা কিছু করা হয় বা বলা হয়, তা সবই আল্লাহতায়ালার হুকুম ও রাসুল (সা.)-এর তরীকা মতো করতে হয়। কোনো একটা কাজও নামাযীর নিজের ইচ্ছেমতো করা চলে না। এভাবে প্রতিদিন পাঁচবার নামাযে আলস্নাহর হুকুম ও রাসুলের তরীকা মতো মন-মগজ ও শরীরের সব অঙ্গকে কাজে লাগিয়ে কালেমার ২ দফা ওয়াদা পালনের অভ্যাস হয়।

নামায আল্লাহকে ভুলতে দেয় না: আলস্নাহতায়ালা সূরা তোয়াহার ১৪নং আয়াতে বলেন: "আমাকে মনে রাখার জন্য নামায কায়েম কর।"নামায আমাদেরকে সবসময় মনে করিয়ে দেয় যে-আমরা সবসময়ই আল্লাহ যা অপছন্দ করেন তা আমরা করতে পারি না। এভাবেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায যে মসজিদে আদায় করতে অভ্যাস করে নেয়, সে আল্লাহকে ভুলে থাকতে পারে না।

-সদরুল আমীন রাশেদ
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template