তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিলস্নীর দক্ষিণাঞ্চলের এলাকা হরিয়ানা মেওয়াত অধিবাসী ধর্মকর্মহীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলমানদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেছিলেন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত আজকের তাবলীগ জামায়াতের সার্থক রূপকার হযরত মাওলানা ইলিয়াছ কান্ধলভী (রহ.)। তিনি বলেছেন-দাওয়াত ও তাবলীগের হাকিকত বা উদ্দেশ্য হল 'ঈমানের দাওয়াত। এ দাওয়াত নিজের সংশোধন তথা সমগ্র মানবজাতির মুক্তির দাওয়াত। ঈমানের এই দাওয়াতের উদ্দেশ্য হল আলস্নাহর দেয়া জীবন, সম্পদ এবং সময় আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে এর সঠিক ব্যবহার শিক্ষা করা এবং বাস্তব জীবনে এর সঠিক প্রয়োগ করার পাশাপাশি আল্লাহ ভোলা মানুষকে আলস্নাহর সঙ্গে সম্পর্ক করে দেয়ার মেহনত করা। মানবজীবনে আজ এই দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
সে জন্য আজ থেকে প্রায় ৬ দশক আগে ১৯১০ সালে ভারতের এক জনবিরল অঞ্চল মেওয়াত থেকে হাতে গোনা ক'জন মানুষ নিয়ে তিনি তাবলীগের দাওয়াতে মেহনত শুরু করেন। তাবলীগের এ মেহনত এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। হজরত ইলিয়াছ (র.) ১৩৫১ হিজরি সালে হজ্ব থেকে ফিরে আসার পর সাধারণ মুসলমানদের দুনিয়া ও সংসারের ঝামেলা থেকে মুক্ত করে ছোট ছোট দলবদ্ধ করে মসজিদের ধর্মীয় পরিবেশে অল্প সময়ের জন্য দ্বীনি শিক্ষা দিতে থাকেন। এরই মাঝে একদা তিনি হুজুর আকরামকে (স.) স্বপ্নে দেখেন এবং মহানবী (স.) তাকে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের জন্য নির্দেশ দেন। মহানবীর (স.) নির্দেশ মোতাবেক তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের সূচনা করেন। তারপর এ কাজকে আরও বেগবান ও গতিশীল করার জন্য এ উপমহাদেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও বুজর্গদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয় এবং দিলস্নীর কাছে মেওয়াতে সর্বস্তরের মুসলমানদের জন্য ইজতেমা বা সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়।
এরপরই ক্রমেই তাবলীগের কার্যক্রম বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের গন্ডি ছাড়িয়ে পেঁৗছে যায় বিশ্বের সর্বত্র। হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ (রহ.) এর মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে তাবলীগ শুরু হয়। তারপর ১৯৪৬ সলে বিশ্ব ইজতেমা সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের তাবলীগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে। পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পে ইজতেমা শুরু হয়। এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে, তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গির পাগারে এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে টঙ্গির ভবেরপাড়া তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব ইজতেমা সেই থেকে এ পর্যন্ত সেখানেই ১৬০ একর জায়গায় তাবলীগের সর্ববৃহৎ ইজতেমা বা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
উলেস্নখ্য, তাবলীগ জামায়াতের সদর দফতর দিলস্নীতে থাকা সত্বেও এর বার্ষিক সমাবেশের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়া হয়। কথিত আছে, তাবলীগ জামায়াতের মুরুবি্বদের বৈঠকে ইজতেমার স্থান নির্ধারণের জন্য নাকি লটারি হয়েছিল। সেই লটারিতে বাংলাদেশের নাম ওঠে। আর সেই থেকেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ এ বিশ্ব ইজতেমা। ভারতের মুম্বাই ও ভূপালে এবং হালে পাকিস্তানের রায় বেন্ডে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও জনসমাগমের বিচারে টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমাই বড় এবং বিশ্ব দরবারে বিশ্ব ইজতেমা বলতে বাংলাদেশের টঙ্গিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমাকেই বুঝায়। এবার দুটি ইজতেমা হবে প্রথমত: ২১, ২২, ২৩শে জানুয়ারি, দ্বিতীয়ত: ২৮, ২৯ ও ৩০শে জানুয়ারি। বিশ্ব ইজতেমা সফল হোক সেই কামনা করছি।
মাওলানা শাহ হাবিবুর রহমান
Post a Comment