দাওয়াত আরবী শব্দটি "দায়া" ধাতু হতে লওয়া হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হলো-ডাকা, আহবান করা, আমন্ত্রণ জানানো ইত্যাদি। ইংরেজীতে ঈধষষ বলা হয়। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ইহকালীন কল্যাণ ও আখিরাতের মুক্তির জন্য মানব জাতিকে ইসলামী জীবন বিধানের দিকে আহবান বা ডাকাকে 'দাওয়াত' বলা হয়।
দুনিয়াতে যে কোনো মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াতের বা আহবানের প্রয়োজন দেখা দেয়, তাই দেখা যায় মানব রচিত বিভিন্ন মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্যে লেখা, বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে মানুষকে আপন আপন মতবাদের দিকে ডেকে থাকে। উলিস্নখিত 'দাওয়াত' শব্দটি আল-কুরআনে উলেস্নখ রয়েছ, বিধায় শব্দটি আলস্নাহ্ তা'য়ালার নিজস্ব ভাষা, তাই এই 'দাওয়াত' শব্দটি আলস্নাহ্ তা'য়ালার বিধানের দিকে ডাকার জন্য ব্যবহূত হয়েছে।
যুগে যুগে মানুষ যখন আল্লাহতা'য়ালা এবং তার বিধানকে ভুলে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে তখনই আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানী করে মানব জাতির মধ্য থেকেই সঠিক পথ দেখানোর জন্য নবী বা রাসূল পাঠিয়েছেন। আর সকল নবী-রাসূলগণই তৎকালীন তাঁর 'কওম' বা জাতির কাছে প্রথমেই তার প্রকৃত মালিকের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর ওফাতের পর কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আর কোনো নবী-রাসূল আসবেন না। কিন্তু যারা তাঁর প্রকৃত অনুসারী তারাই কুরআন এবং সুন্নাহর ভিত্তিতে মানুষকে আলস্নাহ্র প্রকৃত বান্দাহ্ হওয়ার জন্য দাওয়াতের কাজটি চালিয়ে যাবেন। সুতরাং দাওয়াত বা আহবানের কাজটি কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকবে। আল-কুরআন এবং আল-হাদীসে দাওয়াতের গুরুত্ব এবং টেকনিক, দাওয়াত দানকারীর প্রতিদান এবং দাওয়াতী কাজ না করলে তার কি পরিমাণ বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। নিম্নে তা উলেস্নখ করা হলোঃ
১। তোমাদের মাঝে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা সৎকাজের প্রতি আহবান করবে, নির্দেশ দিবে ভালো কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকামী। আর তাদের মতো হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শনসমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর আযাব। (আল-ইমরান: ১০৪-১০৫)
২। তামরাই হলে সর্বোত্তম দল, মানব জাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব হয়েছে তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দিবে ও অন্যায় কাজে বাধা দিবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে- কিতাবরা যদি ঈমান আনতো,তাহলে তা তাদের জন্য ভালো হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী (আল-ইমরান: ১১০)
৩। [হে মুহাম্মাদ (স.) দাওয়াতী কাজে] যদি তাদের বিমুখতা আপনার কাছে সহ্য করা কঠিন হয়, তাহলে আপনি জমিনে কোনো সুড়ঙ্গ তালাশ করুন, অথবা আকাশে সিঁড়ি লাগিয়ে নিন এবং তাদের সামনে কোনো মোজেজা আনতে পারেন, তবে নিয়ে আসুন আল্লাহ যদি চাইতেন তবে সবাইকে তিনি একত্রিত করে হেদায়েত করতে পারতেন। অতএব, আপনি নির্বোধদের অন্তভর্ুক্ত হবেন না। আসলে সত্যের দাওয়াতে পেয়ে তারাই সাড়া দেয়, যারা শ্রবণ করে। আর যারা মুর্দা, তাদেরকেও আল্লাহ কবর থেকে যিন্দা করে উঠাবেন। অতঃপর (আল্লাহর নিকট বিচারের জন্য) তাদেরকে তারই নিকট ফিরিয়ে আনা হবে। (আল-আনয়াম- ৩৫-৩৬)
৪। যখন আপনি তাদেরকে দেখেন, আমার নিদর্শন সম্বন্ধে নিরর্থক আলোচনায় রপ্ত হয়, তখন আপনি তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যান যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসংগে মগ্ন হয়। যদি শয়তান আপনাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পরে জালেমদের সাথে বসবেন না (উঠে যাবেন)। (আল-আনয়াম- ৬৮)
৫। হে রাসূল! পেঁৗছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে তো আপনি তাঁর পয়গাম (বার্তা) কিছুই পেঁৗছালেন না। আলস্নাহ্ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আলস্নাহ্ কাফিরদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (আর-মায়িদাহ্- ৬৭)
৬। (আল্লাহ বলেনঃ) নিশ্চয় আমি নূহকে তাঁর জাতির কাছে পাঠিয়েছি। তিনি বললেন: হে আমার জাতির লোকেরা! তোমরা আলস্নাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো ইলাহ্ নেই। আমি তোমাদের জন্যে একটি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করছি। (আল-আ'রাফ-৫৯)
৭। আদ জাতির কাছে পাঠিয়েছি তাদের ভাই হুদকে। তিনি বললেন: হে আমার জাতির লোকেরা। তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো ইলাহ্ নেই। (আল-আ'রাফ- ৬৫)
হোসাইন আল খালদুন
Post a Comment