السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

রসূল (স.)-এর সন্তানগণ

| comments

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কয়জন সন্তান ছিলেন এবং বিবি খাদিজার (রা.) কোলে কতজন সন্তান আগমন করেছিলেন এ নিয়ে মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। কেউ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সন্তান সংখ্যা ছয় জন। তন্মধ্যে দুইজন পুত্র ও চারজন কন্যা। পুত্রগণ ছিলেন ইব্রাহীম ও কাশেম। কন্যাগণ ছিলেন: জয়নাব, উম্মে কুলসুম, রুকাইয়া ও ফাতেমা। কিন্তু ইবনে ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহর তাহের এবং তাইয়্যেব নামক আরো দুইজন পুত্র সন্তান জন্মলাভ করেছিল। ফলে পুত্রসংখ্যা হলো ৪ এবং কন্যার সংখ্যা ৪। সর্বমোট সন্তান সংখ্যা ৮। আবার কেউ কেউ বলেন, রাসূলুল্লাহর পুত্র সন্তান ছিল চারজন এবং কন্যা সন্তান ছিল আটজন। এতে করে সন্তান সংখ্যা দাঁড়ায় ১২। তবে সকল ঐতিহাসিক এ বিষয়ে একমত যে, বিবি খাদিজার গর্ভের একপুত্র কাশেম এবং চার কন্যা জয়নাব, উম্মে কুলসুম, রুকাইয়া ও ফাতেমার জন্ম হয়। অপর এক বর্ণনায় দেখা যায় যে, বিবি খাদিজার গর্ভে আরো একজন পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করেছিল তার নাম ছিল আবদুল্লাহ। সুতরাং আমরা সবকটি বর্ণনার সূত্র ধরে পর্যায়ক্রমে বিবি খাদিজার গর্ভজাত সন্তানদের ইতিহাস সংক্ষিপ্তভাবে বিবৃত করতে প্রয়াস পাব।

হযরত কাশেম

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সন্তানগণের মাঝে তিনিই সর্বপ্রথম জন্মগ্রহণ করেন। হযরত খাদিজা ও রাসূলুল্লাহর বিয়ের তিন বছরের মধ্যে এবং নবুয়তের ১২ বছর পূর্বে হযরত কাশেমের জন্ম হয়। তার ডাক নাম ছিল তাহের। এই কাশেমের পিতা ছিলেন বলে বিশ্বনবীকে 'আবুল কাশেম' অর্থাৎ কাশেমের পিতা বলে সম্বোধন করা হতো। আর নবী করীম (সা.)ও এই নাম খুবই পছন্দ করতেন। সাহাবীগণ যখন নাম ধরে ডাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন, তখন রাসূলুলস্নাহ (সা.)কে আবুল কাশেম নামেই ডাকতেন। একদিন বিশ্বনবী কোন এক বাজারে শুনতে পেলেন- কে যেন আবুল কাশেম নাম ধরে ডাকছে। নবী পাক (সা.) ফিরে দাঁড়ালেন এবং লোকটির দিকে জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকালেন। ফলে লোকটি লজ্জিত হয়ে নিবেদন করল, আমি আপনাকে ডাকেনি। এই নামের অন্য লোককে ডেকেছি। এরপর হতে অন্যদের পক্ষে এই ডাক নাম ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

হযরত কাশেমের বয়স সম্পর্কেও অনেক মতভেদ দেখা যায়। (১) কাশেম যখন একটু হাঁটতে পারেন অর্থাৎ দেড় থেকে দুই বছর বয়সের, তখন তাঁর মৃতু্য হয়। (২) মুজাহিদ বলেন- তিনি মাত্র ৭ দিন জীবিত ছিলেন। (৩) ইবনে সা'আদের মতে, তিনি দু'বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। (৪) ইবনে হারেছ লিখেছেন- হযরত কাশেম জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার মতো বয়স পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।

হযরত জয়নাব (রা.)

জীবনচরিত লেখকগণের সর্বসম্মত অভিমত এই যে, কন্যাদের মধ্যে হযরত জয়নাবই ছিলেন সকলের বড়। রাসূলুল্লাহ(সা.) এর বিয়ের ৫ বছর পরে এবং নবুয়তের দশ বছর পূর্বে হযরত জয়নাব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যুবাইর বিন বাকার বলেন, হযরত জয়নাব হযরত কাশেমেরও আগে জন্মগ্রহণ করেন। এই বর্ণনা মতে, তিনিই ছিলেন রাসূলুল্লাহ(সা.) এর প্রথম সন্তান। ঐতিহাসিক হিট্টির অভিমতও তাই।

নবুয়ত প্রাপ্তির দশ বছর পূর্বে এবং বিশ্বনবীর তিরিশ বছর বয়সে জয়নাব জন্মগ্রহণ করেন। অতি অল্প বয়সেই জয়নাবের বিয়ে হয়েছিল তার খালাত ভাই আবুল আস ইবনে রবির সাথে। হিজরতের সময় বিশ্বনবী স্বীয় পরিবার-পরিজনদেরকে মক্কাতেই রেখে যান। কিন্তু বদর যুদ্ধে আবুল আস বন্দী হয়ে মদীনায় নীত হয়। তার মুক্তি প্রদানের সময় এই অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছিল যে, সে মক্কা প্রত্যাবর্তন করে জয়নাবকে মদীনায় পাঠিয়ে দেবে। অঙ্গীকার মতো আবুল আস মক্কায় প্রত্যাবর্তন করে ভাই কেনানার সাথে হযরত জয়নাবকে মদীনায় রওয়ানা করে দিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে 'তোয়া' নামক স্থানে মক্কার কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারী তাদের পথ রোধ করে দাঁড়াল এবং হেবার বিন আসওয়াদ বর্শা নিক্ষেপ করে হযরত জয়নাবকে উটের পিঠ হতে মাটিতে ফেলে দিল। জয়নাব ছিলেন গর্ভবতী। তিনি এই আঘাত সহ্য করতে পারলেন না। ফলে তার গর্ভপাত হয়ে গেল। কেন না এই অভাবনীয় ঘটনায় হতচকিত হয়ে পড়ল। মুহূর্তেই সে তীর-ধনুক নিয়ে গর্জে উঠল। হুঁশিয়ার! আর যদি কেউ এদিকে এক কদম অগ্রসর হও তাহলে এই বিষাক্ত তীর তোমাদের বক্ষ ভেদ করে চলে যাবে। দুর্বৃত্ত কমজাত! কাউকে আমি রেহাই দেব না।

এমন সময় পেছন দিক হতে আবু সুফিয়ান এসে সেখানে উপস্থিত হলো। কেনানার সামনে গিয়ে বলল, কেনানা! এত উত্তেজিত হয়ো না। শান্ত হও। আমার কিছু কথা মনোযোগ দিয়ে শোন। তুমি তো অবশ্যই জান, মুহাম্মদ (সা:) এর প্রচারণার ফলে সারা দুনিয়ায় কি এক বিষাক্ত বাতাস ছোবল হানছে? আমরা কত শান্তিতে ছিলাম, কত সুখে ছিলাম, কত আনন্দে ছিলাম কিন্তু মুহাম্মদ (সা:) এখন আমাদের সকল সুখ, সকল শান্তি হরণ করে নিয়ে গেছে। তার জন্য তোমার মনে কি কিছুই উদয় হয় না?

কেন না! তুমি মুহাম্মদের কন্যাকে নিয়ে মদীনায় তাঁরই নিকট পেঁৗছে দিতে যাচ্ছ। ভালো কথা যাও, কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছ যে, এ কাজটি ন্যায় হচ্ছে কিনা? এভাবে মুহাম্মদের (সা:) শক্তিকেই আরো সুদৃঢ় করা হচ্ছে একথা তোমার মতো বুদ্ধিমান যুবককে খুলে বলার দরকার হয় না। জয়নাবকে আটকে রাখা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, তবে তুমি আজকে ফিরে যাও। তোমার উত্তেজনা প্রশমিত হলে ধীরে-সুস্থে তাকে মদীনায় পেঁৗছে দিও।

কেন না আবু সুফিয়ানের যুক্তির কাছে হেরে গেল এবং সেদিনের মতো মদীনায় যাত্রা বন্ধ করে প্রত্যাবর্তন করল। এর কয়েকদিন পর রাতের অন্ধকারে জয়নাবকে নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। অপরদিকে বিশ্বনবী (সা:) আদরের দুলালী জয়নাবকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যায়েদ বিন হারেছাকে মক্কা অভিমুখে পাঠিয়েছিলেন। পথিমধ্যে যায়েদের সঙ্গে কেনানার দেখা হয়। কেনানা জয়নাবকে যায়েদের নিকট তুলে দিয়ে মক্কায় প্রত্যাবর্তন করল। এভাবে জয়নাব বিশ্বনবীর নিকট পেঁৗছে গেলেন।

হযরত জয়নাবের স্বামী আবুল আস বিন রবী ছিল মুশরিক। কিন্তু জয়নাব ছিলেন ঈমানদার। তাই আবুল আসকে ছেড়ে আসতে জয়নাব বাধ্য হয়েছিলেন। অপর এক যুদ্ধে আবুল আস বন্দি হয়ে দ্বিতীয়বার মদীনায় নীত হয়। এবারও জয়নাব তাকে মুক্তি লাভের যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিলেন। ফলে তাঁর মনের পরিবর্তন ঘটল। তিনি মক্কা গমন করে যাবতীয় লেনদেন শোধ করলেন এবং সকল আমানত হকদারদের নিকট বুঝিয়ে দিলেন এবং ইসলাম কবুল করে মদীনায় চলে আসলেন।

আবুল আস মুশরিক হওয়ার দরুন জয়নাবের সাথে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়েছিল। কিন্তু এবার সে ইসলাম কবুল করাতে তাঁর এবং জয়নাবের নতুন করে বিবাহ পড়ানো হলো।

-আবদুলস্নাহ আল বাকী
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template