ফিতরাত তথা স্বভাব ধর্ম ইসলাম মানব জীবনের জন্য উপযোগী আদর্শ পেশ করেছে। এই জীবনাদর্শ যেমনি পরিপূর্ণ তেমনি এর মানবাধিকারের ধারণা ব্যাপক ও পরিপূর্ণ। মূলতঃ ইসলামে মানবাধিকার জীবনের সকল দিক ও বিভাগে সমভাবে ব্যাপৃত।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবামূলক মৌলিক চাহিদাকেও ইসলাম মানবাধিকারে অন্তভর্ুক্ত করেছে। জীবন রক্ষার পাশাপাশি ব্যক্তির ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক তথা সকল ক্ষেত্রে উপরোক্ত মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও পিতা-মাতা, পুত্র, কন্যা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, প্রতিবেশী, শ্রমিক, মজুর ইত্যাদি এক্ষেত্রেও বিভিন্ন অধিকার বর্ণনা করেছে, সেসব মূলত: ইসলামী শরীয়তেরই অংশস্বরূপ।
সার্বজনীন মানবাধিকারের মাইলফলক মহানবীর (স.) বিদায় হজ্বের ভাষণে স্পষ্ট। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, "হে মানবগণ নিশ্চয় তোমাদের প্রভু এক, তোমাদের পিতা হযরত আদম (আ.) এক। সাবধান! অনারবের ওপর 'আরবের' কিংবা 'আরবের' ওপর অনারবের, কালো মানুষের ওপর সাদা/লাল কিংবা সাদা/ লাল মানুষের ওপর কালো মানুষের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নাই।" মূলত ইসলাম সবার জন্য সমান অধিকারের কথা বলেছে।
ইসলাম প্রদত্ত বিভিন্ন মানবাধিকার:
ইসলাম জীবনের নিরাপত্তার বিধান দিয়েছে। ইসলাম মানব জীবনকে একান্তই সম্মানের বস্তু হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং একটি মানুষের জীবন সংহারকে সমগ্র মানব গোষ্ঠীর হত্যার সমতুল্য সাব্যস্ত করে জীবনের নিরাপত্তার গুরুত্বের প্রতি জোর দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-"নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতিরেকে কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে হত্যা করল, আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানব গোষ্ঠীর প্রাণ রক্ষা করলো।" (সূরা মায়িদা:৩২)। অন্যত্র বলা হয়েছে- আলস্নাহ যে প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না। (সূরা বনী ইসরাঈল :৩৩)
ইসলাম অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের উৎসাহ দেয় এবং বৈধ উপায়ে উপার্জিত সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করে। বৈধ উপার্জনের অধিকার, তার মালিকানা রক্ষা, হস্তান্তর, দান এবং তা ভোগ করার অধিকার ইসলাম দিয়েছে। অন্যায়ভাবে তা রোধ ও তসরুফ করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঘোষণা এসেছে 'তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। (সূরা বাকারা-১৮৮)
রাসূল (সা.) তার বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন-"তোমাদের রক্ত (জান), তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের ইয্যত-সম্মান তোমাদের উপর পবিত্র যেমন পবিত্র তোমাদের আজকের এই দিন, তোমাদের এই শহর ও তোমাদের এই মাস।" (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ:৬৩২)
মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম
Post a Comment