السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

আশুরা দিবস

| comments

বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মাদ (সা.) অসংখ্য সংস্কারমূলক, গঠনমূলক ও বৈপিস্নবিক আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামী খিলাফতের সূচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে হযরত আবু বকর (রা.) ইসলামের প্রথম খলিফা নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন একজন বিচক্ষণ, চেতনাশীল, কুশলী, অভিজ্ঞ, চিন্তাশীল এবং সাহসী রাষ্ট্রনায়ক। তাঁর খিলাফতের সূচনালগ্নে মুসলমানগণ চারদিকে থেকে শত্রুবেষ্ঠিত ছিল। বিধায় শত্রুমুক্ত করতে যেয়ে বিভিন্ন যুদ্ধাভিযান অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। এদের মধ্যে ভন্ড নবী ও যাকাত অস্বীকারকারীদের দমন ছিল উলেস্নখযোগ্য ঘটনা। হযরত আবু বকর (রা.) সময়ে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমারেখা ইরাক, ইরান এমনকি শাম পর্যন্ত সমপ্রসারিত হয়েছিল। হযরত 'উমার (রা.) এর সময় ইসলামী খিলাফত আরো বিস্তৃত হয়। তিনি ছিলেন ইসলামের রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা। শাসনকাজের সুবিদার জন্য তিনি সাম্রাজ্যকে প্রদেশ, জেলা ও পরাগণায় বিভক্ত করেছিলেন। হযরত 'উছমান (রা.) ৭০ বছর বয়সে ইসলামী খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ইসলামের জন্য তাঁর যথেষ্ট আর্থিক ত্যাগ ছিল। তাঁর আমলে বিদ্রোহের সূত্রপাত হলেও তিনি শক্ত হাতে তা দমন করেছিলেন। হযরত 'উছমান (রা.) এর সাহসী ভূমিকার জন্য আলজারিয়া, মরক্কো, সাইপ্রাস, তাবারিস্তান খুরাসান বিজয় সম্ভব হয়েছিল।

অবশেষে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হন হযরত 'আলী (রা.)। এক কঠিন পরিবেশে হযরত 'আলী (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চতর্ুদিকে একটা অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করেছিল। হযরত 'আলী (রা.) সবশ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন। কিন্তু বাস্তবে সেই শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাঁর খিলাফতের সময় গৃহযুদ্ধ হয়েছিল বারবার। হযরত 'উছমান (রা.) এর হত্যার কারণে দলীয় বিদ্বেষ ও ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টিতে এ ঘটনা ঘটেছিল। ফলে উষ্ট্রের যুদ্ধ, সিফফিনের যুদ্ধ ও নাহরাওয়ানের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ যা ইসলামের ঐক্য ও সংহতি ক্ষুন্ন করে। ইতিহাসের পাতায় এসব কলংজনক ঘটনা।

হযরত 'আলী (রা.) এর শাহাদাতের মাধ্যমে ইসলামী খিলাফতের পরিসমাপ্তি ঘটে। (আমার খিলাফত ব্যবস্থা ত্রিশ বছর থাকবে) এ হাদীসটির মর্মবাণী অনুসারে ত্রিশবছর পূর্ণ হয় ৪১ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসের ৯ তারিখে। পরবর্তীতে ইমাম হাসান (রা.) পঞ্চম খলীফা হিসেবে ৪০ হিজরীর ২২ শে রমযান থেকে ৪১ হিজরীর ৯ই রবিউল আউয়াল পর্যন্ত খলীফা হিসেবে বহাল ছিলেন। ইসলামী খিলাফতের শেষ সূর্য স্তমিত করার জন্য নানা কৌশল নিয়ে তারা এগুতে থাকে। হযরত মুয়াবিয়া (রা.) বসরার শাসনকর্তা মুগিরার প্ররোচনায় স্বীয় পুত্র ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। তিনি ছিলেন একাধারে নিষ্ঠুর ও বিশ্বাসঘাতক। তাঁর সহচরগণ যেমন নিচ ও পাপাশক্ত ছিল, তার আমোদ-প্রমোদও তেমনি জঘন্য ছিল। এ ধরণের দুশ্চরিত্রবান পুত্রকে উত্তরাধিকার মনোনিত করায় ইমাম হুসাইন (রা.) এর সাথে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। হযরত হুসাইন (রা.) এজিদকে কিছুতেই খলীফা হিসেবে মেনে নিতে পারলেন না। কুফার অধিবাসীগণ পাপাসক্ত এজিদের প্রতি ঘৃণার ভাব পোষণ করে এজিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, হযরত হুসাইন (রা)-কে যথাসাধ্য সহায়তা ও সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দিলেন। হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) পরিবারসহ সদলবলে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। দুরাচার এজিদের সৈন্যগণ পথিমধ্যে কারবালা নামক প্রান্তরে হযরত হুসাইন (রা.) ও তাঁর দলের অগ্রগতি প্রতিরোধ করলো। হযরত হুসাইন (রা)-এর সৈন্যের সংখ্যা খুবই অল্প ছিল।

এদিকে কুফাবাসীগণ এজিদের সৈন্যদের ভয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুতির বরখেলাফ করলো। এজিদের সেনাপতি হুসাইনের নিকট প্রস্তাব পাঠালো যাতে হুসাইন এজিদের বশ্যতা স্বীকার করে। কিন্তু ধর্মবীর হুসাইন (রা.) এই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন। অবস্থা শোচনীয়, এই কথা ভেবে হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) সম্মুখে এগুলেন, ফোরাত নদীর কাছে থামলেন এবং নিজেদের তাঁবু ফেললেন। হযরত হুসাইন (রা.) যাতে পানি সংগ্রহ করতে না পারেন সে জন্য নদীর তীর এজিদ সৈন্য দ্বারা ঘিরে রাখলো।

যখন হযরত ইমাম হুসাইন (রা.)-এর অনুসারীদের মধ্যে শিশু-কিশোর ও মহিলাদের পানির তৃষ্ণা পেল, তাঁরা শত্রুদের নিকট অনেক অনুনয়-বিনয় করে পানি চাইলো, কিন্তু তাদের মধ্যে একটু দয়া দেখা গেল না। তারা ছিল নিষ্ঠুর ও পাষণ্ড। এদিকে তাঁবুতে যতটুকু পানি ছিল সেইটুকুও অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফোরাত নদীর পানি ছাড়া বালুকাময় মরুভূমিতে অন্য কোথাও পানি ছিল না। হুসাইনের অনুসারীরা পানির অভাবে আর্তনাদ শুরু করলো। সেই আর্তনাদে কার না হূদয় কম্পিত হয়। কিন্তু হায়, এজিদ বাহিনীর হূদয়ে সামান্য পরিমাণ দয়াও হলো না।

পানির অভাবে একে একে ইমাম হুসাইনের আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সকল সদস্য ও তাঁর অনুসারীরা মৃতু্যবরণ করতে লাগলেন। ইমাম হুসাইন (রা.) ভাবলেন, অধার্মিকের কাছে আত্মসমর্পণ করার চেয়ে শাহাদাত বরণ করা অনেক শ্রেয়; তাই সম্মুখপানে ধাবিত হলেন। বীরের মত যুদ্ধ করতে লাগলেন। কিন্তু হায়! শত্রুপক্ষের সৈন্যরা অনেক, তাই তাদের প্রবল আঘাতে তাঁর অনুসারীবর্গ, আত্মীয়-স্বজন একে একে সকলেই প্রাণ বিসর্জন দিলেন। তখন ইমাম হুসাইন (রা.) একাই তলোয়ার হাতে এজিদের সৈন্যবাহিনীর মোকাবিলা করেন। তাঁর বীরত্বপূর্ণ তলোয়ার পরিচালনায় এজিদের অনেক সৈন্য নিহত হয়। বাকি সব সৈন্য পালিয়ে যায়। ফোরাত নদীকুল শত্রুমুক্ত হয়। তখন তিনি পানি পান করার জন্য নদী তীরে আসেন। দুই হাতে পানি উঠান পান করার জন্য। ঠিক তখনই তাঁর স্মৃতিপটে ভেষে উঠলো সেসব আত্মীয় স্বজনের মুখ, যাঁরা পানির অভাবে মারা গেছেন। তিনি পানি পান না করে ফেলে দিয়ে চলে এলেন এবং কারবালার প্রান্তরে এসে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে রইলেন। আর তখনই শত্রুসৈন্যরা ফিরে এসে তাঁকে তীরবিদ্ধ করল, তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। পরে সীমার এসে তাঁর শিরচ্ছেদ করে। এভাবে মুহাররম মাসের এই দশ তারিখে তিনি শাহাদাত বরণ করেছিলেন। এর মাধ্যমে ইসলামী খিলাফতের শেষ সূর্য চিরদিনের মত স্তমিত হয়ে যায়।

-ড.মুহা বিলাল হুসাইন
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template