কুরবানী অর্থ ত্যাগ। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ স্বীকার করাই হলো কুরবানী। আমরা মনে করি পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে গরু, ছাগল, উট, দুম্বা ইত্যাদি পশু কুরবানী করার ভেতরই কুরবানীর কর্তব্য শেষ হয়ে গেল। আসলে কুরবানী অর্থ হচ্ছে নিজেকে মৃতু্য পর্যন্ত আল্লাহর মর্জির কাছে বিলিয়ে দেয়া। যেখানে নিজের যথেচ্ছারিতার কোন মূল্য থাকবে না। নফসের খেয়াল-খুশীকে বিসর্জন দিতে হবে। পবিত্র হাদীসে এসেছে পৃথিবীতে যত উপাস্য আছে তার মধ্যে খেয়াল-খুশীর উপাস্যকে সবচেয়ে অপছন্দ করেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুরা সাফ-এ ১০নং আয়াতে বলেছেন, তোমরা জানমাল দিয়ে সংগ্রাম করো। এটাই উত্তম ব্যবসা। যে ব্যবসার পুঁজি হলো আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ঈমান আনা এবং জান ও মালকে আলস্নাহর পছন্দনীয় পথে খরচ করা। এই আয়াতে আল্লাহ মহান মানুষের খেয়াল-খুশীর উপাস্যকে কুরবানী করে মানুষের মূল দায়িত্ব পালন করার পদ্ধতিটিই শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে এসেছে আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন মানুষ সৃষ্টির প্রাক্কালে বলেছিলেন ইন্নাী জায়েলুন ফিল আরদি খালীফা। খালীফা অর্থ প্রতিনিধি। যেই প্রতিনিধি আলস্নাহর দেয়া জীবন বিধান মত নিজে চলবে, পরিবারকে চালাবে। সমাজ চলবে সেই বিধান মতে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ইসলামকে আমরা আজ অনুষ্ঠানসর্বস্ব করে ফেলেছি। কিছু অনুষ্ঠান করাটাকে আজ আমরা মুসলমানদের দায়িত্ব বলে মনে করে থাকি। কুরআন, হাদীসের জ্ঞান অর্জন করে আমাদের সঠিক দায়িত্ব-কর্তব্য জেনে নিজেদের যদি আলস্নাহর রাহে কুরবানী করতাম তবে আজ সমাজের এমন ভয়াবহ অবস্থা হতো না।
যেখানে সেখানে খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস, হত্যা ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যদি নিজেদের মনগড়া আইনকে কুরবানী করে আল্লাহর দেয়া বিধানমত বিচার ফয়সালা করতাম তবে হুজুর পাক (সা.) মাত্র তেইশ বৎসরে যে সোনার মদীনা গড়েছিলেন আমরাও তেমনি দেশ গড়তে পারতাম। সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫, ৪৭নং আয়াতে আল্লাহু রাব্বুল আলামিন বলেছেন, যারা আল্লাহর দেয়া বিধান মত বিচার ফয়সালা করে না তারা অবিশ্বাসী তারা জালিম তারা ফাসিক। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ আরও বলেছেন, ইসলামই হলো আল্লাহর মনোনীত দ্বীন। দ্বীন অর্থ হচ্ছে জীবনবিধান। আর এই জীবন বিধান পালন করার গাইড বই হচ্ছে আল-কুরআন। কুরআনের ব্যাখ্যাই হচ্ছে হাদীস। যারা পবিত্র কুরআন ও হাদীস অনুসারে চলবে তারাই হচ্ছে মুসলিম। মুসলিম শব্দের অর্থ আলস্নাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী।
যে মুসলমান ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে আল্লাহর রাহে নিজের পশুত্বকে কুরবান করবে সেই কামিয়াবী এবং তার জন্য পরকালের অনন্ত জীবনে রয়েছে বেহেশত।
মনোয়ার জাহান আছমা
Post a Comment