বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি মহান আলস্নাহপাক নির্দেশ দিলেন-'আর মানুষের কাছে হজ্ব ঘোষণা করে দাও। ওরা তোমাদের কাছে আসবে পায়ে হেঁটে ও ধাবমান উটের পিঠে চড়ে, আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে, যাতে ওরা ওদের কল্যাণ লাভ করেঃ।' মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে সাড়া দিয়ে মুহাম্মদ (সা.) হজ্বের ঘোষণা দিলেন। বিশ্ব মুসলমানদের জীবন বিধানে সংযোজিত হলো আরও একটি নতুন অধ্যায়।
মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশিত জীবন বিধানের প্রতিটি দিকই যেমন কল্যাণকর তেমনি হজ্বও মহাতাৎপর্যময় একটি আবশ্যিক ইবাদত। তবে এটি কেবল সামর্থ্যবানদের জন্যই আবশ্যিক ইবাদত অর্থাৎ মক্কার কাবা শরীফে গিয়ে হজ্ব পালন করার মত যার শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে তার জন্যই জীবনে একবার হজ্ব করা ফরজ। এতে যেমন রয়েছে আধ্যাত্মিক উন্নতির সোপান, তেমনি রয়েছে বহুমুখী পার্থিব কল্যাণ।
হজ্ব অর্থ ইচ্ছা, সংকল্প। এ ইচ্ছার বহি:প্রকাশ ঘটে প্রবল আকর্ষণের মধ্য দিয়ে। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সে আকর্ষণ হজ্বের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। প্রতি বছর হজ্ব মৌসুম আসে। অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে কাবার প্রান্তর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও বর্ণের ধর্মানুরাগী মুসলমানের মহাসমাগম ঘটে এবং সকলের মুখেই ধ্বনিত হয়-'লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক।' ইয়া আল্লাহ আমি হাজির, আমি হাজির। কিন্তু কেউ জানে না কার হজ্ব কবুল হয়। আলস্নাহ কার হাজিরা শুনতে পান, তা তিনিই ভাল জানেন। জানি না আমাদের এ উপস্থিতিতে তিনি খুশি হয়েছেন কি-না। কারণ নিখুঁত, খাঁটি প্রেমের যে বড়ই অভাব। আমাদের হজ্ব যেন ধীরে ধীরে মেকি হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (সা.) যে হজ্বের কথা বলেছেন আমাদের হজ্ব তা থেকে অনেকটাই বদলে যাচ্ছে। শুধু আনুষ্ঠানিকতা, প্রাচুর্য ঘিরে ফেলেছে হজ্বের পবিত্রতাকে। হজ্বের অন্যতম শর্ত হচ্ছে হালাল উপার্জন দ্বারা হজ্ব পালন। সেই হালাল উপার্জন যেন অনেকাংশেই হারিয়ে যাচ্ছে। হজ্ব নিয়ে বাণিজ্যের প্রসার হজ্বের মাহাত্ম্যকে কুয়াশাচ্ছন্ন করে তুলছে। তাকওয়া, ত্যাগ ও নবীপ্রেম দিয়ে পুষ্ট করে তুলতে হবে হজ্বকে। তা না হলে কি হবে এই শ্রম দিয়ে। বৃথাই হবে এতসব আয়োজন। লোক দেখানো, হজ্বের সংখ্যা বাড়ানো অথবা নিছক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যে হজ্ব তা প্রকৃত হজ্ব নয়-হজ্বের খোলসমাত্র। এটি অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। সমাজে নিজেকে 'আলহাজ্ব' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা অথবা সমাজে আগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সম্মান পাওয়ার অভিপ্রায়ে যদি হজ্বকে ব্যবহার করা হয়, তা হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু হজ্বের আসল প্রাপ্তি থেকে সে হবে বঞ্চিত। কে কার চেয়ে অধিকসংখ্যক হজ্ব করল এ নিয়ে প্রতিযোগিতা নয় বরং কত গভীরভাবে হজ্বকে গ্রহণ করা হলো তারও গভীরতা থাকতে হবে।
মানুষের দুনিয়ার লোভ-লালসা, অহংকার, জৈবিক মোহ সবকিছুকেই পেছনে ফেলে এক টুকরো সাদা কাফনের কাপড় পরে হজ্ব পালনের অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ আমি হাজির হয়েছি, পৃথিবীর সব মোহ ত্যাগ করে একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি ও সানি্নধ্য পাওয়ার আশায়।
হাবিবুর রহমান সরকার
Post a Comment