السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

কুরবানি :আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি বড় মাধ্যম

| comments

কুরবানি অর্থ ত্যাগ স্বীকার করা, উৎসর্গ করা ইত্যাদি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও তার ইবাদাতের জন্য পশু জবেহ করাকে কুরবানি বলা হয়। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মতে কুরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার নাবীকে কুরবানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন- 'আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সলাত আদায় করুন ও কুরবানি করুন।' (সূরা কাওসার : ২)

এ আয়াতে ঈদের সলাত আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ও কুরবানির পশু জবেহ করতে আদেশ করা হয়েছে। তাই রাসূলুল্লাহ (স.) সারা জীবন কুরবানির ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। হাদীসে এসেছে- সাহাবি ইবনে ওমর (রা,) বলেছেন, নাবী কারীম সলস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম দশ বছর মদিনাতে ছিলেন, প্রতি বছর কুরবানি করেছেন। (আহমদ ও তিরমিজি, আহমদ শাকের হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

আল্লাহর নাবী ইব্রাহীম (আ.) স্বীয় পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কুরবানি করার পরীক্ষা থেকে বর্তমান পদ্ধতির কুরবানির সূচনা হয়েছে।

'বল, আমার সলাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি আর আমিই প্রথম মুসলিম।' (সূরা আনআম ঃ ১৬২-১৬৩)

হাদীসে এসেছে বারা ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, যে ঈদের সলাতের পর কুরবানির পশু জবেহ করল তার কুরবানি পরিপূর্ণ হল ও সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল। (বুখারী- ৫৫৪৫, মুসলিম-১৯৬১)

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুলস্নাহ (সা.) নিজ হাতে দুটি সাদা কালো বর্ণের দুম্বা কুরবানি করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলেছেন। (বুখারী-৫৫৬৫, মুসলিম-১৯৬৬) তবে বুখারীতে 'সাদা-কালো' শব্দের পূর্বে 'শিংওয়ালা' কথাটি উল্লেখ আছে।

কুরবানি দাতা নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মদ (স:) এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।

পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কুরবানি দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আল্লাহর নিকট পেঁৗছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পেঁৗছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে।' (সূরা হজ্ব : ৩৭)

পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কুরবানির গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কুরবানি না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কুরবানি আদায় হবে না।

এমন পশু দ্বারা কুরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এ গুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় 'বাহীমাতুল আনআম।' যেমন ইরশাদ হয়েছে, 'আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর যেন তারা আলস্নাহর নাম উচ্চারণ করে।' (সূরা হজ্ব : ৩৪) হাদীসে এসেছে, 'তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কুরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কুরবানি করতে পার।' (মুসলিম- ১৯৬৩) আর আল্লাহর রাসূল (স:) উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোন জন্তু কুরবানি করেননি ও কুরবানি করতে বলেননি। তাই কুরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে। ইমাম মালিক (রহ).-এর মতে কুরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে কারীম (সা.) এ ধরনের দুম্বা কুরবানি করেছেন বলে বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে এসেছে। উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কুরবানি দেয়া যায়। যেমন হাদীসে এসেছে, 'আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলু(স:) -এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানি দিয়েছি।' (ইবনে মাজা- ৩১৩২, হাদীসটি সহীহ )

গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল কুরবানির পশু হূষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া।

শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের।

কুরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদীসে এসেছে, সাহাবি আল-বারা ইবনে আযেব রাদি আল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স:) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানি জায়েয হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না- অন্ধ ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত ; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু ; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত ; যার কোন অংগ ভেংগে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায় 'আহত' শব্দের স্থলে 'পাগল' উল্লেখ আছে। (তিরমিজি-১৫৪৬, নাসায়ি- ৪৩৭১, হাদীসটি সহীহ )

আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কুরবানি আদায় হয় কিন্তু মাকরূহ হবে। এ সকল দোষত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানি না করা ভাল। সে ত্রুটিগুলো হল শিং ভাংগা, কান কাটা, লেজ কাটা ইত্যাদি।

যে পশুটি কুরবানি করা হবে তার উপর কুরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কুরবানি আদায় হবে না।

**মনির হোসেন হেলালী**
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template