السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

হজ্বপূর্ব দিনগুলির মাহাত্ম্য

| comments

চান্দ্র বৎসরের দ্বাদশ বা শেষ মাসের নাম জিলহজ্ব। কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এই মাসের প্রথম দশ দিনের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য খুব বেশী। রমজান মাসের শেষ দশ রাত যেমন অতীব গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যপূর্ণ তেমনি জিলহজ্বের প্রথম দশদিন খুবই ফজিলতে পূর্ণ । বরং কারো কারো মতে রমজানের শেষ দশকের চেয়ে জিলহজ্বের প্রথম দশকের দাম অনেক বেশি। অধিকাংশ জনগণ জিলহজ্বের প্রথম দশকের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের খবর জানে না। ফলে তারা ঐ দিনগুলোকে হেলায় ফেলায় কাটিয়ে দেয় এবং অজস্র নেকী থেকে বঞ্চিত থাকে। যারা এই মাসে হজ্ব করা থেকে বঞ্চিত থাকে তারা ঘরে বসে বসে এর প্রথম দশকে সাধ্যমত নেকীর কাজ করে অশেষ পুণ্য অর্জন করতে পারে। তাই জিলহজ্বের প্রথম দশকের ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদীস নিম্নে বর্ণনা করছি যা পড়ার পর আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন যে, ঐ দিনগুলোতে আমাদের করণীয় কর্তব্য কি?

হযরত আবদুলস্নাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, রসুলুলস্নাহ (সঃ) বলেছেন, এমন কোন দিন নেই যেদিনে নেকীর কাজ করা আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হয় জিলহজ্বের প্রথম দশদিনের চেয়ে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর পথে সংগ্রামও ঐ দিনের নেকীর সমান হবে না। তিনি বললেন, না সংগ্রামও তার সমতুল্য হবে না। তবে হাঁ যদি কোন ব্যক্তি তার জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর পথে বেরিয়ে যায়, অতঃপর তাথেকে কোন জিনিস নিয়ে সে না ফেরে (বরং সে শহীদ হয়ে যায়) তাহলে তার কথা আলাদা। (বুখারী) মিশকাত ১২৮ পৃষ্ঠা ও তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজা)।

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসূলুলস্নাহ (সঃ) বলেছেন, জিলহজ্বের দশদিনের চেয়ে আর কোন দিন আল্লাহর কাছে অতীব প্রিয় নয় যেদিনে তার জন্য ইবাদত করা হয়। জিলহজ্বের ঐ দিনগুলোতে প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইয়াতুল ক্বদরের ইবাদতের সমান। (তিরমিযী, ইবনে মাজা) ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি যয়ীফ (মিশকাত ১২৮ পৃষ্ঠা)। মুসনাদে বাযযারে হয়রত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলুলস্নাহ (স.) বলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম দিন জিলহজ্বের ১০টি দিন। ( আওনুল বারী, ৩য় খন্ড, ১৫৩ পৃষ্ঠ)।

উভয় দলের মধ্যে সমন্বয়কারী আলিমরা বলেন, সারা বৎসরের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন জিলহজ্বের প্রথম ১০টি দিন। কারণ, ওর মধ্যে আরাফাতের দিন, অর্থাৎ হজ্ব রয়েছে এবং সারা বৎসরের রাতের মধ্যে সেরা রাত রমজানের শেষ ১০টি রাত। যার মধ্যে শবেক্বদর রয়েছে। এ জন্যই যুলহিজজার ফজিলতে হাদীসের শব্দে মা মিন আইয়্যামিন (এমন কোন 'দিন' নেই) শব্দ বলা হয়েছে, মিন লায়া-লিন বা রাত শব্দ বলা হয়নি। (যা দুল মাআ-দ ১ম খন্ড, ১১ পৃষ্ঠা, মিরআত, ২য় খন্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা, মিরকাত, ২য় খন্ড, ২৬৪ পৃষ্ঠা)। মুতাআখখিরীন বা শেষ যুগের কিছু বিশিষ্ট আলিম বলেন, সামগ্রিকভাবে জিলহজ্বের প্রথম দশকের সাওয়াব লাইলাতুল ক্বদরের।

জিলহজ্বের প্রথম দশকে কি কি ইবাদত করতে হবে তার কিছু ইঙ্গিত পূর্বোক্ত তিরমিযী ও ইবনে মাজার হাদীসটিতে বলা হয়েছে যে, দিনে রোজা ও রাতে কিয়াম। হযরত হাফসা (রা.) বলেন, ৪টি জিনিস নবী (স.) কখনো ছাড়তেন না, ১) আশুরার রোজা, ২) জিলহজ্বের প্রথম দশকের ৯টি রোজা, ৩) প্রত্যেক মাসে ৩টা রোজা, ৪) ফজরের আগে ২ রাকাআত সুন্নত (নাসায়ী,মিশকাত ১৮০ পৃষ্ঠা)। নাসায়ীর অন্য বর্ণনায় এবং আবু দাউদে আছে যে, নবী (স.) জিলহজ্বের ৯টি রোজা বরাবরই রাখতেন। এই নয়দিনের মধ্যে আরফার রোজাও পড়ে। আরফার বা যুলহিজ্জার ৯ই তারিখে রোজা সম্পর্কে আলস্নাহর রসুল বলেন, আমি আলস্নাহর কাছে আশা রাখি যে, আরাফার দিনে রোজা রাখলে গত ও আগামী (অর্থাৎ দুই) বছরের গোনা মাফ হয়ে যাবে। (মুসলিম, মিশকাত ১৭৯ পৃষ্ঠা)।তবে হঁ্যা, যারা হজ্ব করবেন তাদের জন্য হজ্বের দিনে আরফার রোজা রাখা মানা। কারণ, যারা আরাফাতের মাঠে থাকে তাদেরকে আরাফার রোজা রাখতে রসুলুলস্নাহ (স.) নিষেধ করেছেন, (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ইবনে মাজা, নাসায়ী, ইবনে খুযায়মা, হাকিম, বুলবুল মারাম, ৪৯ পৃষ্ঠা)। এইজন্যই মনে হয় রসুলুলস্নাহ (স.) বিদায় হজ্বের সময় আরাফার দিনে রোজা রাখেননি।

নাসায়ী ও আবু দাউদের রিওয়ায়াতটি প্রমাণ করে যে, রসুলুলস্নাহ (স.) জিলহজ্বের ৯টি রোজা কখনো ছাড়তেন না, বরং সর্বদা রাখতেন। সুতরাং নবী (স.)-এর ঐ আমল অনুযায়ী তিরমিযী ও ইবনে মাজার হাদিস মোতাবেক যদি কেউ জিলহজ্বের ১ম দশকে ৯টি রোজা রাখে তাহলে সে ৯ বছর রোজা রাখার নেকী পাবে।

ডা. মাহযাবিন রহমান শাওলী
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template