কুরবানী অর্থ উৎসর্গ, বিসর্জন, ত্যাগ, এ উৎসর্গ বা ত্যাগ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে হতে পারে। ইসলামি শরিয়াতে মুসলমান জাতির জীবনটাই একটি কুরবানীতুল্য। এ কুরবানী হতে পারে জান, মাল, সময়, স্বার্থ, ইচ্ছা ও পশু জবাই, যা আল্লাহর উদ্দেশ্যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই নিঃস্বার্থভাবে উৎসর্গ করা হয়। স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ, সম্পদ ত্যাগ এবং সর্বোপরি মহৎকর্মের মাধ্যমে আলস্নাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আর এটাই হচ্ছে কুরবানী। 'তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কুরবানী করো।' (সুরা কাওসার-২)
পবিত্র হজ্বের পরবতর্ী দিনে পশু কুরবানীর মাধ্যমে মুসলিম জাহান পালন করে হজরত ইব্রাহিম (আ:)-এর সুন্নাত। কুরবানী হযরত ইব্রাহিম (আ:), বিবি হাজেরা ও হজরত ইসমাইল (আ:)-এর পরম ত্যাগের স্মৃতি উৎসব। আল্লাহপাক চান কুরবানীর মাধ্যমে মানুষ কুরবানী করুক নিজের পশুপ্রবৃত্তিকে এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মানুষ অর্জন করুক ইব্রাহীমী আদর্শ। আল্লাহপাক কুরবানীর পশুর গোশত বা রক্ত কিছুই চান না। তিনি চান আমাদের তাকওয়া, তাই পশু জবাই করার মাধ্যমে মানব স্বভাবের পশুত্বকে, আমিত্বকে হত্যা করাই হচ্ছে কুরবানী। রসূল (সা:) বলেন, 'যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।' (ইবনে মাজাহ)
আমাদের মনে রাখা দরকার ইখলাছ, একনিষ্ঠতা এবং হালাল উপার্জন কুরবানী কবুল হওয়ার অপরিহার্য শর্ত। বিত্তবান ও সামর্থবান মুসলিম নর-নারীর উচ্চমূল্যে পশু ক্রয় করে কুরবানী করার দৃশ্য দেখে খুশি হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহপাক কুরবানীর দিনে সামর্থ্যবান মুমিন বান্দার প্রেম নিবেদনের দৃশ্যই দেখতে চান; অন্য কিছু নয়। তিনি দেখতে চান- কুরবানীর দিনে তার প্রেমিক বান্দা হযরত ইব্রাহিম (আ:) হযরত ইসমাইল (আ:) এবং মা হাজেরার মতো আল্লাহর অকৃত্রিম প্রেমের পরীক্ষা দিয়ে পৃথিবীকে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত করলো কিনা।
আমাদের কুরবানী তখনই স্বার্থক হবে যখন পিতা হিসাবে হযরত ইব্রাহিমের (আ:) মত আল্লাহর আদেশের কাছে আমরা মাথানত করে দিতে পারবো। পুত্র হিসেবে আল্লাহ ও পিতার আনুগত্যের সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবো। সাথে সাথে মা হিসেবে হযরত হাজেরার মত আল্লাহ ও স্বামীর আনুগত্যের সমুজ্জ্বল নজির সৃষ্টিতে সক্ষম হবো। আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফীক দান করুন, আমীন।
মোশারেফ হোসেন পাটওয়ারী
Post a Comment