السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

আল্লাহর অসীম করুণাধারা যমযম কূপ

| comments

যমযম কূপ, আল্লাহ পাকের কুদরতের এক অপূর্ব নিদর্শন। মক্কার পবিত্র কাবা ঘরের পূর্ব পাশে অবস্থিত। আমরা সকলেই কম-বেশি জানি এ সম্বন্ধে। ঘটনা নয়, আলস্নাহপাকের মহিমা, তিনি যে কী না করতে পারেন তা এ সমস্ত নিদর্শন না দেখলে গভীরভাবে উপলব্ধি করা যাবে না। হাজার হাজার বছর আগের ঘটনা, কালের বিবর্তনে কোন পরিবর্তন নেই। চাহিদা অনুযায়ী পানি উত্তোলিত হচ্ছে; কিন্তু কমতি নেই। হজ্বের মৌসুমে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ পান করছেন, সংবৎসর অবধি মক্কা-মদিনার জনসাধারণ ও অগণিত তীর্থযাত্রী পান করছেন এবং সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু পানির স্তর একইরকম, একটুও কমছে না। মনে হয় মহাসমুদ্র থেকে পানি উত্তোলিত হচ্ছে এবং ব্যাপক উত্তোলনের জন্যও পানির স্তরের পরিবর্তন হচ্ছে না। আলস্নাহ পাকের কী অসীম করুণাধারা! মহৎ কিছু সৃষ্টির পেছনে মহৎ প্রেরণা, মহৎ ত্যাগের প্রয়োজন। ত্যাগ ব্যতীত কোনকিছুই পাওয়া বা করা সম্ভব নয়। হজরত ইব্রাহীম (আ:) স্রষ্টার সঙ্গে গভীর ভালবাসায় এত একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে, স্রষ্ট্রার আদেশ, নির্দেশ ব্যতীত অন্যকিছু বুঝতেন না, তেমনি পার্থিব লোভ-লালসা, স্নেহ-বাৎসল্য, বিষয়-সম্পদ, ভোগ-বিলাস পার্থিব কোন আকর্ষণই তার কাছে কোনদিন মুখ্য হতে পারেনি। স্রষ্টার জন্য তার ত্যাগের পরীক্ষা, আলস্নাহপাকের সঙ্গে ভালবাসার পরীক্ষা, আলস্নাহর একত্ববাদের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বলেই যে মহৎ আদর্শ মুসলিম উম্মাহর জন্য সৃষ্টি করে গেছেন, মুসলিম মিলস্নাতের পিতা হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। সৃষ্টির শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে সর্বকালে প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী যেন স্রষ্টার প্রতি সর্বক্ষেত্রে অবিচল থেকে নিষ্ঠাসহকারে সমস্ত আদেশ, নিষেধ অকাতরে পালন করে আলস্নাহপাকের প্রিয়পাত্র হিসেবে পরিগণিত হতে পারেন সে উদ্দেশ্যেই আল্লাহপাক ইসলামের রোকন হজ্ব ও কোরবানী পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

হজরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর প্রাণপ্রিয় শিশুপুত্র হজরত ইসমাঈল (আঃ)সহ বিবি হাজেরাকে ঊষর প্রস্তরময় পাহাড়-পর্বতসঙ্কুল জনমানবহীন মক্কার এক উপত্যকায় আল্লাহ পাকের নির্দেশ অনুসারে নির্বাসনে রেখে গেলেন। সেখানে না ছিল কোন লোকালয় এমনকি লোক চলাচলও ছিল না। না ছিল আহার্যের কোন ব্যবস্থা, না ছিল পানীয়জলের কোন ব্যবস্থা। এহেন পরিস্থিতিতে এই বিপদসঙ্কুল স্থানে নির্বাসনে রেখে গেলেন। একবার ভাবুন তো! কেমন স্বামী আর কেমন স্ত্রী! যে স্ত্রী এই দুগ্ধপোষ্য শিশুপুত্রসহ এমন স্থানে সুনিশ্চিত মৃতু্য জেনেও থেকে গেলেন। স্বামীর আদেশের বিরুদ্ধে সামান্যতম প্রতিবাদ তো দূরের কথা, কোন বাদানুবাদ পর্যন্ত করলেন না, স্বামীর কাজকে শুধু সমর্থনই করলেন না, পালন করার জন্য হাসিমুখে অকাতরে সব দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে ধুঁকে ধুঁকে মৃতু্যর জন্য প্রস্তুত হতে থাকলেন। আলস্নাহপাকের প্রতি তাদের ভালবাসা যে কত গভীরে প্রোথিত ছিল তা আমাদের ধারণার অতীত। আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে একান্তভাবে সমর্পন করতে পেরেছিলেন বলেই তো সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত তাঁদের ত্যাগের মহিমাকে আদর্শ করে রেখেছেন আমাদের জন্য। ত্যাগের মহিমায় চির ভাস্বর হয়ে আছেন হজরত ইব্রাহীম (আ:), বিবি হাজেরা ও হজরত ইসমাঈল (আঃ)। পিপাসায় কাতর বিবি হাজেরা, প্রাণ ওষ্ঠাগত, দুগ্ধপোষ্য শিশুপুত্র হজরত ইসমাঈল (আঃ)-এর জীবন সংশয়, দুশ্চিন্তায় অধীর হয়ে আলস্নাহপাকের উপর ভরসা রেখে পানির অন্বেষায় বের হলেন বিবি হাজেরা। পাশর্্ববতর্ী সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে পানির জন্য চতুর্দিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টি মেললেন, হঁ্যা, ঐ যে অদূরে অন্য একটি পাহাড়ের চূড়ায় চিকচিক করছে পানি। ভালভাবে দৃষ্টি প্রসারিত করলেন, হঁ্যা ঠিক পানিই তো। ঐ পাহাড়ের (মারওয়া) উদ্দেশ্যে ছুটলেন। একদিকে ঐ পানিকে লক্ষ্য করছেন আর একদিকে নিচে রেখে আসা নিজের শিশু পুত্রের দিকে খেয়াল রাখছেন। দু'পাহাড়ের সম্মিলন খাদে, যেখানে শিশুপুত্র আড়াল হয়ে পড়েছে তাড়াতাড়ি দৌড়ে পার হলেন পানি আহরণের উদ্দেশ্যে। কিন্তু হায়! পানি কোথায়? প্রখর রৌদ্র তাপে প্রস্তরময় বালুকণারাশিতে যে মরীচিকার সৃষ্টি হয়ে পানির অবস্থান দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। আবার তাকালেন চতুর্দিকে, দেখতে পেলেন ফেলে আসা সাফা পাহাড়েই তো পানি। আবার একইভাবে ফিরলেন সাফা পাহাড়ের দিকে। না এবারেও ভুল। পানির আশায় এভাবে একবার, দুবার নয়, সাত সাতবার দু'পাহাড়ে ছুটলেন। স্রষ্টার প্রতি কী গভীর আস্থা, পানি মিলবেই। আর যদি নাও মিলে এভাবেই প্রাণ বিসর্জন দিবেন স্রষ্টার উদ্দেশ্যে। তাতেও সুখ, পরম প্রাপ্তি।

দু'পাহাড়ে সপ্তমবার ছুটাছুটির পর দেখতে পেলেন যে, ইসমাঈলের পাদদেশে পানি। বিবি হাজেরা তাড়াতাড়ি দেঁৗড়ে গেলেন শিশুপুত্রের কাছে। হঁ্যা ঠিকই পানি। শিশুপুত্রের খেলাচ্ছলে পায়ের গোড়ালির আঘাতে আঘাতে প্রস্তর চুঁইয়ে পানি আসছে। বিবি হাজেরা তো অবাক। আলস্নাহপাকের শুকরিয়া আদায় করে পানি যাতে গড়িয়ে যেতে না পারে তাই আশপাশ থেকে প্রস্তর ও বালু এনে চারপাশে বৃত্তাকারে পানি যতদূর গড়িয়েছে ততটুকু বাঁধ দিয়ে আটকালেন এবং পানিকে যমযম অর্থাৎ থামথাম বললেন। অমনি আলস্নাহপাকের নির্দেশে পানি স্থিতি হয়ে রইল।

এ হলো যমযমের গোড়ার কথা। আলস্নাহপাকের প্রতি এই অবিচল আস্থা ও ত্যাগের মহিমাকে গৌরবান্বিত করে রাখার জন্য এবং ভবিষ্যৎ মুসলমান তথা বিশ্ববাসীর নিকট এর মাহাত্ম্য অনুকরণীয় করে রাখার জন্য রাব্বুল আলামীন বিবি হাজেরার দৃষ্টান্তকে হজ্ব ও ওমরাহকারী মুসলমানদের জন্য (হজ্বের রোকন হিসেবে) ওয়াজিব করেছেন। আলস্নাহপাকের অসীম কুদরত ও রহমতের নিদর্শনাবলী পরিদর্শনে স্বভাবতঃই মন আলস্নাহর প্রতি বেশি নত হয় এবং মহান স্রষ্টার মহিমা, কুদরত, তাঁর মহত্ত্ব, সৃষ্টির প্রতি তাঁর করুণা এসবের কিছু অনুধাবন করা সহজ হয়। ধর্মীয় স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলী দর্শনে ঈমান ও আকিদা আরো বলীয়ান হওয়ার সুযোগ থাকে। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে সে সুযোগ দান করে ত্ার অপার রহমতে আমাদের সিক্ত করে ধন্য করুন। আমীন

হাবিবুর রহমান তালুকদার
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template