মানবাধিকার বলতে মূলত যেসব অধিকারকে বুঝানো হয়েছে সেগুলো স্বয়ং আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের প্রদান করেছেন। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার অধিকার, সম্মান, স্বাধীনতা, জীবিকা, সম্পদের মালিকানা, সুশাসন, বাক স্বাধীনতা, নারী ও শিশু অধিকারসহ মানুষ হিসাবে অধিকারকেই মানবাধিকার বলা হয়। বিশ্ব জগতের রহমত হিসাবে প্রেরিত শান্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা:) মানবাধিকারের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা মানব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। যা দিশেহারা, অসহায়, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানবজাতির মুক্তির জন্য যথেষ্ট।
আলস্নাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যেই মহানবী (সা:) মানুষকে কল্যাণের পথে আহ্বান করেছেন, মানুষকে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য আজীবন সাধনা করেছেন। অস্ত্রবাজি, সন্ত্রাসী, আগ্রাসন ও যুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। জোর-জুলুম নয়, অস্ত্রবাজি নয়, আত্মসংস্কার, অঙ্গীকার রক্ষার সদিচ্ছা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, আলস্নাহর ওপর আস্থা ও আত্মসমর্পণই পারে বিশ্বে শান্তির দরজা খুলে দিতে, এ বিশ্বাসে তিনি ছিলেন অবিচল। বাল্যকালে মক্কার অদূরে ওকাজ মেলায় জুয়াখেলা, ঘোড়দৌড় ও কাজ প্রতিযোগিতাকে কেন্দ করে যে ভয়াবহ অন্তদ্বন্দ্ব ও যুদ্ধ বাধে তাতে তিনি ভীষণ ব্যথিত হন। যার ফলে মক্কার নিঃস্বার্থ, উৎসাহী ও শান্তিপ্রিয় যুবকগণকে নিয়ে হিলফুল ফুজুল নামে একটি শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে এটিই সর্বপ্রথম সন্ত্রাস দমন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কল্যাণময়ী সেবাসংঘ। আধুনিক বিশ্বের জাতিসংঘ ও রাসূল (সা:) এর হিলফুল ফুজুলের শান্তিসংঘের নিকট ঋণী হয়ে আছে।
বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই নবী করিম (সা:) সপ্তম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপে এক বৈপস্নবিক পরিবর্তন সাধন করেন।
সাম্য, মানবতা ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে একটি উন্নত ও আদর্শ সমাজ গঠন করেন। আভিজাত্যের গৌরব ও বংশ মর্যাদার মূলে কুঠারাঘাত করেন। সর্বপ্রথম দাস প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি ঘোষণা দেন, "দাসকে আজাদ করার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কাজ আলস্নাহর কাছে আর কিছুই নেই। নারী জাতিকে তিনিই সর্বপ্রথম পরিবার ও সমাজজীবনে তাদের যথাযোগ্য মর্যাদার আসন অধিকার লাভ করার সুযোগ করে দেন। "লোক সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে তোমার উপরও তাদের তেমন অধিকার রয়েছে।" "মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।" রাসূল পাক ঘোষণা করেন "আমি যদি কাউকে কারও ওপর প্রাধান্য দিতাম তাহলে কন্যা সন্তানকে প্রাধান্য দিতাম পুত্র সন্তানের ওপর।"
কেউ খাবে, কেউ খাবে না, কেউ থাকবে দশ তলায় আর কেউ গাছ তলায় এ অসমনীতির বিরুদ্ধে মহানবী (সা:) সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তিনি বলেছেন, "তারা (শ্রমিক কর্মচারী) তোমাদের ভাই।" "তোমরা শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও"। (বায়হাকী শরীফ)।
মোশারেফ হোসেন পাটওয়ারী
Post a Comment