السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

শিশুদের সুন্দর জীবন গঠনে পিতা-মাতার ভূমিকা

| comments

শিশুদের সুন্দর জীবন গঠনে পিতা-মাতার অবদান অনস্বীকার্য। পিতা-মাতা যেভাবে তাকে গড়ে তোলেন সেভাবেই তারা গড়ে ওঠে। শিশুরা নিষ্পাপ। তারা ফুলের মত। তারা পিতা-মাতার চক্ষু শিতল করার নিয়ামক। আমাদের প্রিয় নবী (স.) শিশুদের খুব ভালবাসতেন। তিনি একটি হাদীসে বলেছেন, 'প্রত্যেক মানব শিশু ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে'। এরপর তার পিতা-মাতা, পরিবার তাকে যেদিকে নিয়ে যায়, সে ঐদিকেই চলে যায়। তাছাড়া প্রত্যেক শিশু পৃথিবীতে আগমন করে সর্বপ্রথম তার মাকে দেখে। তার মা-বাবাকে চিনে। সেজন্য পিতা-মাতাকে সে অনুসরণ করে। পিতা-মাতা কি করে, কি বলে, সে ঐভাবে করতে ও বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। সে কারণে প্রত্যেক পিতা-মাতাকে শিশুদের সামনে সুন্দর আচার-আচরণ উপহার দিতে হবে ও শিশুদের জীবন গঠনে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। যার মাধ্যমে ঐ শিশু বড় হয়ে কখনো পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপনে নিজেদের জড়াবে না।রসূল (স.)-এর হাদীস অনুযায়ী প্রত্যেক শিশু যখন কথা বলতে শেখে তখন তার মুখে কালেমা উঠিয়ে দেয়া উচিত। অনেক মা বিভিন্ন ছড়া/ গান ইত্যাদি শেখান ও বলতে বলতে দোলনাতে ঘুম পাড়ান। কিন্তু কলেমা 'লা ইলাহা ইলস্নালস্নাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুলস্নাহ' শিক্ষা দেন না।

এটা ঠিক নয় বরং প্রত্যেক মুসলিম মায়ের উচিৎ বাচ্চা যখনই কথা বলতে শিখবে তখনই সবার আগে যে স্রষ্টা তাকে এই সুন্দর পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার পরিচয় অবহিত করা। আলিফ, বা, তা, ছা ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া। রসূল (স.) বলেছেন, 'উৎলুবুল ইলমু মিনাল মাহদে ইলাল লাহদে' অর্থাৎ দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণে অতিবাহিত করবে। স্রষ্টার নির্দেশিত জ্ঞান চর্চার সময় জীবনের প্রারম্ভ হতে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত।

যে কোন জিনিসের শুরুটা যদি সুন্দর হয় তাহলে তা আলোর উন্মিলনে ভরপুর হয়ে যায়। আর শুরুটা যদি ভাল না হয় তাহলে পরবর্তীতে যতকিছু করা হোক না কেন প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া সুকঠিন হয়ে দাঁড়ায়। রসূল (স.)-এর নির্দেশ, ছোট বেলা হতেই পিতা-মাতা শিশুর আত্মিক উন্নতিকল্পে স্রষ্টা সম্পর্কিত বিষয়গুলো শিক্ষা দিবেন। মহান রাব্বুল আলামীন আলস্নাহতায়ালা কুরআনে বলেছেন, 'ইকরা বিইসমি রবি্বকালস্নাজি খালাক্ব' অর্থাৎ 'পড়! তোমার সেই রবের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।' সাথে সাথে রসূল (স.) বলেছেন, 'ত্বলাবুল ইলমু ফারিদাতুন আলা কুলিস্ন মুসলিমাতুউ ওয়া মুসলিমা' অর্থাৎ 'প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর জ্ঞান চর্চা করা ফরয বা অত্যাবশ্যক।' এ কারণে প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার উচিত হলো শিশুদেরকে সকল কিছুর আগে কুরআন শিক্ষা দেওয়া। কুরআনের আলো যে হূদয়ে একবার প্রজ্বলিত হবে সেখানে কখনো অবিশ্বাস ও অসত্যের অন্ধকার স্থায়ী জায়গা করে নিতে পারে না। কুরআন তেলাওয়াত শেখার পর মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলায় অর্থসহ কুরআন তার হাতে তুলে দিতে হবে। সে কুরআনের অর্থ বুঝে পড়তে থাকলে তার মাঝে ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয় করার বিচারিক প্রজ্ঞার উন্মেষ ঘটবে। সে তখন কারো দ্বারা প্রতারিত হবে না। এরপর রসূল (স.)-এর জীবন বৃত্তান্ত সম্পর্কে তাকে একটি সম্যক ধারণা দিতে হবে। রসূলের একটি ভাল জীবনী গ্রন্থ পড়তে দিতে হবে। সাথে সাথে রসূলের কিছু হাদীসও তাদেরকে শিক্ষা দেয়া জরুরী। বিশেষ করে মেশকাত শরীফের কিতাবুল আদব বা আচার-আচরণ সম্পর্কিত বিষয়গুলো তাদেরকে জ্ঞাত করতে হবে যাতে করে তারা বড়দের সাথে সুন্দর আচার-আচরণ করা শেখে। প্রধান প্রধান ধর্মগুলো সম্পর্কে তাদের পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। তাছাড়া ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে যে সমস্ত গ্রন্থ রয়েছে সেগুলোও তাদের অধ্যয়ন করতে দিতে হবে। এরপর শিশু বেলা হতেই তাদেরকে নামাজের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মহানবী (স.) বলেছেন, 'যখন তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হয় তখন তাদেরকে নামাজের প্রশিক্ষণ দাও।' একজন মানুষের গোটা জীবনের সকল আমল আলস্নাহর দরবারে তখনই গ্রহণযোগ্য হয় যখন তার নামাজটা সুচারুরূপে সম্পন্ন করা হয়।রসুল (স.) বলেন, হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম হিসাব হবে নামাজের। যার নামাজের হিসাব সঠিক হবে তার অন্যান্য আমলে যদি কিছু ঘাটতি থাকে তাহলে আলস্নাহতায়ালা ঐ ব্যক্তির সে ঘাটতি পূরণ করে দেবেন। আর যদি নামাজের হিসাব বেকার হয় তাহলে অন্যান্য আমল পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকলেও তা আলস্নাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্য আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, 'ইন্নাস ছলাতা মিফতাহুল জান্নাহ' অর্থাৎ নামাজ বেহেশতের চাবি। বিচার দিবসে রসূল (স.) তার যে উম্মতগণকে চিনবেন সেটাও নামাজের অজুর চিহ্ন দেখে। তাছাড়া মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ছাড়া। তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো সৎ (চরিত্রবান, নামাজী) সন্তানদের দোয়া। সেজন্য পিতা-মাতা যদি তাদের সন্তানদের নামাজী বানিয়ে রেখে যান তাহলে তাদের দোয়া কবরে থাকাকালীন সময়ে পেতে পারেন। এ সমস্ত গুরুত্বের কারণে রসূল (স.) প্রত্যেক পিতা-মাতাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সাত বছর বয়স হতেই সন্তানদেরকে নামাজের প্রশিক্ষণ দিতে। এরপর দশ বছর বয়সেও যদি নামাজ না পড়ে তাহলে মৃদু প্রহার করে হলেও একাজ আদায় করতে।

যে ছেলে বা মেয়েকে তার পিতা-মাতা শিশুবেলা হতে নামাজে অভ্যস্ত করতে সক্ষম হয়েছেন, যা সে কখনো ছেড়ে দেয় না। ঐ সমস্ত শিশু প্রাপ্ত বয়সে কখনোই ছিনতাই-চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুণ্ঠন, চুরি, ডাকাতি, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি ও মানব বিধ্বংসী কোন গর্হিত কাজে জড়াতে পারে না। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে, 'নিশ্চয় নামাজ মানুষকে সকল প্রকার অন্যায় ও অশস্নীল কাজ হতে বিরত রাখে।' নামাজের সাথে সাথে দৈনন্দিন জীবন-যাপনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের পুতঃপবিত্র আখলাক বা চরিত্র, আদব বা ভদ্রতা শিক্ষা দিতে হবে। রসূল (স.) বলেছেন, 'মানলাম এরহাম ছাগিরানা ওয়ালাম ইউওয়াক্কের কাবিরানা ফালাইছা মিন্না' অর্থাৎ যে বড়দের শ্রদ্ধা-সম্মান করে না, ছোটদের আদর-স্নেহ করে না সে আমার উম্মত নয়। ছোটবেলা হতে তাদের সালাম শিক্ষা দেওয়া, বড়দেরকে শ্রদ্ধা করতে শেখানো উচিত। রসূল (স.) ছোটদেরকে খুবই স্নেহ করতেন। হযরত আনাস (রা.) বলেন, একদিন পথ দিয়ে যাওয়ার সময় পথের ধারে খেলায় লিপ্ত শিশুদেরকে রসূল (স.) সালাম দেন। তিনি তাঁর সন্তান ও নাতি হাসান-হুসাইনকে খুবই স্নেহ করতেন। কখনো তাদেরকে নিজের পিঠে চড়িয়ে আনন্দ দিতেন।

তাদের সাথে খেলতেন। এই আদর্শ আমাদের মধ্যে প্রস্ফুটিত করতে হবে। আমাদের অভিভাবক বা পিতা-মাতা ভালবাসা ও স্নেহের পরশে তাদের শিশুদের সুন্দর জীবন গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। সাথে সাথে পরিবার, প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন সকলের দায়িত্ব হলোস্ন এইসব নিষ্পাপ ফুলের মত শিশুদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তুলে আমাদের আগামী প্রজন্মকে একটি সৎ, চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ ও বিচক্ষণশীল জাতি হিসেবে উপহার দেয়া।

আবদুলস্নাহ আল বাকী
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template