السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় রমজান

| comments

ইসলাম অর্থ শান্তি ও আত্ম সমর্পণ। মহান স্রষ্টা, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতির জন্য ইসলামী জীবন বিধান দান করেছেন তাদের শান্তির জন্য। কিন্তু এই শান্তি কখনই লাভ করা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ উক্ত জীবন বিধানের কাছে নিজেকে সমর্পণ না করে। অর্থাৎ ইসলামের বিধানকে বাস্তব জীবনে অনুসরণ বা বাস্তবায়িত না করে। শান্তির পথ অনুশীলনের এক শ্রেষ্ঠ পন্থা হলো সিয়াম সাধনা। এই অনুশীলনের শিক্ষাকে অনুসরণ করতে হবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা পার্থিব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। আর তা করলেই শুধু জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে মানব জীবনে শান্তি আসতে পারে। আর এই শান্তি পেতে হলে মানুষ তথা সকল সৃষ্টিকে ভালবাসতে হবে। জানতে ও বুঝতে হবে যে মহান স্রষ্টা এ পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য। বলেছেন: তিনিই (মহান স্রষ্টা) তোমাদের (মানুষের) জন্য সবকিছু সৃষ্টি করেছেন (২:২৯) আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন খলীফা বা স্থলাভিষিক্তরূপে, পৃথিবীর সকল কার্য পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মানুষকে। তাইতো মানুষ হলো খলীফা। তারা পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করবে মানবপ্রেম তথা সৃষ্টি প্রেমের মাধ্যমে। বর্তমান ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অশান্ত পৃথিবীর দিকে তাকালে কি মনে হয় যে খলীফারূপে মানুষ তার দায়িত্ব পালন করছে? দায়িত্ব পালন করছে না বলেই পৃথিবীতে এতো অশান্তি।

এই অশান্তি প্রশান্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। যদি মানুষ মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেয়া বিধানের শুধু কথা না বলে বাস্তব জীবনে তা রূপায়িত করে।

আর পথ হলো সামাজিক জীবনে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি, শ্রদ্ধাবোধ, স্নেহ, মমতা, সহনশীলতা ও ভালবাসা। আর পারস্পরিক সম্প্রীতি, সংযম ও মানবতাবোধের গুণাবলী অর্জন এবং হিংস্রতা ও পাশবিকতা বর্জন করার জন্যই মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সিয়াম সাধনা বা রমজানের মাস দিয়েছেন। তাইতো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।” এখানে জাতি, ধর্র্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি দয়া ও ভালবাসার কথা বলা হয়েছে। জগতে সবাই কোন না কোন ধর্মালম্বী বলে দাবি করে, সকল ধর্মই ন্যায় নীতি, মানবিক মূল্যবোধ ও মানব প্রেমের কথা বলে। কোন ধর্মই হিংসা বিদ্বেষ, ঝগড়া, বিবাদ, সন্ত্রাস, যুদ্ধ তথা অশান্তির শিক্ষা দেয় না। সকল ধর্মই মানবপ্রেম, সৃষ্টি প্রেম তথা শান্তির পথ নির্দেশনা দেয়, তারপরও পৃথিবীতে সন্ত্রাস ও অশান্তি কেন? বুঝা গেল সবাই ধর্ম তথা মানবতার কথা বলে কিন্তু অতি নগণ্যসংখ্যক ছাড়া বাকী সবাই বাস্তবে মানে না। যদি পৃথিবীর সকল মানুষ নিজ নিজ ধর্ম বাস্তব জীবনে রূপায়িত করত তাহলে এ পৃথিবীটা শান্তির নীড় হতো। তাইতো পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন: তোমরা এমন কথা কেনো বলো যা তোমরা নিজেরাই করো না। আল্লাহর নিকট এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ যে তোমরা যা বলো তা নিজেরাই করো না। বর্তমানে আমাদের দেশে, তথা সমগ্র বিশ্বে মানব সমাজের অধিকাংশই এই জটিল রোগে আক্রান্ত। সবাই বক্তৃতা বা উপদেশ দিতে সিদ্ধহস্ত যদিও বক্তা বা উপদেশদাতার মধ্যে তার বাস্তবায়ন সুদূর পরাহত।

কবি বলেছেনঃ ‘দরদে দিলকে লিয়ে পয়দা কিয়া ইনসানকো ওয়ারনা ইবাদৎ কে লিয়ে কুচ কম না থে কাররামিয়া’ অর্থাৎ মানুষের কষ্ট ও ব্যথা-বেদনা নিরসনের জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে (এরই মাধ্যমে তারা আল্লাহর ইবাদত করবে) না হয় মহান আল্লাহর ইবাদতের জন্য তো ফেরেশতাগণই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? বিশ্বের প্রতি তাকালে যে দৃশ্য পরিলক্ষিত হয় তা বড়ই করুণ, বড়ই হƒদয়বিদারক। দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে তথা সমগ্র বিশ্বে কলহ, বিবাদ, দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ, বিগ্রহ চলছে। সামান্যতম স্বার্থের জন্যে মানুষ মানুষকে হত্যা করতে মানব মনে একটুও মমত্ববোধ আসছে না। রং-এর বৈপরীত্য, ধর্মের বৈপরীত্য, ভাষায় ও মানসিকতার বৈপরীত্যের কারণে মানুষ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে। একে অপরের সম্পদ ও সম্ভ্রম লুটে নিচ্ছে। অথচ মানব হƒদয়ে একটুও কম্পন বা কষ্ট অনুভব হচ্ছে না। ইরাক, লেবানন, চেচনিয়া ও কাশ্মীরসহ বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যে পৈশাচিকতার হোলি খেলা চলছে তা দেখে যার হƒদয়ে সামান্যতম মানবিক মমত্ববোধ আছে তার হƒদয়ের কম্পন ও অশ্রু নির্গত না হয়ে পারে না।

এমন হলো কেন? মানুষের প্রতি মানুষ এমন নির্দয় নিষ্ঠুর আচরণ করছে কেন? আসলে এসব অমানসিক ও অমানবিক চরিত্রের জন্যে কলংকজনক ঘটনা সংঘটিত হয় এবং হচ্ছে বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও বাস্তবতাকে অবজ্ঞা করার কারণে। অত্যাচারী, নির্দয় ও নিষ্ঠুর ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি একটু ভেবে দেখে যে আজ থেকে শত বছর পূর্বে তার বা তাদের অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে ছিল না, আবার এখন থেকে শত বছর পরও তার বা তাদের অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে থাকবে না, এই বাস্তব সত্যকে উপলব্ধি করলে মানব মন থেকে তো অন্যায়, অবিচার ও পাপ পংকিলতার ভাব দূর হওয়া উচিত।

[লেখক: প্রফেসর ড. আ.ন.ম. রইছ উদ্দিন
সাবেক চেয়ারম্যান, ইস: স্টাডিজ বিভাগ, ঢা.বি।]
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template