السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

রোজা ফরজ ইবাদত

| comments

মানুষের আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের ক্ষেত্রে রোজার সাথে মানবিক প্রশিক্ষণের বিশেষ সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা রয়েছে। আত্মার প্রশিক্ষণ ও আত্মশুদ্ধির কাজ রোজা ব্যতীত পূর্ণ হতে পারে না। সকল প্রকার আরাম-আয়েশ ও মানবীয় দুর্বলতা, সকল প্রকার অপবিত্রতা, কপটতা, মিথ্যা, পরনিন্দা, ব্যভিচার, প্রবঞ্চনা, অত্যাচার, অশ্লীলতা অর্থাৎ সকল প্রকার পাপ কাজ আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রত্যাহার করাই খোদাভিরুর সাথে অন্তর্ভুক্ত। যখন অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়, তখন বান্দার অন্তরের ভেতর আল্লাহর একত্ববাদের গভীর বিশ্বাস জš§ায়। তখনই সকল প্রকার পাপ কার্য বর্জন করে। আল্লাহর প্রতিটি বিধান মেনে নেয়া সহজ হয়।

হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে রোজা ফরজ করা হয়। ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে তৃতীয় রোকন হল রোজা। রোজা শব্দটি ফার্সি শব্দ থেকে এসেছে। এর প্রতিশব্দ হল সাওম। সাওমের আভিধানিক অর্থ থেমে যাওয়া, বিরত রাখা। শরীয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার, পাপাচার ও কামাচার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম বা রোজা।

ইসলাম এত বড় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতকে বিশেষ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়নি। রোজার ব্যাপারে ইসলাম সাম্যের নীতি গ্রহণ করেছে। এখানে নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব, বাদশাহ- ফকির সকলের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে।

রোজায় আল্লাহর প্রেমে অন্তর উদ্ভাসিত হয়ে বান্দার দেহ-মনে এক অনাবিল শান্তি অনুভূত হয়। বান্দা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও সর্বত্র বিরাজমান। বান্দার অন্তরে যখন এই বিশ্বাস সৃষ্টি হয় তখন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের সকল ক্ষুধা-তৃষ্ণা, লোভ-লালসা দমন পূর্বক রোজা রাখে। রোজা মানুষের ভেতরের অবস্থাকে পরিবর্তন করে তার স্বভাবকে সুন্দর করে গড়ে তোলার সহায়ক। দুনিয়ার লোভ-লালসা ও অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের আকাক্সক্ষা হতে দূরে সরায়ে রাখে। আত্মার যথেচ্ছার অবস্থাকে পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়। মুসলিম শরীফের হাদিসে রোজার মাসকে ধৈর্যের মাস বলা হয়েছে। কোরআন ঘোষণা করেছে, “যারা ধৈর্য ধারণ করেছে তাদেরকে পরিপূর্ণ পুণ্য প্রদান করেন।” আল্লাহর প্রতি যার যত বিশ্বাস ঈমানী শক্তিও তত প্রবণ। এই বিশ্বাস নিয়ে বান্দা যখন সিয়াম সাধনা করে তার পুণ্যও তত বেশি হবে। আল্লাহর নির্দেশে পানাহার থেকে বিরত থাকা, সংযমী হওয়া একমাত্র ঈমানদার ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। গোপনে পানাহার করে বাইরে রোজাদার ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করলেও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দৃষ্টিকে ফাঁকি দেয়ার কোনো উপায় নেই। আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাসই বান্দাকে সংযত রাখে একান্ত গোপন স্থানেও। সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই এই বিশ্বাস শক্তিশালী রূপ ধারণ করে। মানুষ কামনা বাসনা ত্যাগ করে বিভিন্ন ক্লেশ ও যন্ত্রণা সহ্য করে বান্দা যখন এখলাছের সাথে রোজা রাখে তখন সে অবশ্যই সৌভাগ্যবান।

সিয়াম সাধনার দাহনে বান্দার পাপ পঙ্কিলতা পুড়ে ছাই হয়ে যায়, আত্মার কালিমা দূর হয়ে যায়, মুমিনদের হৃদয় আলোকিত হয়। রোজা আল্লাহর নির্দেশাবলীর মধ্যে আনুগত্যের একটি কঠিন অঙ্গিকার।
**আলী হায়দার**
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template