০০ মোশারেফ হোসেন পাটওয়ারী ০০
প্রতিটি মানুষকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। মানুষের মৃত্যুর ব্যাপারে যেমন কোনো সন্দেহ নেই, তেমনি কেয়ামত ও হাশর সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারেও কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। হাশরের ময়দানে প্রত্যেককেই দুনিয়ার জিন্দেগীর ভালো-মন্দ কাজের হিসাব-নিকাশ দিতে হবে। সেইদিন হযরত আদম (আ:) থেকে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত সব মানুষ হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে। সবার মাথার ওপরে থাকবে প্রচণ্ড তাপদাহী সূর্য। সূর্যের প্রখর তাপে সে সময় মানবমন্ডলীর যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে, তা বর্ণনাতীত। সূর্য পৃথিবী থেকে ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরে রয়েছে। তার পরও দেশে দেশে তাপমাত্রার আধিক্যের কারণে জনজীবনে কতো না বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। আর সেদিন থাকবে সূর্য আরো অনেক কাছাকাছি, বলতে গেলে একেবারে মাথার ওপরে। এ ভয়াবহ অবস্থায়ও সাত শ্রেণীর মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার আরশের ছায়ার ব্যবস্থা থাকবে।
বোখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলে করিম (স.) বলেন, সাত শ্রেণীর মানুষকে মহান আল্লাহপাক হাশরের মাঠে তাঁর আরশের নিচে ছায়া দেবেন, যেদিন আরশের ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। তারা হচ্ছেন-
এক. ইমানদার ন্যায় বিচারক: ন্যায় বিচারকারীকেই সেদিন আল্লাহতায়ালা হাশরের ময়দানে সূর্যের ভয়াবহ তাপ থেকে আরশের ছায়া প্রদানের মাধ্যমে প্রশান্তি দেবেন।
দুই. আল্লাহভীরু যুবক: যে তার যৌবনকালে প্রভুর ইবাদত করেছে। কারণ জীবনের বসন্তকালে অর্থাৎ যৌবনে অপকর্ম ত্যাগ করা বেশ কঠিন। সব অপকর্ম ত্যাগ করে আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত যুবকের জন্যই হাদিসে এ সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
তিন. মসজিদের প্রতি আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপনকারী ঈমানদার: সেই ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে বাঁধা থাকে। অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে মসজিদে আদায় করে। এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে অন্য ওয়াক্ত আদায় করার জন্য যার হৃদয় উদগ্রীব থাকে।
চার. আল্লাহর জন্য ভালবাসাকারী ব্যক্তিগণ: যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালোবাসেন, সৎ কাজ করেন, একত্রিত হন, আবার তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করেন অর্থাৎ দুনিয়ার কোনো স্বার্থে তারা সম্পর্ক সৃষ্টি করে না।
পাঁচ. আল্লাহর জিকিরকারী বান্দাগণ: যারা নির্জনে আল্লাহপাকের জিকিরে ও ইবাদতে মশগুল থাকেন এবং আল্লাহর ভয়ে যাদের নয়ন অশ্রুসিক্ত হয়।
ছয়. সৎ চরিত্রের অধিকারীগণ: যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত পরিবারের রূপসী রমণী কামনা-লালসা পূরণের উদ্দেশ্যে আহবান করে। কিন্তু এরূপ সুযোগ পেয়েও তিনি বলেন, আমি আল্লাহকে ভয় করি।
সাত. গোপনে দানকারীগণ: যারা গোপনে সাদকা বা দান করেন। যা ডান হাতে দান করলে বাম হাত খবর রাখে না। অর্থাৎ নাম প্রচার, সম্মান, খ্যাতি বা স্বার্থের জন্যে নয় বরং আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই গোপনে অর্থ সম্পদ দান করে থাকেন।
সুতরাং আমরা যেন উপরোক্ত সাত শ্রেণীর সৌভাগ্যবানদের দলভুক্ত হতে পারি। সে লক্ষ্যে আমল করার তাওফিক আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে দান করুন,
আমিন!
Post a Comment