السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

আল কুরআনে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের রূপরেখা ০০ ডা. জাকির নায়েক ০০

| comments

‘হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তোমাদের জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো; কিন্তু আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহ তায়ালাকে বেশি ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সব কিছু জানেন এবং সব কিছুর খবর রাখেন (সূরা নিসা আয়াত-১)।

আল-কুরআনের এ বাণী- ‘হে মানবমণ্ডলী আমরা তোমাদেরকে মাত্র এক জোড়া নারী-পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি।’ অর্থাৎ সব মানবজাতির মূল হলো এক জোড়া মানব-মানবী। আর আল্লাহ বলেন, তিনি সব মানবকে জাতি এবং গোত্রে বিভক্ত করেছেন যাতে তারা পরস্পরকে চিনতে পারে। এজন্য নয় যে, তারা পরস্পর বিদ্বেষ ও ঝগড়া-বিবাদ করবে এবং এখানে আল্লাহর দৃষ্টিতে বিচারের মান দেয়া হয়েছে। যেমন এ আয়াত বলছে, এটা নারী-পুরুষের ভেদাভেদ, বর্ণ, সাদা-কালো, গোত্র ও সম্পদের ওপর নির্ভর করে না; বরং তাকওয়ার ওপর নির্ভর করে। তাকওয়া হলো খোদাভীতি, দয়া ও সত্যপরায়ণতা। যে কেউ অধিক ন্যায়-পরায়ণ, অধিক ধর্মভীরু, অধিক আল্লাহভীতি সম্পন্ন সেই লোক আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত এবং আল্লাহর পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে তিনি সবকিছু সম্পর্কে অবহিত। তার নিদর্শনের মধ্যে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা, নিশ্চয়ই এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।

পবিত্র কুরআন বলে, আল্লাহ বিভিন্ন ধরনের ভাষা ও বিভিন্ন ধরনের বর্ণ সৃষ্টি করেছেন। কালো মানুষ, সাদা, বাদামি, হলুদ এবং এগুলো হলো নিদর্শনাবলি। এই যে, বর্ণ ও ভাষার পার্থক্য একে অপরকে ঘৃণা করার জন্য নয়। কারণ পৃথিবীতে আপনাদের যে ভাষাগুলো রয়েছে, তা সুন্দর। আপনি যে ভাষাগুলো শুনেননি তার শব্দ আপনার নিকট হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু যাদের ভাষা তাদের নিকট এটা সবচেয়ে সুন্দর ভাষা। এতএব আল্লাহ বলছেন যে, তিনি বিভিন্ন ধরনের ভাষা ও রং সৃষ্টি করছেন যাতে তোমরা একে অপরকে জানতে ও চিনতে পারো।

পবিত্র কুরআনের ১৭নং সূরা ইসরার ৭০নং আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন: অবশ্যই আমি আদম সন্তানকে সম্মান দান করেছি।

আল্লাহ বলেন নি যে, তিনি আরব, আমেরিকান বা কোনো নির্দিষ্ট জাতিকে সম্মানিত করেছেন বরং গোত্র, বর্ণ, রং, উপদল ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছেন এবং বহু বিশ্বাস ও ধর্ম রয়েছে যারা বিশ্বাস করে যে, মানবজাতির মূল হলো এক জোড়া মানব-মানবী তথা আদম ও হাওয়া (আ)। যা হোক, কিছু বিশ্বাস এমনও রয়েছে যাতে বলা হয়েছে যে, নারীর পাপে অর্থাৎ হাওয়া (আ.) এর কারণে মানবজাতি পাপের মধ্যে জন্মলাভ করেছে এবং তারা কেবল নারীর ওপরে দোষ চাপায়, তিনি হলেন হাওয়া (আ.) মানুষের পতনের জন্য তিনি দায়ী।

বস্তুত, আল-কুরআন আদম ও হাওয়া (আ.) এর ঘটনা বিভিন্নস্থানে বর্ণনা করেছে: কিন্তু সব স্থানে দোষ উভয়ের ওপর চাপিয়েছে। আদম ও হাওয়া (আ.) এর ওপর। আপনি যদি ৭নং সূরা আরাফের ১৯ থেকে ২৭ নং আয়াত তেলাওয়াত করেন, এতে বলা হয়েছে- আদম ও হাওয়া (আ.) কে এক ডজনেরও বেশি বার সম্বোধন করা হয়েছে এবং আল-কুরআন বলে যে, তাঁরা উভয়ে আল্লাহকে অমান্য করেছিলেন, উভয়ে তাওবা করে অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং উভয়কে ক্ষমা করা হয়েছিল। তারা উভয়ে ভুলের জন্য সমভাবে দোষী ছিলেন। কুরআনে এমন একটি আয়াতও নেই যাতে দোষ শুধু হাওয়া (আ.) এর ওপর দেয়া হয়েছে। কিন্তু ২০নং সূরা ত্বাহা এর ১২১ নং আয়াতে শুধু আদম (আ.) এর দোষ উল্লেখ করে বলা হয়েছে- আদম (আ.) তার প্রতি পালকের হুকুম অমান্য করে ভ্রমে পতিত হলো।

তারপরও আপনি যদি কুরআন অধ্যয়ন করেন, তাঁরা উভয়ে আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন সমানভাবে এবং তারা অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করেছিলেন। আবার তাদের উভয়কে ক্ষমা করা হয়েছিল এবং কোনো কোনো ধর্র্ম বিশ্বাসে বলা হয়েছে, যেহেতু হাওয়া (আ.) আল্লাহকে অমান্য করেছিলেন এজন্য পূর্ণ মানবতার পাপের জন্য তিনি দায়ী। ইসলাম এ কথার সাথে একমত নয়। তারা আরো বলে, আল্লাহ নারীদের অভিসম্পাত করেছেন। আরো বলেছে যে, তাকে প্রসব বেদনা সহ্য করতে হয়। তার অর্থ গর্ভধারণ একটি অভিশাপ, কিছু লোকের মতে। যার সাথে ইসলাম মোটেও একমত নয়।

কুরআনের ৪নং সূরা নিসা’র ১ম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ঐ গর্ভধারিনী মাকে সম্মান কর, যিনি তোমাকে বহন করেছে।’ ইসলামে গর্ভধারণ একজন নারীর মর্যাদা কমায় না, এটা নারীর মর্যাদা বাড়ায়।

৩১নং সূরা লুকমানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-

আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছি, ভালো ব্যবহারের জন্য, তার মা তাকে কষ্টের ওপর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং বুকের দুধ ছাড়ান দুই বছরে।

৪৬ নং সূরা আহকাফ -এর ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

আমি মানুষকে আদেশ দিয়েছি, সে যেন নিজের পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে। তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে; অনেক কষ্ট সহ্য করে তাকে জন্ম দিয়েছে।

গর্ভধারণ একজন নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করে, এটা মর্যাদা হানি করে না। ইসলামে নারী-পুরুষ সমান। সহীহ্ বুখারীর ভলিউম নং ৮, কিতাবুল আদব-এর ২নং অধ্যায়ের ২নং হাদীস অনুযায়ী-এক ব্যক্তি নবী করীম (স.) এর নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, এ দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা ও সম্মান লাভের হকদার কে? নবী (স.) বললেন, ‘তোমার মা।’ লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? নবী করীম বললেন, ‘তোমার মা।’ লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? নবী করীম (সা.) বললেন, ‘তোমার মা।’ লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এরপর কে?’ অতঃপর নবী করীম (সা.) বললেন, তোমার পিতা।’

পিতা অপেক্ষা মাতার তিনগুণ বেশি সম্মানের অধিকারী এবং উভয়ে সঙ্গ লাভের হকদার।

সংক্ষেপে সন্তানের ৭৫% শ্রদ্ধা ও সম্মান লাভের হকদার হলেন মা। ২৫% সম্মান ও সঙ্গলাভের হকদার হলেন পিতা। আরো সংক্ষেপে মা পাবেন স্বর্ণপদক, পিতা অন্য কথায় রৌপ্য পদক পাবেন অথবা ব্রোঞ্জ পদক, যেখানে পিতাকে কেবল একখানা সান্ত¡না পুরস্কার পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এটাই হলো ইসলামের শিক্ষা।

ইসলামে নারী-পুরুষ সমান, কিন্তু এ সমতা মানে সমরূপ নয়। অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। বিশেষত নারী যখন ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত হয়। অনেক মুসলিম ও অ-মুসলিমের ভুল ধারণা রয়েছে, সেটা দূর হওয়া সম্ভব যদি আপনারা নির্ভরযোগ্য উৎস কুরআন এবং সহীহ্ হাদীস সঠিকভাবে অধ্যয়ন করেন।

পূর্বে আমি যা উল্লেখ করেছি, পুরুষ ও নারী সামগ্রিকভাবে সমান। কিন্তু সমতা অর্থ হুবহু অনুরূপ নয়। আমি একটি উদাহরণ উপস্থাপন করছি। ধরুন, একটি শ্রেণীতে দু’জন ছাত্র ‘ক’ ও ‘খ’। তারা দু’জনই প্রথম হয়েছে। দু’জনই পরীক্ষায় ১০০ তে ৮০ নম্বর পেয়েছে। যদি আপনি উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন, দেখা যাবে তাতে মোট ১০টি প্রশ্ন রয়েছে, প্রতিটি প্রশ্নের মান ১০। ১নং প্রশ্নের উত্তরে ক পেয়েছে ১০-এর মধ্যে ৯, অন্যদিকে খ-পেয়েছে ১০-এর মধ্যে ৭। সুতরাং ১নং প্রশ্নের উত্তরে খ এর তুলনায় ক কিছু মাত্রায় অগ্রগামী। আবার ২নং প্রশ্নের উত্তরে খ ১০ এর মধ্যে ৯ পেয়েছে, আর ক-পেয়েছে ১০ এর মধ্যে ৭। সুতরাং ২নং প্রশ্নের ক্ষেত্রে ক এর চেয়ে খ কিছু মাত্রায় অগ্রগামী। বাকি ৮টি প্রশ্নের উত্তরে ক ও খ উভয়ে প্রতিটি প্রশ্নে ১০ এর মধ্যে ৮ করে পেয়েছে। সুতরাং উভয় ছাত্রের সব প্রাপ্ত নম্বরের যোগফল ১০০তে ৮০। সুতরাং সার্বিক মূল্যায়নে ক ও খ উভয় ছাত্রই সমান। কিন্তু কিছু বিশেষ প্রশ্নের উত্তরে খ-এর তুলনায় ক কিছু মাত্রায় অগ্রগামী। আবার কিছু প্রশ্নের উত্তরে ক-এর চেয়ে খ কিছু মাত্রায় এগিয়ে। কিন্তু সর্বোপরি উভয়ে সমান।

একইভাবে ইসলামে নারী-পুরুষ সমান। ভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে ইসলাম শুধু নারী-পুরুষের সমতায়ই বিশ্বাস করে না। বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের অর্থ হলো গোত্র, বর্ণ, উপগোত্র এমনকি নারী-পুরুষ সবাই সর্বোপরি সমান। কেন না ৪ নং সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ পুরুষকে অপর (নারী) থেকে বেশি শক্তিশালী করেছেন।’ যে, পুরুষের নারীর চেয়ে বেশি শক্তি আছে। সুতরাং যেখানে শক্তির প্রশ্ন, সেখানে পুরুষের মর্যাদা এক ডিগ্রি ওপরে। যেহেতু তাদেরকে শক্তি বেশি দেয়া হয়েছে। নারীদের সংরক্ষণের দায়িত্ব পুরুষের। সেখানে নারীদের সুবিধা এক স্তর ওপরে।

আমি যেমন পূর্বেই উল্লেখ করেছি, মাতা, পিতার চেয়ে তিনগুণ বেশি সম্মান এবং সঙ্গলাভ করবে। এখানে নারীর এক স্তর মর্যাদা বেশি আছে। কিন্তু সর্বোপরি যদি আপনারা বিশ্লেষণ করেন, তাহলে আপনারা ইসলামে নারী-পুরুষ সমান অধিকারই পাবেন।

গ্রন্থনা:

০০ মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template