السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

নামাজের উপকারীতা অপরিসীম - ডা. জাকির নায়েক

| comments

অধিকাংশ মানুষ সালাতের অনুবাদ করে থাকে ” Prayer” (প্রার্থনা) হিসেবে। বস্তুত ”Prayer” সালাতের যথাযথ অনুবাদ নয়। ” Prayer ” অর্থ নিবেদন করা, অনুনয় করা বা যথার্থভাবে আবেদন করা। যেমন বলা হয় তুমি কিভাবে আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছো। তাই বলা যায় Pray শব্দটি “সাহায্য চাওয়া” অর্থ হিসেবে অধিকতর গ্রহণযোগ্য যা আরবি প্রতিশব্দ দোআ-এর প্রতিরূপ। অতএব  Pray সালাত এর ধারে কাছেও যায় না; বরং বলা যায় সালাত আরো ব্যাপক অর্থযুক্ত একটি বৈশিষ্ট্যমন্ডিত শব্দ।

নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর দরবারে শুধু সাহায্যের আর্জিই পেশ করে না। নামাজ আমাদেরকে সঠিক দিক-নির্দেশনাও দিয়ে থাকে। সাথে সাথে নামাজকে “প্রোগ্রামিং ,” কন্ডিশনিং বা লেম্যানিও ভাষায় “ব্রেন ওয়াশিং” বলা যায়। কিন্তু যখন কেউ নামাজে যায়, তখন বলে না আমি যাচ্ছি প্রোগ্রামিং বা কন্ডিশনিং অথবা ব্রেন ওয়াশিং-এ। অনুরূপভাবে সালাতকে কেবল ” Pray ” বা প্রার্থনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাও মানুষের উচিত নয়। আবারও ঘুরে ফিরে সে কথাই বলতে হচ্ছে যে সালাত শুধু প্রার্থনা বা চাওয়া নয়; বরং তার চেয়েও অধিক। অর্থাৎ, নিজেকে সৃষ্টিকর্তার সামনে সমর্পণ করা।

যখন আমরা প্রোগ্রামিং-এর কথা বলি, তখন আমাদের Computer -এর কথা মনে পড়ে। কিন্তু মানুষ হচ্ছে যন্ত্রের চেয়েও বড় যন্ত্র। এমনকি বর্তমান সময়ের সর্বাধুনিক কম্পিউটারের চেয়েও মানুষের দৈহিক, বুদ্ধিবৃত্তিক গঠন ও কর্মপদ্ধতি অধিকতর জটিল। আমরা মানুষেরা অর্থাৎ মানবজাতি হচ্ছে মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তথা আশরাফুল মাখলুকাত। মহান আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনের সূরা আত্বতীন-এ বলেছেন: আমি মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি। (সূরা আত্ব তীন: ৪)

অনেকেরই ধারণা, নামাজ হচ্ছে ইসলাম ধর্মের একমাত্র ইবাদত। এটি সর্বাংশে ভুল ধারণা। ঈমানের পরে সর্বোত্তম ইবাদত নামাজ, তবে এছাড়াও অনেক ইবাদত আছে। আল্লাহর আদেশ মান্য করা আর নিষেধ বর্জন করার নামই ইবাদত। নামাজ হচ্ছে যেসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হবে তাদের মধ্যে একটি, তবে অন্যতম।

নামাজের আরেকটি অর্থ আনুগত্য। এই অর্থে যে, সে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করবে, সেজদা করবে এবং নামাজের মধ্যে যেসব আয়াত তেলাওয়াত করে থাকে সে বুঝবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে। যদি সে আরবি না বুঝে তবে তার উচিত হবে আল-কোরআনের অনুবাদ পড়া যেন সে নামাজে যে অংশটুকু তেলাওয়াত করে সে অংশটুকুর আদেশ নির্দেশ বুঝে সে অনুযায়ী আমল করতে পারে। নামাজ আদায় করলে অনেকে উপকৃত হবেন। এটি আসলে একটি জীবন দর্শন। সালাত আত্মিক পরিশুদ্ধতা, শান্তি, দৈহিক অনুশীলন, বিশ্বাস ও আস্থা ইত্যাদি আত্মিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটায়। সূরা আনফালের ২ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ

সত্যিকারের বিশ্বাসী তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং আল্লাহর আয়াত তেলাওয়াত করে। তখন তাদের ঈমানও বৃদ্ধি পায়।

আমরা যখন রুকুতে যাই তখন আমরা মাথা ঝুঁকাই তখন আমাদের শরীর বাঁকা হয় এবং মাথার দিকে রক্ত বাড়তে থাকে। এরপর যখন সোজা হয়ে দাঁড়াই তখন রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং শরীর আরামপ্রদ হয়ে যায়। এরপর আসে সিজদার কথা। এটি সালাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের শরীরেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মাথা, আর মাথার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্রেন। আমাদের শরীরে ইলেক্ট্রোম্যাটিক্স তৈরি হয়। আপনারা দেখেছেন ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার হয় তাতে আর্থিং-এর ব্যবস্থা থাকে। সিজদাতে মাথা নোয়ানের মাধ্যমে সেই ইলেকট্রোসটিক্স বের হয়ে যাওয়ার উপায় পায়। ফলে মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি কমে যায়।

ব্রেনের যে অংশটা চিন্তা করে সেটা মাথার উপর থাকে না। সেটা থাকে ফ্রন্টাল লোপে। সেজন্যেই আমরা নামাজের মাঝে সিজদা করি। যখন আমরা সিজদায় যাই তখন আমাদের ব্রেনে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত হয়। এতে আমাদের ব্রেনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যখন সিজদা করি তখন আমাদের মুখের চামড়ায় ও ঘাড়ে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত হয়, এতে আমাদের মুখমণ্ডলে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বেড়ে যায়। এটা শীতকালে আমাদের জন্যে খুবই উপকারী। বিভিন্ন অসুখ থেকে বাঁচতে পারি যেমন ফাইব্রোলাইটিস ও চিলব্রেইন, যখন সিজদা করি তখন পারালাইস সাইনোসাইটিস ড্রেনেইজ তৈরি হয়। এতে করে সাইনোসাইটিস-এর সম্ভাবনা কমে যায়। যেটা হলো সাইনাসের প্রদাহ।

আমরা সারাদিন সারারাত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। আর ম্যাক্সিলারি সাইনাস-এর ড্রেনেইজ থাকে শরীরের উপরের অংশে। আমরা সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকি। ফলে-এর চলাচল হয় না। সেজন্যে যখন সিজদায় যাই, ব্যাপারটি এমন যেন একটা ভরা পাত্র উল্টে দিলাম। এতে করে ম্যাক্সিলারি সাইনোসাইটিস হয়। এছাড়াও এতে করে আমাদের শরীরে ড্রেনেইজ তৈরি হয় ফ্রন্টাল সাইনাসের সাথে মোডিয়াল সাইনাসের এবং স্পেরিয়াল সাইনাসের। এতে করে সাইনোসাইটিসের সম্ভাবনা কমে যায়। এতে তার সাইনোসাইটিস থেকে থাকলেও এটা তার প্রাকৃতিক চিকিৎসা। এছাড়াও সিজদা তাদের জন্যে প্রাকৃতিক চিকিৎসা যারা ব্রঙ্কাইটিস রোগে ভুগে থাকে। এতে করে ব্রঙ্কিলট্রি দিয়ে রস মিশ্রিত হতে পারে। সিজদার কারণে ব্রঙ্কিলট্রিতে রস জমা হয়ে থাকতে পারে না। ফলে বিভিন্ন পালমোনারি অসুখের চিকিৎসা করা যায়। যেখানে আমাদের শরীরে রস জমা হয়।

আমাদের শরীরে রস ছাড়াও ধূলোবালি এবং রোগ-জীবাণু জমা হতে পারে। সিজদার মাধ্যমে এসব অসুখের উপকার পাওয়া যায়। আমরা যখন নিঃশ্বাস নিই, তখন আমরা ফুসফুসের মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ ব্যবহার করে থাকি। আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ ফুসফুস থেকে যায়। মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ তাপ বাতাস আমাদের ফুসফুসে ঢুকে ও বের হয়ে যায়। বাকি এক-তৃতীয়াংশ বাতাসকে বলে রেসিডিয়াল এয়ার, আমরা যখন সিজদা করি তখন আমাদের তলপেট চাপ দেয় ডায়াফ্রামে। আর এই ডায়াফ্রাম চাপ দেয় আমাদের ফুসফুসের নিচের অংশে, ফলে ফুসফুসের সেই রেসিডিয়াল এয়ার বের হয়ে যায়।

তাহলে এ বাতাস বের হয়ে গেলে আরো তাপ বাতাস ফুসফুসে ঢুকে, এতে করে আমাদের ফুসফুস স্বাস্থ্যবান হয়। যখন সিজদা করি যেহেতু অভিকর্ষ বল কমে যায় এবং তলপেটের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। তলপেটের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভেতর রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। সিজদা এবং রুকু এগুলোর মাধ্যমে হারনিয়া ফিসোরাল ইত্যাদি অসুখের নিরাময় হয়ে থাকে। এছাড়াও সিজদায় অনেক রোগের নিরাময় হয়, তার মধ্যে একটা হলো হেযোরয়েট, যেটাকে সাধারণ মানুষ বলে থাকে পাইলস। এছাড়াও সিজদার মাধ্যমে জরায়ুর স্থানচ্যুতিকে রোধ করা যায়। যখনই সিজদা করি তখন আমাদের শরীরের ভর থাকে হাঁটুর উপর আমাদের পা থাকে নমনীয় এছাড়া আমাদের পায়ের সোলিয়াস ও গ্যালট্রোনিমিয়াস থালস (থালসগুলোকে বলা হয় প্যারিফেরিয়াল (২টি))। কারণ এ মাসলগুলোতে অনেক ধমনী আছে। আর এ ধমনীগুলো দিয়ে শরীরের নিচের অংশে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে, এতে করে শরীরের নিচের অংশে আরাম ও বিশ্রাম হয়।

যখন সিজদায় যাই, আমাদের হাঁটু তখন মাটি স্পর্শ করে। হাত এবং কপালও মাটি স্পর্শ করে এ পদ্ধতিতে কার্বোইন্টাইল ইম্পাইন-এর বিভিন্ন অসুখের নিরাময় হয়। কারণ এ সিজদার মাধ্যমে ইন্টারবায়োট্রিক্যাল জয়েন্টের উন্নতি হয়। সিজদার মাধ্যমে বিভিন্ন হৃদরোগের উপকার পাওয়া যায়। যখন আমরা সিজদা থেকে উঠে হাঁটু গেড়ে বসি শরীরের উপরের অংশে যে রক্ত চলে গিয়েছিল সেটা স্বাভাবিক হয়। আর শরীরেরও Relaxed হয়। তখন আমাদের উরু ও পিঠের ধমনীর মাধ্যমে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত হয়। পিঠের মাংসপেশী নরম ও আরাম হয়। সিজদার মাধ্যমে আমরা উপকার পাই কোষ্ঠ-কাঠিন্য আর বদ হজমের। এতে যারা ভোগছেন পেপটিক আলসারে বা পাকস্থলীর জন্যে তারাও উপকার পাবেন, যখন আমরা বসা থেকে উঠে দাঁড়াই। যখন সিজদা থেকে উঠে দাঁড়াই, আমাদের শরীরের ভর থাকে পায়ের বলের উপরে। এতে করে আমাদের পিঠের আসল হাতের মাসল ও পায়ের মাসল শক্ত হয়। যখন আমরা সালাত আদায় করি, তখন আমরা শারীরিকভাবে উপকৃত হই। তবে মুসলিমরা শুধু শারীরিক উপকারিতার জন্য সালাত আদায় করে না। এটা হলো বাড়তি উপকার। আমরা সালাত আদায় করি আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার প্রশংসা করার জন্য, তাঁর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য এবং সঠিক পথ লাভের জন্য। নামাজের এই সকল চিকিৎসা বিজ্ঞানের লাভগুলো অবিশ্বাসী এবং যারা মুসলিম নয় তাদের আকর্ষণ করবে। কিন্তু আমাদের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি। কারণ এটি আল্লাহ তায়ালার আদেশ, কিছু লোক আমাকে জিজ্ঞেস করেছে যে, কিছু মুসলমান প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে। কিন্তু তারা প্রতারক এবং অসৎ প্রকৃতির ও নীতিহীন লোক, তাহলে আপনি কী করে বলেন যে, Salat is the programme towards righteousness. এই প্রশ্নের উত্তর সূরা আল-মুমিনুন ১-২ আয়াত। সে সকল বিশ্বাসীরা সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাযে বিনয়ী।

সুতরাং আল্লাহ বলেন, তারা সফলকাম হবে এবং প্রকৃতপক্ষে লাভবান হবে যারা মনোযোগ ও বিনয়সহকারে নামাজ আদায় করবে, কিন্তু তারা লাভবান হবে না যারা মনোযোগ ও বিনয় ব্যতীত নামাজ আদায় করে। সুতরাং যে সকল মুসলমান নামায আদায় করার পরও অসৎ ও নীতিহীন, তারা মূলত মনোযোগ ও বিনয় সহকারে নামায আদায় করে না।

গ্রন্থনা

০ মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template