মহাগ্রন্থ পবিত্র আলকুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে জনমন্ডলি! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের উপসনা (ইবাদত) কর, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা আত্মরক্ষা করতে পার অর্থাৎ তাকওয়া অর্জন করে মুক্তি পেতে পার। যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেন। সুতরাং জেনে-শুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করিওনা (অংশীদার করোনা)।” (সূরা বাকারা-২১-২২)
মহান আল্লাহর এই নির্দেশনা সকল নবী-রাসূলই পালন করেছেন এবং বিরুদ্ধবাদীদের সাথে তর্কযুদ্ধে বা সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে, জয়ীও হয়েছেন এবং আল্লাহ তাআলার দ্বীনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এদেরই একজন হলেন হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ্ (আ:)। যিনি তাঁর মহান প্রভু সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক বহু পরীক্ষার সম্মুখীন হন এবং তাতে উত্তীর্ণ হয়ে সফলতাও লাভ করেন এবং একনিষ্ঠ ধর্ম ‘দ্বীনে হানিফ’ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করে যান। যা চলছে এবং পৃথিবীর প্রলয়হওয়া পর্যন্ত চলবে। যা আল্লাহ তাআলার মনোনীত ধর্ম ইসলাম নামে পরিচিত।
মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর পরীক্ষিত বন্ধু ও নবী হযরত ইব্রাহীম (আ:) কে এমন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করলেন যে, তিনি তাঁর আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা আপন প্রভু, মহান আল্লাহকে খুঁজতে খুঁজতে তাঁর পরিচয় পেয়ে গেলেন এবং চিনলেন। অত:পর তিনি তাঁর মূর্তিপূজক পিতা ও সম্প্রদায়কে আল্লাহ সম্পর্কে বুঝিয়ে বললেন কিন্তু তারা মহান আল্লাহর একক সত্তাকে স্বীকার করতে রাজি হলো না। এক পর্যায়ে তিনি (ইব্রাহীম আ:) তাঁর সম্প্রদায় ও আল্লাহদ্রোহী নমরূদকে তর্কে পরাস্ত ও পরাভূত করে মহান আল্লাহর একক সত্তাকে প্রকাশ্যে প্রমাণ করে দিলেন। এ সম্পর্কে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআনে বিবৃত হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নবী মুহাম্মদ আপনি হয়রত ইব্রাহীম (আ:)-এর সাথে তার সম্প্রদায় ও পিতার যে তর্ক হয়েছিল তা স্মরণ করুন এবং এ ঘটনা আপনার উম্মতকে জানিয়ে দিন।
‘‘আল্লাহ্ বলেন, ইব্রাহীম তার পিতা আজরকে বলেছিল, ‘আপনি কি মূর্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেন? আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখছি।’ এভাবে আমি ইব্রাহীমকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালনা-ব্যবস্থা দেখাই যাতে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। অত:পর রাতের অন্ধকার যখন তাকে আচ্ছন্ন করল তখন সে নক্ষত্র দেখে বলল, ‘ঐটিই আমার প্রতিপালক।’ অত:পর যখন ঐটি অস্তমিত হল তখন সে বলল, যা অস্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না।’ অত:পর যখন সে চন্দ্রকে উদিত হতে দেখল তখন সে বলল, ‘ঐটিই আমার প্রতিপালক।’ যখন সেটি অস্তমিত হল তখন সে বলল, আমাকে আমার প্রতিপালক সৎপথ প্রদর্শন না করলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ অত:পর যখন সে সূর্যকে উদিত হতে দেখল, তখন সে বলল, ‘এটিই আমার মহান প্রতিপালন।’ যখন সেটিও অস্তমিত হল, তখন সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে আল্লাহর অংশীদার কর, তা থেকে আমি নির্লিপ্ত (বিমুখ)।’ নিশ্চয়ই আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফেরাচ্ছি যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (সূরা আন্আম-৭৪-৭৯)
মহান আল্লাহ বলেন, হে নবী (সা:) তুমি কি সে ব্যক্তির (নমরুদের) কথা ভেবে দেখনি যে ইব্রাহীমের সাথে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যেহেতু আল্লাহ্ তাকে রাজত্ব দান করেছিলেন। যখন ইব্রাহীম বলল, ‘তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান,’ সে বলল ‘আমিও তো জীবনদান করি ও মৃত্যু ঘটাই।’ ইব্রাহীম বলল, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সূর্যকে পূর্বদিক থেকে উদয় করান, তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদয় করাও।’ তখন সে (নমরুদ) হতবুদ্ধি হয়ে গেল অর্থাৎ এ ক্ষমতা তার দ্বারা সম্ভব হল না। এবং আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা বাকারা-২৫৮)
মহান আল্লাহতাআলা নমরুদকে রাজত্ব দান করায় তার উচিত ছিল আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনা। কিন্তু সে তা না করে, নিজেকেই খোদা বলে দাবি করল। আল্লাহ তার সেই দাম্ভিকতাকে খর্ব করে তাকে ও তার রাজত্বকে ধ্বংস করে দিলেন। আল্লাহর দ্বীনকে যারাই ধ্বংস করতে চায়, তারা কখনও সফল হয় না।
Post a Comment