মহান আল্লাহতায়ালা বিশ্বস্রষ্টা, তার সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠ হল মানবজাতি। মানব জাতির জীবন বিধানের শ্বাশত ও পূর্ণাঙ্গ আইন বিধান হল আল কোরআন। এই কোরআন মাজিদ ৩০ পারায় বিভক্ত, ১১৪ খানা সূরা-এর মধ্যে প্রথম সূরার নাম আল ফাতিহা। এর আয়াত সংখ্যা সাতটি। সূরা আল ফাতিহা আল কোরআনের সার নির্যাস, পূর্ণ কোরআন শরীফের দার্শনিক মতবাদ ও ইসলামী আকিদার মৌলিক তথ্য সংক্ষিপ্তভাবে এ সূরায় আলোকপাত হয়েছে। এ সূরা দিয়েই কোরআন মাজিদ-এর সূচনা হয়েছে। আর সূরা ফাতিহা দ্বারাই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজ আরম্ভ করা হয়। অবতরণের দিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এটিই সর্বপ্রথম নাজিল হয়। এ কারণেই কোরআন মাজিদে সর্বপ্রথম এ সূরার স্থান দেয়া হয়েছে। আর এ জন্যই এ সূরাকে ফাতিহাতুল কিতাব বলা হয়। কারণ যে বিষয়ের গুরুত্ব যত বেশি তা স্বভাবতই শীর্ষস্থানের অধিকারী। এই সূরায় সমগ্র কোরআনের সারমর্ম সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। অন্য সকল সূরা আল ফাতিহার ব্যাখ্যাস্বরূপ। কারণ সমগ্র কোরআন প্রধানত ঈমান ও নেক আমলের আলোচনায় কেন্দ্রীভূত। এ কারণেই বোখারী ও মুসলিম শরীফে এ সূরাকে উম্মুল কোরআন, উম্মুল কিতাব, কোরআনে আযীম বলে অভিহিত করা হয়েছে। কুরআন শরীফ সূরাফাতিহা ও কোরআন পাঠকারী আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করে, হে আল্লাহ তুমি আমাকে সিরাতে মুস্তাকিমের হিদায়াত দান কর। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, রাসুলে মাকবুল হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.) বলেন যার হাতে আমার জীবন-মরণ, আমি তাঁর শপথ করে বলছি, সূরা আল ফাতিহার দৃষ্টান্ত তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিল ও অন্য কোন আসমানী কিতাবে নেই। এমনকি পবিত্র কোরআনেও এর দ্বিতীয় নেই। তিরমিজি শরীফে হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘সূরা ফাতিহা প্রত্যেক রোগের ঔষধ বিশেষ’। হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত আছে, ‘সূরা আল ফাতিহাকে সূরা শেফাও বলা হয়।’ বোখারী শরীফে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘সমগ্র কোরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা আল ফাতিহা, কুরতবী শরীফ।
কালামে পাকে সূরা আল ফাতিহার গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহতা’য়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে নিত্য পাঠ্য সাতটি আয়াত ও মহাগ্রন্থ আল কোরআন দান করেছি। যাহা প্রত্যেকটি মানুষের অতিসহজে পাঠ করা ও মুখস্থ করা সম্ভব। তাই ছোট-বড় সকল মানুষই অতি সহজে এ সূরাটি পাঠ করে ও অতি আনন্দের সাথে তাড়াতাড়ি মুখস্থ করে ফেলে। সূরা আল ফাতিহাতে আয়াত সংখ্যা সাত। প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা এবং শেষ তিনটি আয়াতে মানুষের পক্ষ থেকে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা ও দরখাস্তের সংমিশ্রণ। আর মাঝের একটি আয়াত প্রশংসা ও দোয়ামিশ্রিত। মুসলিম শরীফে আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (স.) বলেন, মহান আল্লাহতা’য়ালা এরশাদ করেন, নামাজে সূরা ফাতিহা আমার এবং আমার বান্দাদের মাঝে দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথমাংশ আমার জন্য আর দ্বিতীয়াংশ আমার বান্দাদের জন্য। আমার বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হবে। রাসুল (স.) বলেন যখন কেউ বলে আলহামদুলিল্লাহ, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করছে। আর যখন বলে আররাহ মানির রাহীম। তখন তিনি বলেন আমার বান্দা আমার মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করছে। আর যখন বান্দা বলে মালিকি ইয়াউমিদদ্বীন। তখন তিনি বলেন আমার বান্দা আমার গুণগান করছে। আর যখন বান্দা বলে ইয়াকানায়বুদু ওয়াইয়াকা নাস্তায়িন। তখন তিনি বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করে এবং আমার কাছেই প্রার্থনা করে।
Post a Comment