السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

রসূল (স.)-এর প্রত্যেক উম্মতই বেহেশেত যাবে

| comments

পৃথিবীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সুপারিশ ছাড়া পরকালীন জীবনের কঠিন দুঃসময়ে মুক্তির কোনো রাস্তা নেই। আর যারা তাঁর উম্মত নন তার জন্য তিনি কোনোক্রমে সুপারিশ করবেন না। রসূল (স.) বলেন, "মান তরাকা সুন্নাতি ফালাইসা মিন্না" যে ব্যক্তি আমার কোনো সুন্নতকে অস্বীকার করবে সে আমার উম্মত নয়। যারা রসূলের (স.) উন্মত হতে চায় তাদের প্রত্যেকের উচিত হলো তাঁর প্রত্যেকটি সুন্নতের অনুসরণ করা। রসূল (স.) কে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র জগত্বাসীর জন্য আদর্শ করেছেন। কুরআনের ঘোষণা- "লাক্বদ কানা লাকুম ফি রসূলিল্লাহি উসওয়াতুন হাসানা" অর্থাত্ তোমাদের জন্য আমার নবী মুহাম্মদ (স.) এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ। অন্যস্থানে রসূল (স.) বলেছেন- "কুল্লু উম্মাতুই ইয়াদখুলুনাল জান্নাহ, ইল্লা মান আবা, কিলা মান আবা ইয়া রসূলুল্লাহ (স.)? মান আতা আনি ফাদাখালাল জান্নাহ, অমান আছানি ফাক্বদ আবা" অর্থাত্ আমার প্রত্যেক উম্মত বেহেশতে যাবে, কেবলমাত্র আবা (অসম্মত) ছাড়া। সাহাবিরা বললেন, হে রসূল (স.) কে সেই আবা (অসম্মত)? যে আমার অনুসরণ করবে, সে বেহেশতে যাবে, আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নতের অবজ্ঞা করবে, সেই আবা (অসম্মত)। কুরআনে বলা হয়েছে- মা আতাকুমুর রসূলু ফাখুজুহু অমা নাহাকুম আনহু ফানতাহু অর্থাত্ আমার নবী তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন তোমরা সেগুলো আঁকড়ে ধর আর যেগুলো নিষেধ করেছেন তা পরিহার কর। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে- 'মান তামাসসাখা সুন্নাতি ইন্দা ফাসাদান উম্মতি ফালাহু আজরুহু মিয়াতাশ শহীদ' অর্থাত্ যদি কোনো ব্যক্তি রসূল (স.) এর কোনো হারিয়ে যাওয়া সুন্নতকে উজ্জীবিত করে তাহলে তার নামে একশত শহীদের দরজা (সম্মান) লিখে দেয়া হবে। সুতরাং রসূল (স.) এর অনুসরণের কোনো বিকল্প নাই। আজ পৃথিবীর মানুষ বিভিন্ন মনীষী, নেতা, পীর-বুজুর্গদের অনুসরণ করে এবং তাদের ওছিলায় মুক্তির রাস্তা তালাশ করে। অথচ কুরআন ও হাদীস রোমন্থন করলে কোথাও এমন কোনো সহীহ বর্ণনা নাই যে, রসূল (স.) এর অনুসরণ ও তাঁর সুপারিশ ছাড়া মুক্তির কোনো রাস্তা রয়েছে। যদি এই পৃথিবীতে একজন ব্যক্তিকে অনুসরণ করা যায়- তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)। যার জীবনের এমন কোনো দিক ও বিভাগ নাই যেখানে লাল কালির দাগ দেয়া যায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা স্বয়ং তাঁর চরিত্রের সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন- "ইন্নাকা লাআলা খুলুকীন আজিম" হে রসূল (স.) নিশ্চয় আপনি সবচেয়ে উন্নত চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। রসূলের (স.) চরিত্রের সার্টিফিকেটের শেষে আজিম শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে যার অর্থ সুমহান। আরবীতে চওড়া বুঝাতে হারিক শব্দ ব্যবহূত হয়। গভীরতা বুঝাতে আমীক শব্দ ব্যবহূত হয়। আর কত গভীর যা মাপার কোনো ফিতা নাই। কত প্রশস্ত যা মাপার কোনো যন্ত্র নাই আরবীতে সেটাকে বলা হয় আজীম অর্থাত্ রসূলের চরিত্র এমন যা মাপার কোনো যন্ত্র পৃথিবীতে নাই। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কিছুদিন পর একদল কৌতূহলী সাহাবি উম্মুল মৌমেনীন আয়শা সিদ্দিকা (রা.) এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আয়শা (রা.)! রসূল (স.) এর চরিত্র কেমন? আয়াশা (রা.) পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন, তোমরা কি কুরআন পড় না? সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ আমরা কুরআন পড়েছি। আয়শা (রা.) বললেন, গোটা কুরআন শরীফই হলো- রসূল (স.) এর চরিত্র। আর রসূল (স.) বলেন, "বুইসতু লিউতিম্মা মাকারিমাল আখলাফ" উন্নত চরিত্রকে মানুষের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি। আর তাছাড়া এই পৃথিবীতে অন্যান্য ধর্মের যারা বিখ্যাত ধর্মবেত্তা তারাও রসূল (স.) এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিশেষ করে মাইকেল এইচ হার্ট দ্যা হানড্রেড গ্রন্থে জগত্ বিখ্যাত একশত মনীষীর মধ্যে সবার ওপর যাকে স্থান দিয়েছেন তিনি হলেন- হযরত মুহাম্মদ (স.)।

পরকালে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই রসূলের (স.) উম্মত হতে হবে। কারণ সেইদিন হাশরের ময়দানে অগণতি মানুষের মধ্যে তিনি কেবল তাঁর উম্মতদের বাছাই করে হাউজে কাওছারের পানি পান করাবেন। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বেহেশতে যাবেন। রসূল (স.) যে সময় তার সকল উম্মতদের সঙ্গে নিয়ে বেহেশতে যাবেন তখন একদল মানুষ রসূল (স.) যাদের উম্মত হিসেবে বাছাই করেননি তারা রসূল (স.) এর সামনে বসে বলবে- আমরাও তো আপনার উম্মত, আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। রসূল (স.) "রহমাতাল্লিল আলামীন" দয়ার নবী তিনি তাদের জন্যও সুপারিশ করতে উদ্যত হবেন- তখন আল্লাহ তায়ালা গায়েব থেকে আওয়াজ দেবেন- হে নবী (স.) ওরা আপনার উম্মত নয়। আপনি জানেন না, তারা কিভাবে আপনার আদর্শের বিরোধী পথে চলেছে- রসূল (স.) বলবেন- ছোহকান ছোহকান লিমান গায়রা মিমবাআদি- সরে যাও; দূর হয়ে যাও যারা আমার আদর্শ বিরোধী কাজ করেছো। সেই সময় ঐ লোকদের এমন অসহায় অবস্থা হবে যার চেয়ে অসহায় অবস্থা আর হতে পারে না। কারণ যে সময় সব মানুষ, নবী-রসূল ইয়া নাফছি, ইয়া নাফছি— আমার কি হবে? আমার কি হবে? বলবে সেই সময় রসূল (স.) বলবেন ইয়া উন্মাতি, ইয়া উম্মাতি আমার উম্মতের কি হবে, আমার উম্মতের কি হবে? যিনিই একমাত্র ভরশাস্থল তিনি যদি দূর দূর করে সেদিন বিদায় করে দেন তাহলে এর চেয়ে কষ্টের; যন্ত্রণার আর কি হতে পারে? রসূল (স.) তাদের রেখে তাঁর উম্মদদের নিয়ে বেহেশতে চলে যাবেন। আর আল্লাহ ফেরেশতাদের হুকুম করবেন- ওদের কপালের সামনের অংশের চুল ও পা ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর এবং সাথে সাথে তাইই করা হবে। যারা রসূল (স.) এর হাদীসের সাথে উদাসীনতা প্রদর্শন করবে, তার সুন্নতের অবজ্ঞা করবে তাদের পরিণতি হবে এমনি ভয়াবহ। আমরা আর একটি বিষয় স্মরণ করতে পারি-যখন কোনো মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার জানাজা নামাজ শেষ করে দাফন করার সময় বলা হচ্ছে বিসমিল্লাহে আলা মিল্লাতে রসুলিল্লাহ- আল্লাহর নামে ও মুহাম্মদ (স.) এর মিল্লাতের ওপর তোমাকে সমাহিত করে গেলাম। গভীরভাবে চিন্তা করুন, যেই মানুষটি কখনো রসূলের মিল্লাতের মধ্যে চলাফেরা করেনি তার জীবদ্দশায়, সেই মানুষকে মৃত্যুর পর রসূলের মিল্লাতের ওপর সোপর্দ করে রাখা হচ্ছে। তাহলে রসূল (স.) কেনো এই মরা লাশটিকে তাঁর মিল্লাতে নিতে যাবেন, যে বেঁচে থাকতে তাঁর মিল্লাতের বিরুদ্ধে চলেছে?

রসূলের খাঁটি উম্মত হওয়া ছাড়া প্রকৃত অর্থেই মুক্তির কোনো উপায় নাই। আর তার প্রকৃত উম্মত হওয়ার জন্য অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ওয়াক্তমত মসজিদে গিয়ে জামায়াতবদ্ধভাবে পড়তে হবে-এটা আল্লাহর নির্দেশ ও রসূলের শ্রেষ্ঠ আদর্শ। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ আজকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে অবজ্ঞা-অবহেলা করে কখনো ঠিকমত পড়ে না অথবা নামাজের বিষয়টিকে অহেতুক কাজ হিসেবে মন্তব্য করেন। রোজাকে উপোস থাকা সার বলে অভিমত দেন। হজ্বকে নিয়ে কটাক্ষ করেন, কুরবানিকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলেন, ঐসব মানুষের নাম যতই মুসলিম নাম হোক, পোশাক-আশাকে ইসলামী গাম্ভীর্য থাক- তারা স্পষ্টই মুনাফেক। কিন্তু কারো নাম করে মুনাফেক বলা যাবে না। কেননা রসূল (স.) বলেছেন, তোমরা কাউকে কাফের, ফাসেক ও মুনাফেক বলে সম্মোধন করো না। রসূল (স.) এর জামানায় এমন অনেক লোক ছিল যারা মুসলমান নামধারী ছিল। মুসলমানদের সাথে মিশলে তাদের পক্ষে কথা বলতো আবার কাফেরদের সাথে মিশলে তাদের পক্ষে কথা বলতো। এরা ইসলামের জন্য সাধারণ কাফের, মুশরিক, ইহুদী হতে মারাত্মক ক্ষতিকর। মাদানী জীবনের একদিন রসূল (স.) সাহাবীদের বলেছিলেন- কাফের-মুশরিকরা ইসলামের যে ক্ষতি করে নাই তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে মুনাফেকরা। কারণ কাফের-মুশরিকদের অবস্থান স্পষ্ট কিন্তু মুনাফেকদের অবস্থান স্পষ্ট নয়। তাদের মনে রয়েছে শয়তানী। রসূলের জামানায় এমন মুনাফেক যারা ছিল তাদের সরদার ছিলো আব্দল্লাহ ইবনে ওবায়। ওহুদের যুদ্ধে রসূলের (স.) মারাত্মক জখম হওয়া ও সত্তরজন সাহাবী শহীদ হওয়ার মূলে এই মুনাফেকদের ষড়যন্ত্র ছিল। রসূল (স.) এই যুদ্ধে ১ হাজার সৈন্য নিয়ে ৩ হাজার সৈন্যের সাথে মোকাবিলা করতে আসছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে ৩ শত সৈন্য নিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে ওবায় কাফেরদের সঙ্গে মিশে যায়। যার কারণে ওহুদের যুদ্ধে ভয়াবহ প্রতিকূল অবস্থার শিকার হতে হয় মুসলমান বাহিনীকে। তারপর যখন ঐ মুনাফেক সরদার আব্দুল্লাহ ইবনে ওবায় মৃত্যুবরণ করে তখন খবর পেয়ে রসূল (স.) সেখানে যান এবং যখন তার জানাজা নামাজ পড়তে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলেন হযরত ওমর (রা.) তখন বাধা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। অবশেষে যখন জানাজা নামাজ শেষ হয় তখন আল্লাহর নির্দেশ নিয়ে জিব্রাইল (আ.) এলেন এবং বললেন, হে রসূল (স.), আপনি যদি ৭০ বারও এই মুনাফেক এর জানাজা নামাজ পড়ান তবুও আল্লাহ এটা কবুল করবেন না। অথচ রসূল (স.) এর কোনো দোয়াই আল্লাহ ফেরত দেন নাই। সুতরাং যারা— "উদখুলু ফিস সিলমে কাআফফা" ইসলামে যারা যথার্থভাবে প্রবেশ করেনি এবং রসূল (স.) পূর্ণাঙ্গ আদর্শ মেনে জীবন পরিচালনা করেনি ঐসব মুনাফেক শ্রেণীর লোকদের যতবারই জানাজা নামাজ পড়ানো হোক না কেন আল্লাহ তা কবুল করবেন না। আর তাছাড়া এ বিষয়টিও আমাদের বুঝতে হবে, ইসলাম কোনো অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্ম নয় যে, বিশেষ বিশেষ দিবসে ইবাদত-বন্দেগী করলেই আল্লাহকে পাওয়া যাবে! নবীর খাঁটি উম্মত হওয়া যাবে! পরিপক্ব ধার্মিক হওয়া যাবে! বরং দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন যদি সুন্দর, সাবলীল ও পরিচ্ছন্ন করতে হয়, তাহলে অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহেক বুকে জড়িয়ে ধরতে হবে। পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। বিদায় হজ্বের ভাষণে রসূল (স.) তাই বললেন, "তারাকতু ফিকুম আমরাইন অলান তাদিল্লু মা তামাস সাখতুম বিহিমা কিতাবাল্লাহে ওয়া সুন্নাতি" অর্থাত্ আমি তোমাদের মাঝে দু'টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, একটি হলো আল্লাহর কেতাব (আল কুরআনুল কারীম) আরেকটি হলো আমার সুন্নাত বা আদর্শ বা হাদীস। আর আল্লাহকে পেতে হলে রসূলকে (স.) ভালোবাসতে হবে আর তাহলেই আল্লাহ তাদের ভালোবাসবেন ও তাদের জীবনের পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে। সুতরাং আমরা চাই ইসলাম ধর্মের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী ও জীবন যাপনকারী প্রত্যেক ব্যক্তি যেন কুরআন-হাদীস অনুযায়ী জীবন যাপন করে প্রকৃত মুসলমান ও রসূলের খাটি উম্মত হয়ে পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় হতে পারেন। আল্লাহ সেই তাওফীক দান করুন, আমীন।
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template