দিনরাত সর্বক্ষণ প্রতিনিয়ত কাবাগৃহ তাওয়াফ হচ্ছে। যে কাবাঘরকে কেন্দ্র করে মুসলিম বিশ্ব ইবাদতে মশগুল হয়, আমাদের কেউ কেউ এর ইতিহাস ভালো করে জানি না। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আল-ইমরানের ৯৬ আয়াতে বলেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদতগৃহ রূপে নিরূপিত হয়েছে, যা মক্কাতে অবস্থিত।’
কাবাঘরটি আল্লাহর আরশে মুয়াল্লাহর ছায়াতলে সোজাসুজি বায়তুল মামুরের আকৃতি অনুসারে স্থাপন করেন। হজরত আদম ও হাওয়ার পৃথিবীতে মিলন হলে তারা উভয় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ হজরত আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং বায়তুল মামুরের আকৃতিতে পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করেন। এখানে হজরত আদম সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকেন। (শোয়াব-উল-ঈমান, হাদিস গ্রন্থ)। অনেক তাফসিরবিদের মতে, মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান আল্লাহতায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন। তফিসিরবিদ মুজাহিদ বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বায়তুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন।’ মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে হজরত আবুজর গিফারি থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, রাসূল (সা.) তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ মসজিদে হারাম। এর পরেরটি হল মসজিদে আকসা।
হজরত আদম কাবাঘর আল্লাহর আদেশে পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হল। শত শত বছর অতিবাহিত হল। আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতেন, আল্লাহর কাছে হাজিরা দিতেন এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিতেন। এভাবে চলতে চলতে দিন গত হতে থাকল। এরপর হজরত শিষ আলাইহিস সালাম কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করলেন। দিন দিন একাÍবাদের সংখ্যা বাড়তে থাকল। এরপর কাবা শরিফ নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। হজরত ইবরাহিম হজরত ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করেন। হজরত ইবরাহিম আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ কর। আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গাম্বর প্রেরণ করুন। যিনি তাদের কাছে তোমাদের আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশালী।’ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর বংশ থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে শেষ নবী ও রাসূল হিসেবে আল্লাহ পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, এরপর কয়েকশ’ বছর গত হল। পবিত্র কাবাঘর সংস্কার করল আমালিকা সম্প্রদায়। তারপর আরও শ’ শ’ বছর পরে কাবাঘর সংস্কার করল মক্কার জুলহাস সম্প্রদায়। আরবের অর্থাৎ মক্কায় যেসব গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিপত্তি ছিল, তাদের দায়িত্ব থাকত কাবা শরিফ রক্ষণাবেক্ষণের। এ দায়িত্ব পালনকে তারা সম্মানীত ও গর্বের মনে করত। শতাব্দী পর শতাব্দী অতিবাহিত হল। কাবা শরিফ ও কাবাঘরকে সংস্কার করলেন মোজার সম্প্রদায়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। কোরাইশরা কাবা শরিফ সংস্কারের পর হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়।
সবার সম্মতিক্রমে আল্লাহর রাসূল কাবাগৃহে হাজরে আসওয়াদ কাবা শরিফে স্থাপন করেন। বর্তমানে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি সরকারের প্রধান কাবা শরিফের মুতওল্লির দায়িত্বে থাকেন। ভৌগোলিক দিক দিয়ে মক্কা ও আরব উপদ্বীপ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। মক্কা নগরী পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের মধ্যস্থানে হওয়ায় মহান আল্লাহ কাবাঘর মক্কাতেই স্থাপন করেন। পবিত্র হজ পালন করতে লাখ লাখ মুসলমান মক্কা শরিফে গমন করেন। এ জমজম কূপ মহান আল্লাহর কুদরতের অপরূপ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। পবিত্র কাবাঘর হেফাজতের মালিক মহান আল্লাহ নিজে। বিশ্ব মুসলমানদের মিলনমেলা ঘটে হজের মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরিফে।
বিভিন্ন সময়ে কাবাঘরের দৃশ্য : ১৯৪১ সালে পবিত্র মক্কা নগরীতে বন্যা হয়েছিল যার ফলে পবিত্র কাবা শরিফের চার পাশে পানি জমা হয়! পবিত্র কাবা শরিফ পরিষ্কার করার জন্য এর দরজা বছরে দু’বার খোলা হয়। রমজানের ১৫ দিন এবং হজের ১৫ দিন আগে।
সাঈদ আল হাসান শিমুল
+ comments + 2 comments
পবিত্র কাবাঘরের ইতিহাস জেনে খুব ভাল লাগল!
এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ঐতিহাসিক ইসলামী তথ্য ই-মেলের মাধ্যমে জানালে উপকৃত হ'ব!
Post a Comment