السلام عليكم

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (তওবা) করবে আল্লাহ তাকে সব বিপদ থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা: ৩৮১৯]

রমজান ও কুরআন

| comments

মানবজাতির একমাত্র জীবনব্যবস্থা আল কুরআন। কুরআন মানুষকে আলোর পথ দেখায়, কল্যাণের পথ দেখায়। কুরআন পড়লে, দেখলে, ছুঁলে এমনকি শ্রদ্ধাভরে চুমু খেলেও পুণ্য হয়। পবিত্র রমজানে এ পুণ্যের মাত্রা বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়। কারণ এ মাসেই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়ে রমজানের রোজা হাদিয়া নিয়ে এসেছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল।’ অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, ‘রমজান এমনই একটি মাস যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা সমগ্র মানবজাতির জন্য হেদায়তস্বরূপ, যা সত্য পথপ্রদর্শনকারী, স্পষ্ট শিার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং হক ও বাতিলকে সুস্পষ্ট করে উপস্থাপন করে।’
এ কুরআন শুধু আরব জাতির জন্য নয়, বরং পুরো মানবজাতির কল্যাণের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের মাধ্যমেই রয়েছে দ্বীন-দুনিয়ার সফলতা। এ থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, রমজান ও কুরআনের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক বিদ্যমান। আর কুরআনের সাথে মানুষের হেদায়াত ও পথনির্দেশনা জড়িত। কেউ কুরআনের অনুশাসন অনুসরণ করলে সফল হবেই। কারণ মানুষের এমন কোনো সমস্যা নেই, যা পবিত্র কুরআনে আলোচনা করা হয়নি। এ কুরআনের আলোকে স্বয়ং মহানবী সা: ব্যক্তিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সব সমস্যার সমাধান করেছেন। তার প্রিয় সাহাবিগণও এ কুরআনের ওপর আমল করে সোনার মানুষে পরিণত হয়েছেন। কুরআনের এসব শ্রেষ্ঠত্বের কথা বললেই মাহে রমজানের শ্রেষ্ঠত্বের কথা চলে আসে।
রমজানের অনন্য সব বৈশিষ্ট্যের বেশির ভাগই কুরআন নাজিলকেন্দ্রিক। সেই কুরআনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য কী, তা ঠিক করে নেয়া উচিত। কুরআন যেহেতু আল্লাহ তায়ালার বাণী, সেহেতু তা বিশুদ্ধ পড়ার বিকল্প নেই। বিশুদ্ধ করে তেলাওয়াতের একটা সুবর্ণ সুযোগ হয় রমজানে। রমজানে এক দিকে যেমন পড়ার আগ্রহ থাকে, তেমনি পড়ার সুযোগও থাকে পর্যাপ্ত।
রাসূল সা:-এর জীবদ্দশায় তাকে প্রতি রমজানে হজরত জিব্রাইল আ: এসে তার প্রতি অবতীর্ণ হওয়া কুরআনের সবটুকু তেলাওয়াত করে শোনাতেন। মাহে রমজানের রাতে তারাবি-তাহাজ্জুদসহ দিন-রাতের বিভিন্ন সময় কুরআন তেলাওয়াতের প্রেরণা হাদিসে বিদ্যমান। হজরত আয়েশা রা:-কে নবী করিম সা:-এর চরিত্র-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘তাঁর চরিত্র ছিল হুবহু কুরআনের মতো’, অর্থাৎ তিনি ছিলেন কুরআনের জীবন্ত রূপ।
কুরআনের প্রতি আমাদের প্রথম দায়িত্বই হলো বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াতের চেষ্টা করা। তার পর বেশি বেশি তেলাওয়াত করা। রমজানে এক খতম কুরআনÑ অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব। তাই তারাবি, তাহাজ্জুদ ছাড়াও দিনে কুরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে।
দ্বিতীয় দায়িত্ব হিসেবে অর্থ বা মর্ম উপলব্ধি করে কুরআন তেলাওয়াত করার চেষ্টা করা। আজ-কাল বাজারে কুরআনের বহু সহজ তরজমা বেরিয়েছে, সেগুলোতে বোঝার চেষ্টা করলেও সুফল পাওয়া যেতে পারে। সেই সাথে কুরআন তেলাওয়াতের আদব ও নিয়ম-পদ্ধতিগুলো খেয়াল করাও জরুরি। যেসব আয়াত তেলাওয়াত করতে মনস্থ করা হয়, অন্তরকে তার অনুগত বানিয়ে ফেলা জরুরি। রহমতের আয়াত তেলাওয়াতের সময় আনন্দ-খুশি অনুভব করা এবং আজাব ও শাস্তির আয়াত তেলাওয়াত কালে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যাওয়া। এমনভাবে তেলাওয়াত করা যেন আল্লাহ তায়ালা সে তেলাওয়াত শুনছেন। এটি অবশ্য তখনই সম্ভব যখন আয়াতের মর্ম অনুধাবনের যোগ্যতা সৃষ্টি হবে।
তৃতীয় দায়িত্ব হিসেবে কুরআনের আদেশ-নিষেধ মেনে জীবনকে পরিচালনা করা। একজন মুসলমানের জন্য কুরআন অনুযায়ী জীবন গঠনের চেয়ে ভালো কাজ আর নেই। রাসূলে করিম সা: নিজে ও সাহাবায়ে কেরামও এ মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতেন। পরবর্তী যুগের ইমাম, মুহাদ্দিস ও সাধক-বুজুর্গদের জীবনেও রমজানে কুরআন তেলাওয়াত ও চর্চার বিস্ময়কর বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে।
মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা ও কুরআনের অব্যাহত চর্চা আমাদের মধ্যে তাকওয়া জাগিয়ে তুলতে পরিপূরক ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত, হক আদায় করে রোজা রাখার পাশাপাশি পবিত্র কুরআনের গভীর চর্চায় আত্মনিয়োগ করা; তবেই রমজানের পরিপূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

লেখক : হাসনাইন হাফিজ, প্রবন্ধকার
Share this article :

Post a Comment

 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. ইসলামী কথা - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Premium Blogger Template